নিজস্ব প্রতিবেদক: আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের উভয় কক্ষে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য না হলে গণভোট আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম (চরমোনাই পীর)। নির্বাচনের আগে রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিপূর্ণ সংস্কারও দাবি করেন তিনি। সংস্কার না করে নির্বাচন আয়োজন করা হলে আবারও স্বৈরাচারী সরকার তৈরির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।
শনিবার (২৮ জুন) বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আয়োজিত মহাসমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
রেজাউল করিম বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের প্রধান লক্ষ্য ছিল দেশকে স্বৈরাচারের হাত থেকে রক্ষা করা। ৫৪ বছরের জমা হওয়া জঞ্জাল দূর করা। অভ্যুত্থানের পর সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। আমরা মতামত দিয়েছি। এখন সংস্কার নিয়ে দ্বিতীয় দফা আলোচনা চলছে। আমরা লক্ষ করছি, মৌলিক সংস্কারে কেউ কেউ গড়িমসি করছে। এটা জুলাইয়ের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। স্বৈরাচার তৈরির রাস্তা খোলা রাখা যাবে না। সংস্কার না করেই নির্বাচন আয়োজন করে দেশকে আবারও আগের অবস্থায় নিয়ে যাওয়া যাবে না। রাষ্ট্রের মূলনীতিসহ সংসদের উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের মতো বিষয়ে ঐকমত্য না হলে গণভোটের আয়োজন করতে হবে।
ইসলামী আন্দোলন আমির বলেন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন আয়োজন করার কোনো বিকল্প নেই। আজকের এই জনসমুদ্র পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের পক্ষের জনসমুদ্র।
১৯৭২ সালের সংবিধান দেশের মানুষের বোধ-বিশ্বাস ও গণআকাঙক্ষাবিরোধী উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেই সংবিধান রচয়িতাদের স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান রচনা করার ম্যান্ডেটই ছিল না। তারা ভিনদেশের সংবিধান অনুসরণ করেছিলেন। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। কোনো ক্ষেত্রেই কাঙ্ক্ষিত সমৃদ্ধি ও উন্নতি হয়নি। রাজনৈতিক সংস্কৃতি কলুষিত হয়েছে। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো, সংবিধান মেনেই স্বৈরাচার তৈরি হয়েছে। এ জন্যই আমরা সংস্কারের প্রশ্নে অটল।
পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্তদের কোনো ক্ষমা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, যারা সরাসরি ফৌজদারি অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের বিচার করতে হবে। যারা অপরাধে সহায়তা করেছে, তাদেরও বিচার করতে হবে। বিচারের ক্ষেত্রে কিছুটা অগ্রগতি হলেও পতিত সরকারের অধিকাংশ মন্ত্রী-এমপি এবং নেতারা এখনো জেলের বাইরে। অনেকেই দেশের বাইরে থেকে উসকানি দিয়ে যাচ্ছে।
চরমোনাই পীর বলেন, দেশের সব মানুষের ভোটের দাম সমান। কারও ভোট যাতে অবমূল্যায়ন না হয়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। তাই আগামী নির্বাচনে সংসদের উভয়কক্ষে অবশ্যই পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে হবে। যে দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সংসদে তাদের সেই অনুপাতে আসন থাকবে। এই পদ্ধতিতে রাষ্ট্র পরিচালনায় সবার মতের প্রতিফলন ঘটবে। কোনো দল জালেম হওয়ার সুযোগ পাবে না। এটা জেনজি’র দাবি। এটা এখন জনগণের দাবি। দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের দাবি।
বর্তমানে ইসলামপন্থিদের ঐক্যের ব্যাপারে গণপ্রত্যাশা তৈরি হয়েছে জানিয়ে রেজাউল করিম বলেন, আমি শুরু থেকেই ইসলামপন্থি সব ভোট একবাক্সে আনার কথা বলে আসছি। আগামী নির্বাচনে শুধু ইসলামী দলই নয়, বরং দেশপ্রেমিক আরও অনেক রাজনৈতিক দলও একবাক্স নীতিতে আসতে পারে ইনশা আল্লাহ।
নেতাকর্মীদের ঢল: সংস্কার, বিচার ও সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসমাবেশে নেতাকর্মীদের ঢল নামে। শনিবার দুপুর ২টায় মহাসমাবেশের মূলপর্ব শুরু হওয়ার আগেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কানায় কানায় ভরে যায়। এদিন সকাল ১০টায় কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয় সমাবেশের প্রথম পর্ব। তাতে বক্তব্য দেন সারাদেশ থেকে আসা জেলা ও মহানগর পর্যায়ের নেতারা। সকাল থেকে শাহবাগ, মৎস্যভবন, প্রেস ক্লাব, দোয়েল চত্বর, শহীদ মিনার এলাকায় সারা দেশ থেকে নেতাকর্মীরা বাসে করে এসে জড়ো হয়। দুপুরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের সবগুলো ফটকে দীর্ঘ জটলা দেখা যায়। উদ্যানে প্রবেশ করতে না পেরে মৎস্য ভবন মোড়ে এলইডি পর্দায় সমাবেশ দেখেছেন কয়েকশ নেতাকর্মী।
৬ জনের মৃত্যুতে শোক: রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শনিবার (২৮ জুন) ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জাতীয় মহাসমাবেশে যোগ দিতে আসার পথে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর ও টাঙ্গাইলে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ছয় নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে শ্রীনগরে পাঁচজন এবং টাঙ্গাইলে একজন নিহত হন। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো অনেকে। ঘটনার পর এক শোকবার্তায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, মহাসমাবেশে অংশ নিতে আসার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় আমাদের ছয়জন সঙ্গী শাহাদাতবরণ করেছেন। এটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও হৃদয়বিদারক। আমি তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, শহীদদের রক্ত বৃথা যাবে না। এই আত্মত্যাগ আমাদের আন্দোলন আরো বেগবান করবে। আমরা তাদের পরিবারের পাশে আছি এবং সর্বোচ্চ সহযোগিতা নিশ্চিত করবো।