ঢাকা ০৩:৩৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫

পুলিশ গেলে দোকান খোলে

  • আপডেট সময় : ০৩:০৭:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ জুলাই ২০২১
  • ১৪৯ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকানোর কঠোর লকডাউনের মধ্যে ঢাকার মুগদা বিশ্ব রোডে বেশ কয়েকটি দোকানে শাটার বা ঝাঁপ অর্ধেক তোলা দেখা গেল। দক্ষিণ মুগদার এক দোকানের বলেন, “প্রথম প্রথম দুয়েকদিন দোকান খুলতে ভয় লাগত। গলিতে পুলিশ আসত। এখন কয়দিন ধরে আসে না। সন্ধ্যার দিকে একবার আসে, তখন তাড়াতাড়ি করে ঝাঁপ ফালায়া দেই। সবাই তাই করে।”
এমন চিত্র এখন ঢাকার সব খানে। পুলিশ টহলে এলে দোকান বন্ধ হয়ে যায়, পুলিশ চলে গেলে ফের খোলে। আর পথে মানুষের চলাচলও অনেক বেশি। এসব দেখে মোহাম্মদপুরের সলিমুল্লাহ রোডের বাসিন্দা মাসুদ বলেন, “কী হবে ভাই, লকডাউন কি এভাবে চলে? রাস্তায় লোকজন চলছে। কাজে আকাজে লোকজন বাইর হয়।”
লকডাউনের দশম দিন শনিবার রাজধানীর অলি-গলিতে চলাচল বাড়ার সঙ্গে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতাতেও দেখা গেছে ঢিলেঢালা ভাব। কঠোর লকডাউনের কঠোরতা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এখন নেই বললেই চলে। মূল রাস্তায় চলাচলের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি কিছুটা মানলেও অলি-গলিতে চলাচলে তার বালাই থাকছে না। শারীরিক বা সামাজিক দূরত্ব তো অনেক পরের কথা, অনেকের মুখে মাস্কও নেই।
মুগদা, মহাখালী, গোপীবাগ, ইত্তেফাক মোড়, ফকিরাপুল, মালিবাগ, মগবাজার, মৌচাক, রামপুরা, কাকরাইল, বিজয়নগর, পল্টন, চানখার পুল, মোহাম্মদপুর, আজিমপুর, লালবাগ, কেল্লার মোড়, বকশীবাজার, পলাশী, আদাবর, শেখেরটেক, রিংরোড, নিউ মার্কেট, গ্রীন রোড, শুক্রাবাদ, সোবাহানবাগ, বাড্ডা, মিরপুরের রুপনগর, পল্লবী, আরামবাগসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।

মুগদা এলাকায় অলি-গলিতে মানুষের চলাচল ছিল স্বাভাবিক দিনের মতোই। সকালে অন্যসব এলাকার মতো বাজার করতে ছিল মানুষের ভিড়। মুগদা বিশ্বরোডে রিকশা চলাচল গত কয়েকদিনের তুলনায় বেশি ছিল। অনেক দোকনই ছিল খোলা। মুগদা থানার পার্শ্ববর্তী এলাকা হলেও পুলিশ, র‌্যাব বা কোনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে টহলে দেখা যায়নি।
গতকাল শনিবার ছুটির দিন হলেও রাস্তায় লোকজনের কমতি ছিল না মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন এলাকায়। রিকশা, ভ্যান, প্রাইভেটকারের চলাচল ছিল চোখে পড়ার মতো। এ এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা একেবারেই চোখে পড়েনি। টাউন হলের মসজিদ মার্কেটের উত্তরে ফুটপাতের সবজি বিক্রেতা মতলু মোল্লা বলেন, “আমার কোনো সমস্যা নাই। ভোরে কারওয়ান বাজার থেকে সবজি আনার সময় রাস্তায় কোনো পুলিশ দেখি নাই।” টাউন হলের বাজারে স্বাভাবিক দিনের মতোই ক্রেতার ভিড় দেখা গেছে। দোকানপাটও খোলা। এ বাজারের স্যানেটারি ব্যবসায়ী শাহজাহান মিয়া বলেন, “চুরি করে ব্যবসা করতে হচ্ছে। পুলিশও বুঝে। অনেক সময় পুলিশ না দেখার ভান করে চলে যায়।”
নূরজাহান রোডে একটি ওষুধের দোকানে সামনে কয়েকজনকে আড্ডা দিতে দেখা যায়। আজিমপুর, লালবাগ, কেল্লারমোড়, বকশিবাজার ও পলাশীর অলিগলি ও প্রধান সড়কে মানুষ ও গাড়ি চলাচল আগের চেয়ে বেশি দেখা গেছে। এসব এলাকার অলি গলিতে ভ্যানে ফল আর সবজির পসরা আগের মতোই। সবজি ও মুদি দোকানগুলোতে ক্রেতার ভিড়ে স্বাস্থ্যবিধি ছিল উধাও। লকডাউনের মধ্যে শনিবার ঢাকার সোবহানবাগ এলাকার চিত্র।লকডাউনের মধ্যে শনিবার ঢাকার সোবহানবাগ এলাকার চিত্র। একই রকম দৃশ্য লালবাগ চৌরাস্তা, ঢাকেশ্বরী, পলাশীর মোড় ও বকশীবাজারে অলিগলিতেও। এসব এলাকায় পুলিশের তৎপরতা দেখা না গেলেও আজিমপুর চৌরাস্তায় পুলিশের উপস্থিতি ছিল। আদাবর, শেখেরটেক, রিংরোডে প্রায় সব ধরনের দোকানপাটই খোলা দেখা গেছে। তবে বেশিরভাগ দোকান অর্ধেক খোলা। দুই সপ্তাহের লকডাউনের দশম দিনে রাস্তায় চলাচলকারীদের অধিকাংশের মাস্ক থাকলেও তা গলায় ঝুলছে বা থুতনিতে আটকে আছে। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মী আবিদুর রহমান কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংকে এসেছেন রোগী নিয়ে। তিনি বলেন, “রাস্তা-ঘাটে মানুষের করোনা সচেতনতাবোধ একেবারে কম। মাস্ক নিয়ে বেরুচ্ছেন। কিন্তু মুখে না দিয়ে গলায় ঝুলিয়ে রাখছেন। আমাদের এখানে করোনাভাইরাস যেভাবে বিস্তার ঘটেছে তার জন্য এটা বিপদ বলে আমার কাছে মনে হচ্ছে।” চার দিন পরই দুই সপ্তাহের লকডাউন শেষ হতে যাচ্ছে। এরপর কী হবে তা নিয়েও শঙ্কিত আবিদুর রহমান। তিনি বলেন, “সামনে ঈদ। যেভাবে মৃত্যু বাড়ছে সামনে যে কী হবে বুঝতে পারছি না! একজন রোগী নিয়ে এসেছি হাসপাতালে। ভয়ে আছি ডাক্তার দেখিয়ে চলে যাব।”

কাকরাইলের মোড়ে চেক পোস্টে পুলিশের তৎপরতা দেখা গেছে। প্রাইভেটকার, সিএনজি বা মোটরসাইকেল থামিয়ে তারা জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “২০ থেকে ৩০টি প্রাইভেট কারকে থামিয়ে দেখেছি, অধিকাংশই মিথ্যা কথা বলছেন। কিন্তু কিছু করার নেই। হয় জরিমান করা হচ্ছে, নয় তো ছেড়ে দিতে হচ্ছে।” নিউ মার্কেট, গ্রীন রোড এলাকা ঘুরে পুলিশ, র‌্যাবের উপস্থিতি থাকলেও তাদের তৎপর দেখা যায়নি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

পুলিশ গেলে দোকান খোলে

আপডেট সময় : ০৩:০৭:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ জুলাই ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকানোর কঠোর লকডাউনের মধ্যে ঢাকার মুগদা বিশ্ব রোডে বেশ কয়েকটি দোকানে শাটার বা ঝাঁপ অর্ধেক তোলা দেখা গেল। দক্ষিণ মুগদার এক দোকানের বলেন, “প্রথম প্রথম দুয়েকদিন দোকান খুলতে ভয় লাগত। গলিতে পুলিশ আসত। এখন কয়দিন ধরে আসে না। সন্ধ্যার দিকে একবার আসে, তখন তাড়াতাড়ি করে ঝাঁপ ফালায়া দেই। সবাই তাই করে।”
এমন চিত্র এখন ঢাকার সব খানে। পুলিশ টহলে এলে দোকান বন্ধ হয়ে যায়, পুলিশ চলে গেলে ফের খোলে। আর পথে মানুষের চলাচলও অনেক বেশি। এসব দেখে মোহাম্মদপুরের সলিমুল্লাহ রোডের বাসিন্দা মাসুদ বলেন, “কী হবে ভাই, লকডাউন কি এভাবে চলে? রাস্তায় লোকজন চলছে। কাজে আকাজে লোকজন বাইর হয়।”
লকডাউনের দশম দিন শনিবার রাজধানীর অলি-গলিতে চলাচল বাড়ার সঙ্গে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতাতেও দেখা গেছে ঢিলেঢালা ভাব। কঠোর লকডাউনের কঠোরতা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এখন নেই বললেই চলে। মূল রাস্তায় চলাচলের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি কিছুটা মানলেও অলি-গলিতে চলাচলে তার বালাই থাকছে না। শারীরিক বা সামাজিক দূরত্ব তো অনেক পরের কথা, অনেকের মুখে মাস্কও নেই।
মুগদা, মহাখালী, গোপীবাগ, ইত্তেফাক মোড়, ফকিরাপুল, মালিবাগ, মগবাজার, মৌচাক, রামপুরা, কাকরাইল, বিজয়নগর, পল্টন, চানখার পুল, মোহাম্মদপুর, আজিমপুর, লালবাগ, কেল্লার মোড়, বকশীবাজার, পলাশী, আদাবর, শেখেরটেক, রিংরোড, নিউ মার্কেট, গ্রীন রোড, শুক্রাবাদ, সোবাহানবাগ, বাড্ডা, মিরপুরের রুপনগর, পল্লবী, আরামবাগসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।

মুগদা এলাকায় অলি-গলিতে মানুষের চলাচল ছিল স্বাভাবিক দিনের মতোই। সকালে অন্যসব এলাকার মতো বাজার করতে ছিল মানুষের ভিড়। মুগদা বিশ্বরোডে রিকশা চলাচল গত কয়েকদিনের তুলনায় বেশি ছিল। অনেক দোকনই ছিল খোলা। মুগদা থানার পার্শ্ববর্তী এলাকা হলেও পুলিশ, র‌্যাব বা কোনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে টহলে দেখা যায়নি।
গতকাল শনিবার ছুটির দিন হলেও রাস্তায় লোকজনের কমতি ছিল না মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন এলাকায়। রিকশা, ভ্যান, প্রাইভেটকারের চলাচল ছিল চোখে পড়ার মতো। এ এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা একেবারেই চোখে পড়েনি। টাউন হলের মসজিদ মার্কেটের উত্তরে ফুটপাতের সবজি বিক্রেতা মতলু মোল্লা বলেন, “আমার কোনো সমস্যা নাই। ভোরে কারওয়ান বাজার থেকে সবজি আনার সময় রাস্তায় কোনো পুলিশ দেখি নাই।” টাউন হলের বাজারে স্বাভাবিক দিনের মতোই ক্রেতার ভিড় দেখা গেছে। দোকানপাটও খোলা। এ বাজারের স্যানেটারি ব্যবসায়ী শাহজাহান মিয়া বলেন, “চুরি করে ব্যবসা করতে হচ্ছে। পুলিশও বুঝে। অনেক সময় পুলিশ না দেখার ভান করে চলে যায়।”
নূরজাহান রোডে একটি ওষুধের দোকানে সামনে কয়েকজনকে আড্ডা দিতে দেখা যায়। আজিমপুর, লালবাগ, কেল্লারমোড়, বকশিবাজার ও পলাশীর অলিগলি ও প্রধান সড়কে মানুষ ও গাড়ি চলাচল আগের চেয়ে বেশি দেখা গেছে। এসব এলাকার অলি গলিতে ভ্যানে ফল আর সবজির পসরা আগের মতোই। সবজি ও মুদি দোকানগুলোতে ক্রেতার ভিড়ে স্বাস্থ্যবিধি ছিল উধাও। লকডাউনের মধ্যে শনিবার ঢাকার সোবহানবাগ এলাকার চিত্র।লকডাউনের মধ্যে শনিবার ঢাকার সোবহানবাগ এলাকার চিত্র। একই রকম দৃশ্য লালবাগ চৌরাস্তা, ঢাকেশ্বরী, পলাশীর মোড় ও বকশীবাজারে অলিগলিতেও। এসব এলাকায় পুলিশের তৎপরতা দেখা না গেলেও আজিমপুর চৌরাস্তায় পুলিশের উপস্থিতি ছিল। আদাবর, শেখেরটেক, রিংরোডে প্রায় সব ধরনের দোকানপাটই খোলা দেখা গেছে। তবে বেশিরভাগ দোকান অর্ধেক খোলা। দুই সপ্তাহের লকডাউনের দশম দিনে রাস্তায় চলাচলকারীদের অধিকাংশের মাস্ক থাকলেও তা গলায় ঝুলছে বা থুতনিতে আটকে আছে। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মী আবিদুর রহমান কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংকে এসেছেন রোগী নিয়ে। তিনি বলেন, “রাস্তা-ঘাটে মানুষের করোনা সচেতনতাবোধ একেবারে কম। মাস্ক নিয়ে বেরুচ্ছেন। কিন্তু মুখে না দিয়ে গলায় ঝুলিয়ে রাখছেন। আমাদের এখানে করোনাভাইরাস যেভাবে বিস্তার ঘটেছে তার জন্য এটা বিপদ বলে আমার কাছে মনে হচ্ছে।” চার দিন পরই দুই সপ্তাহের লকডাউন শেষ হতে যাচ্ছে। এরপর কী হবে তা নিয়েও শঙ্কিত আবিদুর রহমান। তিনি বলেন, “সামনে ঈদ। যেভাবে মৃত্যু বাড়ছে সামনে যে কী হবে বুঝতে পারছি না! একজন রোগী নিয়ে এসেছি হাসপাতালে। ভয়ে আছি ডাক্তার দেখিয়ে চলে যাব।”

কাকরাইলের মোড়ে চেক পোস্টে পুলিশের তৎপরতা দেখা গেছে। প্রাইভেটকার, সিএনজি বা মোটরসাইকেল থামিয়ে তারা জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “২০ থেকে ৩০টি প্রাইভেট কারকে থামিয়ে দেখেছি, অধিকাংশই মিথ্যা কথা বলছেন। কিন্তু কিছু করার নেই। হয় জরিমান করা হচ্ছে, নয় তো ছেড়ে দিতে হচ্ছে।” নিউ মার্কেট, গ্রীন রোড এলাকা ঘুরে পুলিশ, র‌্যাবের উপস্থিতি থাকলেও তাদের তৎপর দেখা যায়নি।