স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ডেস্ক: সন্তানহীন নারী ৩০ পেরোলেই তাকে সমাজ মনে করিয়ে দেয় তার ‘বায়োলজিক্যাল ক্লক’ এর কথা। বলা হয় – এবার সন্তান জন্ম দেওয়া কঠিন হয়ে যাবে, সন্তান অসুস্থ হতে পারে, এমনকি অনেককে বন্ধ্যত্বের ভয়ও দেখানো হয়। অন্যদিকে পুরুষের ক্ষেত্রে বরাবরই বলা হয় – পিতা হওয়ার জন্য কোনো বয়সই দেরি নয়। তবে নতুন গবেষণা বলছে ভিন্ন কথা। দীর্ঘদিন ধরে সমাজে ‘বায়োলজিক্যাল ক্লক’ শব্দটা শুধু নারীদের জন্যই প্রযোজ্য। কিন্তু সাম্প্রতিক এক আন্তর্জাতিক গবেষণা জানাচ্ছে, বয়সের প্রভাব শুধু নারীর শরীরেই নয়, পুরুষেরও শরীরে পড়ে – বিশেষ করে তাদের শুক্রাণুর গুণমানে।
নতুন গবেষণার তথ্য: ২০২৫ সালে প্রকাশিত সায়েন্স অ্যাডভান্সেস–এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, নারীরা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিম্বাণুর সংখ্যা কমে গেলেও, ওই ডিম্বাণুর জিনগত মান বা ডিএনএ-এর স্থিতিশীলতা তেমন নষ্ট হয় না। অর্থাৎ বয়স বাড়লে ডিম্বাণু কমে, কিন্তু যেগুলো থাকে সেগুলোর মান তেমন খারাপ হয় না। অন্যদিকে, পুরুষের ক্ষেত্রে চিত্রটা উল্টো। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের শুক্রাণুতে জিনগত ত্রুটি বা মিউটেশন জমতে থাকে। গবেষকরা দেখেছেন, ৪০ বছরের পর থেকে এই পরিবর্তন আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ফলে বেশি বয়সী পুরুষদের শুক্রাণু থেকে জন্ম নেওয়া শিশুর মধ্যে কিছু বিকাশজনিত বা স্নায়বিক সমস্যার ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি হতে পারে।
কেন এটা গুরুত্বপূর্ণ: দীর্ঘদিন ধরেই সন্তান না হওয়ার দায় নারীর ওপরই এসে পড়েছে – তার বয়স, হরমোন, জীবনযাপন ইত্যাদি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অথচ পুরুষের বয়স বা শুক্রাণুর মান নিয়ে তেমন কথা হয় না। কিন্তু এই নতুন গবেষণা বলছে, বাবা হওয়ার বয়সও সমান গুরুত্বপূর্ণ। শুধু মায়ের বয়স নয়, বাবার বয়সও গর্ভধারণের সফলতা ও শিশুর ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই তথ্য সমাজের মানসিকতা বদলাতে সাহায্য করবে। সন্তানধারণ ও পরিবার পরিকল্পনার আলোচনায় পুরুষের বয়স ও স্বাস্থ্যও সমান গুরুত্ব পাওয়া উচিত। সময়ের প্রভাব নারী ও পুরুষ-দু’জনের শরীরেই কাজ করে, শুধু রূপটা আলাদা। তাই ‘বায়োলজিক্যাল ক্লক’ শব্দটি আর একতরফা নয়; এটি এখন দু’জনেরই ব্যাপার।
মেহেদী/সানা/আপ্র/১৫/১০/২০২৫