ঢাকা ০৬:১৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫

পাবনায় গণপূর্ত দপ্তরে অস্ত্র হাতে ঠিকাদার আওয়ামী লীগ নেতারা

  • আপডেট সময় : ০১:৪২:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ জুন ২০২১
  • ১২৫ বার পড়া হয়েছে

পাবনা প্রতিনিধি : পাবনায় গণপূর্ত বিভাগে অস্ত্র নিয়ে আওয়ামী লীগের একদল ঠিকাদার নেতার মহড়ায় আতঙ্কিত হওয়ার কথা জানিয়েছেন ওই কার্যালয়ের কর্মীরা। গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তারা এনিয়ে পুলিশে কোনো অভিযোগ করেননি। ক্ষমতাসীন দলের ওই নেতারা লাইসেন্স করা অস্ত্র নিয়ে ওই দপ্তরে যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলছেন, তাদের ‘ভুল’ হয়েছে।
গত ৬ জুন এই ঘটনা ঘটলেও সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা একটি ভিডিও সম্প্রতি প্রকাশ হলে তা আলোচনায় আসে।
ওই ভিডিওতে দেখা যায়, গত ৬ জুন বেলা ১২টার দিকে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ফারুক হোসেন জামার হাতা গুটিয়ে সদলবলে পূর্ত ভবনে ঢুকছেন। তার পেছনে শটগান হাতে পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ আর খান মামুন এবং জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শেখ লালু। অস্ত্র নিয়েই তারা কার্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষে ঢুকতে দেখা গেছে। ওই সময় তাদের সঙ্গীরা বাইরে অপেক্ষায় ছিলেন। ১২টা ১২ মিনিটে তারা ফিরে যান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গণপূর্তকর্মীর বরাত দিয়ে সংবাদসংস্থা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এক প্রতিবেদনে জানায়, এসব মহড়ায় তাদের আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রভাব বলয় তৈরি করে বিভিন্ন কাজের দরপত্র নিজেদের আয়ত্তে নিতে চেষ্টা করেন ক্ষমতাসীন দলের ঠিকাদার নেতারা। তাদের দাপটে অনেক অন্য ঠিকাদাররা দরপ্রস্তাব জমা দিতে পারছেন না। কোনো অভিযোগ না দেওয়ার বিষয়ে কর্মকর্তারা বলেন, আওয়ামী লীগ নেতারা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে এলেও কোনো হুমকি দেননি।
পাবনা গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, “ঠিকাদাররা আমার কক্ষে এসেছিলেন। আমার টেবিলে অস্ত্র রেখে নির্বাহী প্রকৌশলী স্যারের কাছে এসেছেন বলে জানান তারা। খারাপ আচরণ বা গালাগালি করেননি।”
বিল কিংবা দরপত্রকে কেন্দ্র করে এই মহড়া কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “পাবনায় নতুন যোগ দিয়েছি। এসব বিষয়ে আমার জানা নেই।”
নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুল আজিম বলেন, “ঘটনার সময় আমি অফিসের বাইরে ছিলাম। তবে সিসিটিভি ফুটেজে অস্ত্র হাতে অনেকে এসেছে দেখেছি। তারা আমাকে সরাসরি বা ফোনে কোনো হুমকি দেয়নি। কথাও হয়নি। তাই আমরা লিখিত অভিযোগ করিনি।”
সদলবলে গণপূর্ত বিভাগে যাওয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হোসেন বলেন, “আমি গণপূর্ত বিভাগের ঠিকাদার নই। বিল সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলতে মামুন ও লালু আমাকে সেখানে নিয়ে গিয়েছিল।” “তবে এভাবে যাওয়া আমাদের উচিত হয়নি,” বলেন তিনি। মামুন বলেন, “নিরাপত্তার স্বার্থে বৈধ অস্ত্র নিয়ে আমি ব্যবসায়িক কাজে ইটভাটায় যাচ্ছিলাম। পথে নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুল আজিমের সঙ্গে কথা বলতে গণপূর্ত বিভাগে যাই। “কিন্তু তিনি না থাকায় আমরা ফিরে আসি। তাকে ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন করা হয়নি। প্রতিপক্ষ ঠিকাদাররা বিষয়টিকে অন্যদিকে নেওয়ার চেষ্টা করছে।”
একই ধরনের কথা বলেছেন যুবলীগ নেতা শেখ লালু। তিনি বলেন, “ভুলবশত আমরা অস্ত্র নিয়ে অফিসে ঢুকে পড়েছিলাম।” প্রভাব দেখিয়ে বিভিন্ন কাজ নিজেদের আয়ত্তে নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তারা। বিষয়টি শুনে পাবনার পুলিশ সুপার মুহিবুল হক খান বলেন, “বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। অস্ত্র আইনের শর্ত ভঙ্গ হয়েছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” পাবনার ডিসি কবীর মাহমুদও ঘটনা সম্পর্কে শুনেছেন বলে জানান। তিনি বলেন, “আমি ঘটনাটি শুনেছি। আইন-শৃংখলা বাহিনী বিষয়টি তদন্ত করছে। তাদের সুপারিশ অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

পাবনায় গণপূর্ত দপ্তরে অস্ত্র হাতে ঠিকাদার আওয়ামী লীগ নেতারা

আপডেট সময় : ০১:৪২:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ জুন ২০২১

পাবনা প্রতিনিধি : পাবনায় গণপূর্ত বিভাগে অস্ত্র নিয়ে আওয়ামী লীগের একদল ঠিকাদার নেতার মহড়ায় আতঙ্কিত হওয়ার কথা জানিয়েছেন ওই কার্যালয়ের কর্মীরা। গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তারা এনিয়ে পুলিশে কোনো অভিযোগ করেননি। ক্ষমতাসীন দলের ওই নেতারা লাইসেন্স করা অস্ত্র নিয়ে ওই দপ্তরে যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলছেন, তাদের ‘ভুল’ হয়েছে।
গত ৬ জুন এই ঘটনা ঘটলেও সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা একটি ভিডিও সম্প্রতি প্রকাশ হলে তা আলোচনায় আসে।
ওই ভিডিওতে দেখা যায়, গত ৬ জুন বেলা ১২টার দিকে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ফারুক হোসেন জামার হাতা গুটিয়ে সদলবলে পূর্ত ভবনে ঢুকছেন। তার পেছনে শটগান হাতে পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ আর খান মামুন এবং জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শেখ লালু। অস্ত্র নিয়েই তারা কার্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষে ঢুকতে দেখা গেছে। ওই সময় তাদের সঙ্গীরা বাইরে অপেক্ষায় ছিলেন। ১২টা ১২ মিনিটে তারা ফিরে যান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গণপূর্তকর্মীর বরাত দিয়ে সংবাদসংস্থা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এক প্রতিবেদনে জানায়, এসব মহড়ায় তাদের আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রভাব বলয় তৈরি করে বিভিন্ন কাজের দরপত্র নিজেদের আয়ত্তে নিতে চেষ্টা করেন ক্ষমতাসীন দলের ঠিকাদার নেতারা। তাদের দাপটে অনেক অন্য ঠিকাদাররা দরপ্রস্তাব জমা দিতে পারছেন না। কোনো অভিযোগ না দেওয়ার বিষয়ে কর্মকর্তারা বলেন, আওয়ামী লীগ নেতারা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে এলেও কোনো হুমকি দেননি।
পাবনা গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, “ঠিকাদাররা আমার কক্ষে এসেছিলেন। আমার টেবিলে অস্ত্র রেখে নির্বাহী প্রকৌশলী স্যারের কাছে এসেছেন বলে জানান তারা। খারাপ আচরণ বা গালাগালি করেননি।”
বিল কিংবা দরপত্রকে কেন্দ্র করে এই মহড়া কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “পাবনায় নতুন যোগ দিয়েছি। এসব বিষয়ে আমার জানা নেই।”
নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুল আজিম বলেন, “ঘটনার সময় আমি অফিসের বাইরে ছিলাম। তবে সিসিটিভি ফুটেজে অস্ত্র হাতে অনেকে এসেছে দেখেছি। তারা আমাকে সরাসরি বা ফোনে কোনো হুমকি দেয়নি। কথাও হয়নি। তাই আমরা লিখিত অভিযোগ করিনি।”
সদলবলে গণপূর্ত বিভাগে যাওয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হোসেন বলেন, “আমি গণপূর্ত বিভাগের ঠিকাদার নই। বিল সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলতে মামুন ও লালু আমাকে সেখানে নিয়ে গিয়েছিল।” “তবে এভাবে যাওয়া আমাদের উচিত হয়নি,” বলেন তিনি। মামুন বলেন, “নিরাপত্তার স্বার্থে বৈধ অস্ত্র নিয়ে আমি ব্যবসায়িক কাজে ইটভাটায় যাচ্ছিলাম। পথে নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুল আজিমের সঙ্গে কথা বলতে গণপূর্ত বিভাগে যাই। “কিন্তু তিনি না থাকায় আমরা ফিরে আসি। তাকে ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন করা হয়নি। প্রতিপক্ষ ঠিকাদাররা বিষয়টিকে অন্যদিকে নেওয়ার চেষ্টা করছে।”
একই ধরনের কথা বলেছেন যুবলীগ নেতা শেখ লালু। তিনি বলেন, “ভুলবশত আমরা অস্ত্র নিয়ে অফিসে ঢুকে পড়েছিলাম।” প্রভাব দেখিয়ে বিভিন্ন কাজ নিজেদের আয়ত্তে নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তারা। বিষয়টি শুনে পাবনার পুলিশ সুপার মুহিবুল হক খান বলেন, “বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। অস্ত্র আইনের শর্ত ভঙ্গ হয়েছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” পাবনার ডিসি কবীর মাহমুদও ঘটনা সম্পর্কে শুনেছেন বলে জানান। তিনি বলেন, “আমি ঘটনাটি শুনেছি। আইন-শৃংখলা বাহিনী বিষয়টি তদন্ত করছে। তাদের সুপারিশ অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”