ঢাকা ০৯:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫
অগ্নিঝরা মার্চ

পাকিস্তান দিবসের কর্মসূচি বাতিল ঘোষণা

  • আপডেট সময় : ০৫:২৪:২৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫
  • ৭ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক: ১৯৭১ সালের ১২ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের অসহযোগ আন্দোলনে সরকারি, আধা-সরকারি কর্মচারীদের কর্মস্থল বর্জন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তালা, সরকারি ও বেসরকারি ভবন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসগৃহ ও যানবাহনে কালো পতাকা ওড়ানো অব্যাহত থাকে। লাহোরে এক সংবাদ সম্মেলনে গণ-ঐক্য আন্দোলনের প্রধান এয়ার মার্শাল (অব.) আসগর খান বলেন, ‘ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস, দোষ করা হল লাহোরে কিন্তু বুলেট বর্ষিত হল ঢাকায়। পূর্বাঞ্চলের জনসাধারণ সমান অধিকার নিয়ে থাকতে চায়, পশ্চিমাঞ্চলের দাস হিসেবে নয়।’ পাকিস্তানকে রক্ষা করার জন্য একটি মাত্র পথ খোলা রয়েছে। আর তা হচ্ছে শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর। লাহোরে ন্যাপের মহাসচিব সিআর আসলাম এক বিবৃতিতে বলেন, ‘দেশের বর্তমান সংকটের জন্য একচেটিয়া পুঁজিপতি ও আমলারাই দায়ী। ভুট্টোও এ ব্যাপারে নিজের দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। ভুট্টোর হুমকিপূর্ণ মনোভাব ও ক্ষমতার লিপ্সাই রাজনৈতিক সংকটকে আরো মারাত্মক করে তুলেছে।’ এই দিন রাওয়ালপিন্ডিতে এক সরকারি ঘোষণায় ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসের নির্ধারিত সম্মিলিত সশস্ত্র বাহিনীর কুচকাওয়াজ, খেতাব বিতরণ ও অন্যান্য অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়। ময়মনসিংহে এক জনসভায় ন্যাপ প্রধান আবদুল হামিদ খান ভাসানী সাত কোটি বাঙালির মুক্তি সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমি জানি শেখ মুজিবর রহমান কখনোই বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে না। আপনারা শেখ মুজিবের ওপর সম্পূর্ণ ভরসা রাখুন।’
১২ মার্চ চলচ্চিত্র প্রদর্শকরা বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ঢাকাসহ সারাদেশে অনির্দিষ্টকাল প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন। তারা আওয়ামী লীগের সাহায্য তহবিলে ১৩ হাজার ২৫০ টাকা অনুদান দেন। এদিন বগুড়া জেলখানা ভেঙ্গে ২৭ জন কয়েদি পালিয়ে যায়। কারারক্ষীদের গুলিতে একজন কয়েদি নিহত ও ১৫ জন আহত হন।
একাত্তরের মার্চ মাসের দিনগুলো ছিল থমথমে, উৎকণ্ঠা, শঙ্কায় পরিপূর্ণ। চাপা উদ্বেগ, অস্থিরতা আর অনিশ্চয়তার আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছিল সাড়ে ৭ কোটি বাঙালি। কী ঘটবে, কী ঘটতে যাচ্ছে- তা নিয়ে চিন্তিত, উৎকণ্ঠিত ছিলেন সবাই। অবরুদ্ধ গণমানুষ ভেতরে ভেতরে প্রস্তুত হচ্ছিলেন চূড়ান্ত লড়াইয়ের জন্য। লক্ষ্য একটাই, নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা। কারণ, ততদিনে দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে উঠছিল যে, পশ্চিম পাকিস্তানি বেনিয়া দুর্বৃত্ত শোষকগোষ্ঠী বাঙালিকে তার ন্যায্য অধিকার কোনো দিনই দেবে না। তাই তাদের বিরুদ্ধে শুধু সংগ্রাম, মিছিল-সমাবেশই নয়, লড়তে হবে চূড়ান্ত লড়াই। একাত্তরের উত্তাল মার্চের দিনগুলো যতই এগোচ্ছিল, বাঙালির অসহযোগ আন্দোলন ততই তীব্রতর হচ্ছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালি তখন মুক্তির চেতনায় উজ্জীবিত। নির্বাচনে জয়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবির সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিকরাও তখন কণ্ঠ মেলাতে শুরু করেছেন।
জাতীয় পরিষদ সদস্য মোহাম্মদ জহির উদ্দিন পাকিস্তান সরকারের দেওয়া খেতাব বর্জন করেন। প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী লীগ নেতা ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের জন্য প্রেরিত খাদ্য বোঝাই মার্কিন জাহাজের গতি বদলে করাচি প্রেরণের ঘটনায় উৎকণ্ঠা ও নিন্দা প্রকাশ করেন। দৈনিক পাকিস্তান এদিন এক খবরে জানায়, বাঙালি সিএসপি কর্মকর্তারা চলমান আন্দোলনের সমর্থনে মিছিল করেছেন। আওয়ামী লীগের তহবিলে একদিনের বেতন অনুদান দিয়েছেন তারা। (সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী ‘৭১ এর দশমাস’)।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

অগ্নিঝরা মার্চ

পাকিস্তান দিবসের কর্মসূচি বাতিল ঘোষণা

আপডেট সময় : ০৫:২৪:২৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: ১৯৭১ সালের ১২ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের অসহযোগ আন্দোলনে সরকারি, আধা-সরকারি কর্মচারীদের কর্মস্থল বর্জন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তালা, সরকারি ও বেসরকারি ভবন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসগৃহ ও যানবাহনে কালো পতাকা ওড়ানো অব্যাহত থাকে। লাহোরে এক সংবাদ সম্মেলনে গণ-ঐক্য আন্দোলনের প্রধান এয়ার মার্শাল (অব.) আসগর খান বলেন, ‘ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস, দোষ করা হল লাহোরে কিন্তু বুলেট বর্ষিত হল ঢাকায়। পূর্বাঞ্চলের জনসাধারণ সমান অধিকার নিয়ে থাকতে চায়, পশ্চিমাঞ্চলের দাস হিসেবে নয়।’ পাকিস্তানকে রক্ষা করার জন্য একটি মাত্র পথ খোলা রয়েছে। আর তা হচ্ছে শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর। লাহোরে ন্যাপের মহাসচিব সিআর আসলাম এক বিবৃতিতে বলেন, ‘দেশের বর্তমান সংকটের জন্য একচেটিয়া পুঁজিপতি ও আমলারাই দায়ী। ভুট্টোও এ ব্যাপারে নিজের দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। ভুট্টোর হুমকিপূর্ণ মনোভাব ও ক্ষমতার লিপ্সাই রাজনৈতিক সংকটকে আরো মারাত্মক করে তুলেছে।’ এই দিন রাওয়ালপিন্ডিতে এক সরকারি ঘোষণায় ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসের নির্ধারিত সম্মিলিত সশস্ত্র বাহিনীর কুচকাওয়াজ, খেতাব বিতরণ ও অন্যান্য অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়। ময়মনসিংহে এক জনসভায় ন্যাপ প্রধান আবদুল হামিদ খান ভাসানী সাত কোটি বাঙালির মুক্তি সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমি জানি শেখ মুজিবর রহমান কখনোই বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে না। আপনারা শেখ মুজিবের ওপর সম্পূর্ণ ভরসা রাখুন।’
১২ মার্চ চলচ্চিত্র প্রদর্শকরা বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ঢাকাসহ সারাদেশে অনির্দিষ্টকাল প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন। তারা আওয়ামী লীগের সাহায্য তহবিলে ১৩ হাজার ২৫০ টাকা অনুদান দেন। এদিন বগুড়া জেলখানা ভেঙ্গে ২৭ জন কয়েদি পালিয়ে যায়। কারারক্ষীদের গুলিতে একজন কয়েদি নিহত ও ১৫ জন আহত হন।
একাত্তরের মার্চ মাসের দিনগুলো ছিল থমথমে, উৎকণ্ঠা, শঙ্কায় পরিপূর্ণ। চাপা উদ্বেগ, অস্থিরতা আর অনিশ্চয়তার আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছিল সাড়ে ৭ কোটি বাঙালি। কী ঘটবে, কী ঘটতে যাচ্ছে- তা নিয়ে চিন্তিত, উৎকণ্ঠিত ছিলেন সবাই। অবরুদ্ধ গণমানুষ ভেতরে ভেতরে প্রস্তুত হচ্ছিলেন চূড়ান্ত লড়াইয়ের জন্য। লক্ষ্য একটাই, নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা। কারণ, ততদিনে দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে উঠছিল যে, পশ্চিম পাকিস্তানি বেনিয়া দুর্বৃত্ত শোষকগোষ্ঠী বাঙালিকে তার ন্যায্য অধিকার কোনো দিনই দেবে না। তাই তাদের বিরুদ্ধে শুধু সংগ্রাম, মিছিল-সমাবেশই নয়, লড়তে হবে চূড়ান্ত লড়াই। একাত্তরের উত্তাল মার্চের দিনগুলো যতই এগোচ্ছিল, বাঙালির অসহযোগ আন্দোলন ততই তীব্রতর হচ্ছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালি তখন মুক্তির চেতনায় উজ্জীবিত। নির্বাচনে জয়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবির সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিকরাও তখন কণ্ঠ মেলাতে শুরু করেছেন।
জাতীয় পরিষদ সদস্য মোহাম্মদ জহির উদ্দিন পাকিস্তান সরকারের দেওয়া খেতাব বর্জন করেন। প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী লীগ নেতা ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের জন্য প্রেরিত খাদ্য বোঝাই মার্কিন জাহাজের গতি বদলে করাচি প্রেরণের ঘটনায় উৎকণ্ঠা ও নিন্দা প্রকাশ করেন। দৈনিক পাকিস্তান এদিন এক খবরে জানায়, বাঙালি সিএসপি কর্মকর্তারা চলমান আন্দোলনের সমর্থনে মিছিল করেছেন। আওয়ামী লীগের তহবিলে একদিনের বেতন অনুদান দিয়েছেন তারা। (সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী ‘৭১ এর দশমাস’)।