ঢাকা ০৪:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫

পাহাড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ৭১ হাজার কৃষক

  • আপডেট সময় : ০২:৫৮:১৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৩
  • ১৫১ বার পড়া হয়েছে

রাঙ্গামাটি সংবাদদাতা: তিন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের অনেক প্রান্তিক কৃষক এবারের বন্যায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত এমন কৃষকের সংখ্যা ৭১ হাজার ২৫০ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বান্দরবানের কৃষকরা। তাদের সংখ্যা ৫৬ হাজার ২৫০ জন। এই সংখ্যা ক্ষতিগ্রস্ত মোট কৃষকের পাঁচ ভাগের চার ভাগ, সুনির্দিষ্টভাবে ৭৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ। রাঙ্গামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে তিন পার্বত্য জেলায় এক লাখ ১৩ হাজার ৫১ হেক্টর কৃষিজমিতে আউশ ও রোপা আমন ধান এবং গ্রীষ্মকালীন সবজি, আদা, হলুদ, কলা, পেঁপেসহ অন্যান্য ফসলের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে তিন পার্বত্য জেলার ১৫ হাজার ৮২৭ হেক্টর জমির ফসল আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১২ হাজার ৭৭৭ হেক্টর জমির ফসল। আবাদ হিসাবে ১১ দশমিক ৩০ শতাংশ জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর তিন জেলার ৭১ হাজার ২৫০ জন কৃষকের ক্ষতির পরিমাণ ৩৮৩ কোটি ৮ লাখ টাকা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যে জেলাভিত্তিক ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, রাঙ্গামাটি জেলায় ৫৯ হাজার ৮৩৫ হেক্টর জমির মধ্যে চার হাজার ৬২৮ হেক্টর জমির ফসল আক্রান্ত হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তিন হাজার ২১৪ হেক্টর জমির ফসল। ক্ষতির হার ৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এর মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত দুই হাজার ৬৪১ হেক্টর ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত এক হাজার ৯৮৯ হেক্টর জমির ফসল। জেলার ১২ হাজার ১৬০ জন কৃষকের আর্থিক ক্ষতি ৬১ কোটি ৩২ লাখ টাকা। খাগড়াছড়ি জেলায় ৩২ হাজার ৭৯২ হেক্টর জমির মধ্যে এক হাজার ৩৪৪ হেক্টর জমির ফসল আক্রান্ত ও ৭১০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শতকরা ক্ষতির হার ২ দশমিক ১৭ শতাংশ। এর মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ৭১০ হেক্টর ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ৬৩৪ হেক্টর জমির ফসল। জেলার দুই হাজার ৮৪০ জন কৃষক ১১ কোটি ২ লাখ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তিন জেলার মধ্যে এই জেলায় কৃষিতে ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে কম।
অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বান্দরবান জেলায় ২০ হাজার ৪২৪ হেক্টর জমির মধ্যে ৯ হাজার ৮৫৫ হেক্টর জমির ফসলই আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আট হাজার ৮৫৩ হেক্টর জমির ফসল। ক্ষতির হার ৪৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এর মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ছয় হাজার ৩৭৪ হেক্টর, আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত তিন হাজার ৪৮১ হেক্টর জমির ফসল। জেলার ৫৬ হাজার ২৫০ জন কৃষকের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৩১০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির জেলার সব উপজেলা ক্ষতি হলেও খাগড়াছড়ির সদর, দীঘিনালা, মহালছড়ি ও রামগড় উপজেলার কৃষিজমি ক্ষতির মুখে পড়েছে। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, গত কয়েক দশকের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে বিশেষত রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় কাপ্তাই হ্রদের পানি বাড়লে জমির ফসল তলিয়ে গেছে। মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টিপাত, ঢলের পানি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগেও তিন পার্বত্য জেলায় ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তবে এবারের মতো ক্ষয়ক্ষতির মুখে কখনোই পড়েননি পাহাড়ের কৃষকরা। কৃষকদের এই ভয়াবহ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারের প্রণোদনা দরকার। রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার ৩ নম্বর ফারুয়া ইউনিয়নটি বেশ দুর্গম। এই ইউনিয়নের ৯০ শতাংশ মানুষের প্রধান জীবিকা কৃষি। এবারের বন্যায় প্রান্তিক সেই কৃষকরাই ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বান্দরবানের উপপরিচালক এম এম শাহ্ নেয়াজ বলেন, ‘টানা বৃষ্টিতে বান্দরবানে কৃষির ক্ষতি প্রায় ৩১০ কোটি ৭৩ লাখ টাকার। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে লামা, সদর উপজেলা, আলীকদম ও রোয়াংছড়িতে। আমরা মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি জানিয়েছি। আশা করছি শিগগিরই ক্ষতিগ্রস্তদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া যাবে। এ ছাড়া স্থানীয়ভাবে বান্দরান পার্বত্য জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কিছু আমন বীজ দেয়া হবে।’

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

পাহাড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ৭১ হাজার কৃষক

আপডেট সময় : ০২:৫৮:১৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৩

রাঙ্গামাটি সংবাদদাতা: তিন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের অনেক প্রান্তিক কৃষক এবারের বন্যায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত এমন কৃষকের সংখ্যা ৭১ হাজার ২৫০ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বান্দরবানের কৃষকরা। তাদের সংখ্যা ৫৬ হাজার ২৫০ জন। এই সংখ্যা ক্ষতিগ্রস্ত মোট কৃষকের পাঁচ ভাগের চার ভাগ, সুনির্দিষ্টভাবে ৭৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ। রাঙ্গামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে তিন পার্বত্য জেলায় এক লাখ ১৩ হাজার ৫১ হেক্টর কৃষিজমিতে আউশ ও রোপা আমন ধান এবং গ্রীষ্মকালীন সবজি, আদা, হলুদ, কলা, পেঁপেসহ অন্যান্য ফসলের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে তিন পার্বত্য জেলার ১৫ হাজার ৮২৭ হেক্টর জমির ফসল আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১২ হাজার ৭৭৭ হেক্টর জমির ফসল। আবাদ হিসাবে ১১ দশমিক ৩০ শতাংশ জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর তিন জেলার ৭১ হাজার ২৫০ জন কৃষকের ক্ষতির পরিমাণ ৩৮৩ কোটি ৮ লাখ টাকা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যে জেলাভিত্তিক ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, রাঙ্গামাটি জেলায় ৫৯ হাজার ৮৩৫ হেক্টর জমির মধ্যে চার হাজার ৬২৮ হেক্টর জমির ফসল আক্রান্ত হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তিন হাজার ২১৪ হেক্টর জমির ফসল। ক্ষতির হার ৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এর মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত দুই হাজার ৬৪১ হেক্টর ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত এক হাজার ৯৮৯ হেক্টর জমির ফসল। জেলার ১২ হাজার ১৬০ জন কৃষকের আর্থিক ক্ষতি ৬১ কোটি ৩২ লাখ টাকা। খাগড়াছড়ি জেলায় ৩২ হাজার ৭৯২ হেক্টর জমির মধ্যে এক হাজার ৩৪৪ হেক্টর জমির ফসল আক্রান্ত ও ৭১০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শতকরা ক্ষতির হার ২ দশমিক ১৭ শতাংশ। এর মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ৭১০ হেক্টর ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ৬৩৪ হেক্টর জমির ফসল। জেলার দুই হাজার ৮৪০ জন কৃষক ১১ কোটি ২ লাখ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তিন জেলার মধ্যে এই জেলায় কৃষিতে ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে কম।
অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বান্দরবান জেলায় ২০ হাজার ৪২৪ হেক্টর জমির মধ্যে ৯ হাজার ৮৫৫ হেক্টর জমির ফসলই আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আট হাজার ৮৫৩ হেক্টর জমির ফসল। ক্ষতির হার ৪৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এর মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ছয় হাজার ৩৭৪ হেক্টর, আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত তিন হাজার ৪৮১ হেক্টর জমির ফসল। জেলার ৫৬ হাজার ২৫০ জন কৃষকের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৩১০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির জেলার সব উপজেলা ক্ষতি হলেও খাগড়াছড়ির সদর, দীঘিনালা, মহালছড়ি ও রামগড় উপজেলার কৃষিজমি ক্ষতির মুখে পড়েছে। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, গত কয়েক দশকের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে বিশেষত রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় কাপ্তাই হ্রদের পানি বাড়লে জমির ফসল তলিয়ে গেছে। মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টিপাত, ঢলের পানি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগেও তিন পার্বত্য জেলায় ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তবে এবারের মতো ক্ষয়ক্ষতির মুখে কখনোই পড়েননি পাহাড়ের কৃষকরা। কৃষকদের এই ভয়াবহ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারের প্রণোদনা দরকার। রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার ৩ নম্বর ফারুয়া ইউনিয়নটি বেশ দুর্গম। এই ইউনিয়নের ৯০ শতাংশ মানুষের প্রধান জীবিকা কৃষি। এবারের বন্যায় প্রান্তিক সেই কৃষকরাই ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বান্দরবানের উপপরিচালক এম এম শাহ্ নেয়াজ বলেন, ‘টানা বৃষ্টিতে বান্দরবানে কৃষির ক্ষতি প্রায় ৩১০ কোটি ৭৩ লাখ টাকার। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে লামা, সদর উপজেলা, আলীকদম ও রোয়াংছড়িতে। আমরা মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি জানিয়েছি। আশা করছি শিগগিরই ক্ষতিগ্রস্তদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া যাবে। এ ছাড়া স্থানীয়ভাবে বান্দরান পার্বত্য জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কিছু আমন বীজ দেয়া হবে।’