আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারতের ওপর অসন্তুষ্ট হওয়া ও শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপ করার অন্যতম কারণ হলো- ভারত ‘কথিত’ পাকিস্তান-ভারত শান্তিচুক্তি মধ্যস্থতায় তার ভূমিকাকে স্বীকৃতি দেয়নি। এমনই দাবি করেছেন ভারতের সাবেক কূটনীতিক বিকাশ স্বরূপ।
কানাডায় ভারতের সাবেক এই হাই-কমিশনার বলেন, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্ক মূলত স্বল্পমেয়াদি ও আর্থিক স্বার্থনির্ভর। তবে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক কৌশলগত ও দীর্ঘমেয়াদি।
তিনি সতর্ক করে বলেন, এটি কেবল একটি ঝড়, বিচ্ছেদ নয়। সব ঝড় একসময় কেটে যায়। পাকিস্তানের চীনের মিত্র এবং যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বী। তাই পাকিস্তানের মতো দেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়া, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কৌশলগত ভুল।
সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, বাণিজ্য আলোচনায় ট্রাম্প প্রশাসনের চাপের কাছে নতি স্বীকার না করার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। তার মতে, ট্রাম্পের আরোপিত শুল্ক শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রাস্ফীতি আরো বাড়াবে।
বিকাশ স্বরূপের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রথমত ভারতের ব্রিকস সদস্যপদ নিয়ে অসন্তুষ্ট। তিনি মনে করেন, ব্রিকস একটি মার্কিনবিরোধী জোট, যা ডলারের বিকল্প মুদ্রা গড়ে তুলতে চায় ও এতে ভারতের থাকা উচিত নয়।
দ্বিতীয়ত, ভারত দাবি করেছে, গত মে মাসে ‘অপারেশন সিঁদুরের’ পর পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা ছিল না। অন্যদিকে, ট্রাম্প প্রায় ৩০ বার দাবি করেছেন, এই দুই দেশকে যুদ্ধের প্রান্ত থেকে তিনিই ফিরিয়ে এনেছেন ও উপমহাদেশে সম্ভাব্য পারমাণবিক সংঘাত ঠেকিয়েছেন।
বিকাশ আরো বলেন, পাকিস্তান আবার ট্রাম্পের এই দাবি স্বীকার করে তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়নও দিয়েছে। কিন্তু ভারত কোনো স্বীকৃতি দেয়নি। আর তাতেই ভারতের উপর বিরক্ত হয়েছেন ট্রাম্প।
তার ভাষ্য, যুক্তরাষ্ট্র ভারতের কৃষি, দুগ্ধ ও জেনেটিক্যালি মডিফায়েড (জিএম) ফসলের বাজারে প্রবেশাধিকারের দাবিতে চাপ সৃষ্টি করছে। ভারত এতে নতি স্বীকার করেনি। তার মতে, এটি রাশিয়ার প্রতিও একটি সংকেত, কারণ ট্রাম্প ভ্লাদিমির পুতিনকে ইউক্রেন যুদ্ধবিরতিতে রাজি করাতে পারেননি। ট্রাম্প ও পুতিন শুক্রবার (১৫ আগস্ট) আলাস্কায় বৈঠকে বসবেন, যা নিয়ে কিয়েভ ও মিত্ররা উদ্বিগ্ন।
গত মে মাসের শুরুতে কাশ্মীরের পহেলগাম হামলার জবাবে ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ চালিয়ে পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে সন্ত্রাসী অবকাঠামোতে হামলা চালায়। পাকিস্তানও ভারতে হামলা চালিয়ে যুদ্ধবিমান ও কিছু অবকাঠামো ধ্বংসের দাবি করে।
বিকাশ বলেন, ট্রাম্প নিজেকে শান্তিদূত হিসেবে উপস্থাপন করতে চান। থাইল্যান্ড-কাম্বোডিয়া, রুয়ান্ডা-কঙ্গো, আর্মেনিয়া-আজারবাইজানসহ নানা সংঘাতে তিনি মধ্যস্থতার চেষ্টা করেছেন। সাবেক এই কূটনীতিক মনে করেন, ভারত-পাকিস্তান ইস্যুটি সবচেয়ে বড়, কারণ দুটোই পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। তাই ট্রাম্প মনে করেন, এর জন্য তিনি স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য।
বারাক ওবামা একমাত্র মার্কিন প্রেসিডেন্ট যিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন। স্বরূপের মতে, ট্রাম্প ওবামার চেয়ে এগিয়ে যেতে চান ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি ঘটাতে পারলে সেটিকে নোবেলের টিকিট মনে করছেন।
বিকাশ স্বরূপের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক পাকিস্তানমুখী নীতি ভারতের পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতা নয়, বরং পাকিস্তান লবিস্ট ও যোগাযোগ সংস্থার মাধ্যমে ওয়াশিংটনে প্রভাব বিস্তার করেছে। তিনি জানান, পাকিস্তানি সেনাপ্রধান অসিম মুনিরের দুটি ওয়াশিংটন সফর, তেলসম্পদ চুক্তি ও পাকিস্তানের নিজেকে দক্ষিণ এশিয়ার ‘ক্রিপ্টো কিং’ হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগ কেড়েছে।
বিশেষত, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প-সমর্থিত একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি উদ্যোগে পাকিস্তানের সঙ্গে চুক্তির পর, যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের প্রতি নরম মনোভাব দেখাচ্ছে। সরূপ বিকাশের দাবি, এই উদ্যোগে ট্রাম্প পরিবারের পাশাপাশি তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিভ উইটকফের পরিবারও বিনিয়োগ করেছে।
এসি/