ঢাকা ০৯:২০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৮ জুন ২০২৫

পাঁচ ধাপে বাড়ছে চালের দাম

  • আপডেট সময় : ০৯:৩০:০৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৪
  • ৬৬ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ সংবাদদাতা : ভোটের পরেই হঠাৎ করে বদলে যায় চালের বাজারের চিত্র। যদিও মাসখানেক আগেই উঠেছে আমন ধান। তবুও দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ধরণভেদে প্রতি কেজি চালে ৪ থেকে ৬ টাকা দাম বেড়েছে। বাড়তি দামের জন্য খুচরা ও পাইকারী ব্যবসায়ীরা মিলারদের দায়ী করছেন। আর মিলাররা দুষছেন বেশি দামেধান কিনে মজুত করে রাখা করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে। এমন পরিস্থিতিতে অস্থির চালের বাজারে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে খাদ্যমন্ত্রী ও বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
কৃষক থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যন্ত এবং বিশেষজ্ঞসহ বিভিন্ন পর্যায়ে চালের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্তত ২০ জনের সঙ্গে কথা বলে পাঁচ ধাপের কারসাজির চিত্র পেয়েছে ঢাকা টাইমস। এই ৫ ধাপে কারসাজি করেই বাড়ানো হচ্ছে চালের দাম। প্রাপ্ত তথ্য বলছে, কৃষকের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনে কারসাজি শুরু করেন মধ্যস্বত্ত্বভোগী। আবার কোনো কোনো মধ্যস্বত্ত্বভোগী আগে থেকেই কৃষকের কাছ থেকে ধানের জমি নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে চুক্তিতে নিয়ে নেন। কেউ কেউ কৃষককে ঋণ দিয়ে ফাঁদে ফেলে ধান কিনে নেন।
মধ্যস্বত্ত্বভোগী অতিরিক্ত মুনাফা রেখে ধান বিক্রি করেন মিল মালিকদের কাছে। তারা অতিরিক্ত লাভ রেখে চাল বিক্রি করেন বড় আড়ৎদারের কাছে। সেখান থেকে হাত বদলে চাল চলে যায় পাইকারি বিক্রেতাদের কাছে। সেখানেও চলে দাম বৃদ্ধির কারসাজি। এরপর খুচরা ব্যবসায়ীরা ওই চাল কিনে নিয়ে আরও অতিরিক্ত দামে ভোক্তা বা খুচরা ক্রেতার কাছে বিক্রি করে থাকেন। এভাবেই ধাপে ধাপে এক কেজি চালে বেড়ে যায় ২০ থেকে ২৫ টাকা।
এছাড়া চালের ব্যবসায় যুক্ত দেশের কয়েকটি বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও রয়েছে কারসাজির অভিযোগ। তারা কৃষকের কাছ থেকেও সরাসরি ধান কিনে থাকেন। কেউ কেউ বড় আয়তনের জমি কিনে সেখানে ধান চাষ করে থাকেন। তবে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে চাল মজুত করারও অভিযোগ রয়েছে। এই মজুতের মাধ্যমে তারা দামবৃদ্ধির কারসাজি করে থাকেন বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এবং বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম চাল মজুতদারদের প্রতিই বেশি নজর রাখছেন এবং কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। অবৈধ আড়তদারদের উদ্দেশ্যে খাদ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘যারা ধান স্টক (মজুত) করছে তাদের ছাড় দেয়া হবে না।’ পাশাপাশি চাল ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘চার দিনের মধ্যে দাম বাড়িয়েছেন, চার দিনের মধ্যে কমাবেন।’
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমাদের যুদ্ধ মজুতদারদের বিরুদ্ধে। যারা অতি মুনাফার লোভে অন্যায়ভাবে পণ্য মজুত করবে তাদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হবে।’
কড়া হুঁশিয়ারিতেও হুঁশ ফিরছেনা কৃত্রিম সংকট তৈরি করা অসাধু ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে মধ্যস্বত্বভোগীরা। কিন্তু এসবের মারপ্যাঁচে কৃষকসহ সাধারণ ভোক্তারা ভুগছেন সবচেয়ে বেশি।
নঁওগার কৃষক মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘এবার আমনের ফলন ভালো। কিন্তু গতবার ধান বিক্রি করে যত দাম পাওয়া গেছে এবার যদি এমন দামে বিক্রি করতে পারতাম লাভ হতো। কিন্তু এবার কম দামে ধান বিক্রি করলাম। কারণ ধানের আড়তদাররা কিনতেছে না। বাজারে ধানের আমদানি বেশি। তাই অত চাহিদা নাকি নাই। এদিকে কীটনাশকের দামও বাড়তি বেশি।’
এদিকে রাজধানীর টাউনহল মার্কেটের মায়ের দোয়া রাইস স্টোরের খুচরা ব্যবসায়ী মো. রিয়াদ হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, মিল মালিকরা ২ টাকা বাড়াইলে আড়তদাররা ৪ টাকা বাড়ায়া রাখে। আমরা যখন কাস্টমারকে চালের দাম বলি তারা বিশ্বাস করতে চায় না। তখন দামদর না কইরা কেনা দামে বেচতে হয়। পুরা কষ্ট খুচরা ব্যবসায়ীদের। রাজধানীর অন্যতম চালের আড়ত রয়েছে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে। সেখানকার ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মিলাররা বেশি দামে ধান কিনেছেন। তাই চালের দাম বাড়িয়ে রাখছেন। এমনকি অর্ডার দিয়েও মিল থেকে চাল পাচ্ছেন না তারা। মিলাররা বেশি মুনাফার আশায় চাল মজুত করছেন বলেও অভিযোগ তাদের।
তবে চালের আড়তে মিলারদের এক সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ জানান, করপোরেট প্রতিষ্ঠান লাখ লাখ বস্তা চাল মজুত করে রেখেছে। এছাড়া উৎপাদনের পরপরই বেশি দামে ট্রাকভর্তি করে ধান নিয়ে যায়। ফলে মিলাররা বিপাকে পড়েন।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মেসার্স নোয়াখালী রাইছ ট্রেডার্সের ম্যানেজার মো. শাওন বলেন, ‘ এই মাসের শুরু থ্যাকাই চালের দাম বাড়তে শুরু হইছে। তবে ভোটের পরপরই চালের বাড়তি দামটা চোখে পড়তাছে। এখন পাইজাম বস্তা প্রতি ১০০ টাকা, ব্রি ২৮ বস্তা প্রতি ২০০ টাকা, মিনিকেট বস্তা প্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, নাজিরশাইল বস্তা প্রতি ২০০ টাকা বাড়ছে। ফলে কেজি প্রতি সব ধরণের চাল বাড়ছে ৪ থেকে ৬ টাকা।’
কারওয়ান বাজারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুুক এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘দেশের এই টাইমে কোনো কালেই চালের বাড়তি দাম হয় নাই। আসল কারণডা হইলো ওরা ভাবছিলো নির্বাচনের পর দেশে কোনো একটা গন্ডগোল হইয়া যাইবো। তাই ধান- চাল বেশি কইরা কিনছে আর স্টকে রাইখা দিছে। কিন্তু এহন তো সুবিধা করতে পারবো বইলা মনে অয় না।’ এদিকে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট চালের আড়তের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী জানান, ‘তীর, এসিআই, আকিজের মতো বড় বড় কোম্পানিগুলা চাল মজুত করে রাখে। এই কারণে কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়। বড় বড় মিলাররাও একই কাজ করে। ফলে অর্ডার দিয়েও চাল পাই না। মিলাররা জানায় যে চাল নাই।’ হাতিরপুল বাজারের বায়তুল মোমিন মসজিদের হোটেলের মালিক নুরু মিয়া কারওয়ান বাজারে সপ্তাহ ব্যবধানে এসেই দেখেন চালের দাম বেড়ে গেছে। দেশ এগ্রোর ব্রি আটাশ চালের বস্তা প্রতি ২৫০ টাকা বেড়ে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
হোটেল ব্যবসায়ী নুরু মিয়া বলেন, ‘প্রতি ৬ দিন পরপর হোটেলে চালের দরকার হয়। গত সপ্তাহে যে দামে কিনলাম আইজ দেহি আড়াইশ টাকা বাইড়া গেছে। আইজ ৭ বস্তা চাল কিনলাম ২৮৫০ টাকা দিয়া আর গত সপ্তাহেই কিনছিলাম ২৬০০ টাকায়। বাড়তি দামে চাল কিনছি কিš‘ অহন আমি তো ভাতের দাম বাড়াইতে পারমু না। ভাতের দাম বাড়াইলেই কাস্টমার হারামু। দিন কয়েক আগে পিঁয়াজ-মরিচ বাড়ায়া দিলো। হুট হাট দাম বাড়াইয়া আমাগো লসের উপরে লস।’ এদিকে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার একাধিক সরকারি সংস্থা বাজারে নামায়। তদারকি করে কারণ খুঁজছেন তারা। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, কন্ট্রোল রুম খুলেছি, আমাদের অভিযান চলছে। অভিযানে যার কাছে অবৈধ মজুত পাওয়া যাবে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতি কুষ্টিয়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন প্রধান বলেন, ‘চালের বাজার তো বাড়ে নাই। বাড়ছে ধানের বাজার। এবার বাম্বার ফলন হইছে। চলতি মৌসুমে চার প্রকার ধান উঠেছে। মোটা হাইব্রিড, স্বর্ণা, ধানি গোল্ড ও বিনা-(৭ ও ৫৬) । কিন্তু এই ধান নভেম্বরে দাম ছিলো ১১৮০ টাকা সেটা জানুয়ারি পর্যন্ত আসতে আসতে দাম বেড়ে মণ প্রতি সাড়ে তেরোশ টাকা। তারমানে ১৭০ টাকা ধানের দাম বাড়ছে।এভাবে ধানের ধরণভেদে সবগুলোরই দাম বাড়ছে।’

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

পাঁচ ধাপে বাড়ছে চালের দাম

আপডেট সময় : ০৯:৩০:০৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৪

বিশেষ সংবাদদাতা : ভোটের পরেই হঠাৎ করে বদলে যায় চালের বাজারের চিত্র। যদিও মাসখানেক আগেই উঠেছে আমন ধান। তবুও দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ধরণভেদে প্রতি কেজি চালে ৪ থেকে ৬ টাকা দাম বেড়েছে। বাড়তি দামের জন্য খুচরা ও পাইকারী ব্যবসায়ীরা মিলারদের দায়ী করছেন। আর মিলাররা দুষছেন বেশি দামেধান কিনে মজুত করে রাখা করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে। এমন পরিস্থিতিতে অস্থির চালের বাজারে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে খাদ্যমন্ত্রী ও বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
কৃষক থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যন্ত এবং বিশেষজ্ঞসহ বিভিন্ন পর্যায়ে চালের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্তত ২০ জনের সঙ্গে কথা বলে পাঁচ ধাপের কারসাজির চিত্র পেয়েছে ঢাকা টাইমস। এই ৫ ধাপে কারসাজি করেই বাড়ানো হচ্ছে চালের দাম। প্রাপ্ত তথ্য বলছে, কৃষকের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনে কারসাজি শুরু করেন মধ্যস্বত্ত্বভোগী। আবার কোনো কোনো মধ্যস্বত্ত্বভোগী আগে থেকেই কৃষকের কাছ থেকে ধানের জমি নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে চুক্তিতে নিয়ে নেন। কেউ কেউ কৃষককে ঋণ দিয়ে ফাঁদে ফেলে ধান কিনে নেন।
মধ্যস্বত্ত্বভোগী অতিরিক্ত মুনাফা রেখে ধান বিক্রি করেন মিল মালিকদের কাছে। তারা অতিরিক্ত লাভ রেখে চাল বিক্রি করেন বড় আড়ৎদারের কাছে। সেখান থেকে হাত বদলে চাল চলে যায় পাইকারি বিক্রেতাদের কাছে। সেখানেও চলে দাম বৃদ্ধির কারসাজি। এরপর খুচরা ব্যবসায়ীরা ওই চাল কিনে নিয়ে আরও অতিরিক্ত দামে ভোক্তা বা খুচরা ক্রেতার কাছে বিক্রি করে থাকেন। এভাবেই ধাপে ধাপে এক কেজি চালে বেড়ে যায় ২০ থেকে ২৫ টাকা।
এছাড়া চালের ব্যবসায় যুক্ত দেশের কয়েকটি বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও রয়েছে কারসাজির অভিযোগ। তারা কৃষকের কাছ থেকেও সরাসরি ধান কিনে থাকেন। কেউ কেউ বড় আয়তনের জমি কিনে সেখানে ধান চাষ করে থাকেন। তবে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে চাল মজুত করারও অভিযোগ রয়েছে। এই মজুতের মাধ্যমে তারা দামবৃদ্ধির কারসাজি করে থাকেন বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এবং বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম চাল মজুতদারদের প্রতিই বেশি নজর রাখছেন এবং কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। অবৈধ আড়তদারদের উদ্দেশ্যে খাদ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘যারা ধান স্টক (মজুত) করছে তাদের ছাড় দেয়া হবে না।’ পাশাপাশি চাল ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘চার দিনের মধ্যে দাম বাড়িয়েছেন, চার দিনের মধ্যে কমাবেন।’
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমাদের যুদ্ধ মজুতদারদের বিরুদ্ধে। যারা অতি মুনাফার লোভে অন্যায়ভাবে পণ্য মজুত করবে তাদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হবে।’
কড়া হুঁশিয়ারিতেও হুঁশ ফিরছেনা কৃত্রিম সংকট তৈরি করা অসাধু ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে মধ্যস্বত্বভোগীরা। কিন্তু এসবের মারপ্যাঁচে কৃষকসহ সাধারণ ভোক্তারা ভুগছেন সবচেয়ে বেশি।
নঁওগার কৃষক মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘এবার আমনের ফলন ভালো। কিন্তু গতবার ধান বিক্রি করে যত দাম পাওয়া গেছে এবার যদি এমন দামে বিক্রি করতে পারতাম লাভ হতো। কিন্তু এবার কম দামে ধান বিক্রি করলাম। কারণ ধানের আড়তদাররা কিনতেছে না। বাজারে ধানের আমদানি বেশি। তাই অত চাহিদা নাকি নাই। এদিকে কীটনাশকের দামও বাড়তি বেশি।’
এদিকে রাজধানীর টাউনহল মার্কেটের মায়ের দোয়া রাইস স্টোরের খুচরা ব্যবসায়ী মো. রিয়াদ হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, মিল মালিকরা ২ টাকা বাড়াইলে আড়তদাররা ৪ টাকা বাড়ায়া রাখে। আমরা যখন কাস্টমারকে চালের দাম বলি তারা বিশ্বাস করতে চায় না। তখন দামদর না কইরা কেনা দামে বেচতে হয়। পুরা কষ্ট খুচরা ব্যবসায়ীদের। রাজধানীর অন্যতম চালের আড়ত রয়েছে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে। সেখানকার ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মিলাররা বেশি দামে ধান কিনেছেন। তাই চালের দাম বাড়িয়ে রাখছেন। এমনকি অর্ডার দিয়েও মিল থেকে চাল পাচ্ছেন না তারা। মিলাররা বেশি মুনাফার আশায় চাল মজুত করছেন বলেও অভিযোগ তাদের।
তবে চালের আড়তে মিলারদের এক সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ জানান, করপোরেট প্রতিষ্ঠান লাখ লাখ বস্তা চাল মজুত করে রেখেছে। এছাড়া উৎপাদনের পরপরই বেশি দামে ট্রাকভর্তি করে ধান নিয়ে যায়। ফলে মিলাররা বিপাকে পড়েন।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মেসার্স নোয়াখালী রাইছ ট্রেডার্সের ম্যানেজার মো. শাওন বলেন, ‘ এই মাসের শুরু থ্যাকাই চালের দাম বাড়তে শুরু হইছে। তবে ভোটের পরপরই চালের বাড়তি দামটা চোখে পড়তাছে। এখন পাইজাম বস্তা প্রতি ১০০ টাকা, ব্রি ২৮ বস্তা প্রতি ২০০ টাকা, মিনিকেট বস্তা প্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, নাজিরশাইল বস্তা প্রতি ২০০ টাকা বাড়ছে। ফলে কেজি প্রতি সব ধরণের চাল বাড়ছে ৪ থেকে ৬ টাকা।’
কারওয়ান বাজারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুুক এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘দেশের এই টাইমে কোনো কালেই চালের বাড়তি দাম হয় নাই। আসল কারণডা হইলো ওরা ভাবছিলো নির্বাচনের পর দেশে কোনো একটা গন্ডগোল হইয়া যাইবো। তাই ধান- চাল বেশি কইরা কিনছে আর স্টকে রাইখা দিছে। কিন্তু এহন তো সুবিধা করতে পারবো বইলা মনে অয় না।’ এদিকে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট চালের আড়তের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী জানান, ‘তীর, এসিআই, আকিজের মতো বড় বড় কোম্পানিগুলা চাল মজুত করে রাখে। এই কারণে কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়। বড় বড় মিলাররাও একই কাজ করে। ফলে অর্ডার দিয়েও চাল পাই না। মিলাররা জানায় যে চাল নাই।’ হাতিরপুল বাজারের বায়তুল মোমিন মসজিদের হোটেলের মালিক নুরু মিয়া কারওয়ান বাজারে সপ্তাহ ব্যবধানে এসেই দেখেন চালের দাম বেড়ে গেছে। দেশ এগ্রোর ব্রি আটাশ চালের বস্তা প্রতি ২৫০ টাকা বেড়ে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
হোটেল ব্যবসায়ী নুরু মিয়া বলেন, ‘প্রতি ৬ দিন পরপর হোটেলে চালের দরকার হয়। গত সপ্তাহে যে দামে কিনলাম আইজ দেহি আড়াইশ টাকা বাইড়া গেছে। আইজ ৭ বস্তা চাল কিনলাম ২৮৫০ টাকা দিয়া আর গত সপ্তাহেই কিনছিলাম ২৬০০ টাকায়। বাড়তি দামে চাল কিনছি কিš‘ অহন আমি তো ভাতের দাম বাড়াইতে পারমু না। ভাতের দাম বাড়াইলেই কাস্টমার হারামু। দিন কয়েক আগে পিঁয়াজ-মরিচ বাড়ায়া দিলো। হুট হাট দাম বাড়াইয়া আমাগো লসের উপরে লস।’ এদিকে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার একাধিক সরকারি সংস্থা বাজারে নামায়। তদারকি করে কারণ খুঁজছেন তারা। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, কন্ট্রোল রুম খুলেছি, আমাদের অভিযান চলছে। অভিযানে যার কাছে অবৈধ মজুত পাওয়া যাবে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতি কুষ্টিয়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন প্রধান বলেন, ‘চালের বাজার তো বাড়ে নাই। বাড়ছে ধানের বাজার। এবার বাম্বার ফলন হইছে। চলতি মৌসুমে চার প্রকার ধান উঠেছে। মোটা হাইব্রিড, স্বর্ণা, ধানি গোল্ড ও বিনা-(৭ ও ৫৬) । কিন্তু এই ধান নভেম্বরে দাম ছিলো ১১৮০ টাকা সেটা জানুয়ারি পর্যন্ত আসতে আসতে দাম বেড়ে মণ প্রতি সাড়ে তেরোশ টাকা। তারমানে ১৭০ টাকা ধানের দাম বাড়ছে।এভাবে ধানের ধরণভেদে সবগুলোরই দাম বাড়ছে।’