নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্পবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, গত এক বছর ধরে পুঁজিবাজারে নতুন ধরণ দেখছি। অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন অনেকগুলো ভালো পদক্ষেপ নিয়েছে। এখানে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরেছে। গতকাল শনিবার বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) ও সিএমজেএফ আয়োজিত ‘বাজেট পরবর্তী আলোচনা ও শেয়ারবাজারের উন্নয়নের পথ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। সালমান এফ রহমান বলেন, ‘গত একবছর পুঁজিবাজারে লেনদেন ও বাজার মূলধন বেড়েছে। একইসঙ্গে বেসিক সমস্যা ইক্যুইটিভিত্তিক মার্কেট থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করা হচ্ছে। সবমিলিয়ে পুঁজিবাজারের ভবিষ্যৎ ভালো দেখছি।’ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম, কমিশনার ড. শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম। আলোচক হিসেবে ছিলেন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি শরিফ আনোয়ার হোসাইন এবং এএমসি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ড. হাসান ইমাম। সালমান এফ রহমান বলেন, ‘পুঁজিবাজার ভালো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্টেক হোল্ডারদের দায়িত্ব বাড়বে। বাজারের স্বার্থে দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে ম্যানেজমেন্টের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর পুঁজিবাজার যেভাবে পরিচালিত হয় সেভাবে হতে হবে। সেখানে যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা আছে, সেগুলো আমাদেরও চালু করতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা বলেন, ‘আজকের আলোচনায় চূড়ান্ত বাজেটে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার ব্যবধান বাড়ানো, লভ্যাংশে দ্বৈত করহার প্রত্যাহার, মার্চেন্ট ব্যাংকের করহার কমানো, অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগসহ যেসব প্রস্তাব করা হয়েছে, সেগুলোর পেছনে যুক্তি আছে। এ প্রস্তাবগুলো চূড়ান্ত বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করবো।’ অনুষ্ঠানে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবায়েত উল ইসলাম বলেন, পুঁজির সংস্থান ও শিল্পায়নে আমরা পুঁজিবাজারকে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। এরই ধারাবাহিকতায় ব্যবসাবান্ধব রেগুলেটর হিসেবে কাজ করতে চাই। তবে এক্ষেত্রে ভালো সুশাসন থাকতে হবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর যে অপ্রদর্শিত অর্থ থাকে, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে তারা সেই অর্থ যেনো বৈধপথে আনতে পারেন বাজেটে আমরা সেই সুযোগটি রাখার জন্য প্রস্তাব করেছি। শিবলী রুবায়েত আরও বলেন, সরকার বাজেটে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর করের হার ২.৫০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছেন। আমরা আশা করতে পারি ভবিষ্যতে কোম্পানিগুলোর করের হার আরও কমবে। সবমিলিয়ে এবারের বাজেট হচ্ছে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ বাজেট। অনুষ্ঠানে কমিশনার ড. শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিগত বিশ বছর ধরে যে পুঁজিবাজার দেখে আসছি, সেখানে পরিবর্তন আনা দরকার। এ জন্য নতুন প্রোডাক্ট আনা ও স্ট্র্যাটেজি নিতে হবে।’ বিএমবি’র সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, ‘তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার কমানো হয়েছে। এটা ভালো সিদ্ধান্ত। এর ফলে কোম্পানির লভ্যাংশ দেওয়ার সক্ষমতা বাড়বে। এর বাইরে বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য অন্যান্য প্রত্যাশিত বিষয়াদি বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘তালিকাভুক্ত কোম্পানির পাশাপাশি অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার আড়াই শতাংশ কমানো হয়েছে। এর মাধ্যমে উভয় ক্ষেত্রের মধ্যে করহারের ব্যবধান সাড়ে ৭ শতাংশ। কিন্তু একটি তালিকাভুক্ত কোম্পানির বিভিন্ন নিয়মকানুন মেনে চলার কারণে ব্যয় অনেক বেশি হয়। যে কারণে ভালো মুনাফা করা বৃহৎ কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হতে চাইবে না।’ এ সমস্যা কাটিয়ে তুলতে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার ব্যবধান ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেন তিনি। অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি শরিফ আনোয়ার হোসাইন ও এএমসি এসোসিয়েশনের সভাপতি ড. হাসান ইমাম। সেমিনারে আয়োজকদের পক্ষে বক্তব্য দেন বিএমবিএর সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান এবং সিএমজেএফ’র সভাপতি হাসান ইমাম রুবেল।