নিজস্ব প্রতিবেদক : পার্বত্য চট্টগ্রামে কারা কোত্থেকে এসে হামলা চালিয়েছে, তা কেউ জানে না বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ। তিনি বলেছেন, “এর পেছনে কারা জড়িত তা খুঁজে বের করতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে।”
রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সরকার বিভাগ কার্যালয়ে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের শার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স হেলেন লাফেইভের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের তার সঙ্গে বৈঠকে গেলে তিনি এ কথা বলেন বলে মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। পাহাড়ে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাতে উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের অংশ হয়ে শনিবার খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি সফর করে এসেছেন হাসান আরিফ। পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান অস্থিরতা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিককে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বলেন, “রাঙামাটিসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে সম্প্রীতি নষ্ট করতে বিভিন্ন দিক থেকে নানাভাবে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।”
দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ‘প্রতিষ্ঠার’ চেষ্টা করছেন বলেও সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন হাসান আরিফ। বলেন, “আমরা ছাত্র-জনতা-শ্রমিকের ট্রাস্টি হিসেবে কাজ করছি। বাংলাদেশে এমন একটা পরিবেশ বিনির্মাণ করতে চাই, যাতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিরা রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারে।”
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চর্চায় ভূমিকা রাখবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক বাংলাদেশের নারীর ক্ষমতায়ন এবং আরবান হেলথ প্রোগ্রামের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। এ বিষয়ে হাসান আরিফ বলেন, “স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে যেমন গ্রামীণ রাস্তাঘাট নির্মাণে নারীরা কাজ করছে, তেমনি পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে নারীরা কাজ করছে। “আবার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিবও একজন নারী। নাগরিক স্বাস্থ্য উন্নয়নসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার সহায়তা প্রত্যাশা করছি।” স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. নজরুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক এ এইচ এম কামরুজ্জামান, ইউএসএইডের মিশন ডিরেক্টর রিড এইস্ক্লিম্যান এবং পলিটিক্যাল ইকোনমিক কাউন্সিলর এরিক গিলান বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
রাঙামাটিতে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার: রাঙামাটি পৌর এলাকায় প্রত্যাহার করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান জানান, শহরের পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টা থেকে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এদিকে, দু’পক্ষের সংঘর্ষের পর বিক্ষুব্ধ পাহাড়ি ছাত্র-জনতার ডাকে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে ৭২ ঘণ্টার অবরোধ চলছে। অবরোধের কারণে রোববার সকাল থেকে জেলা সদর থেকে সব রুটে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। পর্যটনকেন্দ্র সাজেকে আটকে পড়েছেন ৮ শতাধিক পর্যটক। অপরদিকে, পরিবহন ধর্মঘটের কারণে শহরের অভ্যন্তরীণ চলাচলের একমাত্র মাধ্যম সিএনজি অটোরিকশাসহ ট্রাক, মিনি ট্রাকসহ সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এর আগে, শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে রাঙামাটি শহরজুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল জোরদার করেছে। কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। শহরের হ্যাপির মোড়, বনরুপাসহ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান, পুলিশ সুপার ড. এসএম ফরহাদ হোসেন, সদর সেনা জোনের জোন কমান্ডার মো. এরশাদ হোসেন চৌধুরী। জেলা প্রশাসক জানান, সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। পুলিশ সুপার ড. এস এম ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘সহিংসতার ঘটনায় দুটি মামলা করা হয়েছে। মামলা অনুযায়ী তদন্ত প্রক্রিয়া চলছে। যারা আইন হাতে তুলে নিয়েছে, তারা কোনোভাবেই ছাড় পাবে না।’
পার্বত্য চট্টগ্রামে কারা কোত্থেকে হামলায়, জানে না কেউ: উপদেষ্টা আরিফ
জনপ্রিয় সংবাদ