ঢাকা ০৪:৫১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

পানশিরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পাল্টাপাল্টি দাবি

  • আপডেট সময় : ১১:৩২:০৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • ৯৮ বার পড়া হয়েছে

আন্তর্জাতিক ডে¯ :‹ : তুমুল যুদ্ধের পর আফগানিস্তানের পানশির উপত্যকার দখল নেওয়ার দাবি করেছে তালেবান, যদিও তাদের প্রতিপক্ষ ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট বলছে উল্টো কথা।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানী কাবুলের উত্তরে হিন্দুকুশ পর্বতমালায় অবস্থিত পানশিরে গত শুক্রবার রাতে তুমুল গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। তালেবানের তিনটি সূত্র থেকে পানশির উপত্যকা দখলের দাবি করা হয়েছে। তবে তাদের এ দাবির বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে তালেবানের একজন কমান্ডার বলেছেন, “আফগানিস্তান এখন পুরোপুরি আমাদের দখলে। বিশৃঙ্খলাকারীরা পরাজিত হয়েছে, এবং পানশির এখন আমাদের নিয়ন্ত্রণে।” তালেবানের ওই দাবির সত্যতার বিষয়ে রয়টার্সও তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হতে পারেনি।
তালেবানের জয়ের দাবি উড়িয়ে দিয়ে পানশিরের তালেবানবিরোধী ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্টের (এনআরএফ) মুখপাত্র আলী নাজারি বলেছেন, ‘প্রকৃতপক্ষে’ তালেবানকে পিছু হটিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিরোধী যোদ্ধাদের অন্যতম নেতা সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহ টেলিভিশন স্টেশন টোলো নিউজকে বলেছেন, তার পালিয়ে যাওয়ার যে খবর বেরিয়েছে, সেটি মিথ্যা। বিবিসির একজন সাংবাদিক টুইটারে একটি ভিডিও পোস্ট করে সেটা সালেহর পাঠানো বলে জানিয়েছেন।
ওই ভিডিওতে বলা হয়, “আমরা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে আছি এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা তালেবানের হামলার মুখে আছিৃ আমরা মাটি কামড়ে আছি, আমরা প্রতিরোধ করছি।” তিনি বলেন, “প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়েছে এবং তা চলতে থাকবে। মাতৃভূমির সম্মান ও মর্যাদা রক্ষায় আমি এখানে আমার মাটিতেই আছি।”
তালেবানে হাতে পানশিরের পতনের দাবি প্রত্যাখ্যান করে সালেহর ছেলে এবাদুল্লাহ সালেহ একটি টেক্সট মেসেজ পাঠিয়ে বলেছেন, “ওই খবর মিথ্যা।” এর আগে পানশির উপত্যকার কিছু অঞ্চল দখল নেওয়ার দাবি করে তালেবান বলেছিল, যুদ্ধে ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্টের (এনআরএফ) অনেক সদস্য হতাহত হয়েছে।
তবে এ দাবি উড়িয়ে দিয়ে এনআরএফ বলেছে, পানশিরের প্রতিটি প্রবেশপথের নিয়ন্ত্রণই তাদের হাতে রয়েছে। উল্টো তালেবানের কয়েকশ যোদ্ধা মারা পড়েছে।
পানশির প্রদেশের বাজারাকে নিজের সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দিচ্ছেন প্রতিরোধ বাহিনী ন্যাশনাল রেজিট্যান্স ফ্রন্ট অব আফগানিস্তানের (এনআরএফএ) নেতা আহমাদ মাসুদ। ছবি: রয়টার্স
গত ১৫ অগাস্ট রাজধানীসহ কাবুলসহ আফগানিস্তানের বেশিরভাগ এলাকা তালেবানের দখলে চলে গেলও পানশিরে প্রতিরোধ গড়ে তোলে তালেবানবিরোধীরা। দুই দশক আগে, এই পানশিরেই মুজাহিদিন নেতা আহমেদ শাহ মাসুদ তালেবানের বিরুদ্ধে কয়েক বছর ধরে প্রতিরোধ টিকিয়ে রেখেছিলেন। নাইন ইলেভেনে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার কয়েক মাস পর এই অঞ্চলকেই যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা ও বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা বাহিনীর ‘লঞ্চপ্যাড’ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওই অভিযানেই তালেবানকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা হয়েছিল। আর এখন ২০ বছরের যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্রদের আফগানিস্তান ত্যাগের সুযোগে ফের দেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তালেবান যোদ্ধারা।
কাবুল তালেবানের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার পর আফগান সেনাবাহিনীর অবশিষ্টাংশ, স্পেশাল ফোর্সেসের বিভন্ন ইউনিট পানশিরে গিয়ে স্থানীয় মিলিশিয়া বাহিনীর কয়েক হাজার যোদ্ধার সঙ্গে যোগ দেয়। মুজাহিদিন নেতা আহমেদ শাহ মাসুদের ছেলে আহমাদ মাসুদের নেতৃত্বে তারা প্রতিরোধ গড়ে তোলে, যাকে বলা হচ্ছে ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট।
গত বুধবারই পানশির ঘিরে ফেলে শান্তিপূর্ণভাবে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের জন্য ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্টকে আহ্বান জানিয়েছিলেন তালেবান নেতারা। এরপর থেকেই সেখানে লড়াই চলছে। যুদ্ধে এগিয়ে থাকার দাবি করা হচ্ছে দুই পক্ষ থেকেই।
তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদকে উদ্ধৃত করে রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর তালেবান যোদ্ধারা পানশির উপত্যকায় ঢুকেছে। আর এনআরএফ এর মুখপাত্র ফাহিম দাশতি বলেছেন, দুটি ফ্রন্টে এনআরএফ ও তালেবানের মধ্যে লড়াই হছে। এতে তালেবানের সাড়ে তিনশ সদস্য নিহত হয়েছে এবং আরও বহু তালেবান আটক হয়েছে। দাশতির ওই দাবি নিরপেক্ষভাবে যাচাই করতে পারেনি বিবিসি।
যুক্তরাষ্ট্রের মত ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্যও বলেছে, তারা তালেবানের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবে, তবে আফগানিস্তানের সরকার হিসেবে তাদের স্বীকৃতি দেবে না। ইউরোপীয় ইউনিয়ন কাবুলে তাদের কূটনৈতিক মিশনের কার্যক্রম আবার শুরু করার পরিকল্পনা করেছে। তবে তারা বলেছে, ইউরোপীয় কূটনীতিকদের এই অবস্থান হবে নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে এবং কেবল আফগান জনগণকে সহায়তা করার জন্য।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

পানশিরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পাল্টাপাল্টি দাবি

আপডেট সময় : ১১:৩২:০৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২১

আন্তর্জাতিক ডে¯ :‹ : তুমুল যুদ্ধের পর আফগানিস্তানের পানশির উপত্যকার দখল নেওয়ার দাবি করেছে তালেবান, যদিও তাদের প্রতিপক্ষ ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট বলছে উল্টো কথা।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানী কাবুলের উত্তরে হিন্দুকুশ পর্বতমালায় অবস্থিত পানশিরে গত শুক্রবার রাতে তুমুল গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। তালেবানের তিনটি সূত্র থেকে পানশির উপত্যকা দখলের দাবি করা হয়েছে। তবে তাদের এ দাবির বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে তালেবানের একজন কমান্ডার বলেছেন, “আফগানিস্তান এখন পুরোপুরি আমাদের দখলে। বিশৃঙ্খলাকারীরা পরাজিত হয়েছে, এবং পানশির এখন আমাদের নিয়ন্ত্রণে।” তালেবানের ওই দাবির সত্যতার বিষয়ে রয়টার্সও তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হতে পারেনি।
তালেবানের জয়ের দাবি উড়িয়ে দিয়ে পানশিরের তালেবানবিরোধী ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্টের (এনআরএফ) মুখপাত্র আলী নাজারি বলেছেন, ‘প্রকৃতপক্ষে’ তালেবানকে পিছু হটিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিরোধী যোদ্ধাদের অন্যতম নেতা সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহ টেলিভিশন স্টেশন টোলো নিউজকে বলেছেন, তার পালিয়ে যাওয়ার যে খবর বেরিয়েছে, সেটি মিথ্যা। বিবিসির একজন সাংবাদিক টুইটারে একটি ভিডিও পোস্ট করে সেটা সালেহর পাঠানো বলে জানিয়েছেন।
ওই ভিডিওতে বলা হয়, “আমরা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে আছি এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা তালেবানের হামলার মুখে আছিৃ আমরা মাটি কামড়ে আছি, আমরা প্রতিরোধ করছি।” তিনি বলেন, “প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়েছে এবং তা চলতে থাকবে। মাতৃভূমির সম্মান ও মর্যাদা রক্ষায় আমি এখানে আমার মাটিতেই আছি।”
তালেবানে হাতে পানশিরের পতনের দাবি প্রত্যাখ্যান করে সালেহর ছেলে এবাদুল্লাহ সালেহ একটি টেক্সট মেসেজ পাঠিয়ে বলেছেন, “ওই খবর মিথ্যা।” এর আগে পানশির উপত্যকার কিছু অঞ্চল দখল নেওয়ার দাবি করে তালেবান বলেছিল, যুদ্ধে ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্টের (এনআরএফ) অনেক সদস্য হতাহত হয়েছে।
তবে এ দাবি উড়িয়ে দিয়ে এনআরএফ বলেছে, পানশিরের প্রতিটি প্রবেশপথের নিয়ন্ত্রণই তাদের হাতে রয়েছে। উল্টো তালেবানের কয়েকশ যোদ্ধা মারা পড়েছে।
পানশির প্রদেশের বাজারাকে নিজের সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দিচ্ছেন প্রতিরোধ বাহিনী ন্যাশনাল রেজিট্যান্স ফ্রন্ট অব আফগানিস্তানের (এনআরএফএ) নেতা আহমাদ মাসুদ। ছবি: রয়টার্স
গত ১৫ অগাস্ট রাজধানীসহ কাবুলসহ আফগানিস্তানের বেশিরভাগ এলাকা তালেবানের দখলে চলে গেলও পানশিরে প্রতিরোধ গড়ে তোলে তালেবানবিরোধীরা। দুই দশক আগে, এই পানশিরেই মুজাহিদিন নেতা আহমেদ শাহ মাসুদ তালেবানের বিরুদ্ধে কয়েক বছর ধরে প্রতিরোধ টিকিয়ে রেখেছিলেন। নাইন ইলেভেনে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার কয়েক মাস পর এই অঞ্চলকেই যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা ও বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা বাহিনীর ‘লঞ্চপ্যাড’ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওই অভিযানেই তালেবানকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা হয়েছিল। আর এখন ২০ বছরের যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্রদের আফগানিস্তান ত্যাগের সুযোগে ফের দেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তালেবান যোদ্ধারা।
কাবুল তালেবানের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার পর আফগান সেনাবাহিনীর অবশিষ্টাংশ, স্পেশাল ফোর্সেসের বিভন্ন ইউনিট পানশিরে গিয়ে স্থানীয় মিলিশিয়া বাহিনীর কয়েক হাজার যোদ্ধার সঙ্গে যোগ দেয়। মুজাহিদিন নেতা আহমেদ শাহ মাসুদের ছেলে আহমাদ মাসুদের নেতৃত্বে তারা প্রতিরোধ গড়ে তোলে, যাকে বলা হচ্ছে ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট।
গত বুধবারই পানশির ঘিরে ফেলে শান্তিপূর্ণভাবে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের জন্য ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্টকে আহ্বান জানিয়েছিলেন তালেবান নেতারা। এরপর থেকেই সেখানে লড়াই চলছে। যুদ্ধে এগিয়ে থাকার দাবি করা হচ্ছে দুই পক্ষ থেকেই।
তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদকে উদ্ধৃত করে রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর তালেবান যোদ্ধারা পানশির উপত্যকায় ঢুকেছে। আর এনআরএফ এর মুখপাত্র ফাহিম দাশতি বলেছেন, দুটি ফ্রন্টে এনআরএফ ও তালেবানের মধ্যে লড়াই হছে। এতে তালেবানের সাড়ে তিনশ সদস্য নিহত হয়েছে এবং আরও বহু তালেবান আটক হয়েছে। দাশতির ওই দাবি নিরপেক্ষভাবে যাচাই করতে পারেনি বিবিসি।
যুক্তরাষ্ট্রের মত ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্যও বলেছে, তারা তালেবানের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবে, তবে আফগানিস্তানের সরকার হিসেবে তাদের স্বীকৃতি দেবে না। ইউরোপীয় ইউনিয়ন কাবুলে তাদের কূটনৈতিক মিশনের কার্যক্রম আবার শুরু করার পরিকল্পনা করেছে। তবে তারা বলেছে, ইউরোপীয় কূটনীতিকদের এই অবস্থান হবে নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে এবং কেবল আফগান জনগণকে সহায়তা করার জন্য।