ঢাকা ০৭:৫৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৫

পানি বণ্টনের আলোচনায় ভারতের সঙ্গে চীনকেও যুক্ত করতে হবে

  • আপডেট সময় : ০৭:১৬:৩৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫
  • ৯ বার পড়া হয়েছে

রোববার পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সৈকতের একটি রিসোর্টে শুরু হওয়া দশম আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলন। ছবি সংগৃহীত

প্রত্যাশা ডেস্ক: বাংলাদেশে আন্তঃসীমান্ত নদীগুলো বাঁচিয়ে রাখতে এবং প্রবাহ ঠিক রাখতে পানি বণ্টন কূটনীতিতে জোর দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও সেন্টার ফর অলটারনেটিভসের নির্বাহী পরিচালক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ।

তিনি মনে করেন, ভূমি কেন্দ্রিক কূটনীতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনায় ভারতের সঙ্গে চীন ও অন্যদেরও রাখতে হবে।

রোববার (২৬ জানুয়ারি) পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সৈকতের একটি রিসোর্টে শুরু হওয়া দশম আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে ‘তিস্তা ও সীমান্তবর্তী নদীসমূহের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক।

বহুমাত্রিক পৃথিবীতে আবারও ঔপনিবেশিক অবস্থানে ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমাদের নতুন করে বদ্ধ অবস্থার বাইরে গিয়ে চিন্তা করতে হবে, কাজ করতে হবে।

পানি নিয়ে ভারত, মিয়ানমার ও চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এবং ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিতের প্রশ্নে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ের এই শিক্ষক বলেন, সংকট কাটিয়ে উঠতে এখানে নতুন সুযোগ এবং আশা রয়েছে।

ভারতের সঙ্গে পানি বণ্টন বিষয়ে দ্বি-রাষ্ট্র আলোচনার বাইরে যেতে হবে। এ আলোচনায় চীন এবং অন্যদের যুক্ত করতে হবে। আমরা যখন তাদের তিস্তা নদী বিষয়ে বললাম, তারা সহায়তা করেনি। এখন চীন যখন বাঁধ নির্মাণ করছে, তখন তারা আমাদের আলোচনায় ডাকছে।

তিস্তায় সিকিম থেকে ৩৪টি বাঁধ রয়েছে, সেখানে প্রতিটি বাঁধ ৫ শতাংশ করে পানি কমিয়ে দেয় তুলে ধরে ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, বাঁধ হলে সেখানে নতুন করে বসতি এবং অন্যান্য কর্মকাণ্ড সৃষ্টি হয়। ফলে পানি কমতে থাকে। এভাবে হলে তো শেষ পর্যন্ত পানি থাকার কথা না, তাই হচ্ছে এখন। এসব বাঁধ নির্মাণে বিশ্বব্যাংকও অর্থায়ন করেছে।

বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার পানি বণ্টন বিষয়ে মমতার দাবি যৌক্তিক মন্তব্য করে তিনি বলেন, তাদেরও পানি দরকার।

সমাধান হিসেবে অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলেন, আমাদের নদীগুলো ড্রেজিং করার প্রস্তাব যৌক্তিক এবং আমি তার সঙ্গে একমত। একইসঙ্গে খালগুলোও খনন করা যেতে পারে।

খননের ফলে নদীগুলোর পানি ধারণ বাড়বে, সেটি শুষ্ক মৌসুমে ব্যবহার করা যেতে পারে। সেজন্য আমাদের নীতি, গবেষণা ও বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের ‘আউট অব দ্যা বক্স’ চিন্তা করতে হবে।

অস্ট্রেলিয়ান ডিপার্টমেন্ট অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ট্রেডের পানি, জ্বালানি এবং জলবায়ু বিষয়ক লিড স্পেশালিস্ট ড. জন ডোর বলেন, এক্ষেত্রে ন্যায্যতার নীতিতে যাওয়া উচিত।

বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়ার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ব্রহ্মপুত্র এবং তিস্তা নদীর অভিন্ন পানি প্রবাহ নিশ্চিতে ম্যাকং নদী কমিশনের প্রস্তাবনাগুলো আমলে নেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে গবেষণা এবং যোগাযোগ বাড়াতে কাজ করা যেতে পারে।

সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আয়োজক সংস্থা একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির।

‘পানির ভূ-রাজনীতি এবং সমুদ্রের ভবিষ্যৎ’- এ স্লোগানে শুরু হওয়া সম্মেলনের প্রথম দিনের আলোচ্যসূচিতে রয়েছে ‘তিস্তা ও সীমান্তবর্তী নদীসমূহের ভবিষ্যৎ’, ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও স্থানীয় উদ্ভাবন’, ‘জলবায়ু ভবিষ্যৎ’, ‘পানি অর্থায়ন এবং পানি কূটনীতির ভূমিকা’।

পানির নায্য বণ্টন নিশ্চিত করে নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়টিতে জোর দেওয়া হবে সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে।

সোমবারের আলোচ্যসূচিতে থাকছে ‘পানি ব্যবস্থাপনায় নারীবাদী দৃষ্টিতে জলবায়ু পরিবর্তন এবং ক্ষমতার সম্পর্ক মূল্যায়ন’, ‘পানি বিষয়ক শিক্ষাকে মূলধারায় সম্পৃক্তকরণ’, ‘সহযোগিতার ভূ-রাজনীতি এবং সমুদ্র ও পানিসম্পদ রক্ষার মত বিষয়গুলো।

সম্মেলন থেকে পাওয়া সুপারিশ এবং প্রস্তাবনাগুলো পরবর্তীতে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তুলে ধরা হবে।

দেশের পানিসম্পদ ও তার ব্যবস্থাপনা নিয়ে মানুষের চিন্তার প্রসার, পানি নিয়ে বিভিন্ন উদ্ভাবনী চিন্তার বিকাশ, বিভিন্ন ধরনের সংলাপকে উৎসাহিত করা, পানি নিয়ে একত্রে কাজ করতে জোট গঠন, আন্তঃসীমান্ত কার্যক্রমে উৎসাহ দিতে ২০১৬ সাল থেকেই আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলন আয়োজন করে আসছে একশনএইড বাংলাদেশ।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

পানি বণ্টনের আলোচনায় ভারতের সঙ্গে চীনকেও যুক্ত করতে হবে

আপডেট সময় : ০৭:১৬:৩৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: বাংলাদেশে আন্তঃসীমান্ত নদীগুলো বাঁচিয়ে রাখতে এবং প্রবাহ ঠিক রাখতে পানি বণ্টন কূটনীতিতে জোর দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও সেন্টার ফর অলটারনেটিভসের নির্বাহী পরিচালক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ।

তিনি মনে করেন, ভূমি কেন্দ্রিক কূটনীতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনায় ভারতের সঙ্গে চীন ও অন্যদেরও রাখতে হবে।

রোববার (২৬ জানুয়ারি) পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সৈকতের একটি রিসোর্টে শুরু হওয়া দশম আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে ‘তিস্তা ও সীমান্তবর্তী নদীসমূহের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক।

বহুমাত্রিক পৃথিবীতে আবারও ঔপনিবেশিক অবস্থানে ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমাদের নতুন করে বদ্ধ অবস্থার বাইরে গিয়ে চিন্তা করতে হবে, কাজ করতে হবে।

পানি নিয়ে ভারত, মিয়ানমার ও চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এবং ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিতের প্রশ্নে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ের এই শিক্ষক বলেন, সংকট কাটিয়ে উঠতে এখানে নতুন সুযোগ এবং আশা রয়েছে।

ভারতের সঙ্গে পানি বণ্টন বিষয়ে দ্বি-রাষ্ট্র আলোচনার বাইরে যেতে হবে। এ আলোচনায় চীন এবং অন্যদের যুক্ত করতে হবে। আমরা যখন তাদের তিস্তা নদী বিষয়ে বললাম, তারা সহায়তা করেনি। এখন চীন যখন বাঁধ নির্মাণ করছে, তখন তারা আমাদের আলোচনায় ডাকছে।

তিস্তায় সিকিম থেকে ৩৪টি বাঁধ রয়েছে, সেখানে প্রতিটি বাঁধ ৫ শতাংশ করে পানি কমিয়ে দেয় তুলে ধরে ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, বাঁধ হলে সেখানে নতুন করে বসতি এবং অন্যান্য কর্মকাণ্ড সৃষ্টি হয়। ফলে পানি কমতে থাকে। এভাবে হলে তো শেষ পর্যন্ত পানি থাকার কথা না, তাই হচ্ছে এখন। এসব বাঁধ নির্মাণে বিশ্বব্যাংকও অর্থায়ন করেছে।

বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার পানি বণ্টন বিষয়ে মমতার দাবি যৌক্তিক মন্তব্য করে তিনি বলেন, তাদেরও পানি দরকার।

সমাধান হিসেবে অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলেন, আমাদের নদীগুলো ড্রেজিং করার প্রস্তাব যৌক্তিক এবং আমি তার সঙ্গে একমত। একইসঙ্গে খালগুলোও খনন করা যেতে পারে।

খননের ফলে নদীগুলোর পানি ধারণ বাড়বে, সেটি শুষ্ক মৌসুমে ব্যবহার করা যেতে পারে। সেজন্য আমাদের নীতি, গবেষণা ও বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের ‘আউট অব দ্যা বক্স’ চিন্তা করতে হবে।

অস্ট্রেলিয়ান ডিপার্টমেন্ট অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ট্রেডের পানি, জ্বালানি এবং জলবায়ু বিষয়ক লিড স্পেশালিস্ট ড. জন ডোর বলেন, এক্ষেত্রে ন্যায্যতার নীতিতে যাওয়া উচিত।

বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়ার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ব্রহ্মপুত্র এবং তিস্তা নদীর অভিন্ন পানি প্রবাহ নিশ্চিতে ম্যাকং নদী কমিশনের প্রস্তাবনাগুলো আমলে নেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে গবেষণা এবং যোগাযোগ বাড়াতে কাজ করা যেতে পারে।

সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আয়োজক সংস্থা একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির।

‘পানির ভূ-রাজনীতি এবং সমুদ্রের ভবিষ্যৎ’- এ স্লোগানে শুরু হওয়া সম্মেলনের প্রথম দিনের আলোচ্যসূচিতে রয়েছে ‘তিস্তা ও সীমান্তবর্তী নদীসমূহের ভবিষ্যৎ’, ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও স্থানীয় উদ্ভাবন’, ‘জলবায়ু ভবিষ্যৎ’, ‘পানি অর্থায়ন এবং পানি কূটনীতির ভূমিকা’।

পানির নায্য বণ্টন নিশ্চিত করে নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়টিতে জোর দেওয়া হবে সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে।

সোমবারের আলোচ্যসূচিতে থাকছে ‘পানি ব্যবস্থাপনায় নারীবাদী দৃষ্টিতে জলবায়ু পরিবর্তন এবং ক্ষমতার সম্পর্ক মূল্যায়ন’, ‘পানি বিষয়ক শিক্ষাকে মূলধারায় সম্পৃক্তকরণ’, ‘সহযোগিতার ভূ-রাজনীতি এবং সমুদ্র ও পানিসম্পদ রক্ষার মত বিষয়গুলো।

সম্মেলন থেকে পাওয়া সুপারিশ এবং প্রস্তাবনাগুলো পরবর্তীতে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তুলে ধরা হবে।

দেশের পানিসম্পদ ও তার ব্যবস্থাপনা নিয়ে মানুষের চিন্তার প্রসার, পানি নিয়ে বিভিন্ন উদ্ভাবনী চিন্তার বিকাশ, বিভিন্ন ধরনের সংলাপকে উৎসাহিত করা, পানি নিয়ে একত্রে কাজ করতে জোট গঠন, আন্তঃসীমান্ত কার্যক্রমে উৎসাহ দিতে ২০১৬ সাল থেকেই আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলন আয়োজন করে আসছে একশনএইড বাংলাদেশ।