ঢাকা ০৩:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫

পুতিনের যুদ্ধে ভিন্ন মোড় কড়া শাস্তির হুঁশিয়ারি, ওয়াগনারের বিদ্রোহকে বললেন ‘পেছন থেকে ছুরিকাঘাত’

  • আপডেট সময় : ০২:০০:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ জুন ২০২৩
  • ৭৮ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : রাশিয়ার শক্তিশালী বেসরকারি ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনারের আকস্মিক বিদ্রোহে গভীর সংকটের মুখোমুখি হয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। দুই দশকের বেশি সময় ধরে রাশিয়া শাসন করে আসা দেশটির এই প্রেসিডেন্ট অতীতে কখনোই এমন পরিস্থিতিতে পড়েননি। এবারের এই সংকট সামলে ক্ষমতায় টিকে থাকা তার জন্য কঠিন হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের সাংবাদিক নিক প্যাট্রন এক বিশ্লেষণে লিখেছেন, রুশ প্রেসিডেন্টের ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আগামী ২৪ ঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অপরদিকে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে স্বাধীন সামরিক বিশ্লেষক পাভেল ফেলগেনহাউয়ার বলেছেন, পুতিন তার শাসনামলে সবচেয়ে বড় হুমকির মুখে পড়েছেন। বর্তমানে তার সামনে যে চ্যালেঞ্জ দেখা যাচ্ছে তা খুবই গুরুতর। এবারই প্রথম সামরিক এবং বেশ কার্যকরী কোনো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন তিনি।
এই সামরিক বিশ্লেষকের ধারণা, পুতিন এখন তার অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইও করবেন। নিক প্যাট্রন বলেছেন, গত ২৩ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা পুতিনের রাশিয়ায় এর আগে কখনো এমন চিত্র দেখা যায়নি। তাকে এমন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়নি। তিনি বলেছেন, যে চিত্র এখন দেখা যাচ্ছে-সেটি একদিক দিয়ে আসন্ন, অপরদিকে অসম্ভব ছিল। এই বিদ্রোহ আসন্ন ছিল চলমান যুদ্ধের অব্যবস্থাপনার কারণে। অপরদিকে এটি অসম্ভব ছিল কারণ যারাই পুতিনের বিরুদ্ধে যান, তাদের গুম করে দেওয়া হয় অথবা বিষপ্রয়োগের মাধ্যমে হত্যা করা হয়। তবে তা সত্ত্বেও বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ সেনাবাহিনী এখন ভ্রাতৃহত্যার দ্বারপ্রান্তে আছে। যদি রাশিয়ার অভিজাতরা এখন নিজেদের বাঁচাতে চায় তাহলে তাদের স্বদেশীদের ওপরই গুলি চালাতে হবে।
নিক প্যাট্রন বলেছেন, ধারণা করা হচ্ছে ওয়াগনার গত কয়েকদিন ধরেই এ বিদ্রোহের পরিকল্পনা করেছে। বাহিনীর প্রধান ইয়েভগিনি প্রিগোজিনের একটি পরিকল্পনা ছিল— বিদ্রোহ করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে পরিবর্তন আনতে প্রেসিডেন্টকে বাধ্য করবেন। কিন্তু শনিবার পুতিন জাতির উদ্দেশে যে ভাষণ দিয়েছেন, তাতে তিনি বুঝিয়েছেন প্রিগোজিনের এ পরিকল্পনা সফল হবে না। বর্তমানে যা চলছে সেটি রাশিয়ার অভিজাত শ্রেণি এবং ভাড়াটে সেনা ওয়াগনার-দুই পক্ষের জন্যই অস্তিত্ব রক্ষার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বিশ্লেষক আরও বলেছেন, প্রিগোজিন হয়তো বিদ্রোহে জয়ী হবেন না এবং প্রেসিডেন্ট পুতিন ও তার সহযোগীদের ক্ষমতাও হয়তো টিকে যাবে। তবে দুর্বল হয়ে যাওয়া পুতিন আগামী কয়েক মাসে নিজের শক্তি প্রমাণের জন্য অযৌক্তিক অনেক কিছু করতে পারেন। সূত্র: সিএনএন, আলজাজিরা।
কড়া শাস্তির হুঁশিয়ারি, ওয়াগনারের বিদ্রোহকে ‘পেছন থেকে ছুরিকাঘাত’ বললেন পুতিন: ইউক্রেনে অভিযানরত রুশ বাহিনীর প্রধান সহযোগী ও রাশিয়াভিত্তিক বেসরকারি সামরিক কোম্পানি পিএমসি ওয়াগনারের বিদ্রোহকে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। শনিবার মস্কো থেকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। পিএমসি ওয়াগনারের বিদ্রোহকে ‘পেছন থেকে ছুরিকাঘাতের’ সঙ্গে তুলনা করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। সেই সঙ্গে যারা দেশের অভ্যন্তরে ‘বিদেশি শত্রুদের’ এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করছে— রাশিয়ার স্বার্থে তাদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
গত শুক্রবার পিএমসি ওয়াগনারের শীর্ষ কমান্ডার ইয়েভগেনি প্রিগোজিন রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ঘোষণা দিয়ে মস্কোর নেতৃত্বকে উচ্ছেদ করতে ওয়াগনার গ্রুপের ২৫ হাজার যোদ্ধা নিয়ে ইউক্রেন থেকে মস্কো অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করেন। তার এই ঘোষণার পর শনিবার জাতির উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেন ভ্লাদিমির পুতিন। তবে পুরো ভাষণে একবারও পিএমসি ওয়াগনার এবং এই কোম্পানির শীর্ষ কমান্ডার ইয়েভগেনি প্রিগোজিনের নাম উচ্চারণ করেননি তিনি।
শনিবারের সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘রাশিয়ার নাগরিক, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, আইনপ্রয়োগকারী বাহিনীর সদস্য, সৈনিক ও কমান্ডার— যারা এখন যুদ্ধক্ষেত্রে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে যুদ্ধ করছেন, প্রতিপক্ষের হামলার পাল্টা জবাব দিচ্ছেন— আমি জানি, তারা বীরত্বের সঙ্গে তাদের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। আমি তাদের সবার কাছে আজ আবেদন জানাচ্ছি।’
‘আমি সেই সব সেনা সদস্যের প্রতিও আবেদন জানাচ্ছি, যাদেরকে সশস্ত্র বিদ্রোহের মতো গুরুতর অপরাধে সংশ্লিষ্ট হতে বাধ্য করা বা উসকানি দেওয়া হচ্ছে। আজ আমি রাশিয়ার সব অঞ্চলের কমান্ডারদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি।’
‘আপনারা সবাই জানেন, এমন একটি যুদ্ধে আমরা জড়িয়ে পড়েছি— যার ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে রাশিয়ার জনগণের ভাগ্য। তাই এ যুদ্ধে রাশিয়ার সব বাহিনী ও শক্তির মধ্যে ঐক্য, সংহতি এবং দায়িত্ববান থাকা খুবই জরুরি। যখন সবকিছু আমাদের বিরুদ্ধে— সেসময় নিজেদের মধ্যকার যে কোনো কলহ-বিবাদের সুযোগ শত্রুরা নিতে পারে এবং আমাদেরকে কোনঠাসা করতে তা অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।’
‘যেসব তৎপরতা আমাদের ঐক্যে ফাটল ধরায়, তা আমাদের জনগণ এবং যেসব সহযোদ্ধা (ইউক্রেনে) কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করছেন— তাদের কাছে ধর্মত্যাগের মতো। সম্প্রতি যে ঘটনাটি ঘটল— তা রাশিয়া এবং রাশিয়ার জনগণকে পেছন থেকে ছুরিকাঘাতের শামিল।’
‘বর্তমানে যে ঘটনাটির মুখোমুখি আমরা হয়েছি, সেটি পুরোপুরি বিশ্বাসঘাতকতা এবং এ ধরনের বিশ্বাসঘাতকতাসহ যেকোনো হুমকি থেকে আমরা আমাদের জনগণ ও দেশকে রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর।’ ‘আমি বিশ্বাস করি, আমাদের জন্য যা পবিত্র ও গভীর আবেগের— তা আমরা রক্ষা করবই। দেশকে রক্ষা করতে আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হই— সেক্ষেত্রে যে কোনো সংকট আমরা কাটিয়ে উঠতে পারব।’ ‘আর যারা সন্ত্রাসবাদ ও সশস্ত্র বিদ্রোহের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাদেরকে অবশ্যই আইন এবং আমাদের জনগণের সামনে অপরাধী হিসেবে দাঁড়াতে হবে এবং তাদের জন্য শাস্তি অনিবার্য।’ সূত্র : রিয়া নভোস্তি
পুতিনের বাবুর্চি থেকে যেভাবে ওয়াগনারপ্রধান প্রিগোজিন: রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ডাক দেওয়া বেসরকারি সামরিক কোম্পানি পিএমসি ওয়াগনার ছিল চলমান ইউক্রেন যুদ্ধে রুশ বাহিনীর প্রধান সহযোগী। এবং পিএমসি ওয়াগনারের শীর্ষ কমান্ডার ইয়েভগেনি প্রিগোজিন, যিনি শুক্রবার এক অডিওবার্তার মাধ্যমে এই বিদ্রোহের ডাক দিয়েছেন—প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ঘণিষ্টতার কারণে একসময় গোটা রাশিয়ায় তিনি পরিচিতি পেয়েছিলেন ‘পুতিনের বাবুর্চি’ নামে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিটিকোর তথ্য অনুসারে, পিএমসি ওয়াগনারের শীর্ষ কমান্ডার ইয়েভগেনি প্রিগোজিন ১৯৬১ সালে জন্ম নেন। ঘটনাচক্রে, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং প্রিগোজিনের জন্ম একই শহরে— রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর সেন্ট পিটার্সবার্গে। ইয়েভগেনি প্রিগোজিন একাধিকবার কারাবাসের সাজা খাটা আসামিও। ১৯৭৯ সালে, আঠারো বছর বয়সে চুরির অভিযোগে আড়াই বছর কারাগারে ছিলেন তিনি। সেই সাজা খেটে বের হওয়ার দু’বছর পর আবারও চুরি-ডাকাতির অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে এবং আদালতে সেসব অভিযোগ প্রমাণিত হওয়া ১৩ বছর কারাবাসের সাজা হয় তার। গত শতকের নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর মস্কো ও সেন্ট পিটার্সবার্গে হটডগ ও অন্যান্য ফাস্টফুড বিক্রির দোকান খোলেন প্রিগোজিন, একই সময়ে ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গেও পরিচয় হয় তার। ওই সময় সদ্য ভেঙে যাওয়া সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবি থেকে রুশ প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিনে বদলি হয়ে এসেছেন ভ্লাদিমির পুতিন।
বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, পুতিনের সঙ্গে পরিচয়ে সূত্র ধরে তৎকালীন ক্রেমলিনের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলেন ইয়েভগেনি প্রিগোজিন। ততদিনে রাশিয়ার একজন উঠতি রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠছেন তিনি। পুতিনের সঙ্গে ঘনিষ্টতার সূত্রে ক্রেমলিন ও সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে তিনি পরিচিতি পান ‘পুতিনের বাবুর্চি’ নামে। পরে এই নাম তার পরিচিত মহলেও ছড়িয়ে পড়ে। ক্রেমলিনের সঙ্গে দহরম মহরম সম্পর্ক থাকায় গোটা নব্বইয়ের দশক এবং তার পরের দশক বিভিন্ন লোভনীয় সরকারি ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নিতে সক্ষম হন প্রিগোজিন। এসব ঠিকাদারি কাজ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থও উপার্জন করেন তিনি। সম্ভবত এই অর্থ দিয়েই বেসরকারি সামরিক কোম্পানি পিএমসি ওয়াগনার গড়ে তুলেছেন ইয়েভগেনি প্রিগোজিন, তারপর নিজেই হয়েছেন এই কোম্পানির শীর্ষ নির্বাহী ও কমান্ডার। পিএমসি ওয়াগনার গ্রুপের যোদ্ধাদের অধিকাংশই জীবনের কোনো না কোনো সময় কারাগারে সাজা খেটে আসা আসামি। মূলত অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন দেশের সরকারি বাহিনীর সহযোগী হিসেবে যুদ্ধ করে ওয়াগনার গ্রুপ। সিরিয়া, মালি, সেন্ট্রাল আফ্রিকাসহ অনেক দেশেই যুদ্ধের অভিজ্ঞতা রয়েছে ওয়াগনার গ্রুপের যোদ্ধাদের। তবে এই বাহিনীর যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘণের অভিযোগও উঠেছে একাধিকবার। ২০২২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়ার সেনাবাহিনী। তার কয়েক মাস পর রুশ বাহিনীর অংশ হিসেবে তাতে যোগ দেয় ওয়াগনার গ্রুপ।

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

পুতিনের যুদ্ধে ভিন্ন মোড় কড়া শাস্তির হুঁশিয়ারি, ওয়াগনারের বিদ্রোহকে বললেন ‘পেছন থেকে ছুরিকাঘাত’

আপডেট সময় : ০২:০০:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ জুন ২০২৩

প্রত্যাশা ডেস্ক : রাশিয়ার শক্তিশালী বেসরকারি ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনারের আকস্মিক বিদ্রোহে গভীর সংকটের মুখোমুখি হয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। দুই দশকের বেশি সময় ধরে রাশিয়া শাসন করে আসা দেশটির এই প্রেসিডেন্ট অতীতে কখনোই এমন পরিস্থিতিতে পড়েননি। এবারের এই সংকট সামলে ক্ষমতায় টিকে থাকা তার জন্য কঠিন হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের সাংবাদিক নিক প্যাট্রন এক বিশ্লেষণে লিখেছেন, রুশ প্রেসিডেন্টের ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আগামী ২৪ ঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অপরদিকে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে স্বাধীন সামরিক বিশ্লেষক পাভেল ফেলগেনহাউয়ার বলেছেন, পুতিন তার শাসনামলে সবচেয়ে বড় হুমকির মুখে পড়েছেন। বর্তমানে তার সামনে যে চ্যালেঞ্জ দেখা যাচ্ছে তা খুবই গুরুতর। এবারই প্রথম সামরিক এবং বেশ কার্যকরী কোনো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন তিনি।
এই সামরিক বিশ্লেষকের ধারণা, পুতিন এখন তার অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইও করবেন। নিক প্যাট্রন বলেছেন, গত ২৩ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা পুতিনের রাশিয়ায় এর আগে কখনো এমন চিত্র দেখা যায়নি। তাকে এমন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়নি। তিনি বলেছেন, যে চিত্র এখন দেখা যাচ্ছে-সেটি একদিক দিয়ে আসন্ন, অপরদিকে অসম্ভব ছিল। এই বিদ্রোহ আসন্ন ছিল চলমান যুদ্ধের অব্যবস্থাপনার কারণে। অপরদিকে এটি অসম্ভব ছিল কারণ যারাই পুতিনের বিরুদ্ধে যান, তাদের গুম করে দেওয়া হয় অথবা বিষপ্রয়োগের মাধ্যমে হত্যা করা হয়। তবে তা সত্ত্বেও বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ সেনাবাহিনী এখন ভ্রাতৃহত্যার দ্বারপ্রান্তে আছে। যদি রাশিয়ার অভিজাতরা এখন নিজেদের বাঁচাতে চায় তাহলে তাদের স্বদেশীদের ওপরই গুলি চালাতে হবে।
নিক প্যাট্রন বলেছেন, ধারণা করা হচ্ছে ওয়াগনার গত কয়েকদিন ধরেই এ বিদ্রোহের পরিকল্পনা করেছে। বাহিনীর প্রধান ইয়েভগিনি প্রিগোজিনের একটি পরিকল্পনা ছিল— বিদ্রোহ করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে পরিবর্তন আনতে প্রেসিডেন্টকে বাধ্য করবেন। কিন্তু শনিবার পুতিন জাতির উদ্দেশে যে ভাষণ দিয়েছেন, তাতে তিনি বুঝিয়েছেন প্রিগোজিনের এ পরিকল্পনা সফল হবে না। বর্তমানে যা চলছে সেটি রাশিয়ার অভিজাত শ্রেণি এবং ভাড়াটে সেনা ওয়াগনার-দুই পক্ষের জন্যই অস্তিত্ব রক্ষার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বিশ্লেষক আরও বলেছেন, প্রিগোজিন হয়তো বিদ্রোহে জয়ী হবেন না এবং প্রেসিডেন্ট পুতিন ও তার সহযোগীদের ক্ষমতাও হয়তো টিকে যাবে। তবে দুর্বল হয়ে যাওয়া পুতিন আগামী কয়েক মাসে নিজের শক্তি প্রমাণের জন্য অযৌক্তিক অনেক কিছু করতে পারেন। সূত্র: সিএনএন, আলজাজিরা।
কড়া শাস্তির হুঁশিয়ারি, ওয়াগনারের বিদ্রোহকে ‘পেছন থেকে ছুরিকাঘাত’ বললেন পুতিন: ইউক্রেনে অভিযানরত রুশ বাহিনীর প্রধান সহযোগী ও রাশিয়াভিত্তিক বেসরকারি সামরিক কোম্পানি পিএমসি ওয়াগনারের বিদ্রোহকে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। শনিবার মস্কো থেকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। পিএমসি ওয়াগনারের বিদ্রোহকে ‘পেছন থেকে ছুরিকাঘাতের’ সঙ্গে তুলনা করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। সেই সঙ্গে যারা দেশের অভ্যন্তরে ‘বিদেশি শত্রুদের’ এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করছে— রাশিয়ার স্বার্থে তাদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
গত শুক্রবার পিএমসি ওয়াগনারের শীর্ষ কমান্ডার ইয়েভগেনি প্রিগোজিন রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ঘোষণা দিয়ে মস্কোর নেতৃত্বকে উচ্ছেদ করতে ওয়াগনার গ্রুপের ২৫ হাজার যোদ্ধা নিয়ে ইউক্রেন থেকে মস্কো অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করেন। তার এই ঘোষণার পর শনিবার জাতির উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেন ভ্লাদিমির পুতিন। তবে পুরো ভাষণে একবারও পিএমসি ওয়াগনার এবং এই কোম্পানির শীর্ষ কমান্ডার ইয়েভগেনি প্রিগোজিনের নাম উচ্চারণ করেননি তিনি।
শনিবারের সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘রাশিয়ার নাগরিক, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, আইনপ্রয়োগকারী বাহিনীর সদস্য, সৈনিক ও কমান্ডার— যারা এখন যুদ্ধক্ষেত্রে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে যুদ্ধ করছেন, প্রতিপক্ষের হামলার পাল্টা জবাব দিচ্ছেন— আমি জানি, তারা বীরত্বের সঙ্গে তাদের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। আমি তাদের সবার কাছে আজ আবেদন জানাচ্ছি।’
‘আমি সেই সব সেনা সদস্যের প্রতিও আবেদন জানাচ্ছি, যাদেরকে সশস্ত্র বিদ্রোহের মতো গুরুতর অপরাধে সংশ্লিষ্ট হতে বাধ্য করা বা উসকানি দেওয়া হচ্ছে। আজ আমি রাশিয়ার সব অঞ্চলের কমান্ডারদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি।’
‘আপনারা সবাই জানেন, এমন একটি যুদ্ধে আমরা জড়িয়ে পড়েছি— যার ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে রাশিয়ার জনগণের ভাগ্য। তাই এ যুদ্ধে রাশিয়ার সব বাহিনী ও শক্তির মধ্যে ঐক্য, সংহতি এবং দায়িত্ববান থাকা খুবই জরুরি। যখন সবকিছু আমাদের বিরুদ্ধে— সেসময় নিজেদের মধ্যকার যে কোনো কলহ-বিবাদের সুযোগ শত্রুরা নিতে পারে এবং আমাদেরকে কোনঠাসা করতে তা অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।’
‘যেসব তৎপরতা আমাদের ঐক্যে ফাটল ধরায়, তা আমাদের জনগণ এবং যেসব সহযোদ্ধা (ইউক্রেনে) কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করছেন— তাদের কাছে ধর্মত্যাগের মতো। সম্প্রতি যে ঘটনাটি ঘটল— তা রাশিয়া এবং রাশিয়ার জনগণকে পেছন থেকে ছুরিকাঘাতের শামিল।’
‘বর্তমানে যে ঘটনাটির মুখোমুখি আমরা হয়েছি, সেটি পুরোপুরি বিশ্বাসঘাতকতা এবং এ ধরনের বিশ্বাসঘাতকতাসহ যেকোনো হুমকি থেকে আমরা আমাদের জনগণ ও দেশকে রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর।’ ‘আমি বিশ্বাস করি, আমাদের জন্য যা পবিত্র ও গভীর আবেগের— তা আমরা রক্ষা করবই। দেশকে রক্ষা করতে আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হই— সেক্ষেত্রে যে কোনো সংকট আমরা কাটিয়ে উঠতে পারব।’ ‘আর যারা সন্ত্রাসবাদ ও সশস্ত্র বিদ্রোহের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাদেরকে অবশ্যই আইন এবং আমাদের জনগণের সামনে অপরাধী হিসেবে দাঁড়াতে হবে এবং তাদের জন্য শাস্তি অনিবার্য।’ সূত্র : রিয়া নভোস্তি
পুতিনের বাবুর্চি থেকে যেভাবে ওয়াগনারপ্রধান প্রিগোজিন: রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ডাক দেওয়া বেসরকারি সামরিক কোম্পানি পিএমসি ওয়াগনার ছিল চলমান ইউক্রেন যুদ্ধে রুশ বাহিনীর প্রধান সহযোগী। এবং পিএমসি ওয়াগনারের শীর্ষ কমান্ডার ইয়েভগেনি প্রিগোজিন, যিনি শুক্রবার এক অডিওবার্তার মাধ্যমে এই বিদ্রোহের ডাক দিয়েছেন—প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ঘণিষ্টতার কারণে একসময় গোটা রাশিয়ায় তিনি পরিচিতি পেয়েছিলেন ‘পুতিনের বাবুর্চি’ নামে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিটিকোর তথ্য অনুসারে, পিএমসি ওয়াগনারের শীর্ষ কমান্ডার ইয়েভগেনি প্রিগোজিন ১৯৬১ সালে জন্ম নেন। ঘটনাচক্রে, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং প্রিগোজিনের জন্ম একই শহরে— রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর সেন্ট পিটার্সবার্গে। ইয়েভগেনি প্রিগোজিন একাধিকবার কারাবাসের সাজা খাটা আসামিও। ১৯৭৯ সালে, আঠারো বছর বয়সে চুরির অভিযোগে আড়াই বছর কারাগারে ছিলেন তিনি। সেই সাজা খেটে বের হওয়ার দু’বছর পর আবারও চুরি-ডাকাতির অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে এবং আদালতে সেসব অভিযোগ প্রমাণিত হওয়া ১৩ বছর কারাবাসের সাজা হয় তার। গত শতকের নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর মস্কো ও সেন্ট পিটার্সবার্গে হটডগ ও অন্যান্য ফাস্টফুড বিক্রির দোকান খোলেন প্রিগোজিন, একই সময়ে ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গেও পরিচয় হয় তার। ওই সময় সদ্য ভেঙে যাওয়া সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবি থেকে রুশ প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিনে বদলি হয়ে এসেছেন ভ্লাদিমির পুতিন।
বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, পুতিনের সঙ্গে পরিচয়ে সূত্র ধরে তৎকালীন ক্রেমলিনের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলেন ইয়েভগেনি প্রিগোজিন। ততদিনে রাশিয়ার একজন উঠতি রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠছেন তিনি। পুতিনের সঙ্গে ঘনিষ্টতার সূত্রে ক্রেমলিন ও সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে তিনি পরিচিতি পান ‘পুতিনের বাবুর্চি’ নামে। পরে এই নাম তার পরিচিত মহলেও ছড়িয়ে পড়ে। ক্রেমলিনের সঙ্গে দহরম মহরম সম্পর্ক থাকায় গোটা নব্বইয়ের দশক এবং তার পরের দশক বিভিন্ন লোভনীয় সরকারি ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নিতে সক্ষম হন প্রিগোজিন। এসব ঠিকাদারি কাজ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থও উপার্জন করেন তিনি। সম্ভবত এই অর্থ দিয়েই বেসরকারি সামরিক কোম্পানি পিএমসি ওয়াগনার গড়ে তুলেছেন ইয়েভগেনি প্রিগোজিন, তারপর নিজেই হয়েছেন এই কোম্পানির শীর্ষ নির্বাহী ও কমান্ডার। পিএমসি ওয়াগনার গ্রুপের যোদ্ধাদের অধিকাংশই জীবনের কোনো না কোনো সময় কারাগারে সাজা খেটে আসা আসামি। মূলত অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন দেশের সরকারি বাহিনীর সহযোগী হিসেবে যুদ্ধ করে ওয়াগনার গ্রুপ। সিরিয়া, মালি, সেন্ট্রাল আফ্রিকাসহ অনেক দেশেই যুদ্ধের অভিজ্ঞতা রয়েছে ওয়াগনার গ্রুপের যোদ্ধাদের। তবে এই বাহিনীর যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘণের অভিযোগও উঠেছে একাধিকবার। ২০২২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়ার সেনাবাহিনী। তার কয়েক মাস পর রুশ বাহিনীর অংশ হিসেবে তাতে যোগ দেয় ওয়াগনার গ্রুপ।