নিজস্ব প্রতিবেদক : কোনো সম্পদই যে অফুরন্ত নয়, আর তার ব্যবস্থাপনায় যে সরকারকে খরচ করতে হয়, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে পানির অপচয় বন্ধ করতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
‘বিশ্ব পানি দিবস’ উপলক্ষে গতকাল সোমবার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমরা সকলের কাছে একটা আহ্বান জানাব, এই যে ঢাকা শহরে আমরা পানি দিই বা সেই সাথে সাথে বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশনসহ উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত আমরা পানি পরিশুদ্ধ করে পাইপে সরবরাহ করার ব্যবস্থা নিয়েছি, এগুলো করতে কিন্তু অনেক খরচ হয়। কাজেই পানির অপচয়টা বন্ধ করতে হবে।”
নির্মাণ কাজ, গৃহস্থালী বা বাসার গাড়ি ধোয়া- সব কাজেই পানি ব্যবহারে সবাইকে মিতব্যয়ী হওয়ার আহ্বান জানান সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, “অপচয় করলে কোনো সম্পদই থাকে না শেষ পর্যন্ত। কাজেই আমাদের যে অমূল্য সম্পদটা রয়েছে, এই সম্পদটা আমরা কীভাবে সংরক্ষণ করে ব্যবহার করতে পারি, বা ভবিষ্যত বংশধররা ব্যবহার করতে পারে, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে।”
ভূগর্ভের পানির স্তর কমে যাওয়ায় শহর এলাকায় বৃষ্টির পানি যাতে মাটি দিয়ে আবার ভূগর্ভে পৌঁছাতে পারে, সে দিকে নজর দেওয়ার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের কথাও বলেন।
“সব জায়গায় সিমেন্ট করে রেখে দিলাম, আর বৃষ্টির পানি গড়িয়ে চলে গেল, সেটা না। আর বৃষ্টির পানি সবই আন্ডারগ্রাউন্ডে একেবারে নদীতে পড়বে তাও না। আমাদের আশপাশে জলাধারগুলোতে যেন বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা যেতে পারে, সেই ব্যবস্থাটাও নিতে হবে।”
ঢাকার গ্রিন রোডে পানি ভবনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।
দেশের মানুষের জন্য সুপের পানি নিশ্চিতে এবং ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার সীমিত করতে সরকার বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, সুপেয় পানি একটি ‘বৈশ্বিক সমস্যা’।
বাংলাদেশের বিশাল পানি সম্পদের যথাযথ ব্যবস্থাপনায় দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও পানি সরবরাহ করা সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
“সম্পদ যদি আমরা যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারি, তাহলে আমাদের দেশের মানুষের এই কষ্ট কোনদিনই হবে না। বরং আমরা বিশ্বকে পানি সরবরাহ করতে পারব। আমাদের সেই বিষয়টা মাথায় রেখেই কাজ করতে হবে।”
ঢাকা শহরে নদীর পানি শোধন করে সরবরাহ করার পাশাপাশি জেলা উপজেলা পর্যায়েও নদীর পানি পরিশুদ্ধ করে সেই পানি পাইপের মাধ্যমে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা হওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানির অতি ব্যবহার ঝুঁকি তৈরি করবে।
“বাংলাদেশের নিচে বিশাল শিলা আছে। তার নিচে আরো বিশাল পানির স্তর আছে। এটাই কিন্তু আমাদের রক্ষা করছে। কাজেই সেখানে যদি আমরা ভূগর্ভস্থ পানি বেশি ব্যবহার করে ফেলি, তাহলে কিন্তু আমাদের ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা বেশি দেখা দেবে।” ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে বর্ষায় পানি এবং বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের তাগিদ দেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, “বর্ষাকালে পানি ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা- এই পদক্ষেপটা আমাদের সব সময় নিতে হবে। তবেই আমাদের ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরতা কমে যাবে।” রাস্তা নির্মাণকাজে পানি প্রবাহ যেন ঠিক থাকে সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বরেন, “হাওড় বাওড় এলাকায় রাস্তা করলে সেগুলো মাটি ভরাট করে যেন না করা হয়। সেটা পিলার দিয়ে এমনভাবে তৈরি করা যেন পানির প্রবাহটা বা গতিটা বাঁধাগ্রস্ত না হয়।”
যত্রতত্র বাঁধ নির্মাণ না করার নির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা বিবেচনায় নিয়ে এবং নৌ বাণিজ্য বাড়াতে নদী খননের ওপর গুরুত্ব দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “ড্রেজিং শুধু নদীর নাব্য বাড়াবে না, নৌ পথগুলো সচল হবে, আমরা স্বল্পমূল্যে আমাদের পণ্য পরিবহন করতে পারব।” পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় যৌথভাবে সারাদেশের নদী নালা, খাল বিল, হাওড় বাওড়, ছোট ছোট জলাধার সংস্কারের কাজ শুরু করেছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। পানি সম্পদ মন্ত্রী জাহিদ ফারুক, উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কবির বিন আনোয়ারসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে।
পানির অপচয়টা বন্ধ করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ