ঢাকা ১২:৩৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫

পি কের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় মোট ৩৪ মামলা, স্বীকারোক্তি ১০ জনের

  • আপডেট সময় : ০১:৪৪:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ মার্চ ২০২২
  • ১০০ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : অস্তিত্বহীন কাগুজে প্রতিষ্ঠান খুলে কয়েকটা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার ও আত্মসাতের মূল হোতা প্রশান্ত কুমার ওরফে পি কে হালদার। দেশ ছেড়ে কানাডায় পলাতক এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক এই ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দুর্নীতির সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক দুই উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নাম এসেছে। বলা হচ্ছে, এই দুজনকে ম্যানেজ করে পি কে হালদার দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন এই অর্থ লোপাটের ঘটনা ঘটান। তারা হলেন সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী এবং সাবেক প্রধান নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম।
পি কে হালদারের অর্থ আতœসাতের ঘটনায় এখন পর্যন্ত সর্বমোট ৩৪টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় বিভিন্ন পর্যায়ে মোট ১২ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১০ আসামি আদালতে নিজের দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। এই ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় দুই বছর আগে দুদকের হাতে গ্রেপ্তার ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল হক সেসময় আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে এমনই তথ্য দিয়েছেন।
রাশেদুল হক জবানবন্দীতে বলেছেন, পি কে হালদারের ক্ষমতার উৎস ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী। তার মাধ্যমেই পি কে হালদার বিভিন্ন অনিয়মকে ম্যানেজ করতেন। এস কে সুর চৌধরীর প্রধান সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন শাহ আলম।’
ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক এই এমডি জবানবন্দিতে বলেছেন, তিনি পি কে হালদারের নির্দেশে প্রতি মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন অ্যান্ড মার্কেট-ডিএফআইএমের সাবেক জিএম এবং তৎপরবর্তী সাবেক নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমকে প্রতি মাসে দুই লাখ টাকা করে প্রদান করতেন।
পি কে হালদারের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় মঙ্গলবার এস কে সুর চৌধুরী ও শাহ আলমকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। ঢাকার সেগুনবাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদকের উপ-পরিচালক ও তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান আনোয়ার প্রধান। এই দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের দুদক সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, ‘ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল হক ১৬৪ ধারায় আদালতে নিজের দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। সেখানে দুটো নাম বেশি এসেছে যারা লিজিং লুটের নেপথ্যে ছিলেন। তাদের একজন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী এবং সাবেক নিবার্হী পরিচালক শাহ আলম।

দুদকেক সচিব বলেন, ‘রাশেদুল হকের জবানবন্দিতে তাদের নাম আসায় দুদক এই দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। সেখানে তাদের বক্তব্য রেকর্ড করেছে। পরবর্তীতে তাদের বক্তব্যে সঙ্গে তথ্য উপাত্ত মিলিয়ে দেখবেন এবং সেভাবেই আইনগতভাবে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রাশেদুল হকের জবানবন্দিতে ঘুষ নেওয়াসহ জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগগুলোর অনেকটাই প্রমান মিলেছে দুদকের তদন্তে। এখন দুদক তাদের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করবে কিনা জানতে চাইলে দুদক সচিব বলেন, ‘১৬৪ ধারা জবানবন্দিতে যাদের নাম আসবে তাদের প্রত্যেকের বক্তব্য নেওয়া হবে। তদন্তকারী কর্মকর্তা সেসব রেকর্ড করবেন এবং পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন।’
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন অডিট টিম, যারা ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এবং এফএএস ফাইন্যান্স অডিট করছেন, তাদের দুদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারাও পরোক্ষভাবে উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে সব কিছু করেছেন মর্মে তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে দাবি করেছেন। দুদকের তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের অর্থ আতœসাতে ২২টি এবং এফএএস ফাইন্যান্সের অর্থ আত্মসাতে ১২টি নিয়ে সর্বমোট ৩৪টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় বিভিন্ন পর্যায়ের মোট ১২ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১০ আসামি আদালতে নিজের দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।
সূত্রটি বলছে, পিকে হালদারের অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় এক হাজার কোটি টাকা সমমূল্যের সম্পদ ফ্রিজ ও ক্রোক করা হয়েছে। আর ৬৪ ব্যক্তির বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ৩৩ জনের অবৈধ সম্পদের বিষয়ে নোটিশ জারি করা হয়েছে এবং যাচাই চলমান রয়েছে। লিজিং কোম্পানীগুলোর অর্থ আত্মসাৎ এবং নানা অনিয়মের অভিযোগ বিষয়ে এক প্রশ্নে দুদক সচিব বলেন, ‘আর্থিক প্রতিষ্ঠান হোক বা যেকোনো প্রতিষ্ঠানই হোক যদি আইনবহির্ভূত কোনো কিছু হচ্ছে, অভিযোগ পেলে দুদক অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে।’

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ইইউ ও মেক্সিকোর ওপর ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেন ট্রাম্প

পি কের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় মোট ৩৪ মামলা, স্বীকারোক্তি ১০ জনের

আপডেট সময় : ০১:৪৪:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ মার্চ ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : অস্তিত্বহীন কাগুজে প্রতিষ্ঠান খুলে কয়েকটা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার ও আত্মসাতের মূল হোতা প্রশান্ত কুমার ওরফে পি কে হালদার। দেশ ছেড়ে কানাডায় পলাতক এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক এই ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দুর্নীতির সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক দুই উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নাম এসেছে। বলা হচ্ছে, এই দুজনকে ম্যানেজ করে পি কে হালদার দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন এই অর্থ লোপাটের ঘটনা ঘটান। তারা হলেন সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী এবং সাবেক প্রধান নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম।
পি কে হালদারের অর্থ আতœসাতের ঘটনায় এখন পর্যন্ত সর্বমোট ৩৪টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় বিভিন্ন পর্যায়ে মোট ১২ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১০ আসামি আদালতে নিজের দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। এই ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় দুই বছর আগে দুদকের হাতে গ্রেপ্তার ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল হক সেসময় আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে এমনই তথ্য দিয়েছেন।
রাশেদুল হক জবানবন্দীতে বলেছেন, পি কে হালদারের ক্ষমতার উৎস ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী। তার মাধ্যমেই পি কে হালদার বিভিন্ন অনিয়মকে ম্যানেজ করতেন। এস কে সুর চৌধরীর প্রধান সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন শাহ আলম।’
ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক এই এমডি জবানবন্দিতে বলেছেন, তিনি পি কে হালদারের নির্দেশে প্রতি মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন অ্যান্ড মার্কেট-ডিএফআইএমের সাবেক জিএম এবং তৎপরবর্তী সাবেক নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমকে প্রতি মাসে দুই লাখ টাকা করে প্রদান করতেন।
পি কে হালদারের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় মঙ্গলবার এস কে সুর চৌধুরী ও শাহ আলমকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। ঢাকার সেগুনবাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদকের উপ-পরিচালক ও তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান আনোয়ার প্রধান। এই দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের দুদক সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, ‘ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল হক ১৬৪ ধারায় আদালতে নিজের দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। সেখানে দুটো নাম বেশি এসেছে যারা লিজিং লুটের নেপথ্যে ছিলেন। তাদের একজন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী এবং সাবেক নিবার্হী পরিচালক শাহ আলম।

দুদকেক সচিব বলেন, ‘রাশেদুল হকের জবানবন্দিতে তাদের নাম আসায় দুদক এই দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। সেখানে তাদের বক্তব্য রেকর্ড করেছে। পরবর্তীতে তাদের বক্তব্যে সঙ্গে তথ্য উপাত্ত মিলিয়ে দেখবেন এবং সেভাবেই আইনগতভাবে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রাশেদুল হকের জবানবন্দিতে ঘুষ নেওয়াসহ জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগগুলোর অনেকটাই প্রমান মিলেছে দুদকের তদন্তে। এখন দুদক তাদের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করবে কিনা জানতে চাইলে দুদক সচিব বলেন, ‘১৬৪ ধারা জবানবন্দিতে যাদের নাম আসবে তাদের প্রত্যেকের বক্তব্য নেওয়া হবে। তদন্তকারী কর্মকর্তা সেসব রেকর্ড করবেন এবং পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন।’
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন অডিট টিম, যারা ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এবং এফএএস ফাইন্যান্স অডিট করছেন, তাদের দুদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারাও পরোক্ষভাবে উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে সব কিছু করেছেন মর্মে তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে দাবি করেছেন। দুদকের তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের অর্থ আতœসাতে ২২টি এবং এফএএস ফাইন্যান্সের অর্থ আত্মসাতে ১২টি নিয়ে সর্বমোট ৩৪টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় বিভিন্ন পর্যায়ের মোট ১২ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১০ আসামি আদালতে নিজের দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।
সূত্রটি বলছে, পিকে হালদারের অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় এক হাজার কোটি টাকা সমমূল্যের সম্পদ ফ্রিজ ও ক্রোক করা হয়েছে। আর ৬৪ ব্যক্তির বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ৩৩ জনের অবৈধ সম্পদের বিষয়ে নোটিশ জারি করা হয়েছে এবং যাচাই চলমান রয়েছে। লিজিং কোম্পানীগুলোর অর্থ আত্মসাৎ এবং নানা অনিয়মের অভিযোগ বিষয়ে এক প্রশ্নে দুদক সচিব বলেন, ‘আর্থিক প্রতিষ্ঠান হোক বা যেকোনো প্রতিষ্ঠানই হোক যদি আইনবহির্ভূত কোনো কিছু হচ্ছে, অভিযোগ পেলে দুদক অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে।’