ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা : জুলাই-অগাস্টের গণআন্দোলনে সক্রিয় পাঁচ শিক্ষার্থীকে হত্যার অভিযোগ তুলে খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে সরকারকে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ। এই সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করা না হলে আগামী রোববার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে অনশনে বসার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন মঞ্চের নেতাকর্মীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি বলেন, “দেশের বিভিন্ন স্থানে যেভাবে জুলাই অভ্যুত্থানে সক্রিয় ছাত্রজনতাকে হত্যা করা হচ্ছে, আগামীকাল শনিবারের মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তার করা না হলে ইনকিলাব মঞ্চ রোববার শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে যমুনার সামনে গিয়ে অনশন করবে।” শরিফ ওসমানের দাবি, গত ১২ জুলাই ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিহানকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। একইদিন নারায়ণগঞ্জে এআইইউবির শিক্ষার্থী সীমান্তকে ছুরিকঘাত করা হয়। ১৪ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেলে তিনি মারা যান। সবশেষ বুধবার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে পূর্বাচলের ২ নম্বর সেক্টরের লেক থেকে সুজানা আক্তার নামে এক কিশোরীর লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপর সেখান থেকে সাইনুর রশিদ ওরফে কাব্য নামে আরেক কিশোরের লাশ উদ্ধার করা হয়। একই দিন চট্টগ্রাম থেকে জসিম উদ্দিন নামে একজনকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। নিহতরা জুলাইয়ের আন্দোলনে সক্রিয় ছিল বলে দাবি করেন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র। তার ভাষ্য, “সরকার রক্ষা করতে করতে দেখি, জুলাই অভ্যুত্থানের সক্রিয় ছাত্রজনতা নিরাপত্তা বিপন্ন হয়ে পড়েছে। ছাত্রজনতাকে অনিরাপদ করে সরকারকে নিরাপদ রাখার দায় আমাদের নাই। “যদি পারেন তাহলে নিরাপত্তা দেন, নইলে নির্বাচন দিয়ে সরে যান। আপনাদের ৫ বছর ক্ষমতায় থাকার জন্য পাঠানো হয়নি। আপনাদেরকে ক্ষমতায় পাঠানো হয়েছে বিচারের জন্য।” ছাত্র-উপদেষ্টাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা অনেক কাজ করতে চেয়েও করতে পারছেন না। সে দায় আপনাদের ওপর নিচ্ছেন কেন? আপনারা কোনো কাজ না পারলে সংবাদ সম্মেলন করেন। কোন কোন উপদেষ্টা, আমলা আপনাদের বাধা দিচ্ছে, তা জাতির সামনে প্রকাশ করুন।” আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি তুলে তিনি বলেন, “আমরা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে বললাম। তা না করে এখন প্রত্যেক রাজনৈতিক দল ভোটের রাজনীতিতে ফিরে গেল এবং আওয়ামীলীগকে পুনর্বাসন করল। প্রত্যেকে আওয়ামীলীগের ব্যবসা-বাণিজ্যে ভাগ বসাল। বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীসহ যে যার ইচ্ছেমত আওয়ামীলীগের পুনর্বাসন করছে।” এদিকে জুলাই আন্দোলনে ‘সক্রিয়’ পাঁচ শিক্ষার্থীকে হত্যার অভিযোগের বিষয়ে সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) এনামুল হক সাগর সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “এসব ঘটনার ব্যাপারে পুলিশ গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করছে। এরই মধ্যে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে পাঁচজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। “এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় আপরাধীকে গ্রেপ্তার ছাড়াও অন্য অপরাধীদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অত্যান্ত সক্রিয়। আমরা কোনো অপরাধীকে ছাড় দিচ্ছি না। হত্যাকারী যেই হোক, আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।”