ঢাকা ০২:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

পাক বাংলা মৈত্রী সম্মেলন আর নভেম্বরের নিউ নরমাল ষড়যন্ত্র

  • আপডেট সময় : ১০:১৫:৫৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ নভেম্বর ২০২১
  • ১১৭ বার পড়া হয়েছে

ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল : বাংলাদেশে আগস্ট যদি হয়ে থাকে প্রতিহিংসার মাস, তাহলে ষড়যন্ত্রের মাসটি হলো নভেম্বর। বাংলাদেশকে মিনি পাকিস্তানে পরিণত করার যে অশুভ চক্রান্ত তার শুরুটা পঁচাত্তরের আগস্টের ১৫-তে বঙ্গবন্ধুর সপরিবারে হত্যাকা-ের মধ্যে দিয়ে। আর এই হত্যাকা-টি শুধুই নিছক ক্যুদেতা ছিল না বরং পরাজিত পাকিস্তানিদের অপমানের প্রতিহিংসা চরিতার্থ করাটাই যে ছিল ১৫ আগস্টের অন্যতম উদ্দেশ্য তা শিশু রাসেলের পৈশাচিক হত্যাকা-ের মধ্যে দিয়েই পরিস্কার হয়ে যায়।

পৃথিবীতে যুগে যুগে রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশে দেশে শাসককে শাসন ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা হয়েছে, কিন্তু রাসেলের মত শাসকের অমন নিষ্পাপ, নাবালক পরিবারের সদস্যকে হত্যার নজির পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নেই। আর বাংলাদেশটাকে আবারো পাকিস্তান বানাবার চক্রান্তটির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন শুরু হয় পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর তথাকথিত সিপাহী জনতার বিপ্লবের নামে। এদিন থেকে শুরু করে ৮১’র ৩০ মে জেনারেল জিয়া নিহত হওয়ার দিন পর্যন্ত অব্যাহত ছিল এদেশে সামরিক-বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধা নিধন আর নিপীড়ন।

আজ যখন বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরিরা অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আরো একবার ক্ষমতায় এবং টানা এক যুগের ও বেশি সময় ধরে এদেশে তাদের শাসন, তখন বাংলাদেশটাকে পাকিস্তান বানানোর আবারো পঁচাত্তর পরবর্তী বাংলাদেশের জায়গায় ঠেলে নিয়ে যাওয়ার চক্রান্ত শেষ হয়ে গেছে মনে করলে তা যে হবে শুধু মারাত্মক ভুল তা-ই নয়, ঘোরতর অপরাধও বটে।

মনে রাখতে হবে আওয়ামী লীগ ভুল করলে ভুল করে বাংলাদেশও, আর যদি কোন কারণে আওয়ামী লীগ আবারো হেরে যায়, তাহলে কিন্তু হেরে যাবে বাংলাদেশও। আজ যখন আমরা এই চলমান কোভিড মহামারির মধ্যেও প্রাণের তাগিদে মুজিববর্ষ আর বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছি, তখন একদল লোক আমাদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কখনো বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যকে বুড়িগঙ্গায় ছুড়ে ফেলার হুমকি দিয়ে তো কখনো সনাতন ধর্মাবলম্বী বাঙালির বৃহত্তম উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবকে কলংকিত করার মাধ্যমে প্রকারান্তরে আমাদের জাতির সবচাইতে বড় অর্জন দু’টিকেই কালিমালিপ্ত করেছে।

আর ষড়যন্ত্রের মাস নভেম্বরেও থেমে নেই তাদের ষড়যন্ত্র। ৭ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের প্রগতিশীল শক্তি যখন সাড়া দেশে মুক্তিযোদ্ধা হত্যা দিবস পালনের মাধ্যমে বাংলাদেশের ইতিহাসটাকে শুদ্ধ করার প্রয়াসে তৎপর, ঠিক তখনই শুরু হয়েছে নিউ নরমাল ষড়যন্ত্র। ঢাকা থেকে হাজার মাইল দূরে লাহোরে আয়োজন করা হয়েছে ‘পাক বাংলা মৈত্রী সম্মেলন’ যেখানে অংশ নিয়েছে পাকিস্তানের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কনটেন্টগুলো পর্যালোচনা করে জানা যায় সেখানে বাংলাদেশ থেকেও অনেকে অংশ নিয়েছে। সম্মেলনটির সাথে দেশের একটি রাজনৈতিক দলের বিদেশে পালিয়ে থাকা দ-প্রাপ্ত বড় নেতার সংশ্লিষ্টতার কথাও শোনা যাচ্ছে। এমনকি এও শোনা যাচ্ছে যে সম্মেলনটিতে ঐ বিশেষ নেতার অংশ নেয়ার কথা ছিল, কিন্তু শেষ মুহূর্তে কৌশলগত কারণে তা বাদ দেয়া হয়।

সম্মেলনে এমন অনেক আপত্তিকর বিষয়বস্তু আলোচনায় এসেছে যা মাথা ঠা-া রেখে হজম করা টা দুঃসাধ্য। দাবি জানানো হয়েছে বাংলাদেশে পিটিভির বাংলা সার্ভিস আর পাকিস্তানে বিটিভির উর্দু সার্ভিস চালু করার জন্য। জানানো হয়েছে উর্দু আর বাংলায় পাকিস্তান-বাংলাদেশ মৈত্রীর উপর নাটক, সিনেমাসহ নানা ধরনের কনটেন্ট তৈরি করে তা মূলধারার প্রচার মাধ্যম আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনার কথাও।
সম্মেলনটিতে সামনে এসেছে বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তানের মাফ চাওয়ার বিষয়টি, অথচ গোটা সম্মেলনটিতে একটিবারের জন্যও এদেশে একাত্তরে পাকিস্তান সেনাবাহিনী-মিলিশিয়া আর তাদের এদেশীয় দোসরদের মানবতা বিরোধী অপরাধের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়নি। যেমন আলোচনা করা হয়নি পাকিস্তানেন ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধী সেনাসদস্যের বিচারের বিষয়টি, যে বিষয়ে পাকিস্তান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আলোচনায় আসেনি বাংলাদেশের পাকিস্তানের কাছে আইনসঙ্গতভাবে পাওনা ক্ষতিপূরণের বিষয়টিও। ভাবখানা এমন যে সামান্য একটু ভুল হয়েছে, ওটা ভুলে গেলে আর এমন কি?

সবচেয়ে যা ঔদ্ধত্যপূর্ণ তা হলো সম্মেলনটির অনেকখানি অংশ জুড়ে আলোচনা করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু একজন ‘গাদ্দার’ অর্থাৎ রাষ্ট্রদ্রোহী ছিলেন কি ছিলেন না সে বিষয়ে। বঙ্গবন্ধুর মত অমন বিশাল একজন মানুষকে নিয়ে গুটি কয়েক নরকের কিটের অমন স্লেষাত্মক আলোচনা যে কোন দেশপ্রেমিক বাঙালির রক্তে আন্দোলন সৃষ্টি করতে বাধ্য। ষড়যন্ত্রের শেষ এখানেই নয়। এই নভেম্বরেই, এই সম্মেলনটির ক’দিন আগে পাকিস্তানি সংবাদ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাকি এ মুজিববর্ষেই পাকিস্তান সফরে যাচ্ছেন দুদেশের ভ্রাতৃপ্রতিম সম্পর্ককে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার তাগিদ থেকে।

অন্যদিকে এদেশেও ইথারে ইথারে ডালপালা মেলছে আরেকটি খবর। বলা হচ্ছে পাকিস্তান ক্রিকেট দলের চলমান বাংলাদেশ সফরে যে কোন সময় খেলা দেখার ছুতায় ঢাকায় হাজির হবে একাত্তরে বাংলাদেশের পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অধিনায়ক, ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণকারী লে. জে. আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজির ভাতুস্পুত্র, পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান নিয়াজি।

বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ আর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে যারা চেনেন, জানেন তারা খুব ভালোই জানেন যে এসব ভার্চুয়াল গুজব আর রটনা ভার্চুয়ালই থেকে যাবে, যতদিন বঙ্গবন্ধু কন্যা দায়িত্বে আছেন, বাস্তবে এসবের বাস্তবায়ন দেখার দুর্ভাগ্য এ জাতির কখনোই হবে না। কিন্তু তাই বলে আমরা যদি নিস্পৃহ হয়ে বসে থাকি আর যে যার চড়কার যতœ নিতে থাকি, তাহলে আমদের আবারো হেরে বসার শংকাটা অন্ততঃ পরিসংখ্যানের দিক থেকে একেবারেই উড়িয়ে দেয়া যায় না। আর আমরা যদি আবারো হেরে বসি আবারো হারবে বাংলাদেশ, আর এবার যদি বাংলাদেশ হেরে যায়, সেখান থেকে আবারো বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনাটা পরিসংখ্যানগতভাবে কিন্তু একেবারেই শূন্যের কোটায়। অতএব সাধু সাবধান!
লেখক : ডিভিশন প্রধান, ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও সদস্য সচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশ।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

পাক বাংলা মৈত্রী সম্মেলন আর নভেম্বরের নিউ নরমাল ষড়যন্ত্র

আপডেট সময় : ১০:১৫:৫৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ নভেম্বর ২০২১

ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল : বাংলাদেশে আগস্ট যদি হয়ে থাকে প্রতিহিংসার মাস, তাহলে ষড়যন্ত্রের মাসটি হলো নভেম্বর। বাংলাদেশকে মিনি পাকিস্তানে পরিণত করার যে অশুভ চক্রান্ত তার শুরুটা পঁচাত্তরের আগস্টের ১৫-তে বঙ্গবন্ধুর সপরিবারে হত্যাকা-ের মধ্যে দিয়ে। আর এই হত্যাকা-টি শুধুই নিছক ক্যুদেতা ছিল না বরং পরাজিত পাকিস্তানিদের অপমানের প্রতিহিংসা চরিতার্থ করাটাই যে ছিল ১৫ আগস্টের অন্যতম উদ্দেশ্য তা শিশু রাসেলের পৈশাচিক হত্যাকা-ের মধ্যে দিয়েই পরিস্কার হয়ে যায়।

পৃথিবীতে যুগে যুগে রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশে দেশে শাসককে শাসন ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা হয়েছে, কিন্তু রাসেলের মত শাসকের অমন নিষ্পাপ, নাবালক পরিবারের সদস্যকে হত্যার নজির পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নেই। আর বাংলাদেশটাকে আবারো পাকিস্তান বানাবার চক্রান্তটির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন শুরু হয় পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর তথাকথিত সিপাহী জনতার বিপ্লবের নামে। এদিন থেকে শুরু করে ৮১’র ৩০ মে জেনারেল জিয়া নিহত হওয়ার দিন পর্যন্ত অব্যাহত ছিল এদেশে সামরিক-বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধা নিধন আর নিপীড়ন।

আজ যখন বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরিরা অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আরো একবার ক্ষমতায় এবং টানা এক যুগের ও বেশি সময় ধরে এদেশে তাদের শাসন, তখন বাংলাদেশটাকে পাকিস্তান বানানোর আবারো পঁচাত্তর পরবর্তী বাংলাদেশের জায়গায় ঠেলে নিয়ে যাওয়ার চক্রান্ত শেষ হয়ে গেছে মনে করলে তা যে হবে শুধু মারাত্মক ভুল তা-ই নয়, ঘোরতর অপরাধও বটে।

মনে রাখতে হবে আওয়ামী লীগ ভুল করলে ভুল করে বাংলাদেশও, আর যদি কোন কারণে আওয়ামী লীগ আবারো হেরে যায়, তাহলে কিন্তু হেরে যাবে বাংলাদেশও। আজ যখন আমরা এই চলমান কোভিড মহামারির মধ্যেও প্রাণের তাগিদে মুজিববর্ষ আর বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছি, তখন একদল লোক আমাদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কখনো বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যকে বুড়িগঙ্গায় ছুড়ে ফেলার হুমকি দিয়ে তো কখনো সনাতন ধর্মাবলম্বী বাঙালির বৃহত্তম উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবকে কলংকিত করার মাধ্যমে প্রকারান্তরে আমাদের জাতির সবচাইতে বড় অর্জন দু’টিকেই কালিমালিপ্ত করেছে।

আর ষড়যন্ত্রের মাস নভেম্বরেও থেমে নেই তাদের ষড়যন্ত্র। ৭ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের প্রগতিশীল শক্তি যখন সাড়া দেশে মুক্তিযোদ্ধা হত্যা দিবস পালনের মাধ্যমে বাংলাদেশের ইতিহাসটাকে শুদ্ধ করার প্রয়াসে তৎপর, ঠিক তখনই শুরু হয়েছে নিউ নরমাল ষড়যন্ত্র। ঢাকা থেকে হাজার মাইল দূরে লাহোরে আয়োজন করা হয়েছে ‘পাক বাংলা মৈত্রী সম্মেলন’ যেখানে অংশ নিয়েছে পাকিস্তানের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কনটেন্টগুলো পর্যালোচনা করে জানা যায় সেখানে বাংলাদেশ থেকেও অনেকে অংশ নিয়েছে। সম্মেলনটির সাথে দেশের একটি রাজনৈতিক দলের বিদেশে পালিয়ে থাকা দ-প্রাপ্ত বড় নেতার সংশ্লিষ্টতার কথাও শোনা যাচ্ছে। এমনকি এও শোনা যাচ্ছে যে সম্মেলনটিতে ঐ বিশেষ নেতার অংশ নেয়ার কথা ছিল, কিন্তু শেষ মুহূর্তে কৌশলগত কারণে তা বাদ দেয়া হয়।

সম্মেলনে এমন অনেক আপত্তিকর বিষয়বস্তু আলোচনায় এসেছে যা মাথা ঠা-া রেখে হজম করা টা দুঃসাধ্য। দাবি জানানো হয়েছে বাংলাদেশে পিটিভির বাংলা সার্ভিস আর পাকিস্তানে বিটিভির উর্দু সার্ভিস চালু করার জন্য। জানানো হয়েছে উর্দু আর বাংলায় পাকিস্তান-বাংলাদেশ মৈত্রীর উপর নাটক, সিনেমাসহ নানা ধরনের কনটেন্ট তৈরি করে তা মূলধারার প্রচার মাধ্যম আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনার কথাও।
সম্মেলনটিতে সামনে এসেছে বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তানের মাফ চাওয়ার বিষয়টি, অথচ গোটা সম্মেলনটিতে একটিবারের জন্যও এদেশে একাত্তরে পাকিস্তান সেনাবাহিনী-মিলিশিয়া আর তাদের এদেশীয় দোসরদের মানবতা বিরোধী অপরাধের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়নি। যেমন আলোচনা করা হয়নি পাকিস্তানেন ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধী সেনাসদস্যের বিচারের বিষয়টি, যে বিষয়ে পাকিস্তান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আলোচনায় আসেনি বাংলাদেশের পাকিস্তানের কাছে আইনসঙ্গতভাবে পাওনা ক্ষতিপূরণের বিষয়টিও। ভাবখানা এমন যে সামান্য একটু ভুল হয়েছে, ওটা ভুলে গেলে আর এমন কি?

সবচেয়ে যা ঔদ্ধত্যপূর্ণ তা হলো সম্মেলনটির অনেকখানি অংশ জুড়ে আলোচনা করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু একজন ‘গাদ্দার’ অর্থাৎ রাষ্ট্রদ্রোহী ছিলেন কি ছিলেন না সে বিষয়ে। বঙ্গবন্ধুর মত অমন বিশাল একজন মানুষকে নিয়ে গুটি কয়েক নরকের কিটের অমন স্লেষাত্মক আলোচনা যে কোন দেশপ্রেমিক বাঙালির রক্তে আন্দোলন সৃষ্টি করতে বাধ্য। ষড়যন্ত্রের শেষ এখানেই নয়। এই নভেম্বরেই, এই সম্মেলনটির ক’দিন আগে পাকিস্তানি সংবাদ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাকি এ মুজিববর্ষেই পাকিস্তান সফরে যাচ্ছেন দুদেশের ভ্রাতৃপ্রতিম সম্পর্ককে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার তাগিদ থেকে।

অন্যদিকে এদেশেও ইথারে ইথারে ডালপালা মেলছে আরেকটি খবর। বলা হচ্ছে পাকিস্তান ক্রিকেট দলের চলমান বাংলাদেশ সফরে যে কোন সময় খেলা দেখার ছুতায় ঢাকায় হাজির হবে একাত্তরে বাংলাদেশের পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অধিনায়ক, ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণকারী লে. জে. আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজির ভাতুস্পুত্র, পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান নিয়াজি।

বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ আর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে যারা চেনেন, জানেন তারা খুব ভালোই জানেন যে এসব ভার্চুয়াল গুজব আর রটনা ভার্চুয়ালই থেকে যাবে, যতদিন বঙ্গবন্ধু কন্যা দায়িত্বে আছেন, বাস্তবে এসবের বাস্তবায়ন দেখার দুর্ভাগ্য এ জাতির কখনোই হবে না। কিন্তু তাই বলে আমরা যদি নিস্পৃহ হয়ে বসে থাকি আর যে যার চড়কার যতœ নিতে থাকি, তাহলে আমদের আবারো হেরে বসার শংকাটা অন্ততঃ পরিসংখ্যানের দিক থেকে একেবারেই উড়িয়ে দেয়া যায় না। আর আমরা যদি আবারো হেরে বসি আবারো হারবে বাংলাদেশ, আর এবার যদি বাংলাদেশ হেরে যায়, সেখান থেকে আবারো বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনাটা পরিসংখ্যানগতভাবে কিন্তু একেবারেই শূন্যের কোটায়। অতএব সাধু সাবধান!
লেখক : ডিভিশন প্রধান, ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও সদস্য সচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশ।