অর্থনৈতিক ডেস্ক: চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশের কৃষি খাতে ৩৮ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রথম পাঁচ (জুলাই-নভেম্বর) মাসে ১৩ হাজার ৮১ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে; যা লক্ষ্যমাত্রার ৩৪ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত এক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
তথ্য অনুযায়ী অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বরে ১৩ হাজার ৮১ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো, যা লক্ষ্যমাত্রার ৩৪ শতাংশ। কিন্তু গত অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগের বছরের তুলানায় ১৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ কৃষি ঋণ বিতরণ কমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ২০২৪ সালের শেষার্ধে ব্যাংকসহ পুরো ব্যবসায়ীক কার্যক্রমই ব্যপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে পুরো ব্যাংক খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধিও কমে গেছে। তাছাড়া পরপর তিনটি বন্যার ফলে কৃষি ঋণ বিতরণ কমে গেছে। বেড়েছে বকেয়ার পরিমাণও। আগামীতে এই ঋণের প্রবৃদ্ধি বাড়বে বলে আশা করা যায়।
এদিকে চলতি অর্থবছরের শুরুতে জুলাই মাসের প্রথমভাগে জামালপুর, আগস্টের শেষে ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালি এবং সেপ্টেম্বরের শেষে বন্যায় প্লাবিত হয় দেশের উত্তরঞ্চল। ফলে কৃষকরা পুরোপুরি ফসল ফলাতে পারেননি। ব্যাহত হয়েছে উৎপাদন ও বিপণন। ওই বন্যার কারণে কমে গেছে কৃষি ঋণ বিতরণের পরিমাণও।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, কৃষি ঋণ বিতরণের স্থিতি ৫৪ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে আদায় হয়েছে ১৬ হাজার ৭০ কোটি। বকেয়া রয়েছে ২৯ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা এবং মেয়াউত্তীর্ন বকেয়ার (খেলাপি নয়) পরিমাণ ১১ হাজার ৬৬৭ কোটি। তথ্যমতে মোট ঋণের মধ্যে ৫ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা খেলাপি হয়ে পড়েছে। যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ১০ শতাংশ।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাম্প্রতিক দুটি বন্যায় কৃষি উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আবার নিত্যপণ্যের বাজারেও রয়েছে অস্থিরতা। এ অবস্থায় কৃষি ঋণ বিতরণ কমে আসায় আসন্ন রবি ও বোরো মৌসুমে উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। তারা বলেন, সাম্প্রতিক দুটি বন্যা ও এর আগের খরার প্রভাবে এবার আরো বেশি করে কৃষি ঋণ প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ব্যাংকগুলো কৃষি ঋণ বিতরণে জোর না দেয়ায় ঋণ প্রবাহ কমেছে।
এতে উৎপাদন কমে খাদ্য সরবরাহে ঘাটতি সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এমনকি সামনের দিনগুলোয় মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা আরো জোরালো হয়ে উঠতে পারে।
তথ্য অনুযায়ী ব্যাংক খাতের সার্বিক খেলাপি ঋণের হারের চেয়ে কৃষি ঋণের খেলাপি ঋণের হার অনেক কম। কারণ বর্তমানে ব্যাংক খাতে মোট ঋণ ১৬ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় ১৭ শতাংশ।