ঢাকা ১২:৩১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৫

পার্বত্য অঞ্চলে খাসজমি দখল কৌশল

  • আপডেট সময় : ০৮:৪০:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ নভেম্বর ২০২৫
  • ২ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

এম আই মামুন

বেশ কয়েকদিন খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষ্মীছড়ির পার্শ্ববর্তী বর্মাছড়ি এলাকায় সেনাবাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন এবং এর বিরোধিতা করে উপজাতীয়দের প্রতিবাদের বেশকিছু তথ্য বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়। যে স্থানটির ব্যাপারে আলোচনা হয়, সেটি মূলত খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি জেলার সীমানায় অবস্থিত। শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার আগে উল্লিখিত স্থানে একটি নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্প ছিল। শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার পর চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহারের অংশ হিসেবে সেখান থেকে ক্যাম্প উঠিয়ে নেওয়া হয়।

নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্পগুলো সাধারণত সরকারি খাসজমিতে স্থাপন করা হয়। যেসব স্থান থেকে এখন পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে, তার প্রতিটি স্থানেই বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করেছে। প্রত্যাহারকৃত ক্যাম্পের স্থানে যাতে কোনো জরুরি প্রয়োজনে পুনরায় ক্যাম্প স্থাপন করা না যায় এবং ওই জায়গা দখলে রাখতে এই বিশেষ কৌশলটি অবলম্বন করা হয়।

মূলত পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠনগুলো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের আড়ালে ক্যাম্প স্থাপন, প্রশিক্ষণ ও এলাকায় আধিপত্য বজায় রাখার লক্ষ্যে ওই স্থানগুলোর ব্যবহার করে থাকে। বর্মাছড়ি এলাকাটি বেশ দুর্গম হওয়ায় সংগঠনগুলো ওই এলাকাকে তাদের দুর্গ হিসেবে ব্যবহার করছে। সাম্প্রতিক সময়ে গুইমারা ও লক্ষ্মীছড়ি এলাকায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সশস্ত্র সংগঠনগুলো যে অরাজকতা করেছে, তা মূলত বর্মাছড়ি এলাকা থেকেই পরিচালনা করা হয়েছে। তাদের সশস্ত্র কার্যক্রম বন্ধের জন্যই সেনাবাহিনী কর্তৃক ওই এলাকায় সরকারি খাসজমির ওপর একটি টেম্পরারি অপারেটিং বেইস (টিওবি) স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

ওই এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর কোনো স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি বলে জানা যায়। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, সমতলে কোনো এলাকায় নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি হলে পুলিশ যেমন ফাঁড়ি বা পোস্ট স্থাপন করে, পার্বত্য এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর টিওবিও ঠিক তেমনি। টিওবি স্থাপন হয় অস্থায়ী ভিত্তিতে সাময়িক সময়ের জন্য। পরিস্থিতির উন্নতি হলেই সেগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়। পার্বত্য অঞ্চলের কোনো এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি সশস্ত্র সংগঠনগুলোর জন্য হুমকিস্বরূপ। নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতির কারণে সন্ত্রাসীদের অস্ত্রসহ চলাচল এবং চাঁদাবাজির কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এ জন্যই তারা সর্বদা পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্প প্রত্যাহারের জন্য সরকারের ওপর নানাভাবে চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের যে কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার দায় নিরাপত্তা বাহিনী বিশেষ করে সেনাবাহিনীর ওপর চাপানোর চেষ্টা করে। নিরীহ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জনসাধারণকে বলপ্রয়োগ ও ভুল বুঝিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়; এমনকি আশ্রয় গ্রহণের জন্য তারা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার এবং অনেক ক্ষেত্রে তাদের সদস্যরা ধর্মগুরুর ছদ্মবেশও ধারণ করে। ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যবহার করে এই সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করছে; যা তাদের একটি পুরোনো কৌশল। বর্মাছড়িতে নিরাপত্তা বাহিনী টিওবি স্থাপনের পরিকল্পনা করলেও সশস্ত্র সংগঠনগুলো স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা হচ্ছে বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

গত কয়েকদিন বর্মাছড়ি এলাকায় সাধারণ মানুষকে দিয়ে তারা মিছিল-মিটিং করিয়েছে। অক্টোবরের ২৭ থেকে ৩০ তারিখের মধ্যে ইউপিডিএফের নেতৃত্বে ক্যাম্প স্থাপনের বিরোধিতা করে ৮-১০ হাজার লোকের জনসমাবেশের পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র মারফত জানা যায়।

এখন দেখার বিষয়, সরকার ও সেনাবাহিনী এসব সশস্ত্র সংগঠনের অন্যায্য দাবির কাছে নতি স্বীকার করে টিওবি স্থাপনের পরিকল্পনা থেকে সরে আসবে, নাকি দেশের অখণ্ডতা রক্ষায় যে কোনো মূল্যে টিওবি স্থাপন করে সশস্ত্র সংগঠনগুলোকে রুখে দেবে।

লেখক: পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক গবেষক
(মতামত লেখকের সম্পূর্ণ নিজস্ব)

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ, নির্বাচন প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা

পার্বত্য অঞ্চলে খাসজমি দখল কৌশল

আপডেট সময় : ০৮:৪০:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ নভেম্বর ২০২৫

এম আই মামুন

বেশ কয়েকদিন খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষ্মীছড়ির পার্শ্ববর্তী বর্মাছড়ি এলাকায় সেনাবাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন এবং এর বিরোধিতা করে উপজাতীয়দের প্রতিবাদের বেশকিছু তথ্য বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়। যে স্থানটির ব্যাপারে আলোচনা হয়, সেটি মূলত খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি জেলার সীমানায় অবস্থিত। শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার আগে উল্লিখিত স্থানে একটি নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্প ছিল। শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার পর চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহারের অংশ হিসেবে সেখান থেকে ক্যাম্প উঠিয়ে নেওয়া হয়।

নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্পগুলো সাধারণত সরকারি খাসজমিতে স্থাপন করা হয়। যেসব স্থান থেকে এখন পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে, তার প্রতিটি স্থানেই বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করেছে। প্রত্যাহারকৃত ক্যাম্পের স্থানে যাতে কোনো জরুরি প্রয়োজনে পুনরায় ক্যাম্প স্থাপন করা না যায় এবং ওই জায়গা দখলে রাখতে এই বিশেষ কৌশলটি অবলম্বন করা হয়।

মূলত পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠনগুলো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের আড়ালে ক্যাম্প স্থাপন, প্রশিক্ষণ ও এলাকায় আধিপত্য বজায় রাখার লক্ষ্যে ওই স্থানগুলোর ব্যবহার করে থাকে। বর্মাছড়ি এলাকাটি বেশ দুর্গম হওয়ায় সংগঠনগুলো ওই এলাকাকে তাদের দুর্গ হিসেবে ব্যবহার করছে। সাম্প্রতিক সময়ে গুইমারা ও লক্ষ্মীছড়ি এলাকায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সশস্ত্র সংগঠনগুলো যে অরাজকতা করেছে, তা মূলত বর্মাছড়ি এলাকা থেকেই পরিচালনা করা হয়েছে। তাদের সশস্ত্র কার্যক্রম বন্ধের জন্যই সেনাবাহিনী কর্তৃক ওই এলাকায় সরকারি খাসজমির ওপর একটি টেম্পরারি অপারেটিং বেইস (টিওবি) স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

ওই এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর কোনো স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি বলে জানা যায়। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, সমতলে কোনো এলাকায় নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি হলে পুলিশ যেমন ফাঁড়ি বা পোস্ট স্থাপন করে, পার্বত্য এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর টিওবিও ঠিক তেমনি। টিওবি স্থাপন হয় অস্থায়ী ভিত্তিতে সাময়িক সময়ের জন্য। পরিস্থিতির উন্নতি হলেই সেগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়। পার্বত্য অঞ্চলের কোনো এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি সশস্ত্র সংগঠনগুলোর জন্য হুমকিস্বরূপ। নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতির কারণে সন্ত্রাসীদের অস্ত্রসহ চলাচল এবং চাঁদাবাজির কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এ জন্যই তারা সর্বদা পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্প প্রত্যাহারের জন্য সরকারের ওপর নানাভাবে চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের যে কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার দায় নিরাপত্তা বাহিনী বিশেষ করে সেনাবাহিনীর ওপর চাপানোর চেষ্টা করে। নিরীহ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জনসাধারণকে বলপ্রয়োগ ও ভুল বুঝিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়; এমনকি আশ্রয় গ্রহণের জন্য তারা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার এবং অনেক ক্ষেত্রে তাদের সদস্যরা ধর্মগুরুর ছদ্মবেশও ধারণ করে। ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যবহার করে এই সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করছে; যা তাদের একটি পুরোনো কৌশল। বর্মাছড়িতে নিরাপত্তা বাহিনী টিওবি স্থাপনের পরিকল্পনা করলেও সশস্ত্র সংগঠনগুলো স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা হচ্ছে বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

গত কয়েকদিন বর্মাছড়ি এলাকায় সাধারণ মানুষকে দিয়ে তারা মিছিল-মিটিং করিয়েছে। অক্টোবরের ২৭ থেকে ৩০ তারিখের মধ্যে ইউপিডিএফের নেতৃত্বে ক্যাম্প স্থাপনের বিরোধিতা করে ৮-১০ হাজার লোকের জনসমাবেশের পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র মারফত জানা যায়।

এখন দেখার বিষয়, সরকার ও সেনাবাহিনী এসব সশস্ত্র সংগঠনের অন্যায্য দাবির কাছে নতি স্বীকার করে টিওবি স্থাপনের পরিকল্পনা থেকে সরে আসবে, নাকি দেশের অখণ্ডতা রক্ষায় যে কোনো মূল্যে টিওবি স্থাপন করে সশস্ত্র সংগঠনগুলোকে রুখে দেবে।

লেখক: পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক গবেষক
(মতামত লেখকের সম্পূর্ণ নিজস্ব)

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ