ঢাকা ০৮:৩৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৯ জুন ২০২৫

পাকিস্তানে জোট সরকার গড়তে কৌশলী নওয়াজ ও জারদারির দল

  • আপডেট সময় : ০২:০৩:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • ৭২ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : পাকিস্তানে নির্বাচনের ফলাফলে কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। ফলে জোট সরকার গঠনই একমাত্র পথ বলে মনে করা হচ্ছে।
নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জিতেছেন ১০১টি আসনে। তাঁদের প্রায় সবাই পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতা ইমরান খানের সমর্থিত। তবে নির্বাচনের মাঠে পিটিআই এগিয়ে থাকলেও সরকার গঠনে তৎপরতা বেশি পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) দলের।
এর আগে পিএমএল-এন জোট গড়েছিল পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) সঙ্গে। তাদের জোট পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (পিডিএম) ক্ষমতায় বসেছিল। তবে এখন জোট সরকার গঠনের ব্যাপারে পিপিপিকে সতর্ক অবস্থান নিতে দেখা যাচ্ছে। ক্ষমতা ভাগাভাগির সম্ভাব্য চুক্তি নিয়ে সতর্কভাবেই আলোচনা করছেন তাঁরা। কিছু কিছু ক্ষেত্রেও গোপনীয়তা রাখা হচ্ছে। পাঞ্জাব ও বেলুচিস্তান প্রদেশে জোট সরকার গঠনের বিষয়টিও আলোচনায় আছে।
গতকাল রোববার লাহোর ও ইসলামাবাদে বিভিন্ন দলের নেতাদের তৎপরতা বেশি থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রস্তাবিত জোট গঠনের প্রক্রিয়া কী হবে, তা নিয়ে আলোচনা করতে আজ পিপিপির নেতা আসিফ আলী জারদারি গুরুত্বপূর্ণ কিছু বৈঠকে অংশ নেবেন। জোট সরকারের এই আলোচনার পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট পদটি কে পাবেন, তা নিয়েও দর-কষাকষি হবে। সে কারণে এটি নিয়েও আলোচনা চলছে।
এদিকে নির্বাচন-পরবর্তী কৌশল নির্ধারণ করতে পিএমএল-এনের আমন্ত্রণে এমকিউএম-পি দলের প্রতিনিধিরা লাহোরে আছেন। নির্বাচনের পরদিন পিএমএল-এন নেতা নওয়াজ শরিফ জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠনের ইঙ্গিত দেন। এরপর তিনি তাঁর ভাই ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফকে সরকার গঠনের ব্যাপারে অন্য দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরুর নির্দেশ দেন।
পিএমএল-এর অভ্যন্তরীণ একটি সূত্রের বরাতে ডন জানতে পেরেছে, গত শনিবার পিএমএল-এন নেতারা কেন্দ্রীয় সরকার গঠনে পিপিপিকে সমর্থন দেওয়া সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছেন। তবে তাঁরা এবার আর তাড়াহুড়ো করে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চাইছেন না, যেমনটা তাঁরা পিডিএম জোট গড়ার সময় করেছিলেন। বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পিএমএল-এন মুখপাত্র মরিয়ম আওরঙ্গজেব বলেন, শাহবাজ শরিফ ও আসিফ আলী জারদারির মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা হয়েছে। তবে তাঁরা দুজনই জোট সরকার গঠনের ব্যাপারে নিজ নিজ দলের নেতাদের পরামর্শ নেবেন।
পিএমএল-এন পিটিআই কিংবা পিটিআই–সমর্থিত প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আওরঙ্গজেব বলেন, ‘পিটিআই–সমর্থিত স্বতন্ত্রদের সঙ্গে আলোচনার কোনো ইচ্ছা পিএমএল-এনের নেই। প্রস্তাবিত জোট সরকারে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পছন্দের তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে শাহবাজ শরিফও আছেন। সূত্র বলছে, জোট সরকার গঠনের বিষয়ে পিএমএল-এন ও পিপিপির মধ্যে আরও আলোচনা হবে। প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, প্রেসিডেন্ট কে হবেন, কোন দলের নেতাকে বেলুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী করা হবে, এমন আরও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। এগুলোর জন্য অনেক আলোচনার প্রয়োজন। ইতিমধ্যে মডেল টাউনে অনুষ্ঠিত দলীয় এক বৈঠকে শাহবাজ শরিফ সব রাজনৈতিক দলকে পাকিস্তানের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। বৈঠকের সভাপতি হিসেবে দেওয়া বক্তব্যে শাহবাজ বলেন, ‘আমরা জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করব। নতুন সরকারের লক্ষ্য হবে জনগণকে অর্থনৈতিকভাবে স্বস্তি দেওয়া।’ বৈঠকে জানানো হয়, পিএমএল-এন কেন্দ্রীয়ভাবে জোট সরকার গঠনের ব্যাপারে অন্য দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
এদিকে পিএমএল-এন বিভিন্ন তৎপরতা চালালেও সরকার গঠনসংক্রান্ত পরিকল্পনা নিয়ে পিপিপির নেতাদের গোপনীয়তা বজায় রাখতে দেখা গেছে। পিপিপির নেতারা ডনকে গতকাল বলেন, ধরেই নেওয়া হচ্ছে যে তাঁদের দলের নেতারা কেন্দ্রীয়ভাবে পিএমএল-এনের নেতৃত্বাধীন জোট সরকারে যোগ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। কীভাবে এমন ধারণা করা হচ্ছে, তা নিয়ে তাঁরা ‘হতবাক’। কারণ, এমন কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। ওই নেতাদের দাবি, দলের ভেতরেও এমন আলোচনা হয়নি।
পিপিপির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি ডনকে বলেন, ‘ক্ষমতা ভাগাভাগি কিংবা কেন্দ্রীয় জোট সরকার গঠনের ব্যাপারে আমরা এখন পর্যন্ত কোনো আলোচনা করিনি।’ সরকার গঠনের ব্যাপারে পিএমএল-এন ও পিপিপি একমত হয়েছে, সংবাদমাধ্যমের এমন খবরের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে বিলাওয়াল বলেন, ‘এমন কিছু ঘটেনি। আমরা এখনো নির্বাচনের ফল এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনার মধ্যে আছি। যে নির্বাহী কমিটি আমাকে প্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছে, তারা আবারও বৈঠকে বসবে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করবে।’
নির্বাচনের সব আসনের ফল ঘোষণা: পাকিস্তানে সাধারণ পরিষদ নির্বাচনের সম্পূর্ণ ফল ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) নির্বাচনের পর তিন দিন ধরে ২৬৪ আসনের ফল প্রকাশ করেছে পাকিস্তান নির্বাচন কমিশন। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন এ খবর জানিয়েছে। দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি আসনে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তাদের প্রায় সবাই পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমানে কারাগারে থাকা ইমরান খানের সমর্থিত। পাকিস্তান নির্বাচন কমিশনের তথ্য থেকে জানা গেছে, ২৬৪ আসনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১০১ আসনে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এরপরই পাকিস্তান মুসলিম লিগ–নওয়াজ (পিএমএল-এন) ৭৫ আসনে, পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ৫৪ ও মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট পাকিস্তান (এমকিউএম) ১৭ আসনে জয়ী হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য দল পেয়েছে ১৭টি আসন। পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের ২৬৬ আসনের মধ্যে ২৬৫ আসনে ভোট হয়েছে। আরও একটি আসনে ফল স্থগিত থাকার ঘোষণা দেয় নির্বাচন কমিশন। ফলে ২৬৪ আসনে ফল ঘোষণা করা হয়েছে। সরকার গঠনে প্রয়োজন হবে ১৩৪ আসন। পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের মোট আসনসংখ্যা ৩৩৬। এর মধ্যে ২৬৬ আসনে সরাসরি ভোট হয়। এ ছাড়া বাকি ৭০টি আসন সংরক্ষিত। এসব আসনের মধ্যে ৬০টি নারীদের ও ১০টি সংখ্যালঘুদের। বৃহস্পতিবার পাকিস্তানে সাধারণ পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ছয়টায় শেষ হয় ভোট গ্রহণ। এরও প্রায় ১২ ঘণ্টা পর শুক্রবার ভোর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণা শুরু করে পাকিস্তান নির্বাচন কমিশন।
পাকিস্তানে ‘পুলিশের গুলিতে’ এনডিএমের দুই কর্মী নিহত, প্রধানসহ আহত ১৫: পাকিস্তানে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণায় দেরির প্রতিবাদে চলা বিক্ষোভে গুলিতে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের (এনডিএম) দুই কর্মী নিহত হয়েছেন। দলের প্রধানসহ আহত হয়েছেন ১৫ জন। দেশটির খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের উত্তর ওয়াজিরিস্তানে মমিরামশাহ ক্যান্টনমেন্টে বিক্ষোভ চলার সময় পুলিশ গুলি চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে এনডিএম। পুলিশ বলছে, স্টেডিয়াম এলাকার ফটকে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশের ওপর এনডিএমের সমর্থকেরা গুলি চালিয়েছেন। এরপর পুলিশ গুলি চালিয়েছে। এর আগে এনডিএমের প্রধান মহসিন দাওয়ার আহত হওয়ার খবর জানায় ডন। পরে দুই কর্মী নিহত হওয়ার খবর জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি। পাকিস্তানের আঞ্চলিক কার্যালয়ের বাইরে ওই বিক্ষোভ চলছিল। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজনকে মিরামশাহ এলাকায় স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। পরে তাঁদের বান্নু জেলায় নেওয়া হয়। তাঁদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। মোহসিন দাওয়ার পাকিস্তানের পার্লামেন্টের সাবেক সদস্য। তাঁর সহযোগী দলের নেত্রী বুশরা গহর বলেছেন, এনডিএমের প্রধান দাওয়ারের অবস্থা স্থিতিশীল। তাঁকে পেশোয়ারের ব্যক্তিমালিকানাধীন একটি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের জন্য নেওয়া হয়েছে। দাওয়ার খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের বাজাউর এলাকার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী-অধ্যুষিত এনএ-৪০ আসনের প্রার্থী। তিনি নির্বাচনে ফলাফল ঘোষণার দেরি হওয়ার প্রতিবাদে ও কারচুপির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ করছিলেন। খাইবার পাখতুনখাওয়ায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী-অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় নির্বাচনী র‌্যালি করার সময় দাওয়ারের গাড়িবহরে প্রায় এক মাস আগে হামলা হয়। তখনো গুলি চালায় হামলাকারীরা। এ হামলার ঘটনায় বেলুচিস্তান ন্যাশনাল পার্টি মেঙ্গল (বিএনপি-এম), মানবাধিকারবিষয়ক সাবেক মন্ত্রী শিরিন মাজারি, পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) নেতা ফরহাতুল্লাহ বাবর, পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশন নিন্দা জানিয়েছে এবং তদন্ত দাবি করেছে।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

পাকিস্তানে জোট সরকার গড়তে কৌশলী নওয়াজ ও জারদারির দল

আপডেট সময় : ০২:০৩:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

প্রত্যাশা ডেস্ক : পাকিস্তানে নির্বাচনের ফলাফলে কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। ফলে জোট সরকার গঠনই একমাত্র পথ বলে মনে করা হচ্ছে।
নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জিতেছেন ১০১টি আসনে। তাঁদের প্রায় সবাই পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতা ইমরান খানের সমর্থিত। তবে নির্বাচনের মাঠে পিটিআই এগিয়ে থাকলেও সরকার গঠনে তৎপরতা বেশি পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) দলের।
এর আগে পিএমএল-এন জোট গড়েছিল পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) সঙ্গে। তাদের জোট পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (পিডিএম) ক্ষমতায় বসেছিল। তবে এখন জোট সরকার গঠনের ব্যাপারে পিপিপিকে সতর্ক অবস্থান নিতে দেখা যাচ্ছে। ক্ষমতা ভাগাভাগির সম্ভাব্য চুক্তি নিয়ে সতর্কভাবেই আলোচনা করছেন তাঁরা। কিছু কিছু ক্ষেত্রেও গোপনীয়তা রাখা হচ্ছে। পাঞ্জাব ও বেলুচিস্তান প্রদেশে জোট সরকার গঠনের বিষয়টিও আলোচনায় আছে।
গতকাল রোববার লাহোর ও ইসলামাবাদে বিভিন্ন দলের নেতাদের তৎপরতা বেশি থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রস্তাবিত জোট গঠনের প্রক্রিয়া কী হবে, তা নিয়ে আলোচনা করতে আজ পিপিপির নেতা আসিফ আলী জারদারি গুরুত্বপূর্ণ কিছু বৈঠকে অংশ নেবেন। জোট সরকারের এই আলোচনার পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট পদটি কে পাবেন, তা নিয়েও দর-কষাকষি হবে। সে কারণে এটি নিয়েও আলোচনা চলছে।
এদিকে নির্বাচন-পরবর্তী কৌশল নির্ধারণ করতে পিএমএল-এনের আমন্ত্রণে এমকিউএম-পি দলের প্রতিনিধিরা লাহোরে আছেন। নির্বাচনের পরদিন পিএমএল-এন নেতা নওয়াজ শরিফ জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠনের ইঙ্গিত দেন। এরপর তিনি তাঁর ভাই ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফকে সরকার গঠনের ব্যাপারে অন্য দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরুর নির্দেশ দেন।
পিএমএল-এর অভ্যন্তরীণ একটি সূত্রের বরাতে ডন জানতে পেরেছে, গত শনিবার পিএমএল-এন নেতারা কেন্দ্রীয় সরকার গঠনে পিপিপিকে সমর্থন দেওয়া সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছেন। তবে তাঁরা এবার আর তাড়াহুড়ো করে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চাইছেন না, যেমনটা তাঁরা পিডিএম জোট গড়ার সময় করেছিলেন। বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পিএমএল-এন মুখপাত্র মরিয়ম আওরঙ্গজেব বলেন, শাহবাজ শরিফ ও আসিফ আলী জারদারির মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা হয়েছে। তবে তাঁরা দুজনই জোট সরকার গঠনের ব্যাপারে নিজ নিজ দলের নেতাদের পরামর্শ নেবেন।
পিএমএল-এন পিটিআই কিংবা পিটিআই–সমর্থিত প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আওরঙ্গজেব বলেন, ‘পিটিআই–সমর্থিত স্বতন্ত্রদের সঙ্গে আলোচনার কোনো ইচ্ছা পিএমএল-এনের নেই। প্রস্তাবিত জোট সরকারে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পছন্দের তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে শাহবাজ শরিফও আছেন। সূত্র বলছে, জোট সরকার গঠনের বিষয়ে পিএমএল-এন ও পিপিপির মধ্যে আরও আলোচনা হবে। প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, প্রেসিডেন্ট কে হবেন, কোন দলের নেতাকে বেলুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী করা হবে, এমন আরও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। এগুলোর জন্য অনেক আলোচনার প্রয়োজন। ইতিমধ্যে মডেল টাউনে অনুষ্ঠিত দলীয় এক বৈঠকে শাহবাজ শরিফ সব রাজনৈতিক দলকে পাকিস্তানের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। বৈঠকের সভাপতি হিসেবে দেওয়া বক্তব্যে শাহবাজ বলেন, ‘আমরা জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করব। নতুন সরকারের লক্ষ্য হবে জনগণকে অর্থনৈতিকভাবে স্বস্তি দেওয়া।’ বৈঠকে জানানো হয়, পিএমএল-এন কেন্দ্রীয়ভাবে জোট সরকার গঠনের ব্যাপারে অন্য দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
এদিকে পিএমএল-এন বিভিন্ন তৎপরতা চালালেও সরকার গঠনসংক্রান্ত পরিকল্পনা নিয়ে পিপিপির নেতাদের গোপনীয়তা বজায় রাখতে দেখা গেছে। পিপিপির নেতারা ডনকে গতকাল বলেন, ধরেই নেওয়া হচ্ছে যে তাঁদের দলের নেতারা কেন্দ্রীয়ভাবে পিএমএল-এনের নেতৃত্বাধীন জোট সরকারে যোগ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। কীভাবে এমন ধারণা করা হচ্ছে, তা নিয়ে তাঁরা ‘হতবাক’। কারণ, এমন কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। ওই নেতাদের দাবি, দলের ভেতরেও এমন আলোচনা হয়নি।
পিপিপির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি ডনকে বলেন, ‘ক্ষমতা ভাগাভাগি কিংবা কেন্দ্রীয় জোট সরকার গঠনের ব্যাপারে আমরা এখন পর্যন্ত কোনো আলোচনা করিনি।’ সরকার গঠনের ব্যাপারে পিএমএল-এন ও পিপিপি একমত হয়েছে, সংবাদমাধ্যমের এমন খবরের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে বিলাওয়াল বলেন, ‘এমন কিছু ঘটেনি। আমরা এখনো নির্বাচনের ফল এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনার মধ্যে আছি। যে নির্বাহী কমিটি আমাকে প্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছে, তারা আবারও বৈঠকে বসবে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করবে।’
নির্বাচনের সব আসনের ফল ঘোষণা: পাকিস্তানে সাধারণ পরিষদ নির্বাচনের সম্পূর্ণ ফল ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) নির্বাচনের পর তিন দিন ধরে ২৬৪ আসনের ফল প্রকাশ করেছে পাকিস্তান নির্বাচন কমিশন। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন এ খবর জানিয়েছে। দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি আসনে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তাদের প্রায় সবাই পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমানে কারাগারে থাকা ইমরান খানের সমর্থিত। পাকিস্তান নির্বাচন কমিশনের তথ্য থেকে জানা গেছে, ২৬৪ আসনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১০১ আসনে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এরপরই পাকিস্তান মুসলিম লিগ–নওয়াজ (পিএমএল-এন) ৭৫ আসনে, পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ৫৪ ও মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট পাকিস্তান (এমকিউএম) ১৭ আসনে জয়ী হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য দল পেয়েছে ১৭টি আসন। পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের ২৬৬ আসনের মধ্যে ২৬৫ আসনে ভোট হয়েছে। আরও একটি আসনে ফল স্থগিত থাকার ঘোষণা দেয় নির্বাচন কমিশন। ফলে ২৬৪ আসনে ফল ঘোষণা করা হয়েছে। সরকার গঠনে প্রয়োজন হবে ১৩৪ আসন। পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের মোট আসনসংখ্যা ৩৩৬। এর মধ্যে ২৬৬ আসনে সরাসরি ভোট হয়। এ ছাড়া বাকি ৭০টি আসন সংরক্ষিত। এসব আসনের মধ্যে ৬০টি নারীদের ও ১০টি সংখ্যালঘুদের। বৃহস্পতিবার পাকিস্তানে সাধারণ পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ছয়টায় শেষ হয় ভোট গ্রহণ। এরও প্রায় ১২ ঘণ্টা পর শুক্রবার ভোর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণা শুরু করে পাকিস্তান নির্বাচন কমিশন।
পাকিস্তানে ‘পুলিশের গুলিতে’ এনডিএমের দুই কর্মী নিহত, প্রধানসহ আহত ১৫: পাকিস্তানে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণায় দেরির প্রতিবাদে চলা বিক্ষোভে গুলিতে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের (এনডিএম) দুই কর্মী নিহত হয়েছেন। দলের প্রধানসহ আহত হয়েছেন ১৫ জন। দেশটির খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের উত্তর ওয়াজিরিস্তানে মমিরামশাহ ক্যান্টনমেন্টে বিক্ষোভ চলার সময় পুলিশ গুলি চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে এনডিএম। পুলিশ বলছে, স্টেডিয়াম এলাকার ফটকে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশের ওপর এনডিএমের সমর্থকেরা গুলি চালিয়েছেন। এরপর পুলিশ গুলি চালিয়েছে। এর আগে এনডিএমের প্রধান মহসিন দাওয়ার আহত হওয়ার খবর জানায় ডন। পরে দুই কর্মী নিহত হওয়ার খবর জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি। পাকিস্তানের আঞ্চলিক কার্যালয়ের বাইরে ওই বিক্ষোভ চলছিল। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজনকে মিরামশাহ এলাকায় স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। পরে তাঁদের বান্নু জেলায় নেওয়া হয়। তাঁদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। মোহসিন দাওয়ার পাকিস্তানের পার্লামেন্টের সাবেক সদস্য। তাঁর সহযোগী দলের নেত্রী বুশরা গহর বলেছেন, এনডিএমের প্রধান দাওয়ারের অবস্থা স্থিতিশীল। তাঁকে পেশোয়ারের ব্যক্তিমালিকানাধীন একটি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের জন্য নেওয়া হয়েছে। দাওয়ার খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের বাজাউর এলাকার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী-অধ্যুষিত এনএ-৪০ আসনের প্রার্থী। তিনি নির্বাচনে ফলাফল ঘোষণার দেরি হওয়ার প্রতিবাদে ও কারচুপির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ করছিলেন। খাইবার পাখতুনখাওয়ায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী-অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় নির্বাচনী র‌্যালি করার সময় দাওয়ারের গাড়িবহরে প্রায় এক মাস আগে হামলা হয়। তখনো গুলি চালায় হামলাকারীরা। এ হামলার ঘটনায় বেলুচিস্তান ন্যাশনাল পার্টি মেঙ্গল (বিএনপি-এম), মানবাধিকারবিষয়ক সাবেক মন্ত্রী শিরিন মাজারি, পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) নেতা ফরহাতুল্লাহ বাবর, পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশন নিন্দা জানিয়েছে এবং তদন্ত দাবি করেছে।