প্রযুক্তি ডেস্ক : এমন একটি ডিভাইস কল্পনা করুন, যা সমুদ্রের লবণাক্ত পানিকে পানযোগ্য পানিতে রূপান্তর করতে পারে, তাও স্রেফ সূর্যের আলো ব্যবহার করে। এমনকি এ প্রক্রিয়ায় পুরোনো টায়ারও পুনর্ব্যবহার করার সুযোগ মিলছে।
কানাডার ‘ডালহৌসি ইউনিভার্সিটি’র গবেষকরা এমনই এক পোর্টএবল পানি বিশুদ্ধ করার সাশ্রয়ী ডিভাইস তৈরি করেছেন, যা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের দুর্গম বা পানির ঘাটতিওয়ালা এলাকায় সুপেয় পানির অভাব মেটনোর সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। এ রোমাঞ্চকর আবিষ্কার বিশ্বব্যাপী পানির ঘাটতি নিরসনে সহায়ক হতে পারে। বেশেষ করে, যেখানে নিরাপদ পানযোগ্য পানি ব্যবহারের সুযোগ দিন দিন কমছে। এ বিশেষ ডিভাইসটিকে ডাকা হচ্ছে ‘ফ্লোটিং সোলার স্টিল’ নামে, যা সূর্যরশ্মি ব্যবহার করে সামুদ্রিক পানি থেকে লবণ সরিয়ে ফেলে। ডিভাইসটি এমনভাবে নকশা করা যাতে এটি পানির পৃষ্ঠের ওপর ভাসমান অবস্থায় থেকে সূর্যরশ্মি ধারণ করতে পারে। এতে করে ডিভাইসের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, যা পানিকে বাষ্পীভূত করে ফেলে। এই বাষ্পীভবন প্রক্রিয়ায় লবণ পানি থেকে আলাদা হয়ে যায় ও বিশুদ্ধ পানি পরিশোধিত হয়ে ডিভাইসের ওপরে থাকা প্লাস্টিকের পাত্রে এসে জমা পড়ে, যেখান থেকে পরবর্তীতে ওই পানি সংগ্রহ করে ব্যবহার করা যাবে। ডালহৌসি ইউনিভার্সিটি’র রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ও এ গবেষণার প্রধান গবেষকদের একজন ড. মিতা দাসোগ ব্যাখ্যা করেছেন, এ উদ্ভাবনের পেছনে যে প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে, তা ‘রিফ্র্যাক্টরি প্লাজমনিক্স’ নামে পরিচিত। এক্ষেত্রে গবেষকরা বিভিন্ন এমন উপাদান তৈরির দিকে মনযোগ দিয়েছেন, যা উচ্চ তাপমাত্রা ও চরম পরিস্থিতির মধ্যেও ঠিক থাকে এবং সূর্যরশ্মি ধারণ করে একে তাপে রূপান্তর করে। এ ডিভাইসটি বিশেষ হওয়ার কারণ, এতে এমন একটি উপাদান কাজে লেগেছে যেটি হয়ত অনেকেই কল্পনাও করবেন না- সেটি হল পুরোনো টায়ার। কার্যকর উপায়ে সূর্যরশ্মিকে তাপে রূপান্তর করতে বেশিরভাগ বিশুদ্ধকরণ প্রযুক্তি স্বর্ণ বা রুপার মতো দামি উপাদানের ওপর নির্ভর করে থাকে। কিন্তু এইসব উপাদানের বদলে ব্যবহার করা টায়ারের বিভিন্ন উপাদান ব্যবহারের নতুন এক উপায় খুঁজে পেয়েছে ডালহৌসি’র গবেষণা দলটি। ‘পাইরোলিসিস’ নামের এ পদ্ধতিতে অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে বিভিন্ন কার্বনভিত্তিক উপাদানকে উত্তপ্ত করা হয়, এর মাধ্যমে গবেষণা দলটি এমন এক কার্বন উপাদান বানিয়েছে, যা এইসব দামি উপাদানের পরিবর্তে ব্যবহার করা যেতে পারে। এ পরিবেশবান্ধব প্রক্রিয়ায় ডিভাইসটি সাশ্রয়ী হয়ে ওঠার পাশাপাশি পুরোনো টায়ার রিসাইকল করার সুযোগও তৈরি হয়েছে, যেগুলো বিভিন্ন ভাগাড়ে শতাব্দির পর শতাব্দি পড়ে থাকে। ড. দাসোগ বলছেন, রিসাইকল করার মতো টায়ার ব্যবহারের এই বিষয়টি চক্রাকার অর্থনীতির ধারণার সঙ্গে খুব ভালভাবেই মিলে যায়, যেখানে বিভিন্ন পরিত্যক্ত পণ্য ফেলে দেওয়ার পরিবর্তে নতুন করে ব্যবহার করার সুযোগ মেলে। ডালহৌসি’র গবেষণা দলটি আশা করছে, ২০২৫ সাল নাগাদ ডিভাইসটি বাণিজ্যিকভাবে বাজারে আসবে ও এর প্রয়োজন থাকা কমিউনিটিগুলোকে পরিষেবা দিতে প্রস্তুত থাকবে।