ঢাকা ১০:৪৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

পুলিশের কথা শুইনা হাসে

  • আপডেট সময় : ০৯:০৭:৪৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২১
  • ১৩৬ বার পড়া হয়েছে

মোকাম্মেল হোসেন : রাস্তায় হা করে দাঁড়িয়ে আছি। গন্তব্য শ্যামলী। একলা হলে বাসে সওয়ার হতাম। সাথে আন্ডা-বাচ্চা আর তাদের জন্মদাত্রী ছাড়াও মাল-সামানা দুই বস্তা। কাজেই তিন চাক্কার সিএনজি চালিত অটোরিকশা ছাড়া গত্যন্তর নেই। চেহারায় খুব দুঃখী ও কাতর ভাব ফুটিয়ে তুলে উক্ত ক্যাটাগরির যানবাহনের মহান চালকদের করুণা ভিক্ষা করতে করতে আলাজিভ শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল; কিন্তু মোক্ষ লাভ হচ্ছে না। দূর থেকে খেয়াল করলাম, বাচ্চারা ট্যা-ট্যা শুরু করে দিয়েছে। আর তাদের মা এমন দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাচ্ছেন, যার শানে নুজুল হচ্ছে- আরে আমার পুরুষ! এতক্ষণ লাগে একটা ‘সিএনজি’ ভাড়া করতে?
কী উপায়ে নিজের পৌরষত্ব রক্ষা হবে, ভেবে কোনো কুল-কিনারা পাচ্ছি না। প্রথমে কাজটা কঠিন মনে হয়েছিল। এখন মনে হচ্ছে অসম্ভব। অসম্ভবকে সম্ভব করার অভিপ্রায়ে ড্রাইভারদের বয়স অনুপাতে কাউকে ভাই, কাউকে ভাইজান, কাউকে মামা বলে সম্বোধন করছি। কিন্তু কাজ হচ্ছে না; চারদিকে শুধু না-না শব্দ উচ্চারিত হচ্ছে। প্রচ- ঝড়ের কবলে পড়ে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য মাঝি যেমন নিজেকে নিয়তির হাতে সঁপে দেয়, আমিও অনুরূপ পন্থা অবলম্বন করলাম। ‘ভাই যাবেন’ বলে আর কাউকে অনুনয় করব না; দেখি কেউ আমাকে ‘কই যাবেন’ বলে শুধায় কিনা? ধ্যানমগ্ন ঋষির ন্যায় চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছি, হঠাৎ একটা চিৎকার কানে আসতেই চোখ মেলে দেখি- বড় ছেলে ইশারায় ডাকছে। ওখান থেকেই জানতে চাইলাম-
গা ঝাড়া দিয়ে বসতেই আরেকটা ‘সিএনজি’ অটোরিকশা এসে সামনে দাঁড়াল।এটার পেছনেও যথারীতি লেখা রয়েছে- কোনো অভিযোগ থাকলে ফোন করুন; এরপর পুলিশ কন্ট্রোল রুমের বেশ কটি ফোন নম্বর দেওয়া। এবার সত্যি সত্যি একটা নম্বরে ফোন করে অপেক্ষা করতে লাগলাম, অপরপ্রান্ত থেকে কোনো কণ্ঠস্বর শোনার জন্য…
: কি হইছে?
: আম্মা তোমারে ডাকে।
হেড অফিসের ডাক। ঋষি কেন, ঋষির বাপেরও সাধ্য নাই উদাসীন থাকার। উদাসীনতা পরিহার করে নিকটবর্তী হলাম। বউ জিজ্ঞেস করল-
: কী হইছে? থুম ধইরা দাঁড়াইয়া রইছো কেন?
: থুম ধরি নাই। চক্ষু বন্ধ কইরা মনে মনে আল্লাহরে ডাকতেছিলাম।
: খালি হাতে আল্লাহরে ডাইকা লাভ নাই। হাতে তসবি লও। তবে তার আগে দয়া কইরা একটা কাজ করো।
: কী কাজ!
: আমারে বাসে উঠাইয়া দেও। আমি এই দুইডারে লইয়া বাসায় যাই। তুমি বস্তাবস্তি লইয়া পরে আসো।
বউয়ের হুকুম তামিল করে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম। যাক, বস্তার হাত-পা, চক্ষু-কণ্ঠ নাই। ঘন্টার পর ঘন্টা পড়ে থাকলেও হাত-পা ছুঁড়বে না; দৃষ্টি দিয়ে ভষ্ম আর শব্দ দিয়ে কর্ণযুগল বিদীর্ণ করার প্রয়াস চালাবে না। এক কাপ চা পেটে ঢালতে পারলে ভালো হতো। কিনতু বস্তা রেখে নড়ার উপায় নেই। এসময় একটা ‘সিএনজি’ অটোরিকশা এসে পাশে থামল। পুনরায় উদ্যোগী হয়ে বললাম-
: ভাই, শ্যামলী যাবেন?
: না।
: বলেন তো ভাই আপনের নিয়তটা কী? বলেন, আপনে কই যাবেন?
: কইলাম তো যামু না।
: যামু না এইটা কী ধরনের শব্দ? কোথাও না কোথাও তো আপনে যাবেন, নাকি? বলেন, চান্দে যাবেন, না মঙ্গল গ্রহে যাবেন?
: ভাই, ক্যাচাল করতেছেন কীজন্য! আমার গাড়ি সায়দাবাদের। আমি সায়দাবাদ যামু।
: শ্যামলী হইয়া সায়দাবাদ যান।
: না।
অবশেষে একজন ড্রাইভার পেলাম, যার চাঁদমুখ থেকে বের হলো, সে শ্যামলী যাবে। তবে ভাড়া দিতে হবে দুইশ’ টাকা। আঁতকে ওঠে বললাম-
: কও কী! আমি মাসে অন্তত দুইবার ঢাকা-মমিসিং আপ-ডাউন করি। এইখান থেইকা বাসে শ্যামলীর ভাড়া মাত্র বিশ টাকা।
: বাসে যান।
: বাসে যাওয়ার কন্ডিশনে থাকলে তোমার লেজে তেল মালিশ করতাম?
: বর্তমানে মালিকরে অনেক বেশি জমা দিতে হয়।
: সেইজন্য পাবলিকের গলা কাটবা? আইচ্ছা ঠিক আছে, বিশ টাকার জায়গায় তুমি একশ’ টাকা নেও।
: না।
: দেড়শ’ টাকা।
: না।
রোদের ঝাঁঝ আগের চেয়ে আরো বেড়েছে। একটা বস্তার ওপর বসে পড়লাম। সময় দেখার জন্য পকেট থেকে মোবইল ফোন বের করার পর হঠাৎ মনে হলো, ‘সিএনজি’ চালকদের ত্যান্দামির বিষয়টা পুলিশকে জানালে কেমন হয়? সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ‘সিএনজি’ অটোরিকশার পেছনে লিখে রাখা পুলিশ কন্ট্রোল রুমের নম্বরে ফোন করলাম। কয়েকবার চেষ্টার পর একজনের কণ্ঠস্বর শোনা যেতেই বললাম-
: হ্যালো, পুকরু?
: পুকরু মানে? গালি দিলেন কীজন্য?
: গালি দেই নাই ভাই! আমি বলছি পুকরু। পুকরু মানে পুলিশ কন্ট্রোল রুম। ‘সিএনজি’র পাছায় এই শব্দই লেইখা রাখছে।
: বুঝতে পারছি। তবে আপনে যেভাবে পুকরু উচ্চারণ করছেন, ভাবলাম, কোন শালারপুতে গালি দিল। বুঝলেন ভাই, শান্তি নাই। এই দেশে দিন-রাইত চব্বিশ ঘন্টা পুলিশরে গালি দেওয়ার যে কালচার শুরু হইছে, মনে হইলে মাঝেমধ্যে অস্থির হইয়া যাই। এইবার বলেন, কী কারণে ফোন করছেন?
: সিএনজিওয়ালারা তো যাইতে চায় না!
: যাইতে না চাওয়ার কোনো কারণ নাই। যাওয়া-যাওয়ি করাটাই ওদের কর্ম এবং ধর্ম।
: ধর্মরে নির্বাসনে পাঠাইয়া এই সেক্টরে অধর্মের রাজত্ব কায়েম হইছে।
: আপনে ভালো কইরা বলেন।
: বলছি। মাখন লাগাইয়া বলছি।সালাম, আদাব, নমস্কার সহযোগে বলছি। কোনো কাজ হইতেছে না।
: সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল বেকা করেন। হারামজাদার গোষ্ঠিরে বলেন, তোদের বাপ পুলিশরে খবর দিতেছি।
: পুলিশের ভয়ও দেখাইছি। পুলিশের কথা শুইনা হাসে।

  • হাসে? হাসির রস বাইর করতেছি। আপনে কুন এরিয়া থেইকা বলতেছেন?
    : মহাখালী বাস টার্মিনাল।
    : জাস্ট ওয়েট। আমরা অ্যাকশনে নামতেছি।
    পুলিশ ভাইদের ‘অ্যাকশন’এর অপেক্ষায় বসে থাকার এক পর্যায়ে মনে হলো, আরে! আমি তো কাউকে ফোনই করিনি। কথা বলা তো দূরস্থান। তন্দ্রাভাব ছুটে যেতেই বিষয়টা বুঝতে পারলাম। চারপাশের পরিবেশ ও ঘটনা মিলিয়ে আমার মধ্যে এক ধরনের হেল্যুসিনেশন বা বিভ্রম তৈরি হয়েছে। এর ফলে কল্পনায় আমি সমস্যার সমাধান পাওয়ার চেষ্টা করেছি।
    গা ঝাড়া দিয়ে বসতেই আরেকটা ‘সিএনজি’ অটোরিকশা এসে সামনে দাঁড়াল।এটার পেছনেও যথারীতি লেখা রয়েছে- কোনো অভিযোগ থাকলে ফোন করুন; এরপর পুলিশ কন্ট্রোল রুমের বেশ কটি ফোন নম্বর দেওয়া। এবার সত্যি সত্যি একটা নম্বরে ফোন করে অপেক্ষা করতে লাগলাম, অপরপ্রান্ত থেকে কোনো কণ্ঠস্বর শোনার জন্য…
    লেখক : সাংবাদিক, রম্যলেখক।
ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

মব সন্ত্রাস থামছে না, আক্রান্ত ব্যক্তিই হচ্ছেন আসামি

পুলিশের কথা শুইনা হাসে

আপডেট সময় : ০৯:০৭:৪৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২১

মোকাম্মেল হোসেন : রাস্তায় হা করে দাঁড়িয়ে আছি। গন্তব্য শ্যামলী। একলা হলে বাসে সওয়ার হতাম। সাথে আন্ডা-বাচ্চা আর তাদের জন্মদাত্রী ছাড়াও মাল-সামানা দুই বস্তা। কাজেই তিন চাক্কার সিএনজি চালিত অটোরিকশা ছাড়া গত্যন্তর নেই। চেহারায় খুব দুঃখী ও কাতর ভাব ফুটিয়ে তুলে উক্ত ক্যাটাগরির যানবাহনের মহান চালকদের করুণা ভিক্ষা করতে করতে আলাজিভ শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল; কিন্তু মোক্ষ লাভ হচ্ছে না। দূর থেকে খেয়াল করলাম, বাচ্চারা ট্যা-ট্যা শুরু করে দিয়েছে। আর তাদের মা এমন দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাচ্ছেন, যার শানে নুজুল হচ্ছে- আরে আমার পুরুষ! এতক্ষণ লাগে একটা ‘সিএনজি’ ভাড়া করতে?
কী উপায়ে নিজের পৌরষত্ব রক্ষা হবে, ভেবে কোনো কুল-কিনারা পাচ্ছি না। প্রথমে কাজটা কঠিন মনে হয়েছিল। এখন মনে হচ্ছে অসম্ভব। অসম্ভবকে সম্ভব করার অভিপ্রায়ে ড্রাইভারদের বয়স অনুপাতে কাউকে ভাই, কাউকে ভাইজান, কাউকে মামা বলে সম্বোধন করছি। কিন্তু কাজ হচ্ছে না; চারদিকে শুধু না-না শব্দ উচ্চারিত হচ্ছে। প্রচ- ঝড়ের কবলে পড়ে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য মাঝি যেমন নিজেকে নিয়তির হাতে সঁপে দেয়, আমিও অনুরূপ পন্থা অবলম্বন করলাম। ‘ভাই যাবেন’ বলে আর কাউকে অনুনয় করব না; দেখি কেউ আমাকে ‘কই যাবেন’ বলে শুধায় কিনা? ধ্যানমগ্ন ঋষির ন্যায় চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছি, হঠাৎ একটা চিৎকার কানে আসতেই চোখ মেলে দেখি- বড় ছেলে ইশারায় ডাকছে। ওখান থেকেই জানতে চাইলাম-
গা ঝাড়া দিয়ে বসতেই আরেকটা ‘সিএনজি’ অটোরিকশা এসে সামনে দাঁড়াল।এটার পেছনেও যথারীতি লেখা রয়েছে- কোনো অভিযোগ থাকলে ফোন করুন; এরপর পুলিশ কন্ট্রোল রুমের বেশ কটি ফোন নম্বর দেওয়া। এবার সত্যি সত্যি একটা নম্বরে ফোন করে অপেক্ষা করতে লাগলাম, অপরপ্রান্ত থেকে কোনো কণ্ঠস্বর শোনার জন্য…
: কি হইছে?
: আম্মা তোমারে ডাকে।
হেড অফিসের ডাক। ঋষি কেন, ঋষির বাপেরও সাধ্য নাই উদাসীন থাকার। উদাসীনতা পরিহার করে নিকটবর্তী হলাম। বউ জিজ্ঞেস করল-
: কী হইছে? থুম ধইরা দাঁড়াইয়া রইছো কেন?
: থুম ধরি নাই। চক্ষু বন্ধ কইরা মনে মনে আল্লাহরে ডাকতেছিলাম।
: খালি হাতে আল্লাহরে ডাইকা লাভ নাই। হাতে তসবি লও। তবে তার আগে দয়া কইরা একটা কাজ করো।
: কী কাজ!
: আমারে বাসে উঠাইয়া দেও। আমি এই দুইডারে লইয়া বাসায় যাই। তুমি বস্তাবস্তি লইয়া পরে আসো।
বউয়ের হুকুম তামিল করে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম। যাক, বস্তার হাত-পা, চক্ষু-কণ্ঠ নাই। ঘন্টার পর ঘন্টা পড়ে থাকলেও হাত-পা ছুঁড়বে না; দৃষ্টি দিয়ে ভষ্ম আর শব্দ দিয়ে কর্ণযুগল বিদীর্ণ করার প্রয়াস চালাবে না। এক কাপ চা পেটে ঢালতে পারলে ভালো হতো। কিনতু বস্তা রেখে নড়ার উপায় নেই। এসময় একটা ‘সিএনজি’ অটোরিকশা এসে পাশে থামল। পুনরায় উদ্যোগী হয়ে বললাম-
: ভাই, শ্যামলী যাবেন?
: না।
: বলেন তো ভাই আপনের নিয়তটা কী? বলেন, আপনে কই যাবেন?
: কইলাম তো যামু না।
: যামু না এইটা কী ধরনের শব্দ? কোথাও না কোথাও তো আপনে যাবেন, নাকি? বলেন, চান্দে যাবেন, না মঙ্গল গ্রহে যাবেন?
: ভাই, ক্যাচাল করতেছেন কীজন্য! আমার গাড়ি সায়দাবাদের। আমি সায়দাবাদ যামু।
: শ্যামলী হইয়া সায়দাবাদ যান।
: না।
অবশেষে একজন ড্রাইভার পেলাম, যার চাঁদমুখ থেকে বের হলো, সে শ্যামলী যাবে। তবে ভাড়া দিতে হবে দুইশ’ টাকা। আঁতকে ওঠে বললাম-
: কও কী! আমি মাসে অন্তত দুইবার ঢাকা-মমিসিং আপ-ডাউন করি। এইখান থেইকা বাসে শ্যামলীর ভাড়া মাত্র বিশ টাকা।
: বাসে যান।
: বাসে যাওয়ার কন্ডিশনে থাকলে তোমার লেজে তেল মালিশ করতাম?
: বর্তমানে মালিকরে অনেক বেশি জমা দিতে হয়।
: সেইজন্য পাবলিকের গলা কাটবা? আইচ্ছা ঠিক আছে, বিশ টাকার জায়গায় তুমি একশ’ টাকা নেও।
: না।
: দেড়শ’ টাকা।
: না।
রোদের ঝাঁঝ আগের চেয়ে আরো বেড়েছে। একটা বস্তার ওপর বসে পড়লাম। সময় দেখার জন্য পকেট থেকে মোবইল ফোন বের করার পর হঠাৎ মনে হলো, ‘সিএনজি’ চালকদের ত্যান্দামির বিষয়টা পুলিশকে জানালে কেমন হয়? সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ‘সিএনজি’ অটোরিকশার পেছনে লিখে রাখা পুলিশ কন্ট্রোল রুমের নম্বরে ফোন করলাম। কয়েকবার চেষ্টার পর একজনের কণ্ঠস্বর শোনা যেতেই বললাম-
: হ্যালো, পুকরু?
: পুকরু মানে? গালি দিলেন কীজন্য?
: গালি দেই নাই ভাই! আমি বলছি পুকরু। পুকরু মানে পুলিশ কন্ট্রোল রুম। ‘সিএনজি’র পাছায় এই শব্দই লেইখা রাখছে।
: বুঝতে পারছি। তবে আপনে যেভাবে পুকরু উচ্চারণ করছেন, ভাবলাম, কোন শালারপুতে গালি দিল। বুঝলেন ভাই, শান্তি নাই। এই দেশে দিন-রাইত চব্বিশ ঘন্টা পুলিশরে গালি দেওয়ার যে কালচার শুরু হইছে, মনে হইলে মাঝেমধ্যে অস্থির হইয়া যাই। এইবার বলেন, কী কারণে ফোন করছেন?
: সিএনজিওয়ালারা তো যাইতে চায় না!
: যাইতে না চাওয়ার কোনো কারণ নাই। যাওয়া-যাওয়ি করাটাই ওদের কর্ম এবং ধর্ম।
: ধর্মরে নির্বাসনে পাঠাইয়া এই সেক্টরে অধর্মের রাজত্ব কায়েম হইছে।
: আপনে ভালো কইরা বলেন।
: বলছি। মাখন লাগাইয়া বলছি।সালাম, আদাব, নমস্কার সহযোগে বলছি। কোনো কাজ হইতেছে না।
: সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল বেকা করেন। হারামজাদার গোষ্ঠিরে বলেন, তোদের বাপ পুলিশরে খবর দিতেছি।
: পুলিশের ভয়ও দেখাইছি। পুলিশের কথা শুইনা হাসে।

  • হাসে? হাসির রস বাইর করতেছি। আপনে কুন এরিয়া থেইকা বলতেছেন?
    : মহাখালী বাস টার্মিনাল।
    : জাস্ট ওয়েট। আমরা অ্যাকশনে নামতেছি।
    পুলিশ ভাইদের ‘অ্যাকশন’এর অপেক্ষায় বসে থাকার এক পর্যায়ে মনে হলো, আরে! আমি তো কাউকে ফোনই করিনি। কথা বলা তো দূরস্থান। তন্দ্রাভাব ছুটে যেতেই বিষয়টা বুঝতে পারলাম। চারপাশের পরিবেশ ও ঘটনা মিলিয়ে আমার মধ্যে এক ধরনের হেল্যুসিনেশন বা বিভ্রম তৈরি হয়েছে। এর ফলে কল্পনায় আমি সমস্যার সমাধান পাওয়ার চেষ্টা করেছি।
    গা ঝাড়া দিয়ে বসতেই আরেকটা ‘সিএনজি’ অটোরিকশা এসে সামনে দাঁড়াল।এটার পেছনেও যথারীতি লেখা রয়েছে- কোনো অভিযোগ থাকলে ফোন করুন; এরপর পুলিশ কন্ট্রোল রুমের বেশ কটি ফোন নম্বর দেওয়া। এবার সত্যি সত্যি একটা নম্বরে ফোন করে অপেক্ষা করতে লাগলাম, অপরপ্রান্ত থেকে কোনো কণ্ঠস্বর শোনার জন্য…
    লেখক : সাংবাদিক, রম্যলেখক।