ঢাকা ০৮:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৫
জাতীয় সংখ্যালঘু সম্মেলন করতে ‘পুলিশি বাধা’

পুলিশ বলছে অনুমতি নেয়নি বলে অনুষ্ঠান করতে দেওয়া হয়নি

  • আপডেট সময় : ০৯:৩২:৫৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫
  • ১৮ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকার খামারবাড়িতে শুক্রবার (২২ আগস্ট) ‘জাতীয় সংখ্যালঘু সম্মেলন’ আয়োজনের প্রস্তুতি নিলেও ‘পুলিশি বাধায়’ সেটি করা সম্ভব হয়নি বলে দাবি করেছেন আয়োজকরা। কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এ সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। তবে পুলিশ বলছে, মহানগর এলাকায় এ ধরনের আয়োজন করতে যথাযথ নিয়ম মেনে পুলিশ কমিশনারের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। তারা অনুমতি ‘নেয়নি বলেই’ তাদেরকে অনুষ্ঠান করতে দেওয়া হয়নি।

আয়োজকদের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) অনুমতি চেয়ে ডিএমপি কমিশনার বরাবর আবেদন করা হলেও অনুমতি মেলেনি। এ বিষয়ে পুলিশের ভাষ্য, ‘বিশৃঙ্খলার আশঙ্কার’ পাশাপাশি পুলিশের পূর্ব প্রস্তুতি না থাকায় ‘স্বল্প সময়ের’ মধ্যে তাদেরকে অনুমতি দেওয়া ‘সম্ভব হয়নি’।

শুক্রবার (২২ আগস্ট) সকাল ১০টা থেকে ‘সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের’ ব্যানারে ‘জাতীয় সংখ্যালঘু সম্মেলন ২০২৫: পাহাড় থেকে সমতল, অস্তিত্ব রক্ষায় অটল’ শীর্ষক এ আয়োজন হওয়ার কথা ছিল।

সেই অনুযায়ী, আয়োজকদের তরফে সব ধরনের প্রস্তুতিও ‘সম্পন্ন’ করার কথা বলা হয়। পরে পুলিশ তাদেরকে সম্মেলন করতে ‘না দেওয়ায়’ তারা খামারবাড়ি সড়কের ফুটপাতে কিছুক্ষণ অবস্থান করে ফিরে যান।

সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের ফেসবুক পেইজে দেওয়া পোস্টে বলা হয়, একটা ইনডোর প্রোগ্রাম!!! শেষ মুহূর্তে নিরাপত্তা বাহিনী থেকে বাঁধা…বাংলাদেশে তো যা সংখ্যালঘু হামলা হয়, সবটাই রাজনৈতিক।।। তাহলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সম্মেলন কে এতো ভয় পাওয়ার কি আছে?? আপনারাই তো বলেন, ৮% এক না।।। তাহলে সবাই যখন একসাথে আসতেছে, তাতে বাঁধা কেনো??? ৫৪ বছরের ইতিহাসের সাম্প্রদায়িক হামলার প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হবে, তা নিয়ে পুলিশ-প্রশাসনের এতো ভয় কেনো???

আয়োজকদের মধ্যে সুব্রত বল্লভ নামে এক শিক্ষার্থী প্রতিনিধি বলেন, আমরা সবকিছু রেডি করেছিলাম। প্রশাসনের কাছে পারমিশনের বিষয় থাকে, গতকাল (বৃহস্পতিবার) আমরা একটি দরখাস্ত জমাও দিয়েছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে তারা আর ফিডব্যাক দেয়নি। সকালে আমরা ফোন করেছি, তেজগাঁও পুলিশের কাছে গিয়েছি। কোনোকিছুই আমাদের জানানো হয়নি। সর্বশেষ আমাদের এখানে বলা হল, এখানে সমস্যা আছে।

ঘটনার বর্ণনায় তিনি বলেন, সকাল ১০টায় আমাদের প্রোগ্রাম ছিল। কিন্তু আমাদেরকে ভেতরে ঢুকতেই দেয়নি। যারা ভেতরে ঢুকেছিল, তাদেরকে বের করে দেওয়া হয়। পুলিশ বলতেছিল পারমিশন নিতে। যখন সময় শেষ হয়ে যাচ্ছিল। আমরা জানতে চাইলাম কেন দেওয়া হইতেছে না? তারপর বলল কিছু একটা সমস্যা আছে উপরের থেকে।

সম্মেলনে যোগ দিতে সারা দেশ থেকে আসা দেড় শতাধিক মানুষ এসে ফেরত চলে যায় বলেও জানান তিনি। পরে আয়োজকদের মধ্যে কয়েকজন ব্যানার নিয়ে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের সামনের সড়কে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেওয়ার চেষ্টা করলে সেখানেও পুলিশ ‘বাধা দেয়’ বলে দাবি করেন সুব্রত। পরে তারা খামারবাড়ি মোড়ের দিকে সরে গিয়ে সড়কের পাশেই বেলা প্রায় ২টা পর্যন্ত অবস্থান নিয়ে ফিরে যান।

সুব্রত বল্লভ বলেন, এভাবে আমাদের কর্মসূচি থামানো যাবে না, সম্মেলনের পরবর্তী তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে। আমরা এটি আবার আয়োজন করব।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তেজগাঁও থানার ওসি মোবারক হোসেন বলেন, তারা যে প্রোগ্রাম করতেছিল- বিশৃঙ্খলা হওয়ার সম্ভাবনা ছিল, আমাদের কাছে এমন গোয়েন্দা রিপোর্ট ছিল। এছাড়া মেট্রোপলিটন এলাকায় এ ধরনের প্রোগ্রাম করতে কমিশনার মহোদয়ের অনুমতি লাগে। তারা বৃহস্পতিবার আবেদন করেছিল, তার পরেও অনুমতি না দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা আবেদন করলে সেটি উপকমিশনার মহোদয়কে পাঠায়, উপকমিশনার পরে আমার কাছে পাঠাবে। আমি সবকিছু দেখে বিবেচনা করে যদি কোনো সমস্যা না থাকে, তাহলে অনুমতি দেওয়া হবে। কারণ এ ধরনের আয়োজন হলে তখন আমরা ফোর্স দেই। এখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন সারা দেশ থেকে আসবে, তাদের নিরাপত্তার বিষয়ও তো আছে। সবকিছু প্রক্রিয়া করতে মিনিমাম এক সপ্তাহ আগে আবেদন জমা দিতে হয়।

আয়োজকরা হলরুম ভাড়ার কাগজও দেখাতে পারেনি দাবি করে ওসি মোবারক বলেন, পরে আমি তাদেরকে বুঝিয়ে বলছি, তারা যেন পরবর্তীতে যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে আয়োজনটা করে। আমিও প্রপারলি পর্যাপ্ত ফোর্স যদি দিতে পারি, তখন যেন আয়োজন করে। হলরুম ভাড়া না করার অভিযোগের বিষয়ে আয়োজকদের একজন সুব্রত বল্লভ বলেন, আমরা ভাড়ার জন্য সকল ডকুমেন্টস জমা দিয়েছি। ভাড়া যার কাছ থেকে নিতে হয়, ফর্ম পূরণ করতে হয়, সব প্রক্রিয়াই সম্পন্ন করেছি।

হলরুম ভাড়া বাবদ ‘আংশিক টাকাও’ জমা দেওয়া হয়েছিল দাবি করে তিনি বলেন, আমাদের বলেছিল প্রশাসনের অনুমতি পেলে ভাড়ার কাগজটা আমাদের দিবে। হলরুমটা দিতে প্রশাসনের পারমিশন চাচ্ছিল।

‘সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের’ ফেসবুক পেইজে বৃহস্পতিবার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের মিলনায়তন থেকে ধারণ করা একটি ভিডিওতে সুস্মিতা কর ও সুব্রত বল্লভকে কথা বলতে দেখা গেছে। সেখানে শুক্রবারের সম্মেলনের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি ‘চলছে’ জানিয়ে সবাইকে সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

এই ভিডিওর সঙ্গে জুড়ে দেওয়া পোস্টে বলা হয়েছে, নিমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে সকল ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সংগঠন সমূহকে। দেখানো হবে বিগত ৫৪ বছর ধরে ঘটে চলা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার প্রামান্যচিত্র। স্থাপিত হবে- ৮ দফার প্রয়োজনীয়তা। স্পষ্ট হবে সংগঠনের নাম যাই হোক না কেন, ৮ দফার ক্ষেত্রে সকলে এক ও অভিন্ন।

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশব্যাপী সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আট দফা দাবিতে সনাতনী সম্প্রদায়ের মুখপাত্র হিসেবে বক্তব্য দিয়ে আসছিলেন ইসকন পরিচালিত চট্টগ্রামের মন্দির পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রক্ষচারী। গত বছরের ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামের লালদিঘী মাঠে জনসভার পর ৩০ অক্টোবর চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়, সেখানে চিন্ময় দাশকেও আসামি করা হয়। জনসভার দিন চট্টগ্রামের নিউ মার্কেট মোড়ে জাতীয় পতাকার উপরে গেরুয়া রঙের আরেকটি পাতাকা টাঙানোর অভিযোগে মামলাটি করেন ফিরোজ খান নামের এক ব্যক্তি। মামলা হওয়ার এক মাসের মাথায় ২৫ নভেম্বর বিকালে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে তাকে আটক করা হয়। পরে জানানো হয়, কোতোয়ালী থানার ওই মামলায় চিন্ময় দাশকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, খুলনা, দিনাজপুর, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত বিক্ষোভ চলে।

চিন্ময় দাশকে সেদিন রাতেই ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে নেওয়া হয়। পরদিন আদালতের মাধ্যমে পাঠানো হয় কারাগারে, তখন থেকে থেকে তিনি কারাগারেই বন্দি আছেন। তাকে কারাগারে পাঠানোর দিন আদালত প্রাঙ্গণে প্রিজন ভ্যান ঘিরে বিক্ষোভ করে সনাতনী সম্প্রদায়ের লোকজন। আড়াই ঘণ্টা পর পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে চিন্ময় দাশকে কারাগারে নিয়ে যায়।

বিক্ষোভকারীরা আদালত সড়কে রাখা বেশ কিছু মোটরসাইকেল ও যানবাহন ভাঙচুর করে। এরপর আদালতের সাধারণ আইনজীবী ও কর্মচারীরা মিলে তাদের ধাওয়া করে। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে রঙ্গম কনভেনশন হল সড়কে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যা করা হয়, ওই মামলারও আসামি চিন্ময় দাশ।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

জাতীয় সংখ্যালঘু সম্মেলন করতে ‘পুলিশি বাধা’

পুলিশ বলছে অনুমতি নেয়নি বলে অনুষ্ঠান করতে দেওয়া হয়নি

আপডেট সময় : ০৯:৩২:৫৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকার খামারবাড়িতে শুক্রবার (২২ আগস্ট) ‘জাতীয় সংখ্যালঘু সম্মেলন’ আয়োজনের প্রস্তুতি নিলেও ‘পুলিশি বাধায়’ সেটি করা সম্ভব হয়নি বলে দাবি করেছেন আয়োজকরা। কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এ সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। তবে পুলিশ বলছে, মহানগর এলাকায় এ ধরনের আয়োজন করতে যথাযথ নিয়ম মেনে পুলিশ কমিশনারের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। তারা অনুমতি ‘নেয়নি বলেই’ তাদেরকে অনুষ্ঠান করতে দেওয়া হয়নি।

আয়োজকদের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) অনুমতি চেয়ে ডিএমপি কমিশনার বরাবর আবেদন করা হলেও অনুমতি মেলেনি। এ বিষয়ে পুলিশের ভাষ্য, ‘বিশৃঙ্খলার আশঙ্কার’ পাশাপাশি পুলিশের পূর্ব প্রস্তুতি না থাকায় ‘স্বল্প সময়ের’ মধ্যে তাদেরকে অনুমতি দেওয়া ‘সম্ভব হয়নি’।

শুক্রবার (২২ আগস্ট) সকাল ১০টা থেকে ‘সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের’ ব্যানারে ‘জাতীয় সংখ্যালঘু সম্মেলন ২০২৫: পাহাড় থেকে সমতল, অস্তিত্ব রক্ষায় অটল’ শীর্ষক এ আয়োজন হওয়ার কথা ছিল।

সেই অনুযায়ী, আয়োজকদের তরফে সব ধরনের প্রস্তুতিও ‘সম্পন্ন’ করার কথা বলা হয়। পরে পুলিশ তাদেরকে সম্মেলন করতে ‘না দেওয়ায়’ তারা খামারবাড়ি সড়কের ফুটপাতে কিছুক্ষণ অবস্থান করে ফিরে যান।

সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের ফেসবুক পেইজে দেওয়া পোস্টে বলা হয়, একটা ইনডোর প্রোগ্রাম!!! শেষ মুহূর্তে নিরাপত্তা বাহিনী থেকে বাঁধা…বাংলাদেশে তো যা সংখ্যালঘু হামলা হয়, সবটাই রাজনৈতিক।।। তাহলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সম্মেলন কে এতো ভয় পাওয়ার কি আছে?? আপনারাই তো বলেন, ৮% এক না।।। তাহলে সবাই যখন একসাথে আসতেছে, তাতে বাঁধা কেনো??? ৫৪ বছরের ইতিহাসের সাম্প্রদায়িক হামলার প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হবে, তা নিয়ে পুলিশ-প্রশাসনের এতো ভয় কেনো???

আয়োজকদের মধ্যে সুব্রত বল্লভ নামে এক শিক্ষার্থী প্রতিনিধি বলেন, আমরা সবকিছু রেডি করেছিলাম। প্রশাসনের কাছে পারমিশনের বিষয় থাকে, গতকাল (বৃহস্পতিবার) আমরা একটি দরখাস্ত জমাও দিয়েছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে তারা আর ফিডব্যাক দেয়নি। সকালে আমরা ফোন করেছি, তেজগাঁও পুলিশের কাছে গিয়েছি। কোনোকিছুই আমাদের জানানো হয়নি। সর্বশেষ আমাদের এখানে বলা হল, এখানে সমস্যা আছে।

ঘটনার বর্ণনায় তিনি বলেন, সকাল ১০টায় আমাদের প্রোগ্রাম ছিল। কিন্তু আমাদেরকে ভেতরে ঢুকতেই দেয়নি। যারা ভেতরে ঢুকেছিল, তাদেরকে বের করে দেওয়া হয়। পুলিশ বলতেছিল পারমিশন নিতে। যখন সময় শেষ হয়ে যাচ্ছিল। আমরা জানতে চাইলাম কেন দেওয়া হইতেছে না? তারপর বলল কিছু একটা সমস্যা আছে উপরের থেকে।

সম্মেলনে যোগ দিতে সারা দেশ থেকে আসা দেড় শতাধিক মানুষ এসে ফেরত চলে যায় বলেও জানান তিনি। পরে আয়োজকদের মধ্যে কয়েকজন ব্যানার নিয়ে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের সামনের সড়কে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেওয়ার চেষ্টা করলে সেখানেও পুলিশ ‘বাধা দেয়’ বলে দাবি করেন সুব্রত। পরে তারা খামারবাড়ি মোড়ের দিকে সরে গিয়ে সড়কের পাশেই বেলা প্রায় ২টা পর্যন্ত অবস্থান নিয়ে ফিরে যান।

সুব্রত বল্লভ বলেন, এভাবে আমাদের কর্মসূচি থামানো যাবে না, সম্মেলনের পরবর্তী তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে। আমরা এটি আবার আয়োজন করব।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তেজগাঁও থানার ওসি মোবারক হোসেন বলেন, তারা যে প্রোগ্রাম করতেছিল- বিশৃঙ্খলা হওয়ার সম্ভাবনা ছিল, আমাদের কাছে এমন গোয়েন্দা রিপোর্ট ছিল। এছাড়া মেট্রোপলিটন এলাকায় এ ধরনের প্রোগ্রাম করতে কমিশনার মহোদয়ের অনুমতি লাগে। তারা বৃহস্পতিবার আবেদন করেছিল, তার পরেও অনুমতি না দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা আবেদন করলে সেটি উপকমিশনার মহোদয়কে পাঠায়, উপকমিশনার পরে আমার কাছে পাঠাবে। আমি সবকিছু দেখে বিবেচনা করে যদি কোনো সমস্যা না থাকে, তাহলে অনুমতি দেওয়া হবে। কারণ এ ধরনের আয়োজন হলে তখন আমরা ফোর্স দেই। এখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন সারা দেশ থেকে আসবে, তাদের নিরাপত্তার বিষয়ও তো আছে। সবকিছু প্রক্রিয়া করতে মিনিমাম এক সপ্তাহ আগে আবেদন জমা দিতে হয়।

আয়োজকরা হলরুম ভাড়ার কাগজও দেখাতে পারেনি দাবি করে ওসি মোবারক বলেন, পরে আমি তাদেরকে বুঝিয়ে বলছি, তারা যেন পরবর্তীতে যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে আয়োজনটা করে। আমিও প্রপারলি পর্যাপ্ত ফোর্স যদি দিতে পারি, তখন যেন আয়োজন করে। হলরুম ভাড়া না করার অভিযোগের বিষয়ে আয়োজকদের একজন সুব্রত বল্লভ বলেন, আমরা ভাড়ার জন্য সকল ডকুমেন্টস জমা দিয়েছি। ভাড়া যার কাছ থেকে নিতে হয়, ফর্ম পূরণ করতে হয়, সব প্রক্রিয়াই সম্পন্ন করেছি।

হলরুম ভাড়া বাবদ ‘আংশিক টাকাও’ জমা দেওয়া হয়েছিল দাবি করে তিনি বলেন, আমাদের বলেছিল প্রশাসনের অনুমতি পেলে ভাড়ার কাগজটা আমাদের দিবে। হলরুমটা দিতে প্রশাসনের পারমিশন চাচ্ছিল।

‘সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের’ ফেসবুক পেইজে বৃহস্পতিবার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের মিলনায়তন থেকে ধারণ করা একটি ভিডিওতে সুস্মিতা কর ও সুব্রত বল্লভকে কথা বলতে দেখা গেছে। সেখানে শুক্রবারের সম্মেলনের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি ‘চলছে’ জানিয়ে সবাইকে সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

এই ভিডিওর সঙ্গে জুড়ে দেওয়া পোস্টে বলা হয়েছে, নিমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে সকল ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সংগঠন সমূহকে। দেখানো হবে বিগত ৫৪ বছর ধরে ঘটে চলা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার প্রামান্যচিত্র। স্থাপিত হবে- ৮ দফার প্রয়োজনীয়তা। স্পষ্ট হবে সংগঠনের নাম যাই হোক না কেন, ৮ দফার ক্ষেত্রে সকলে এক ও অভিন্ন।

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশব্যাপী সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আট দফা দাবিতে সনাতনী সম্প্রদায়ের মুখপাত্র হিসেবে বক্তব্য দিয়ে আসছিলেন ইসকন পরিচালিত চট্টগ্রামের মন্দির পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রক্ষচারী। গত বছরের ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামের লালদিঘী মাঠে জনসভার পর ৩০ অক্টোবর চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়, সেখানে চিন্ময় দাশকেও আসামি করা হয়। জনসভার দিন চট্টগ্রামের নিউ মার্কেট মোড়ে জাতীয় পতাকার উপরে গেরুয়া রঙের আরেকটি পাতাকা টাঙানোর অভিযোগে মামলাটি করেন ফিরোজ খান নামের এক ব্যক্তি। মামলা হওয়ার এক মাসের মাথায় ২৫ নভেম্বর বিকালে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে তাকে আটক করা হয়। পরে জানানো হয়, কোতোয়ালী থানার ওই মামলায় চিন্ময় দাশকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, খুলনা, দিনাজপুর, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত বিক্ষোভ চলে।

চিন্ময় দাশকে সেদিন রাতেই ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে নেওয়া হয়। পরদিন আদালতের মাধ্যমে পাঠানো হয় কারাগারে, তখন থেকে থেকে তিনি কারাগারেই বন্দি আছেন। তাকে কারাগারে পাঠানোর দিন আদালত প্রাঙ্গণে প্রিজন ভ্যান ঘিরে বিক্ষোভ করে সনাতনী সম্প্রদায়ের লোকজন। আড়াই ঘণ্টা পর পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে চিন্ময় দাশকে কারাগারে নিয়ে যায়।

বিক্ষোভকারীরা আদালত সড়কে রাখা বেশ কিছু মোটরসাইকেল ও যানবাহন ভাঙচুর করে। এরপর আদালতের সাধারণ আইনজীবী ও কর্মচারীরা মিলে তাদের ধাওয়া করে। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে রঙ্গম কনভেনশন হল সড়কে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যা করা হয়, ওই মামলারও আসামি চিন্ময় দাশ।