নিজস্ব প্রতিবেদক :পুলিশের অভিযান তখন শেষ। রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের ভেতরে নেতাকর্মী, কর্মকর্তা-কর্মচারী কেউ নেই। সামনের সড়কে পুলিশ আর গণমাধ্যমকর্মী। বিএনপি অফিসের সামনের কলাপসিবল গেইটটি সামান্য ফাঁকা। ছয় তলা এ ভবনের নিচ তলার বাতি বন্ধ। দু-একটি ফ্লোরে অবশ্য বাতি জ্বলতে দেখা গেছে। বুধবার রাত ৯টার দৃশ্য এটি। অভিযানের পর বিএনপি প্রধান কার্যালয়ের নিচ তলার কক্ষে ঢুকে দেখা গেছে, বড় একটি পাতিলে রান্না করা খিচুড়ি। আরো কয়েকটি পাতিলসহ রান্নার সরঞ্জাম পড়ে আছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। দোতলায় উঠতেই টিয়ারশেলের গন্ধ। চোখে ঝাঁঝ লাগছিল তখনও। দোতলার একটি কক্ষে কাগজ পোড়ানো ছাই। টিয়ারশেলের ঝাঁঝ থেকে রক্ষা পেতে কাগজ পুড়িয়ে থাকতে পারেন এখান থেকে গ্রেপ্তার হওয়া নেতাকর্মীরা।
সরেজমিনে ভবনটির তিন তলায় গিয়ে দেখা যায়, কনফারেন্স রুম। সেখানে এলোমোলো পড়ে আছে চেয়ার টেবিল। কাত হয়ে পড়ে আছে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার একটি বড় ছবি। পাশেই তারেক রহমানের ছবি। আর মহিলা দলের কক্ষে পড়ে আছে লেপ-তোষক, বালিশ।
ভবনটির চার তলায় কৃষক দলের অফিস, পাঁচ তলায় জাসাসের কার্যালয় আর ষষ্ঠ তলায় জিয়া স্মৃতি পাঠাগার। সব তলায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। সরেজমিনে বিভিন্ন তলায় কাগজপত্র ব্যানার ফেস্টুন পোস্টার আর কাগজ পোড়ানো ছাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা গেছে। প্রতি তলার আসবাবপত্রগুলোও ছিল এলোমেলো। বেশিরভাগ ফ্লোরেই বিছানা দেখা গেছে। জামা কাপড়ও ছিল। রসুন তেলসহ রান্নার উপকরণ ছিল একাধিক ফ্লোরে। সব তলায়ই টিয়ারশেলের ঝাঁঝ। এছাড়া তালা ও ছিটকানির ভাঙা অংশ পড়ে থাকতে দেখা যায় বিভিন্ন স্থানে। বুধবার দুপুরে নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, এক পর্যায়ে নয়াপল্টনের নিয়ন্ত্রণ নেয় পুলিশ। এরপর দুপুর আড়াইটার পর অভিযান শুরু হয় বিএনপি কার্যালয়ের আশপাশের অলিগলিতে। সন্ধ্যার আগেই বিএনপি কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে পড়ে পুলিশ। বাইরে থেকে ভেতরে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হয়। দরজা ভাঙার শব্দ পাওয়া গেছে। অবশ্য তখন ভেতরে গণমাধ্যমকর্মীদের ঢুকতে দেয়া হয়নি। এরপর কার্যালয়ের ভেতরে অবস্থান করা নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে একে একে বের করে আনা হয়। তোলা হয় প্রিজন ভ্যানে। এভাবেই দুপুর আড়াইটা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান চলে নয়াপল্টন ঘিরে। পরে রাত পৌনে ৯টার দিকে বিএনপি কার্যালয় থেকে ‘উদ্ধার’ ১৫টি বোমার নিরাপদ বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সমাপ্ত করা হয় ওই অভিযান। এর আগে ঘটনাস্থলে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, বিএনপি কার্যালয় থেকে তিন শতাধিকজনকে আটক করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে ১৬০ বস্তা চাল, এক লাখ ৭৫ হাজার বোতল খাবার পানি। কার্যালয় থেকে বিস্ফোরক উদ্ধারের দাবিও করেন তিনি।