নিজস্ব প্রতিবেদক : অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত ও ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি কোভিশিল্ড টিকার স্বল্পতা রয়েছে। এই সংকট খুব দ্রুত শেষ হবে না বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের ভার্চুয়াল বুলেটিনে এ কথা জানান অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন। সরকারের হাতে কোভিশিল্ড টিকা কত রয়েছে প্রশ্নে তিনি বলেন, অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার সংকট রয়েছে। এর সমাধান চট করেই হয়ে যাচ্ছে বলে আমরা মনে করছি না। কারণ, ভারত থেকে এই টিকা যতটুকু পাওয়ার কথা ছিল তার সমাধান এখনও হয়নি। একই সঙ্গে অন্যান্য স্থান থেকেও এই টিকা পাওয়া সম্ভব না।
এদিকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধের টিকা নিয়ে বিশ্বব্যাপী পলিটিক্স চলছে এমন মন্তব্য করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ বি এম খুরশিদ আলম বলেছেন, ‘বিশ্বব্যাপী ভ্যাকসিন নিয়ে পলিটিক্স চলছে। আমরাও সেই পলিটিক্সের শিকার।’ তবে ভ্যাকসিন আনার ক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগ প্রশংসনীয় বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
গতকাল সোমবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করেন তিনি। করোনা থেকে সুরক্ষিত রাখতে দেশের ৮০ ভাগ মানুষকে টিকা দেয়ার লক্ষ্য রয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যের মহাপরিচালক জানান, আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে সিনোফার্মের বড় অংকের টিকা আসবে। ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেয়ার লক্ষ্য রয়েছে। আশা করি বড় অংশকে সুরক্ষিত করতে পারব।’
খুরশিদ আলম বলেন, ‘আমরা গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত ভ্যাক্সিনেট করতে চাই। যেসব শ্রমিকরা বিদেশে যাবেন তাদের টিকায় অগ্রাধিকার দেয়া হবে। প্রবাসীদের ফাইজারের টিকা দ্রুত সময়ে দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলেও জানান তিনি।’ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আরও বলেন, কোভ্যাক্সের কাছে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ২০ লাখ ডোজ চাওয়া হয়েছে। আগস্টের মাঝামাঝি আসতে পারে চালান। তবে কী পরিমাণ আসবে সেটা এখনো জানায়নি।
সারাদেশে সিনোফার্মের টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত: চীনের সিনোফার্মের টিকা শিগগিরই দেশের সব জায়াগায় দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যথাসময়ে টিকা প্রদানের তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ভার্চুয়াল বুলেটিনে এ তথ্য জানিয়েছেন অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন। দেশে বেশ কয়েকটি কোম্পানির টিকা দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে অধ্যাপক রোবেদ আমিন বলেন, ‘অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত ও ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি কোভিশিল্ডের কিছু ডোজ দিতে পেরেছিলাম। পরবর্তীতে চীনের সিনোফার্ম এবং কোভ্যাক্স সুবিধার আওতায় আসা ফাইজারের টিকা দেওয়া হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘এছাড়া ঢাকা শহরে ফাইজারের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গত ২১ জুন এই টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে ২৪০ জনকে। উদ্দেশ্য ছিল টিকা দেওয়া পর তাদেরকে সাত দিন পর্যন্ত পর্যবেক্ষণে রাখা। যদি কোনও অসুবিধার সৃষ্টি না হয়, অথবা কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না হয়, তাহলে পরবর্তী সময়ে বাকি টিকা ঢাকার ভেতরে দেওয়া হবে। সেই সাত দিনের জন্য এখনও আমরা অপেক্ষমান রয়েছি।’ এর আগে দেশে গত ১৯ জুন থেকে চীন সরকারের উপহার দেওয়া সিনোফার্মের টিকা দিয়ে দেশে সিনোফার্মের টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের এই টিকা দেওয়া হয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এই কার্যক্রম শুরু হয়।
প্রসঙ্গত, দেশে করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি কোভিশিল্ড টিকা দেওয়া হয়েছে ২৭ জুন পর্যন্ত এক কোটি এক লাখ পাঁচ হাজার ৯৪৯ ডোজ। ভারত থেকে এ পর্যন্ত দেশে কোভিশিল্ড টিকা এসেছে ১ কোটি ২ লাখ ডোজ। সেই হিসাবে এই টিকার মজুত আছে আর মাত্র ৯৪ হাজার ৫১ ডোজ। উল্লেখ্য, দেশে গত ৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয়ভাবে করোনার টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত এই কার্যক্রম চলে। টিকার সংকট দেখা দেওয়ায় ২৬ এপ্রিল থেকে প্রথম ডোজ দেওয়া বন্ধ ঘোষণা করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ২ মে’র পর থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয় টিকার জন্য নিবন্ধনও।
ঝুঁকিপূর্ণ ৫১ জেলায় র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট অতীব জরুরি : দেশে করোনা সংক্রমিত ঝুঁকিপূর্ণ ৫১ জেলায় র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট অতীব জরুরি মন্তব্য করে এসব জেলায় টেস্ট বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র ও পরিচালক (অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন।
গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে ভার্চুয়াল স্বাস্থ্য বুলেটিনে বক্তব্যকালে তিনি এ আহ্বান জানান। ডা. রোবেদ আমিন বলেন, সংক্রমিত জেলার কেউ জ্বর বা জ্বর সংক্রান্ত অন্য কোনো সমস্যায় ভুগলে তার র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট অতীত জরুরি। করোনা পজিটিভ না হলেও নন-করোনা চিকিৎসার জন্যও এ টেস্ট দরকার। তিনি আরও বলেন, গত ১৯ জুন থেকে ২৬ জুন যেসব অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হয়েছে তাতে পজিটিভের সংখ্যা আগের চেয়ে ২৪ শতাংশ বেশি। কিন্তু দেখা গেছে অধিক সংক্রমিত ১৮ জেলার ১৯০টি উপজেলায় র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের সংখ্যা তুলনামূলক কম।
পলিটিক্সের শিকার বাংলাদেশ, সহসাই পাচ্ছে না অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা
ট্যাগস :
পলিটিক্সের শিকার বাংলাদেশ
জনপ্রিয় সংবাদ