ঢাকা ০১:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫

পশ্চিমবঙ্গে নিষিদ্ধ ‘লজ্জা’ নাটক, ক্ষুব্ধ তসলিমা নাসরিন

  • আপডেট সময় : ০৬:০১:২০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ৪৬ বার পড়া হয়েছে

বিনোদন ডেস্ক: বাংলাদেশের নির্বাসিত লেখক তসলিমা নাসরিনের ‘লজ্জা’ নাটকটি নিষিদ্ধ করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। উত্তর ২৪ পরগনার একটি নাট্যোৎসবে নাটকটি মঞ্চস্থ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বন্ধ করে দেয় স্থানীয় পুলিশ। তসলিমা নাসরিন নিজেই এসব অভিযোগ করেছেন। সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) তসলিমা নাসরিন তার ফেসবুকে একাধিক স্ট্যাটাস দিয়েছেন। একটি পোস্টে তিনি বলেন, “মমতা ব্যানার্জি আজ আমার ‘লজ্জা’ উপন্যাস অবলম্বনে বিশ্বজিৎ সিং রচিত ও পরিচালিত ‘লজ্জা’ নাটকটি পশ্চিমবঙ্গে নিষিদ্ধ করলেন। উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙ্গায় আর হুগলির পাণ্ডুয়ার নাট্য উৎসবে ‘লজ্জা’ নাটকটি মঞ্চস্থ হওয়ার কথা ছিল। দুমাস যাবৎ বিজ্ঞাপন যাচ্ছে এই উৎসবের। আর আজ বলা নেই কওয়া নেই, হঠাৎ মমতা ব্যানার্জির পুলিশ এসে জানিয়ে দিল, সব নাটক মঞ্চস্থ হবে, শুধু লজ্জা ছাড়া। নবপল্লী নাট্যসংস্থা দিল্লিতে তিনবার নাটকটি মঞ্চস্থ করেছে। তিনবারই প্রেক্ষাগৃহ পূর্ণ ছিল।”
পুলিশের বরাত দিয়ে তসলিমা নাসরিন বলেন, “পুলিশ জানিয়েছে, ‘লজ্জা’ মঞ্চস্থ হলে মুসলিমরা নাকি দাঙ্গা বাঁধাবে। মুসলিমরা দাঙ্গা বাঁধাবে এই অজুহাতে সম্পর্কের টানাপড়েন নিয়ে লেখা আমার ‘দুঃসহবাস’ নামের মেগাসিরিয়ালটির সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছিলেন রাজ্য সরকার। লজ্জার ঘটনা বাংলাদেশের।

কী কারণে পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমরা বাংলাদেশের ঘটনা নিয়ে দাঙ্গা বাঁধাবে, আমার বোধগম্য নয়। মুসলিমরা দাঙ্গা বাঁধাবে এই অজুহাতে আমাকে এক সময় পশ্চিমবঙ্গ থেকেও বের করে দেওয়া হয়েছিল।” বেশ কিছু প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে তসলিমা নাসরিন বলেন, “যারা দাঙ্গা বাঁধাতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে, শিল্প সাহিত্যকে নিষিদ্ধ করা হয় কেন? শিল্পী সাহিত্যিকের কণ্ঠরোধ করা হয় কেন? এই প্রশ্নটি আর কত যুগ একা একা আমিই করে যাব? আর কারো দায়িত্ব নেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করার?”
অন্য একটি পোস্টে তসলিমা নাসরিন বলেন, “মানবতা, উদারতা, অসাম্প্রদায়িকতার পক্ষে লেখা আমার তথ্যভিত্তিক উপন্যাস ‘লজ্জা’ অবলম্বনে যে নাটকটি পশ্চিমবঙ্গে মঞ্চস্থ হতে যাচ্ছিল, সেটিকে দাঙ্গা বাঁধতে পারে এই অজুহাতে মঞ্চস্থ হতে বাধা দিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। অথচ ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, দাঙ্গা হাঙ্গামার বিরুদ্ধে, লজ্জা একটি তীব্র প্রতিবাদ।” শুধু নাটক নয়, ‘লজ্জা’ বইটিও নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে তসলিমা নাসরিন বলেন, “আমার ‘লজ্জা’ নামের গ্রন্থটি কিন্তু গত ৩০ বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গে প্রকাশিত হচ্ছে।

গ্রন্থটি বরাবরই বেস্ট সেলার লিস্টে। আনন্দ পাবলিশার্সের এই গ্রন্থটির প্রকাশ তো নিষিদ্ধ হয়নি! এটিকেও নিষিদ্ধ করুন মাননীয় মূখ্যমন্ত্রী। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পক্ষে লেখা এই গ্রন্থটিকে নিষিদ্ধ না করে এই গ্রন্থ অবলম্বনে নির্মিত নাটক নিষিদ্ধ করাটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।” পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যারা প্রতিবাদ জানাতে চান, তাদের উদ্দেশ্যে তসলিমা নাসরিন বলেন, “যারা ‘লজ্জা’ নাটকটি দেখতে চেয়েছিলেন বা যারা নাটকটির নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে চান, তারা ‘লজ্জা’ গ্রন্থটি কিনুন এবং পড়ুন এবং অন্যকে পড়তে দিন।”

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

পশ্চিমবঙ্গে নিষিদ্ধ ‘লজ্জা’ নাটক, ক্ষুব্ধ তসলিমা নাসরিন

আপডেট সময় : ০৬:০১:২০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

বিনোদন ডেস্ক: বাংলাদেশের নির্বাসিত লেখক তসলিমা নাসরিনের ‘লজ্জা’ নাটকটি নিষিদ্ধ করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। উত্তর ২৪ পরগনার একটি নাট্যোৎসবে নাটকটি মঞ্চস্থ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বন্ধ করে দেয় স্থানীয় পুলিশ। তসলিমা নাসরিন নিজেই এসব অভিযোগ করেছেন। সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) তসলিমা নাসরিন তার ফেসবুকে একাধিক স্ট্যাটাস দিয়েছেন। একটি পোস্টে তিনি বলেন, “মমতা ব্যানার্জি আজ আমার ‘লজ্জা’ উপন্যাস অবলম্বনে বিশ্বজিৎ সিং রচিত ও পরিচালিত ‘লজ্জা’ নাটকটি পশ্চিমবঙ্গে নিষিদ্ধ করলেন। উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙ্গায় আর হুগলির পাণ্ডুয়ার নাট্য উৎসবে ‘লজ্জা’ নাটকটি মঞ্চস্থ হওয়ার কথা ছিল। দুমাস যাবৎ বিজ্ঞাপন যাচ্ছে এই উৎসবের। আর আজ বলা নেই কওয়া নেই, হঠাৎ মমতা ব্যানার্জির পুলিশ এসে জানিয়ে দিল, সব নাটক মঞ্চস্থ হবে, শুধু লজ্জা ছাড়া। নবপল্লী নাট্যসংস্থা দিল্লিতে তিনবার নাটকটি মঞ্চস্থ করেছে। তিনবারই প্রেক্ষাগৃহ পূর্ণ ছিল।”
পুলিশের বরাত দিয়ে তসলিমা নাসরিন বলেন, “পুলিশ জানিয়েছে, ‘লজ্জা’ মঞ্চস্থ হলে মুসলিমরা নাকি দাঙ্গা বাঁধাবে। মুসলিমরা দাঙ্গা বাঁধাবে এই অজুহাতে সম্পর্কের টানাপড়েন নিয়ে লেখা আমার ‘দুঃসহবাস’ নামের মেগাসিরিয়ালটির সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছিলেন রাজ্য সরকার। লজ্জার ঘটনা বাংলাদেশের।

কী কারণে পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমরা বাংলাদেশের ঘটনা নিয়ে দাঙ্গা বাঁধাবে, আমার বোধগম্য নয়। মুসলিমরা দাঙ্গা বাঁধাবে এই অজুহাতে আমাকে এক সময় পশ্চিমবঙ্গ থেকেও বের করে দেওয়া হয়েছিল।” বেশ কিছু প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে তসলিমা নাসরিন বলেন, “যারা দাঙ্গা বাঁধাতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে, শিল্প সাহিত্যকে নিষিদ্ধ করা হয় কেন? শিল্পী সাহিত্যিকের কণ্ঠরোধ করা হয় কেন? এই প্রশ্নটি আর কত যুগ একা একা আমিই করে যাব? আর কারো দায়িত্ব নেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করার?”
অন্য একটি পোস্টে তসলিমা নাসরিন বলেন, “মানবতা, উদারতা, অসাম্প্রদায়িকতার পক্ষে লেখা আমার তথ্যভিত্তিক উপন্যাস ‘লজ্জা’ অবলম্বনে যে নাটকটি পশ্চিমবঙ্গে মঞ্চস্থ হতে যাচ্ছিল, সেটিকে দাঙ্গা বাঁধতে পারে এই অজুহাতে মঞ্চস্থ হতে বাধা দিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। অথচ ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, দাঙ্গা হাঙ্গামার বিরুদ্ধে, লজ্জা একটি তীব্র প্রতিবাদ।” শুধু নাটক নয়, ‘লজ্জা’ বইটিও নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে তসলিমা নাসরিন বলেন, “আমার ‘লজ্জা’ নামের গ্রন্থটি কিন্তু গত ৩০ বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গে প্রকাশিত হচ্ছে।

গ্রন্থটি বরাবরই বেস্ট সেলার লিস্টে। আনন্দ পাবলিশার্সের এই গ্রন্থটির প্রকাশ তো নিষিদ্ধ হয়নি! এটিকেও নিষিদ্ধ করুন মাননীয় মূখ্যমন্ত্রী। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পক্ষে লেখা এই গ্রন্থটিকে নিষিদ্ধ না করে এই গ্রন্থ অবলম্বনে নির্মিত নাটক নিষিদ্ধ করাটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।” পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যারা প্রতিবাদ জানাতে চান, তাদের উদ্দেশ্যে তসলিমা নাসরিন বলেন, “যারা ‘লজ্জা’ নাটকটি দেখতে চেয়েছিলেন বা যারা নাটকটির নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে চান, তারা ‘লজ্জা’ গ্রন্থটি কিনুন এবং পড়ুন এবং অন্যকে পড়তে দিন।”