ঢাকা ০৫:৫২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

‘পুতুল নেবে গো পুতুল’

  • আপডেট সময় : ০৯:৪০:০৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৭ মে ২০২২
  • ৮৯ বার পড়া হয়েছে

মোস্তফা হোসেইন : আমার পাড়ায় বিশাল একটি রেস্টুরেন্ট– ‘ভূতের আড্ডা’। নামের কারণেই হয়তো ওদিক দিয়ে গেলেই ক্ষণিকের জন্য চোখ থমকে যেতো। হঠাৎ একদিন দেখি সাইনবোর্ড পাল্টে গেছে রেস্টুরেন্টের। নিচতলায় খালি করে শুধু দোতলায় সংকুচিত হয়েছে এটি। নিচতলায় কাচঘেরা দোকান, ভেতরে পুতুল আর পুতুল। আছে নানান রকম খেলনা ও উপহার সামগ্রী। লক্ষণীয় ব্যাপার হলো, পুরো পাড়ায় ফাস্টফুডের দোকান ভর্তি। শুনেছি দুইশ’ ছাড়িয়ে গেছে সংখ্যা। একটি ৯ তলা ভবনের পুরোটাই ফাস্টফুডের দোকান। তার আশেপাশে খাবারের অসংখ্য দোকান। সেই জায়গায় কয়েকটি পুতুলপ্রধান গিফটের দোকানও আছে। এমনিতেও চোখ আটকে যায়। বিস্ময় জাগে। এত পুতুল, সবই কি বিদেশি?

পুতুলের জন্মদেশের কথা ভাবতে ভাবতে মনে পড়ে শৈশবের কথা। আমার মায়ের কথা। গ্রামের স্মৃতি। আমাদের গ্রামের পূর্বাংশে একটি জায়গার মাটি দিয়ে কুমোররা হাঁড়ি-পাতিল বানাতো। ৮-১০ মাইল দূরের কুমোররা মাটি নিয়ে যেতো হাঁড়ি-পাতিল বানাতে। সেই মাটি আনতাম আমরা মাটি ব্যবসায়ীদের নৌকা থেকে। দিতাম মায়ের হাতে। বর্ষায় সেই মাটি দিয়ে মা আমাদের পুতুল বানিয়ে দিতেন। বোনদের পুতুলকন্যা আর আমাদের হাতি-ঘোড়া। সেই হাতি-ঘোড়া আর পুতুলের রূপ পাল্টেছে এখন। আমরা যে পুতুল নিয়ে শৈশব কাটিয়েছি, এখন সেই পুতুল শহুরে বৈঠকঘরের শোভা বৃদ্ধি করে।

আমাদের শৈশবের পুতুলকাহিনি যদি বলি, বোধ করি অনেক পাঠকই নস্টালজিক হয়ে পড়বেন। পুতুল নিয়ে ওই সময়ের একটি গান যেমন এখনও আমি গুন গুন করি মাঝে মধ্যে। গানটি বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী শ্যামল মিত্রের গাওয়া। নিশ্চয়ই মনে পড়বে ‘পুতুল নেবে গো পুতুল’ গানের কথা। আহ! ভানু বন্দ্যোপাধায় অভিনীত ছবির সেই গান কি ভুলে যাওয়া সম্ভব?

সেই মাটির পুতুল আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। অতীত চর্চায় শান্তি পাওয়া যায়, সেই পুতুল খেলার দিনগুলোর কথা ভেবে। কিন্তু এই পুতুলও আমাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে, সেটা ওই সময় না বুঝলেও হাল আমলে বিশ্বাস করতে পারছি। আমাদের পাড়ার পুতুলের দোকানের কথা শুনে যারা ভাবছেন এসব পুতুল চীনের তৈরি। এবং পুতুলগুলো আমদানি হচ্ছে। তাদের ভাবনার সঙ্গে যোগ করতে পারি মজার একটি তথ্য। আমরা শুধু আমদানিই করি না, আমাদের দেশ থেকে এই পুতুল যায় বিদেশে। আরও আনন্দের কথা- রফতানির মাত্রা শুধু বাড়ছে। কতটা বাড়ছে এমন তথ্য খুঁজতে গিয়ে বিস্ময়াভূত হয়ে পড়ি। জানি না বাংলাদেশের আর কোনও পণ্য রফতানিতে এত স্বল্পসময় এত বেশি পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে কিনা। তথ্যটি কয়েক বছর আগের। ২০১৭ সালের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, আগের পাঁচ বছরে বাংলাদেশ থেকে পুতুল ও অন্যান্য খেলনা রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে ২০৭৫ গুণ। ভাবা যায়! রীতিমতো ঈর্ষণীয় নয় কি? ইপিজেডগুলোতে গড়ে উঠেছে সেসব খেলনা তৈরির কারখানা।

এতদিন আমরা যারা ভাবতাম চীন, আমেরিকা থেকে আমাদের দেশে খেলনা আমদানি হয়, তাদের নিশ্চয়ই ভালো লাগার কথা। আমাদের দেশ থেকে ফ্রান্স, জাপান ও স্পেনে যায় প্রচুর পুতুল এবং এ ধরনের খেলনা। একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর শুধু খেলনা রফতানি হয় ৩০০ কোটি টাকার বেশি। আর এই খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মিলিয়ে প্রায় ১৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। খেলনা রফতানি হয় এমন সব দেশে, যাদের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য ভারসাম্য নিয়ে ভাবতে হয় প্রতিনিয়ত। বাণিজ্য সম্প্রসারণের তাগাদাও দীর্ঘদিনের। সেই সুবাদে যুক্তরাজ্য, ইতালি, মেক্সিকো, নেদারল্যান্ডস, তাইওয়ান, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিলের মতো দেশে বাংলাদেশের তৈরি খেলনা রফতানি হতে শুরু করেছে। ফলে অনায়াসে বলা যায় আরও দেশেও বাংলাদেশের তৈরি খেলনা বাজার পেতে পারে। শুরু হয়েছিল মাত্র তিনটি দেশ দিয়ে, যার পরিমাণও ছিল সামান্য। প্রথম অবস্থায় ইন্দোনেশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও নেদারল্যান্ডস সামান্য কিছু খেলনা আমদানি করেছিলো বাংলাদেশ থেকে। সেই খেলনা রফতানিতে যে চমক আসতে পারে সেটা হয়তো বাংলাদেশের রফতানিকারকরাও এভাবে চিন্তা করেননি।

অপ্রচলিত পণ্য রফতানিতে সরকারি সহযোগিতা সবসময়ই থাকে। শুল্ক সংক্রান্ত কিছু অসন্তোষ প্লাস্টিক খেলনা প্রস্তুতকারকদের মধ্যে ছিল। কিন্তু সম্ভাবনাময় খাতটি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রফতানি বাণিজ্যে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে, এটা সবাই বলছেন।

আমাদের সংস্কৃতির প্রতিফলন ঘটতে পারে রফতানিযোগ্য খেলনাগুলোতে। বিশেষ করে মাটির পুতুল কিংবা কাপড়ের তৈরি পুতুলের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালির ঐতিহ্য। অথচ অধিকাংশ খেলনাই তৈরি হয় ক্রেতাদেশগুলোর কথা ভেবে, যা একান্তই বাণিজ্য ভাবনার প্রতিফলন। রফতানি খাতটির মাধ্যমে আমরা নিজের দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কেও বিদেশিদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারি। ছড়িয়ে দিতে পারি বাঙালির সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের চিহ্নগুলো।

আমাদের মৃৎশিল্প আজ হুমকির মুখে। চিরায়ত বাংলার কুমোর সম্প্রদায় এখন কর্মহীন অবস্থায় দিনযাপন করছে। তৈজষপত্র ব্যবহারে পরিবর্তন আসায় বেকারত্বকে গ্রহণ করতে হয়েছে তাদের। আমাদের ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার উদ্দেশে তাদের মাধ্যমে মাটির খেলনা প্রস্তুত এবং তা রফতানি করার সুযোগ বিশাল। অপ্রচলিত পণ্য রফতানিক্ষেত্রে সরকারের সুযোগ সুবিধাগুলোকে সম্প্রসারিত করে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে আরও গতিশীল করা সম্ভব। আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্বসহ বিবেচনা করবে।

এমন অপ্রচলিত পণ্য রফতানি হচ্ছে অনেক। সম্ভাবনাও আছে বিশাল। আমাদের দেশ থেকে অপ্রচলিত পণ্য পরচুলা, চারকোল, টুপি, মাছ ধরার বড়শি, মশারি, শুকনা খাবার, পাঁপড়, হাঁসের পালকের তৈরি পণ্য, লুঙ্গি, কাজুবাদাম, চশমার ফ্রেম, কৃত্রিম ফুল, গলফ শাফট, খেলনা, আগর, ছাতার লাঠি, শাকসবজির বীজ, নারিকেলের ছোবড়া ও খোল দিয়ে তৈরি পণ্য, ব্লেড, ইত্যাদি রফতানি হচ্ছে। শুধু এগুলোই নয় এমন ১০০’র বেশি পণ্য রফতানি হয়। এর মধ্যে বেশকিছু পণ্য রফতানির বিপরীতে ৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকিও দিয়ে থাকে সরকার। অপ্রচলিত পণ্য হিসেবে পুতুল ও খেলনা উৎপাদন ও রফতানিতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বৃদ্ধি পেলে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সম্প্রদায় নজর দিলে রফতানির মাত্রা অবশ্যই স্ফীত হবে।
ভাবুন তো একবার- স্পেন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ব্রাজিলের মতো দেশের শিশুদের হাতে বাংলাদেশের তৈরি খেলনা দেখলেন, কেমন হবে অনুভূতি? দারুণ নিশ্চয়ই। সেই দারুণ অনুভূতির জয় হোক।
লেখক: সাংবাদিক, শিশুসাহিত্যিক ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

‘পুতুল নেবে গো পুতুল’

আপডেট সময় : ০৯:৪০:০৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৭ মে ২০২২

মোস্তফা হোসেইন : আমার পাড়ায় বিশাল একটি রেস্টুরেন্ট– ‘ভূতের আড্ডা’। নামের কারণেই হয়তো ওদিক দিয়ে গেলেই ক্ষণিকের জন্য চোখ থমকে যেতো। হঠাৎ একদিন দেখি সাইনবোর্ড পাল্টে গেছে রেস্টুরেন্টের। নিচতলায় খালি করে শুধু দোতলায় সংকুচিত হয়েছে এটি। নিচতলায় কাচঘেরা দোকান, ভেতরে পুতুল আর পুতুল। আছে নানান রকম খেলনা ও উপহার সামগ্রী। লক্ষণীয় ব্যাপার হলো, পুরো পাড়ায় ফাস্টফুডের দোকান ভর্তি। শুনেছি দুইশ’ ছাড়িয়ে গেছে সংখ্যা। একটি ৯ তলা ভবনের পুরোটাই ফাস্টফুডের দোকান। তার আশেপাশে খাবারের অসংখ্য দোকান। সেই জায়গায় কয়েকটি পুতুলপ্রধান গিফটের দোকানও আছে। এমনিতেও চোখ আটকে যায়। বিস্ময় জাগে। এত পুতুল, সবই কি বিদেশি?

পুতুলের জন্মদেশের কথা ভাবতে ভাবতে মনে পড়ে শৈশবের কথা। আমার মায়ের কথা। গ্রামের স্মৃতি। আমাদের গ্রামের পূর্বাংশে একটি জায়গার মাটি দিয়ে কুমোররা হাঁড়ি-পাতিল বানাতো। ৮-১০ মাইল দূরের কুমোররা মাটি নিয়ে যেতো হাঁড়ি-পাতিল বানাতে। সেই মাটি আনতাম আমরা মাটি ব্যবসায়ীদের নৌকা থেকে। দিতাম মায়ের হাতে। বর্ষায় সেই মাটি দিয়ে মা আমাদের পুতুল বানিয়ে দিতেন। বোনদের পুতুলকন্যা আর আমাদের হাতি-ঘোড়া। সেই হাতি-ঘোড়া আর পুতুলের রূপ পাল্টেছে এখন। আমরা যে পুতুল নিয়ে শৈশব কাটিয়েছি, এখন সেই পুতুল শহুরে বৈঠকঘরের শোভা বৃদ্ধি করে।

আমাদের শৈশবের পুতুলকাহিনি যদি বলি, বোধ করি অনেক পাঠকই নস্টালজিক হয়ে পড়বেন। পুতুল নিয়ে ওই সময়ের একটি গান যেমন এখনও আমি গুন গুন করি মাঝে মধ্যে। গানটি বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী শ্যামল মিত্রের গাওয়া। নিশ্চয়ই মনে পড়বে ‘পুতুল নেবে গো পুতুল’ গানের কথা। আহ! ভানু বন্দ্যোপাধায় অভিনীত ছবির সেই গান কি ভুলে যাওয়া সম্ভব?

সেই মাটির পুতুল আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। অতীত চর্চায় শান্তি পাওয়া যায়, সেই পুতুল খেলার দিনগুলোর কথা ভেবে। কিন্তু এই পুতুলও আমাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে, সেটা ওই সময় না বুঝলেও হাল আমলে বিশ্বাস করতে পারছি। আমাদের পাড়ার পুতুলের দোকানের কথা শুনে যারা ভাবছেন এসব পুতুল চীনের তৈরি। এবং পুতুলগুলো আমদানি হচ্ছে। তাদের ভাবনার সঙ্গে যোগ করতে পারি মজার একটি তথ্য। আমরা শুধু আমদানিই করি না, আমাদের দেশ থেকে এই পুতুল যায় বিদেশে। আরও আনন্দের কথা- রফতানির মাত্রা শুধু বাড়ছে। কতটা বাড়ছে এমন তথ্য খুঁজতে গিয়ে বিস্ময়াভূত হয়ে পড়ি। জানি না বাংলাদেশের আর কোনও পণ্য রফতানিতে এত স্বল্পসময় এত বেশি পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে কিনা। তথ্যটি কয়েক বছর আগের। ২০১৭ সালের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, আগের পাঁচ বছরে বাংলাদেশ থেকে পুতুল ও অন্যান্য খেলনা রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে ২০৭৫ গুণ। ভাবা যায়! রীতিমতো ঈর্ষণীয় নয় কি? ইপিজেডগুলোতে গড়ে উঠেছে সেসব খেলনা তৈরির কারখানা।

এতদিন আমরা যারা ভাবতাম চীন, আমেরিকা থেকে আমাদের দেশে খেলনা আমদানি হয়, তাদের নিশ্চয়ই ভালো লাগার কথা। আমাদের দেশ থেকে ফ্রান্স, জাপান ও স্পেনে যায় প্রচুর পুতুল এবং এ ধরনের খেলনা। একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর শুধু খেলনা রফতানি হয় ৩০০ কোটি টাকার বেশি। আর এই খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মিলিয়ে প্রায় ১৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। খেলনা রফতানি হয় এমন সব দেশে, যাদের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য ভারসাম্য নিয়ে ভাবতে হয় প্রতিনিয়ত। বাণিজ্য সম্প্রসারণের তাগাদাও দীর্ঘদিনের। সেই সুবাদে যুক্তরাজ্য, ইতালি, মেক্সিকো, নেদারল্যান্ডস, তাইওয়ান, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিলের মতো দেশে বাংলাদেশের তৈরি খেলনা রফতানি হতে শুরু করেছে। ফলে অনায়াসে বলা যায় আরও দেশেও বাংলাদেশের তৈরি খেলনা বাজার পেতে পারে। শুরু হয়েছিল মাত্র তিনটি দেশ দিয়ে, যার পরিমাণও ছিল সামান্য। প্রথম অবস্থায় ইন্দোনেশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও নেদারল্যান্ডস সামান্য কিছু খেলনা আমদানি করেছিলো বাংলাদেশ থেকে। সেই খেলনা রফতানিতে যে চমক আসতে পারে সেটা হয়তো বাংলাদেশের রফতানিকারকরাও এভাবে চিন্তা করেননি।

অপ্রচলিত পণ্য রফতানিতে সরকারি সহযোগিতা সবসময়ই থাকে। শুল্ক সংক্রান্ত কিছু অসন্তোষ প্লাস্টিক খেলনা প্রস্তুতকারকদের মধ্যে ছিল। কিন্তু সম্ভাবনাময় খাতটি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রফতানি বাণিজ্যে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে, এটা সবাই বলছেন।

আমাদের সংস্কৃতির প্রতিফলন ঘটতে পারে রফতানিযোগ্য খেলনাগুলোতে। বিশেষ করে মাটির পুতুল কিংবা কাপড়ের তৈরি পুতুলের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালির ঐতিহ্য। অথচ অধিকাংশ খেলনাই তৈরি হয় ক্রেতাদেশগুলোর কথা ভেবে, যা একান্তই বাণিজ্য ভাবনার প্রতিফলন। রফতানি খাতটির মাধ্যমে আমরা নিজের দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কেও বিদেশিদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারি। ছড়িয়ে দিতে পারি বাঙালির সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের চিহ্নগুলো।

আমাদের মৃৎশিল্প আজ হুমকির মুখে। চিরায়ত বাংলার কুমোর সম্প্রদায় এখন কর্মহীন অবস্থায় দিনযাপন করছে। তৈজষপত্র ব্যবহারে পরিবর্তন আসায় বেকারত্বকে গ্রহণ করতে হয়েছে তাদের। আমাদের ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার উদ্দেশে তাদের মাধ্যমে মাটির খেলনা প্রস্তুত এবং তা রফতানি করার সুযোগ বিশাল। অপ্রচলিত পণ্য রফতানিক্ষেত্রে সরকারের সুযোগ সুবিধাগুলোকে সম্প্রসারিত করে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে আরও গতিশীল করা সম্ভব। আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্বসহ বিবেচনা করবে।

এমন অপ্রচলিত পণ্য রফতানি হচ্ছে অনেক। সম্ভাবনাও আছে বিশাল। আমাদের দেশ থেকে অপ্রচলিত পণ্য পরচুলা, চারকোল, টুপি, মাছ ধরার বড়শি, মশারি, শুকনা খাবার, পাঁপড়, হাঁসের পালকের তৈরি পণ্য, লুঙ্গি, কাজুবাদাম, চশমার ফ্রেম, কৃত্রিম ফুল, গলফ শাফট, খেলনা, আগর, ছাতার লাঠি, শাকসবজির বীজ, নারিকেলের ছোবড়া ও খোল দিয়ে তৈরি পণ্য, ব্লেড, ইত্যাদি রফতানি হচ্ছে। শুধু এগুলোই নয় এমন ১০০’র বেশি পণ্য রফতানি হয়। এর মধ্যে বেশকিছু পণ্য রফতানির বিপরীতে ৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকিও দিয়ে থাকে সরকার। অপ্রচলিত পণ্য হিসেবে পুতুল ও খেলনা উৎপাদন ও রফতানিতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বৃদ্ধি পেলে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সম্প্রদায় নজর দিলে রফতানির মাত্রা অবশ্যই স্ফীত হবে।
ভাবুন তো একবার- স্পেন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ব্রাজিলের মতো দেশের শিশুদের হাতে বাংলাদেশের তৈরি খেলনা দেখলেন, কেমন হবে অনুভূতি? দারুণ নিশ্চয়ই। সেই দারুণ অনুভূতির জয় হোক।
লেখক: সাংবাদিক, শিশুসাহিত্যিক ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক।