ঢাকা ০৯:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

পুলিশ কোনো পতিত অফিসারের কথা শোনে না

  • আপডেট সময় : ০৫:৩৭:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ৫ বার পড়া হয়েছে

আনসার উদ্দিন খান পাঠান : আপনি সাবেক পুলিশপ্রধান। শিক্ষায়, স্বাস্থ্যে, অহমিকায়, দুর্নীতিতে, কুকীর্তিতে, বাহিনীর দলীয়করণে, চাকরি শৃঙ্খলা তছনছ করায়, শর্তহীন রাজনৈতিক আনুগত্যে নজিরবিহীন উদাহরণ সৃষ্টি করে পালিয়ে গেছেন দেশ থেকে। সেই আপনিই বিদেশ থেকে আপনার ফ্যাসিবাদী বন্ধুদের কাছে পুলিশ নিয়ে মিথ্যে মিথ দাঁড় করিয়ে আবার এক নোংরা খেলায় মেতেছেন।
সুযোগ পেলেই আপনার পতিত দলের সমর্থনে পুলিশ নেমে যাবে সে বিশ্বাস কি সত্যি আপনি করেন? যেখানে আগস্টের ৩-৪ তারিখ অন্য বাহিনী আন্দোলনরত জনসাধারণের ওপর গুলি চালানো বন্ধ করে দেয়, আপনার পুলিশ ৫ তারিখ সন্ধ্যা পর্যন্ত গুলি চালাচ্ছিল, অন্ধভাবে তখনও তারা মরছিল আর মারছিল। আপনার প্রিয়ভাজন স্টার কপেরা গুলি চালাবার নির্দেশ দিয়ে হেলিকপ্টারে সটকে পড়ে। অধীনস্থরা নির্দেশনার জন্য কাউকে খুঁজে পায়নি। সেই বিপদসংকুল সময় পার করা অধীনস্থরা আপনার বা আপনার দলের প্রতি প্রসন্ন থাকবে? হাসালেন। আপনার মতো চরমভাবে দলীয় চিহ্নিত কিছু কর্মকর্তার অবিমৃষ্যকারিতায় জনরোষে পিষ্ট, ক্ষত বিক্ষত পুলিশ আপনাকে আর সমীহ করে না ব্রো। অধীনস্থরা আপনার আর আপনার রেখে যাওয়া অনুসারীদের নাম শুনলে এক দলা থুথু দেয়, আপনাদের বিচার চায় প্রকাশ্যে।

আপনার ভাষায়- ‘এন্টি আওয়ামীলীগ রাজনৈতিক দল বিএনপি আর জাতীয় পার্টি’র সময় যে পুলিশ রিক্রুট হয়েছে তারা সবাই আপনার প্রিয় দলের বিপক্ষে। এত সরলীকরণ করলে কি চলে? আপনি নিজেও তো এরশাদ আমলে ঢুকেছেন পুলিশে, বিএনপি আমলে যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা, বিদেশ ভ্রমণ-প্রমোশন সবই নিয়েছেন। বিএনপি আমলেই রাজারবাগে ফোর্সের টিএ ডিএ এর টাকা আত্মসাৎ, নারায়ণগঞ্জে শৃঙ্খলা ভঙ্গ, কিশোরগঞ্জে জুনিয়র কর্মকর্তার স্ত্রীর সাথে অশোভন আচরণ, পুলিশ সদর দফতরে বসে সরাসরি বিদেশি দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ এসব অভিযোগে বিভাগীয় মামলা থেকে হাতেপায়ে ধরে বিএনপি সরকারেরই আনূকুল্য নিয়ে কোনো রকমে পার পেয়েছেন।
বিএনপি সরকার সৃষ্ট পিওএইচএস আবাসিক এলাকায় বরাদ্দের চেয়ে বেশি জমি নিয়ে দশ কাঠার বিশাল প্লট বাগিয়েছেন। শুধু তাই নয়, বিএনপি আমলেই আপনি সরকারের অনুমোদনে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে চাকরি করতে গেছেন। তো আপনি কি তাই বলে বিএনপির সমর্থক হয়ে গিয়েছিলেন? বা.আ.ল এর ক্ষমতা পেয়ে পরে তো ঠিক তার উল্টোই করেছেন। আপনার নেত্রী যেমন গায়েবি ভাষণ দিয়ে দেশে অবস্থানরত তার নেতাকর্মীদের বিপদে ফেলেছেন আপনি তেমনি দূরদেশে বসে অডিও বক্তৃতা দিয়ে দেশের অনেক অফিসারকে বিপদে ফেলেছেন। সন্দেহের চোখ যাবে এখন অনেকের দিকে।
মনে রাখা দরকার, পুলিশ কোনো পতিত অফিসারের কথা শুনে না, আপনিও কাউকে পাবেন না যেমন করে আপনি চাইছেন। রাজনৈতিক বন্ধুদের বাহবা নেওয়ার জন্য আবোল-তাবোল বলতে পারবেন শুধু।

লেখক: বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক পদস্থ কর্মকর্তা

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

পুলিশ কোনো পতিত অফিসারের কথা শোনে না

আপডেট সময় : ০৫:৩৭:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

আনসার উদ্দিন খান পাঠান : আপনি সাবেক পুলিশপ্রধান। শিক্ষায়, স্বাস্থ্যে, অহমিকায়, দুর্নীতিতে, কুকীর্তিতে, বাহিনীর দলীয়করণে, চাকরি শৃঙ্খলা তছনছ করায়, শর্তহীন রাজনৈতিক আনুগত্যে নজিরবিহীন উদাহরণ সৃষ্টি করে পালিয়ে গেছেন দেশ থেকে। সেই আপনিই বিদেশ থেকে আপনার ফ্যাসিবাদী বন্ধুদের কাছে পুলিশ নিয়ে মিথ্যে মিথ দাঁড় করিয়ে আবার এক নোংরা খেলায় মেতেছেন।
সুযোগ পেলেই আপনার পতিত দলের সমর্থনে পুলিশ নেমে যাবে সে বিশ্বাস কি সত্যি আপনি করেন? যেখানে আগস্টের ৩-৪ তারিখ অন্য বাহিনী আন্দোলনরত জনসাধারণের ওপর গুলি চালানো বন্ধ করে দেয়, আপনার পুলিশ ৫ তারিখ সন্ধ্যা পর্যন্ত গুলি চালাচ্ছিল, অন্ধভাবে তখনও তারা মরছিল আর মারছিল। আপনার প্রিয়ভাজন স্টার কপেরা গুলি চালাবার নির্দেশ দিয়ে হেলিকপ্টারে সটকে পড়ে। অধীনস্থরা নির্দেশনার জন্য কাউকে খুঁজে পায়নি। সেই বিপদসংকুল সময় পার করা অধীনস্থরা আপনার বা আপনার দলের প্রতি প্রসন্ন থাকবে? হাসালেন। আপনার মতো চরমভাবে দলীয় চিহ্নিত কিছু কর্মকর্তার অবিমৃষ্যকারিতায় জনরোষে পিষ্ট, ক্ষত বিক্ষত পুলিশ আপনাকে আর সমীহ করে না ব্রো। অধীনস্থরা আপনার আর আপনার রেখে যাওয়া অনুসারীদের নাম শুনলে এক দলা থুথু দেয়, আপনাদের বিচার চায় প্রকাশ্যে।

আপনার ভাষায়- ‘এন্টি আওয়ামীলীগ রাজনৈতিক দল বিএনপি আর জাতীয় পার্টি’র সময় যে পুলিশ রিক্রুট হয়েছে তারা সবাই আপনার প্রিয় দলের বিপক্ষে। এত সরলীকরণ করলে কি চলে? আপনি নিজেও তো এরশাদ আমলে ঢুকেছেন পুলিশে, বিএনপি আমলে যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা, বিদেশ ভ্রমণ-প্রমোশন সবই নিয়েছেন। বিএনপি আমলেই রাজারবাগে ফোর্সের টিএ ডিএ এর টাকা আত্মসাৎ, নারায়ণগঞ্জে শৃঙ্খলা ভঙ্গ, কিশোরগঞ্জে জুনিয়র কর্মকর্তার স্ত্রীর সাথে অশোভন আচরণ, পুলিশ সদর দফতরে বসে সরাসরি বিদেশি দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ এসব অভিযোগে বিভাগীয় মামলা থেকে হাতেপায়ে ধরে বিএনপি সরকারেরই আনূকুল্য নিয়ে কোনো রকমে পার পেয়েছেন।
বিএনপি সরকার সৃষ্ট পিওএইচএস আবাসিক এলাকায় বরাদ্দের চেয়ে বেশি জমি নিয়ে দশ কাঠার বিশাল প্লট বাগিয়েছেন। শুধু তাই নয়, বিএনপি আমলেই আপনি সরকারের অনুমোদনে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে চাকরি করতে গেছেন। তো আপনি কি তাই বলে বিএনপির সমর্থক হয়ে গিয়েছিলেন? বা.আ.ল এর ক্ষমতা পেয়ে পরে তো ঠিক তার উল্টোই করেছেন। আপনার নেত্রী যেমন গায়েবি ভাষণ দিয়ে দেশে অবস্থানরত তার নেতাকর্মীদের বিপদে ফেলেছেন আপনি তেমনি দূরদেশে বসে অডিও বক্তৃতা দিয়ে দেশের অনেক অফিসারকে বিপদে ফেলেছেন। সন্দেহের চোখ যাবে এখন অনেকের দিকে।
মনে রাখা দরকার, পুলিশ কোনো পতিত অফিসারের কথা শুনে না, আপনিও কাউকে পাবেন না যেমন করে আপনি চাইছেন। রাজনৈতিক বন্ধুদের বাহবা নেওয়ার জন্য আবোল-তাবোল বলতে পারবেন শুধু।

লেখক: বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক পদস্থ কর্মকর্তা