ঢাকা ০২:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫

পাঁচ বছরে আয় কমেছে এমপি মোস্তাকের

  • আপডেট সময় : ১২:৫৩:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৩
  • ৯৫ বার পড়া হয়েছে

সাতক্ষীরা সংবাদদাতা: সাতক্ষীরা-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ দলীয় বর্তমান সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবির আয় কমেছে গত পাঁচ বছরে। আর আয় বেড়েছে সাতক্ষীরা-১ আসনের ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহর। সাতক্ষীরার ৪টি আসনের ৩৬ জন প্রার্থীর মধ্যে সবচেয়ে ধনী প্রার্থী সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আফম রুহুল হক। জানা গেছে, সাতক্ষীরা-সদর আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবির আয় কমেছে। ২০১৮ সালের হলফনামায় দেখা যায়, বাড়িভাড়া, ব্যবসা ও সংসদ সদস্য হিসেবে প্রাপ্য সম্মানী মিলিয়ে তার বার্ষিক আয় ছিল ৩০ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। আর এবারের হলফনামায় তিনি তার বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ২৮ লাখ ১৯ হাজার টাকা। তবে অস্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে সামান্য পরিমাণ। ২০১৮ সালে তার অস্থাবর সম্পত্তির মূল্যমান ছিল ১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। আর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ২ কোটি ১০ লাখ টাকা। স্থাবর সম্পত্তির মূল্য ৬৬ লাখের স্থলে হয়েছে ১ কোটি ২ লাখ টাকা। অপরদিকে সাতক্ষীরা-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মুস্তফা লুৎফুল্লাহর বার্ষিক আয় ১০ বছরে ৯ গুণেরও বেশি বেড়েছে। অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ২৫ গুণেরও বেশি। আর স্থাবর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ৩ গুণেরও বেশি। বার্ষিক আয়ের ক্ষেত্রে অবশ্য সংসদ সদস্যের সম্মানী যোগ হয়েছে। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা থেকে দেখা যায়, তিনি ও তার স্ত্রী যথাক্রমে আইন ও শিক্ষকতা পেশা থেকে বার্ষিক আয় করতেন ৪ লাখ ২ হাজার টাকা। দশ বছরের ব্যবধানে বর্তমানে তার বার্ষিক আয় ৩৮ লাখ টাকা। এতে অবশ্য ২৬ লাখ টাকা রয়েছে তার সংসদ সদস্য হিসেবে পাওয়া সম্মানী। দশ বছরে অস্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে ২৫ গুণ। ২০১৪ সালে তার থাকা ৪ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পত্তি বেড়ে হয়েছে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার। ১১ লাখ টাকার স্থাবর সম্পত্তি বেড়ে হয়েছে ৩৭ লাখ টাকা। সাতক্ষীরার ৪টি আসনের মধ্যে সবচেয়ে ধনী প্রার্থী হলেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আফম রুহুল হক। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা থেকে দেখা যায়, তার বার্ষিক আয় দেড় কোটি টাকারও বেশি। তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির মূল্যমান প্রায় ১৯ কোটি টাকা।
আসন ভাগাভাগির আলোচনা সিলেটেও
সিলেট সংবাদদাতা
ঠিক এক মাস পরেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ভোটের মাঠে লড়াইয়ে নেমেছেন বহু প্রার্থী। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা তৈরি হচ্ছেন নির্বাচনী প্রচারণায়, অন্যান্য দল থেকে যারা ভোটের মাঠে নেমেছেন তারাও নিজেদের শক্তি সঞ্চয় করছেন। এর মধ্যে আলোচনায় এসেছে আসন ভাগাভাগির বিষয়টি। সাধারণত জোটের শরিকদের কিছু আসন ছেড়ে দিয়ে নির্বাচন করে আসছে আওয়ামী লীগ।
বিগত দশম ও একাদশ নির্বাচনে মহাজোট ও ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির সিলসিলা এবারও বজায় থাকবে ক্ষমতাসীন দলের। এবার নির্বাচনে নামা নতুন কয়েকটি দলের সঙ্গে আসন ‘সমঝোতা’ করতে হবে তাদের। ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার আসনে এই ‘সমঝোতা’র আলাপ চলছে। সিলেটেও চলছে ‘আসন ভাগাভাগি’র আলোচনা। এখানে সিলেট-২, ৩, ৫ ও ৬ নম্বর আসনে হতে পারে ভাগাভাগি। কে পাবেন, কে পাবেন না- তা নিয়ে চলছে বিস্তর বিশ্লেষণ। চিন্তায় পড়েছেন প্রার্থীরা।
সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে হেভিওয়েট প্রার্থীদের আসনগুলো নিয়ে। আওয়ামী লীগের নিজের প্রার্থী, ১৪ দলের প্রার্থী ও বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্য দলের প্রার্থীদের নিয়েও চিন্তা করতে হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের হাইকমান্ডকে। এ আলোচনায় সবার আগে চলে আসে সিলেট-৬ আসন। আসনটি থেকে নির্বাচনের মাঠে নেমেছেন হেভিয়েট দুই প্রার্থী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও শমসের মবিন চৌধুরী। দশম জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে নির্বাচিত হওয়ার পর শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন নাহিদ। একাদশ সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন তিনি। বর্তমান এ সংসদ সদস্য দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন। বিএনপির পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করা শমসের মবিন চৌধুরীও এ আসনের প্রার্থী ছিলেন। দলবদল করে ২০১৮ সালে হন বিকল্প ধারার মনোনীত প্রার্থী। সেবার কুলা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে নেমেছিলেন। তবে পরে নাহিদকে সমর্থন দিয়ে সরে দাঁড়ান। ফলে সহজেই বিএনপি প্রার্থী ফয়সাল আহমদ চৌধুরীকে হারিয়ে ভোটে বিজয়ী হন নাহিদ। শমসের মবিন এবার নিজেই একটি দলের চেয়ারপারসন। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে তৃণমূল বিএনপির ব্যানারে অংশ নিচ্ছেন তিনি। ধারণা করা হচ্ছে, এ আসনটি তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। যদি তা-ই হয়, কপাল পুড়তে পারে নাহিদের। দলীয় সূত্র ও বিভিন্ন পর্যালোচনা বলছে, নির্বাচনী ৩০০ আসনের মধ্যে বেশ কিছু আসন ভোটে আসা শরিকদের ছেড়ে দিতে পারে আওয়ামী লীগ। ভাগবাটোয়ারার এ ক্ষণে নাহিদের মতো কপাল পুড়তে পারে আওয়ামী লীগের মনোনীত আরও কয়েকজন প্রার্থীর। জানা গেছে, শরিকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের আসন ভাগবাটোয়ারার তালিকায় রয়েছে সিলেট-৬ ছাড়াও রয়েছে সিলেট-২, সিলেট-৩ ও সিলেট-৫। এসব আসন থেকে দলের নির্দেশে নৌকার প্রার্থীকে নির্বাচনী মাঠ থেকে সরিয়ে নেওয়া হতে পারে। সিলেট-৬ আসন ছেড়ে দিতে হলে নুরুল ইসলাম নাহিদকে ২০১৮ সালের প্রতিদান ২০২৪ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এসে দিতে হতে পারে! এ নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীর মধ্যেও গুঞ্জন শুরু হয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের মধ্যে বলাবলি হচ্ছে, সরকার সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন দেখানোর স্বার্থে তৃণমূল বিএনপির জন্য সিলেট-৬ আসন থেকে নৌকা তুলে নিতে পারে। এটি হলে চাপমুক্ত হয়ে যাবেন শমসের মবিন। তবে, বাধা হয়ে থাকতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেন শমসের। দলীয় একাধিক সূত্র ও প্রার্থীদের ঘনিষ্ঠজনরা এ তথ্য জানিয়েছেন। তারা বলছেন, সরওয়ার স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় নির্বাচনী মাঠে থেকে যেতে পারেন। তাছাড়া জাতীয় পার্টি (জাপা) মনোনীত প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম উদ্দিনও এ আসন থেকে নির্বাচন করবেন। ধারণা করা হচ্ছে, ভাগাভাগির সিলসিলায় সিলেট-২ আসনও জাতীয় পার্টির কাছে ছেড়ে দেবে আওয়ামী লীগ। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এ আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। মহাজোটের ব্যানারে সেবার এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া। একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও আসনটি জাতীয় পার্টির হাওলায় ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সেবার হেরে যান জাপার প্রার্থী। নির্বাচিত হন বিএনপির নেতৃত্বে ভোটে আসা ঐক্যফ্রন্টের শরিক গণফোরামের বর্তমান নির্বাহী সভাপতি মোকাব্বির খান। এবারও সিলেট-২ আসন থেকে নির্বাচন করতে চাচ্ছেন তিনি। কিন্তু যাচাই-বাছাইয়ে তার প্রার্থিতা বাতিল হয়ে গেছে দলীয় প্রধানের স্বাক্ষর জটিলতায়। দুই মেয়াদে নির্বাচনের পরে সিলেট-২ আসনে ফের নৌকার প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বিএনপির জাঁদরেল নেতা নিখোঁজ ইলিয়াস আলীকে এ আসনে হারিয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী। দলের আনুগত্য থেকে বিগত দুই মেয়াদ ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন প্রবীণ এই রাজনৈতিক। তাকে এ আসনে বহাল রাখার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। আবার সিলেট-২ বগলদাবা করতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া। আওয়ামী লীগ প্রার্থী বহাল রাখলে লাঙ্গল কাটা পড়তে পারে তার। সিলেট-২ নিয়ে বনাবনি না হলে আওয়ামী লীগের কাছে সিলেট-৩ চাইতে পারে জাতীয় পার্টি। ১৯৯১ সালে নৌকা ছেড়ে আসা আতিকুর রহমান আতিকের জন্য আসনটি চাওয়া হতে পারে। করোনাভাইরাসের প্রকোপ চলাকালীন এ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর মৃত্যু হয়। ২০২১ সালের জুনে সিলেট-৩ আসনে উপনির্বাচন হয়। জাপার আতিকুর রহমানকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন যুক্তরাজ্য ফেরত আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব। গত আড়াই বছর ধরে তিনি জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন। গুঞ্জন ছিল এবার আসনটি থেকে নৌকা সরিয়ে নেওয়া হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ হাবিবকে মনোনয়ন দিয়েছে। বুধবার আসন ভাগাভাগি নিয়ে জাতীয় পার্টির বৈঠক আছে। ধারণা করা হচ্ছে, বৈঠক থেকে আতিকের জন্য সিলেট-৩ চাওয়া হবে আওয়ামী লীগের কাছে। ক্ষমতাসীনরা রাজি হলে নির্বাচনী মাঠ থেকে সরতে হতে পারে হাবিবকে। বিষয়টি দলীয় সূত্রের মাধ্যমে অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া গেছে। আতিকও তার নির্বাচনের ব্যাপারে আশাবাদী বলে জানিয়েছেন। এ আসন থেকে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন ডা. ইহতেশামুল হক দুলাল। আওয়ামী লীগের এ নেতার মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। দরকষাকষিতে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে সিলেট-৫ আসনটিও। জানা গেছে, মহাজোটের সমর্থনে থাকা স্বতন্ত্র প্রার্থী বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহের সভাপতি মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলীকে সিলেট-৫ ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। যদি তা-ই হয় দ্বিতীয় বারের মতো সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদকে ফের ভোটের মাঠ থেকে সরে যেতে হতে পারে। ২০১৪ সালে মাসুক উদ্দিন আহমদকে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছিল। পরে সেটি প্রত্যাহার করে মহাজোট থেকে জাতীয় পার্টির সেলিম উদ্দিনকে এ আসনে প্রার্থী করা হয়। তিনি বিজয়ী হয়ে সংসদে বিরোধী দলীয় হুইপ হন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ হাফিজ আহমদ মজুমদারকে মনোনয়ন দেয়। বর্তমানে তিনি সিলেট-৫ আসনের সংসদ সদস্য। বার্ধক্য বাধায় এবার প্রার্থী হননি হাফিজ আহমদ মজুমদার। জাতীয় পার্টি থেকে এ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে শাব্বির আহমদকে। ধারণা করা হচ্ছে, ভাগাভাগিতে হুছামুদ্দীনের জন্য আসনটি ছেড়ে দিতে পারে আওয়ামী লীগ। নাম না প্রকাশের শর্তে ক্ষমতাসীন দল ও জোটের একাধিক নেতা বলছেন, ভাগবাটোয়ারার যে আগাম চিন্তা তারা করছেন, সেটি সত্য হলে সংসদে যাওয়ার পথ সুগম হচ্ছে সরকারের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিনের; ১৯৯১ সাল থেকে নির্বাচন করে আসা জাপার আতিকুর রহমান ও আল ইসলাহর সভাপতি হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলীর।
আচরণ বিধি লঙ্ঘন

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

পাঁচ বছরে আয় কমেছে এমপি মোস্তাকের

আপডেট সময় : ১২:৫৩:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৩

সাতক্ষীরা সংবাদদাতা: সাতক্ষীরা-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ দলীয় বর্তমান সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবির আয় কমেছে গত পাঁচ বছরে। আর আয় বেড়েছে সাতক্ষীরা-১ আসনের ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহর। সাতক্ষীরার ৪টি আসনের ৩৬ জন প্রার্থীর মধ্যে সবচেয়ে ধনী প্রার্থী সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আফম রুহুল হক। জানা গেছে, সাতক্ষীরা-সদর আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবির আয় কমেছে। ২০১৮ সালের হলফনামায় দেখা যায়, বাড়িভাড়া, ব্যবসা ও সংসদ সদস্য হিসেবে প্রাপ্য সম্মানী মিলিয়ে তার বার্ষিক আয় ছিল ৩০ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। আর এবারের হলফনামায় তিনি তার বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ২৮ লাখ ১৯ হাজার টাকা। তবে অস্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে সামান্য পরিমাণ। ২০১৮ সালে তার অস্থাবর সম্পত্তির মূল্যমান ছিল ১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। আর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ২ কোটি ১০ লাখ টাকা। স্থাবর সম্পত্তির মূল্য ৬৬ লাখের স্থলে হয়েছে ১ কোটি ২ লাখ টাকা। অপরদিকে সাতক্ষীরা-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মুস্তফা লুৎফুল্লাহর বার্ষিক আয় ১০ বছরে ৯ গুণেরও বেশি বেড়েছে। অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ২৫ গুণেরও বেশি। আর স্থাবর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ৩ গুণেরও বেশি। বার্ষিক আয়ের ক্ষেত্রে অবশ্য সংসদ সদস্যের সম্মানী যোগ হয়েছে। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা থেকে দেখা যায়, তিনি ও তার স্ত্রী যথাক্রমে আইন ও শিক্ষকতা পেশা থেকে বার্ষিক আয় করতেন ৪ লাখ ২ হাজার টাকা। দশ বছরের ব্যবধানে বর্তমানে তার বার্ষিক আয় ৩৮ লাখ টাকা। এতে অবশ্য ২৬ লাখ টাকা রয়েছে তার সংসদ সদস্য হিসেবে পাওয়া সম্মানী। দশ বছরে অস্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে ২৫ গুণ। ২০১৪ সালে তার থাকা ৪ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পত্তি বেড়ে হয়েছে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার। ১১ লাখ টাকার স্থাবর সম্পত্তি বেড়ে হয়েছে ৩৭ লাখ টাকা। সাতক্ষীরার ৪টি আসনের মধ্যে সবচেয়ে ধনী প্রার্থী হলেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আফম রুহুল হক। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা থেকে দেখা যায়, তার বার্ষিক আয় দেড় কোটি টাকারও বেশি। তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির মূল্যমান প্রায় ১৯ কোটি টাকা।
আসন ভাগাভাগির আলোচনা সিলেটেও
সিলেট সংবাদদাতা
ঠিক এক মাস পরেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ভোটের মাঠে লড়াইয়ে নেমেছেন বহু প্রার্থী। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা তৈরি হচ্ছেন নির্বাচনী প্রচারণায়, অন্যান্য দল থেকে যারা ভোটের মাঠে নেমেছেন তারাও নিজেদের শক্তি সঞ্চয় করছেন। এর মধ্যে আলোচনায় এসেছে আসন ভাগাভাগির বিষয়টি। সাধারণত জোটের শরিকদের কিছু আসন ছেড়ে দিয়ে নির্বাচন করে আসছে আওয়ামী লীগ।
বিগত দশম ও একাদশ নির্বাচনে মহাজোট ও ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির সিলসিলা এবারও বজায় থাকবে ক্ষমতাসীন দলের। এবার নির্বাচনে নামা নতুন কয়েকটি দলের সঙ্গে আসন ‘সমঝোতা’ করতে হবে তাদের। ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার আসনে এই ‘সমঝোতা’র আলাপ চলছে। সিলেটেও চলছে ‘আসন ভাগাভাগি’র আলোচনা। এখানে সিলেট-২, ৩, ৫ ও ৬ নম্বর আসনে হতে পারে ভাগাভাগি। কে পাবেন, কে পাবেন না- তা নিয়ে চলছে বিস্তর বিশ্লেষণ। চিন্তায় পড়েছেন প্রার্থীরা।
সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে হেভিওয়েট প্রার্থীদের আসনগুলো নিয়ে। আওয়ামী লীগের নিজের প্রার্থী, ১৪ দলের প্রার্থী ও বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্য দলের প্রার্থীদের নিয়েও চিন্তা করতে হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের হাইকমান্ডকে। এ আলোচনায় সবার আগে চলে আসে সিলেট-৬ আসন। আসনটি থেকে নির্বাচনের মাঠে নেমেছেন হেভিয়েট দুই প্রার্থী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও শমসের মবিন চৌধুরী। দশম জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে নির্বাচিত হওয়ার পর শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন নাহিদ। একাদশ সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন তিনি। বর্তমান এ সংসদ সদস্য দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন। বিএনপির পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করা শমসের মবিন চৌধুরীও এ আসনের প্রার্থী ছিলেন। দলবদল করে ২০১৮ সালে হন বিকল্প ধারার মনোনীত প্রার্থী। সেবার কুলা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে নেমেছিলেন। তবে পরে নাহিদকে সমর্থন দিয়ে সরে দাঁড়ান। ফলে সহজেই বিএনপি প্রার্থী ফয়সাল আহমদ চৌধুরীকে হারিয়ে ভোটে বিজয়ী হন নাহিদ। শমসের মবিন এবার নিজেই একটি দলের চেয়ারপারসন। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে তৃণমূল বিএনপির ব্যানারে অংশ নিচ্ছেন তিনি। ধারণা করা হচ্ছে, এ আসনটি তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। যদি তা-ই হয়, কপাল পুড়তে পারে নাহিদের। দলীয় সূত্র ও বিভিন্ন পর্যালোচনা বলছে, নির্বাচনী ৩০০ আসনের মধ্যে বেশ কিছু আসন ভোটে আসা শরিকদের ছেড়ে দিতে পারে আওয়ামী লীগ। ভাগবাটোয়ারার এ ক্ষণে নাহিদের মতো কপাল পুড়তে পারে আওয়ামী লীগের মনোনীত আরও কয়েকজন প্রার্থীর। জানা গেছে, শরিকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের আসন ভাগবাটোয়ারার তালিকায় রয়েছে সিলেট-৬ ছাড়াও রয়েছে সিলেট-২, সিলেট-৩ ও সিলেট-৫। এসব আসন থেকে দলের নির্দেশে নৌকার প্রার্থীকে নির্বাচনী মাঠ থেকে সরিয়ে নেওয়া হতে পারে। সিলেট-৬ আসন ছেড়ে দিতে হলে নুরুল ইসলাম নাহিদকে ২০১৮ সালের প্রতিদান ২০২৪ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এসে দিতে হতে পারে! এ নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীর মধ্যেও গুঞ্জন শুরু হয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের মধ্যে বলাবলি হচ্ছে, সরকার সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন দেখানোর স্বার্থে তৃণমূল বিএনপির জন্য সিলেট-৬ আসন থেকে নৌকা তুলে নিতে পারে। এটি হলে চাপমুক্ত হয়ে যাবেন শমসের মবিন। তবে, বাধা হয়ে থাকতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেন শমসের। দলীয় একাধিক সূত্র ও প্রার্থীদের ঘনিষ্ঠজনরা এ তথ্য জানিয়েছেন। তারা বলছেন, সরওয়ার স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় নির্বাচনী মাঠে থেকে যেতে পারেন। তাছাড়া জাতীয় পার্টি (জাপা) মনোনীত প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম উদ্দিনও এ আসন থেকে নির্বাচন করবেন। ধারণা করা হচ্ছে, ভাগাভাগির সিলসিলায় সিলেট-২ আসনও জাতীয় পার্টির কাছে ছেড়ে দেবে আওয়ামী লীগ। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এ আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। মহাজোটের ব্যানারে সেবার এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া। একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও আসনটি জাতীয় পার্টির হাওলায় ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সেবার হেরে যান জাপার প্রার্থী। নির্বাচিত হন বিএনপির নেতৃত্বে ভোটে আসা ঐক্যফ্রন্টের শরিক গণফোরামের বর্তমান নির্বাহী সভাপতি মোকাব্বির খান। এবারও সিলেট-২ আসন থেকে নির্বাচন করতে চাচ্ছেন তিনি। কিন্তু যাচাই-বাছাইয়ে তার প্রার্থিতা বাতিল হয়ে গেছে দলীয় প্রধানের স্বাক্ষর জটিলতায়। দুই মেয়াদে নির্বাচনের পরে সিলেট-২ আসনে ফের নৌকার প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বিএনপির জাঁদরেল নেতা নিখোঁজ ইলিয়াস আলীকে এ আসনে হারিয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী। দলের আনুগত্য থেকে বিগত দুই মেয়াদ ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন প্রবীণ এই রাজনৈতিক। তাকে এ আসনে বহাল রাখার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। আবার সিলেট-২ বগলদাবা করতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া। আওয়ামী লীগ প্রার্থী বহাল রাখলে লাঙ্গল কাটা পড়তে পারে তার। সিলেট-২ নিয়ে বনাবনি না হলে আওয়ামী লীগের কাছে সিলেট-৩ চাইতে পারে জাতীয় পার্টি। ১৯৯১ সালে নৌকা ছেড়ে আসা আতিকুর রহমান আতিকের জন্য আসনটি চাওয়া হতে পারে। করোনাভাইরাসের প্রকোপ চলাকালীন এ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর মৃত্যু হয়। ২০২১ সালের জুনে সিলেট-৩ আসনে উপনির্বাচন হয়। জাপার আতিকুর রহমানকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন যুক্তরাজ্য ফেরত আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব। গত আড়াই বছর ধরে তিনি জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন। গুঞ্জন ছিল এবার আসনটি থেকে নৌকা সরিয়ে নেওয়া হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ হাবিবকে মনোনয়ন দিয়েছে। বুধবার আসন ভাগাভাগি নিয়ে জাতীয় পার্টির বৈঠক আছে। ধারণা করা হচ্ছে, বৈঠক থেকে আতিকের জন্য সিলেট-৩ চাওয়া হবে আওয়ামী লীগের কাছে। ক্ষমতাসীনরা রাজি হলে নির্বাচনী মাঠ থেকে সরতে হতে পারে হাবিবকে। বিষয়টি দলীয় সূত্রের মাধ্যমে অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া গেছে। আতিকও তার নির্বাচনের ব্যাপারে আশাবাদী বলে জানিয়েছেন। এ আসন থেকে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন ডা. ইহতেশামুল হক দুলাল। আওয়ামী লীগের এ নেতার মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। দরকষাকষিতে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে সিলেট-৫ আসনটিও। জানা গেছে, মহাজোটের সমর্থনে থাকা স্বতন্ত্র প্রার্থী বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহের সভাপতি মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলীকে সিলেট-৫ ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। যদি তা-ই হয় দ্বিতীয় বারের মতো সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদকে ফের ভোটের মাঠ থেকে সরে যেতে হতে পারে। ২০১৪ সালে মাসুক উদ্দিন আহমদকে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছিল। পরে সেটি প্রত্যাহার করে মহাজোট থেকে জাতীয় পার্টির সেলিম উদ্দিনকে এ আসনে প্রার্থী করা হয়। তিনি বিজয়ী হয়ে সংসদে বিরোধী দলীয় হুইপ হন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ হাফিজ আহমদ মজুমদারকে মনোনয়ন দেয়। বর্তমানে তিনি সিলেট-৫ আসনের সংসদ সদস্য। বার্ধক্য বাধায় এবার প্রার্থী হননি হাফিজ আহমদ মজুমদার। জাতীয় পার্টি থেকে এ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে শাব্বির আহমদকে। ধারণা করা হচ্ছে, ভাগাভাগিতে হুছামুদ্দীনের জন্য আসনটি ছেড়ে দিতে পারে আওয়ামী লীগ। নাম না প্রকাশের শর্তে ক্ষমতাসীন দল ও জোটের একাধিক নেতা বলছেন, ভাগবাটোয়ারার যে আগাম চিন্তা তারা করছেন, সেটি সত্য হলে সংসদে যাওয়ার পথ সুগম হচ্ছে সরকারের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিনের; ১৯৯১ সাল থেকে নির্বাচন করে আসা জাপার আতিকুর রহমান ও আল ইসলাহর সভাপতি হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলীর।
আচরণ বিধি লঙ্ঘন