প্রত্যাশা ডেস্ক: অবশেষে তিন বছরের যুদ্ধের অবসান ঘটাতে ইউক্রেনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ আলোচনায় বসার আগ্রহ প্রকাশ করেছে রাশিয়া। রোববার (১১ মে) ক্রেমলিন থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই প্রস্তাব দেন। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, আগামী ১৫ মে তুরস্কে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। পুতিন বলেন, ইস্তানবুলে আলোচনার প্রধান উদ্দেশ্য হবে যুদ্ধের পেছনে আসল কারণ খুঁজে বের করে তার মূলোৎপাটন করা এবং ক্ষণস্থায়ী বিরতির বদলে দীর্ঘস্থায়ী, টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠা করা।
তিনি আরো বলেন, কোনো পূর্বশর্ত ছাড়াই প্রত্যক্ষ আলোচনায় বসার জন্য আমরা কিয়েভকে প্রস্তাব জানাচ্ছি। বল এখন আপনাদের কোর্টে। এখন দেখার বিষয় হচ্ছে, ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ ও তাদের পৃষ্ঠপোষকরা কী নিজেদের স্বার্থে কাজ করে নাকি দেশের স্বার্থে কাজ করে।
সম্ভাব্য বৈঠকের বিষয়ে দ্রুতই ইস্তাম্বুলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগ করবে মস্কো। সব ঠিকঠাক থাকলে, এই আলোচনা যুদ্ধবিরতির দিকেও গড়াতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন পুতিন।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে কিয়েভের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, তার দেশ আলোচনায় বসবে তবে তার আগে রাশিয়াকে ১২ মে থেকে ৩০ দিনের নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে হবে।
ইউক্রেইনের এ প্রেসিডেন্ট বলেছেন, রাশিয়ানরা যে অবশেষে যুদ্ধ শেষ করার কথা ভাবছে, তা বেশ ইতিবাচক লক্ষণ। সমগ্র বিশ্ব অনেক দিন ধরে এর জন্য অপেক্ষা করছে। আর যে কোনো যুদ্ধ থামানোর প্রথম ও জরুরি শর্তই হলো যুদ্ধবিরতি। একটি দিনও মানুষ হত্যা অব্যাহত রাখার কোনো কারণ থাকতে পারে না। আমরা আশা করছি, রাশিয়া আগামীকাল ১২ মে থেকে পূর্ণাঙ্গ, টেকসই ও নির্ভরযোগ্য যুদ্ধবিরতিতে রাজি হবে, আর ইউক্রেইনও তাদের সঙ্গে বসতে প্রস্তুত, জেলেনস্কি এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।
পুতিনের প্রস্তাবে বেজায় খুশি হয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে তিনি বলেন, পুতিনের প্রস্তাব থেকে যুদ্ধের অবসান হওয়ার পথে ইতিবাচক ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ইউক্রেন ও রাশিয়ার জন্য সেরা একটি দিন! ভেবে দেখুন, এই আলোচনা ফলপ্রসূ হলে কত মানুষের জীবন রক্ষা হবে!
এদিকে, প্রধান ইউরোপীয় শক্তিগুলো গতকাল এক বৈঠকের পর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলে, পুতিনকে অবিলম্বে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির জন্য সম্মত হতে হবে, নইলে রাশিয়ার ওপর নেমে আসবে নিষেধাজ্ঞার খড়্গ।
এসব আল্টিমেটামে বিরক্ত হয়ে পুতিন বলেছেন, এর আগেও একাধিক ক্ষণস্থায়ী বিরতিতে সম্মত হয়েছিলেন তিনি। তবে কোনোটিই সম্মান করা হয়নি। জ্বালানি খাতে হামলা না করা, ইস্টার সানডেতে হামলা বন্ধ রাখা এবং সর্বশেষ ৮ থেকে ১১ মে পর্যন্ত ৭২ ঘণ্টার অস্ত্রবিরতি কোনো কাজে আসেনি।
তিনি স্পষ্ট করে এর আগে বলেছিলেন, ক্ষণস্থায়ী বিরতিতে রাশিয়া আর আগ্রহী নয়। তারা চায় দীর্ঘস্থায়ী শান্তি।
উল্লেখ্য, গত কয়েকমাসে মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে হামলা বিরতি বা কিছু স্থানে হামলা না চালানোর মতো সমঝোতা হয়েছিল। তবে এসব সমঝোতা না মেনে হামলা অব্যাহত রাখার জন্য দুই পক্ষই পাল্টাপাল্টি দোষারোপ করে এসেছে।