রংপুর সংবাদদাতা : ‘ভারতের একতরফা তিস্তার পানি প্রত্যাহারে বিপর্যস্ত উত্তরাঞ্চলের কৃষি, অর্থনীতি ও বাস্তুসংস্থান। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ও পানি প্রত্যাহার বন্ধে আন্তর্জাতিক আদালতের হস্তক্ষেপ জরুরি। অন্যথায় তিস্তা নদীর উপর নির্ভরশীল মানুষ, জনজীবন ও জীববৈচিত্র্য চরম হুমকির মুখে পড়বে।’ রোববার অনুষ্ঠিত এক মানববন্ধন সমাবেশে এসব কথা বলেন নদী সংগঠকরা।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) প্রধান ফটকের সামনে রিভারাইন পিপল ক্লাব এ মানববন্ধনের আয়োজন করে। বেরোবি রিভারাইন পিপল ক্লাবের আহ্বায়ক ছাওমুন পাটোয়ারী সুপ্ত’র সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব শিহাব প্রধানের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও রিভারাইন পিপলের পরিচালক ড. তুহিন ওয়াদুদ, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান উমর ফারুক, নদী সংগঠক ও শিক্ষক খাইরুল ইসলাম পলাশ, নদীকর্মী ও শিক্ষার্থী শামসুর রহমান সুমন, রহমত আলী প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, তিস্তা নদী বর্তমানে পানিশূন্য। দেশের অন্যান্য নদ-নদীগুলোও ভালো নেই। অতীতের মতো নতজানু নীতি থেকে বেরিয়ে এসে সরকারকে তিস্তা পানিচুক্তি ছাড়াও অন্যান্য অভিন্ন নদীর পানিচুক্তি বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে।
তা নাহলে নদীর উপর নির্ভরশীল মানুষের দুঃখ-দুর্দশা শেষ হবে না। এ সময় অতিশিগগিরই যেন বাংলাদেশ তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা বুঝে পায় এবং এতদিন যাবত ভারত কর্তৃক একতরফা পানি প্রত্যাহারের ফলে সৃষ্ট বাংলাদেশের ভূপ্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে তার ক্ষতিপূরণ চাওয়ার ব্যাপারেও কথা বলেন বক্তারা।
নদী গবেষক ও সংগঠক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, নদীকেন্দ্রিক কৃষিজমি রক্ষা, ভাঙন রোধসহ চরগুলো রক্ষায় সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। নয়তো উজানের পলিতে নদীর বুক ভরাট হলে স্বল্প পানিতে প্রতিবছর অনাকাঙ্খিত বন্যায়ক্ষক্ষতির পরিমাণ বাড়তেই থাকবে।
তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যার যেমন প্রয়োজন আছে, তেমনি তিস্তা নদীর সুরক্ষার বিষয়টিও এখন জরুরি। তিনি আরও বলেন, ১৭৮৭ সালে ভয়াবহ বন্যার সময় তিস্তা নদীর প্রবাহের সৃষ্টি। ২৩৭ বছর আগে তৈরি হওয়া এ নদীর আজ অবধি কোনো পরিচর্যা করা হয়নি।
ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তান পর্ব ও বাংলাদেশ যুগের কোনো সময়েই এ নদীর সঠিক পরিচর্যা হয়নি। বরং দফায় দফায় এ নদীর সর্বনাশ করার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে যে নদী হয়ে ওঠার কথা ছিল উত্তরের জীবনরেখা, সেটা হয়ে উঠেছে অভিশাপ।
নদীকে যদি আমরা অভিশাপের হাত থেকে আশীর্বাদে পরিণত করতে চাই, তাহলে এ তিস্তা নদীর সুরক্ষা অত্যন্ত প্রয়োজন। নদীর ন্যায্য হিস্যা বুঝে নিতে আন্তর্জাতিক আদালতে এর প্রতিকার চেয়ে সরকারকে আবেদন করতে হবে।