ঢাকা ১২:৪১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫

পূজা আয়োজন থেকে ঢাকঢোল বাজানো, সবই করেন নারীরা

  • আপডেট সময় : ০১:৪৫:৫২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ অক্টোবর ২০২২
  • ৯২ বার পড়া হয়েছে

নীলফামারী প্রতিনিধি : সৈয়দপুরের বাঙ্গালিপুর ইউনিয়নের গ্রাম লক্ষণপুর। এই গ্রামের হাড়িপাড়ার সনাতন ধর্মাবলম্বী ৩০টি পরিবার বাঁশ-বেতের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। সারা বছরেই জীবনযুদ্ধে কেটে গেলেও শরতে দেবী দুর্গাকে বরণে তাদের কোনো কমতি থাকে না। নিজেদের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে তারা আয়োজন করে দেবীকে বরণ করে নেন। আর এই আয়োজন সফল হয় সংগৃহীত মুষ্টির চালের মাধ্যমে। হাড়িপাড়ার নারীরা মুষ্টির চালের মাধ্যমে পূজার সব আয়োজনের খরচ মিটিয়ে থাকেন। এছাড়া পূজায় ঢাকঢোল বাজানো থেকে প্রসাদ বিতরণসহ সব কাজও করেন নারীরা।
গতকাল রোববার (২ অক্টোবর) সপ্তমী পূজার দিনে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামটি প্রায় পুরুষ শূন্য। কারণ জিজেবঞস করলে জানা যায়- বাঁশ-বেতের কাজের পাশাপাশি হাড়িপাড়ার পুরুষদের আয়ের উৎস বিয়ে বাড়িসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ঢাকঢোল বাজানো। প্রতি বছরের মতো এবারও গ্রামের পুরুষরা উপজেলার বিভিন্ন ম-পে সকাল-সন্ধ্যা ঢোল বাজানোর কাজ করছেন। ফলে হাড়িপাড়ার পূজা ম-পে ঢাকঢোল সবই বাজাচ্ছেন নারীরা। এদিকে মন্দিরের মারেয়া (জোগানদার) আরতি রানি বলেন, পূজার আরতি থেকে প্রসাদ বিতরণসহ আনসার ও গ্রাম পুলিশের পাশাপাশি নিরাপত্তার কাজটিও করছি আমরা। বিষয়টি এলাকায় আলোচনায় এসেছে। লক্ষণপুর হাড়িপাড়া কালিমন্দির পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি রতন চন্দ্র বলেন, এবারে দুর্গাপূজা সম্পন্ন করতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার টাকা। এর মধ্যে সরকারের অনুদানের ৫০০ কেজি চাল বিক্রি করে ২০ হাজার টাকা পেয়েছি। বাকি টাকা এসেছে নারীদের মুষ্টির চাল ও বিভিন্ন হাট-বাজার থেকে তোলা অর্থ থেকে। পূজার পরেও টাকার ঘাটতি হলে ভক্তদের কাছ থেকে আবারও চাল জমিয়ে তা থেকে দেওয়া হবে।
গ্রামের বাসিন্দা রমনী কান্ত (৫৭) বলেন, অর্থের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে মন্দির সংস্কার করা সম্ভব হয়নি। এ সবের মধ্যেও পূজার আয়োজন করা হয়েছে। মন্দিরের সামনের সীমানা প্রাচীর না থাকায় অরক্ষিত থাকে মন্দির ঘরটি। অর্থের অভাবে পলেস্তার করতে না পারায় বাকি দেয়ালগুলোও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পূজা চলাকালে অর্থের অভাবে কোনও সাউন্ড সিস্টেমেরও ব্যবস্থা করা যায়নি। তবে এলাকার বিভিন্ন পূজা মন্দিরের গেট, লাইট ও ঝাঁড়বাতি দিয়ে জাঁকজমক আয়োজন করেছে বিত্তশালীরা। তাই এ পাড়ার শিশু-কিশোরদের পূজায় মন বসছে না।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কমিটির সৈয়দপুর উপজেলা শাখার সভাপতি ও শিল্পপতি রাজকুমার পোদ্দার রাজু বলেন, হাড়িপাড়ার পূজাম-পের সার্বিক বিষয়ে আমাদের নজরে রয়েছে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মন্দিরটিতে সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি। যাতে করে বিভিন্ন সময়ে উন্নত পরিবেশে পূজাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন সম্ভব হয়।
সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মকছেদুল মোমিন বলেন, লক্ষণপুর হাড়িপাড়ার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সর্বজনীন দুর্গাপূজার আনন্দ ভাগাভাগি করতে আগামীতে সব ধরনের সাহায্য সহযোগিতা করা হবে। তাদের সাহসী উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান তিনি।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

পূজা আয়োজন থেকে ঢাকঢোল বাজানো, সবই করেন নারীরা

আপডেট সময় : ০১:৪৫:৫২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ অক্টোবর ২০২২

নীলফামারী প্রতিনিধি : সৈয়দপুরের বাঙ্গালিপুর ইউনিয়নের গ্রাম লক্ষণপুর। এই গ্রামের হাড়িপাড়ার সনাতন ধর্মাবলম্বী ৩০টি পরিবার বাঁশ-বেতের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। সারা বছরেই জীবনযুদ্ধে কেটে গেলেও শরতে দেবী দুর্গাকে বরণে তাদের কোনো কমতি থাকে না। নিজেদের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে তারা আয়োজন করে দেবীকে বরণ করে নেন। আর এই আয়োজন সফল হয় সংগৃহীত মুষ্টির চালের মাধ্যমে। হাড়িপাড়ার নারীরা মুষ্টির চালের মাধ্যমে পূজার সব আয়োজনের খরচ মিটিয়ে থাকেন। এছাড়া পূজায় ঢাকঢোল বাজানো থেকে প্রসাদ বিতরণসহ সব কাজও করেন নারীরা।
গতকাল রোববার (২ অক্টোবর) সপ্তমী পূজার দিনে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামটি প্রায় পুরুষ শূন্য। কারণ জিজেবঞস করলে জানা যায়- বাঁশ-বেতের কাজের পাশাপাশি হাড়িপাড়ার পুরুষদের আয়ের উৎস বিয়ে বাড়িসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ঢাকঢোল বাজানো। প্রতি বছরের মতো এবারও গ্রামের পুরুষরা উপজেলার বিভিন্ন ম-পে সকাল-সন্ধ্যা ঢোল বাজানোর কাজ করছেন। ফলে হাড়িপাড়ার পূজা ম-পে ঢাকঢোল সবই বাজাচ্ছেন নারীরা। এদিকে মন্দিরের মারেয়া (জোগানদার) আরতি রানি বলেন, পূজার আরতি থেকে প্রসাদ বিতরণসহ আনসার ও গ্রাম পুলিশের পাশাপাশি নিরাপত্তার কাজটিও করছি আমরা। বিষয়টি এলাকায় আলোচনায় এসেছে। লক্ষণপুর হাড়িপাড়া কালিমন্দির পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি রতন চন্দ্র বলেন, এবারে দুর্গাপূজা সম্পন্ন করতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার টাকা। এর মধ্যে সরকারের অনুদানের ৫০০ কেজি চাল বিক্রি করে ২০ হাজার টাকা পেয়েছি। বাকি টাকা এসেছে নারীদের মুষ্টির চাল ও বিভিন্ন হাট-বাজার থেকে তোলা অর্থ থেকে। পূজার পরেও টাকার ঘাটতি হলে ভক্তদের কাছ থেকে আবারও চাল জমিয়ে তা থেকে দেওয়া হবে।
গ্রামের বাসিন্দা রমনী কান্ত (৫৭) বলেন, অর্থের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে মন্দির সংস্কার করা সম্ভব হয়নি। এ সবের মধ্যেও পূজার আয়োজন করা হয়েছে। মন্দিরের সামনের সীমানা প্রাচীর না থাকায় অরক্ষিত থাকে মন্দির ঘরটি। অর্থের অভাবে পলেস্তার করতে না পারায় বাকি দেয়ালগুলোও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পূজা চলাকালে অর্থের অভাবে কোনও সাউন্ড সিস্টেমেরও ব্যবস্থা করা যায়নি। তবে এলাকার বিভিন্ন পূজা মন্দিরের গেট, লাইট ও ঝাঁড়বাতি দিয়ে জাঁকজমক আয়োজন করেছে বিত্তশালীরা। তাই এ পাড়ার শিশু-কিশোরদের পূজায় মন বসছে না।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কমিটির সৈয়দপুর উপজেলা শাখার সভাপতি ও শিল্পপতি রাজকুমার পোদ্দার রাজু বলেন, হাড়িপাড়ার পূজাম-পের সার্বিক বিষয়ে আমাদের নজরে রয়েছে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মন্দিরটিতে সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি। যাতে করে বিভিন্ন সময়ে উন্নত পরিবেশে পূজাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন সম্ভব হয়।
সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মকছেদুল মোমিন বলেন, লক্ষণপুর হাড়িপাড়ার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সর্বজনীন দুর্গাপূজার আনন্দ ভাগাভাগি করতে আগামীতে সব ধরনের সাহায্য সহযোগিতা করা হবে। তাদের সাহসী উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান তিনি।