নিজস্ব প্রতিবেদক : আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগের মামলায় পুলিশের ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে আদালতে আপত্তি জানাবেন কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর।
গতকাল বুধবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে তিনি ওই প্রতিবেদনের উপর নারাজি আবেদন দেওয়ার জন্য সময় চান। তার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন জাহিদুল ইসলাম। বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশ আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি সে আবেদন জমার তারিখ রেখেছেন বলে আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তাপস কুমার পাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।
হেফাজেত কিশোরকে শারীরিক নির্যাতনের কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি জানিয়ে গত ১৭ অক্টোবর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছিলেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ১০ মাস কারাগারে থাকার পর মুক্তি পেয়ে গত ১০ মার্চ আদালতে গিয়ে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনে এই মামলার আবেদন করেন কিশোর। সেখানে তিনি অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করেন। কিশোর অভিযোগ করেন, গত বছরের ২ মে তাকে ধরে নেওয়ার পর অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে নির্যাতন চালানো হয়েছিল। তিন দিন পর তাকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে থানায় নেওয়া হয়। কিশোরের আবেদন পেয়ে বিচারক ইমরুল কায়েশ তা তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন।
কিশোর মুক্তি পাওয়ার পর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তবে গত ২০ মার্চ কিশোরের শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে শরীরে (কান, পা ও শরীরে) আঘাতের চিহ্ন না পাওয়ার কথা জানায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড।
মামলার আর্জিতে কিশোর বলেছিলেন, তাকে যখন ঘর থেকে হাতকড়া পরিয়ে নিচে নামিয়ে আনা হয়, তখন সেখানে ছয়-সাতটি গাড়ি অপক্ষো করছিল। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় একটি পুরানো ও স্যাঁতস্যাঁতে বাড়ির একটি কক্ষে। সেখান থেকে তিনি বাইরে গাড়ির হর্নের শব্দ পাচ্ছিলেন।
মামলার আর্জিতে বলা হয়, ওই ঘরে প্রজেক্টরের মাধ্যমে কিশোরের নিজের আঁকা বিভিন্ন কার্টুন একের পর এক দেখিয়ে সেগুলোর মর্মার্থ জানতে চাওয়া হয়। করোনাভাইরাস নিয়ে আঁকা কিছু কার্টুন দেখিয়ে জানতে চাওয়া হয়, তিনি সেগুলো কেন এঁকেছেন? কার্টুনের চরিত্রগুলো কারা?
কিশোর বলেছেন, এক পর্যায়ে ‘প্রচ- জোরে থাপ্পর মারা হয়’ তার কানে। তাতে কিছু সময়ের জন্য বোধশক্তিহীন হয়ে পড়েন। তবে তিনি বুঝতে পারছিলেন যে কান দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। পরে ‘স্টিলের পাত বসানো লাঠি দিয়ে’ তাকে ‘পেটানো’ হয়। যন্ত্রণা ও ব্যথায় তিনি সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন। সেখানে ২ মে থেকে ৪ মে এভাবে তার ওপর ‘শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার’ চালানো হয় বলে অভিযোগ করেন কিশোর। আর্জিতে তিনি বলেন, পরে তিনি নিজেকে র্যাব কার্যালয়ে দেখতে পান। সেখানে তার সঙ্গে লেখক মুশতাক আহমেদের দেখা হয়। মুশতাকের সঙ্গে আলাপ করে জানতে পারেন, মুশতাককে ‘বৈদ্যুতিক শক’ দেওয়া হয়ছে।
গত বছরের ৬ মে রমনা থানায় হস্তান্তর করার পর ‘সরকারবিরোধী প্রচার ও গুজব ছড়ানোর’ অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয় তাদের বিরুদ্ধে। মুশতাক বন্দি অবস্থায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মারা যান, যা নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখা দেয়। এরপর গত ৩ মার্চ ছয় মাসের জামিন পাওয়ার পরদিন কিশোর কারাগার থেকে ছাড়া পান।
পিবিআইর প্রতিবেদনে নারাজি দেবেন কার্টুনিস্ট কিশোর
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ