ঢাকা ০২:১৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫

পর্যটনকে এগিয়ে নিতে এভিয়েশনের ভূমিকা কি অনস্বীকার্য?

  • আপডেট সময় : ০৫:৫৫:০১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
  • ৫ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

শরীফা বুলবুল

বিশ্বের অনেক দেশ আছে যাদের জিডিপির মূল আয়ের খাতই হচ্ছে পর্যটন। আবার অনেক দেশ আছে আয়ের অন্যতম খাত পর্যটন। আর পর্যটন প্রায় শতভাগ নির্ভর করে এভিয়েশন খাতের ওপর। এভিয়েশন এবং পর্যটনের ওপর নির্ভর করে হাজার হাজার ট্রাভেল এজেন্সি আর ট্যুর অপারেটর। পর্যটনের সাথে সম্পৃক্ত হাজার হাজার আবাসিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট এবং রেস্টুরেন্ট। সবকিছু মিলিয়ে এই শিল্পের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে কয়েক লাখ কর্মী। যাদের শুধু মাসিক আয়ের ওপর নির্ভর করতে হয়।

ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ থাকলেই তাদের কাজের নিশ্চয়তা থাকে। আয়ের নিশ্চয়তা থাকে। ব্যবসা বন্ধ তো আয়ের পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। তাদের প্রতি মুহূর্তে সামাজিকভাবে নিগৃহীত হতে হয়। আয়ের পথ বন্ধ হলেও বেঁচে থাকার জন্য প্রতিটি খরচ বহমান থাকে। শুধু হতাশায় নিমজ্জিত থেকে কীভাবে একজন কর্মী তার আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাবে?

শুধু কর্মীর কথা উল্লেখ করলে যথার্থতা পাবে না। এভিয়েশন এবং পর্যটন শিল্প যদি স্তব্ধ হয়ে যায়, এর সাথে সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীরা নানাভাবে বিপর্যস্ত হতে থাকে। ব্যবসার ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ পরিশোধের দায়, কর্মীদের জীবন-জীবিকা নিয়ে ভাবনা ইত্যাদি বিষয়গুলো সামনে উঠে আসে। ভবিষ্যতে এই খাতে বিনিয়োগ করা থেকে বিরত থাকতে পারেন অনেক বিনিয়োগকারী। কিংবা বর্তমান ব্যবসায় থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিতে পারেন অনেকেই।

উপরের কথাগুলো উল্লেখ করা হয়েছে বিগত দুই যুগ ধরে এগিয়ে চলা এভিয়েশন এবং পর্যটন শিল্পের হালচাল দেখেই। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেই এগিয়ে চলা বাংলাদেশ এভিয়েশন শিল্প। অনেক পরিকল্পনা নিয়ে শুরু করা একটি এয়ারলাইন্স কোম্পানি শতকোটি টাকা বিনিয়োগের কিছুদিনের মধ্যেই ব্যবসা গুটিয়ে চলে যেতে হয়েছে। শুরু আর শেষের মধ্যে অনেক না পাওয়ার কাব্যকথা লুকিয়ে থাকে।

ব্যবসা শুরু হয় শূন্য থেকে। কিন্তু শেষের গল্প থাকে অনেক করুণা আর বঞ্চনার মিশ্রণে ভরপুর। বিনিয়োগকৃত অর্থ যেমন শূন্যেরও নিচে চলে যায়, এর সাথে জড়িত অনেক কর্মীর জীবন কাহিনি হয়ে ওঠে কর্মহীনতার গল্প নিয়ে। এভাবেই এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ এভিয়েশন শিল্প। একটি এয়ারলাইন্স কোম্পানি ১৪ বছর কিংবা ১০ বছর পরিচালনার পর বন্ধ হয়ে যাওয়া কিংবা শুরুর আগেই শেষ হয়ে যাওয়া। যা একটি শিল্পের জন্য কোনোভাবেই ভালো লক্ষণ নয়।

বাংলাদেশ এভিয়েশনের রেগুলেটরি অথরিটি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এভিয়েশন ব্যবসায় সম্পৃক্ত প্রতিটি এয়ারলাইন্স কোম্পানি। অনেক পাওয়ার সাথে অনেক না পাওয়ার গল্পও আছে এভিয়েশন ব্যবসায়। প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসা মানেই এভিয়েশন ব্যবসা। উন্মুক্ত আকাশের মতোই উন্মুক্ত ব্যবসা। কিন্তু বহির্বিশ্বের প্রতিষ্ঠিত এয়ারলাইন্সগুলোর সঙ্গে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হলে নিজ দেশের এয়ারলাইন্সদের কিছুটা ভর্তুকি দেওয়া যেতে পারে। প্রায় ১৮ কোটি জনসংখ্যার দেশের প্রায় এক কোটির বেশি মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শ্রম দিয়ে যাচ্ছে। আর এই বিশাল মার্কেটের বৃহদাংশই চলে যাচ্ছে বিদেশি এয়ারলাইন্সের কাছে।

বাংলাদেশ এভিয়েশন মার্কেট সব দেশের এয়ারলাইন্সের কাছে একটি লোভনীয় মার্কেট। অনেক বিদেশি নতুন নতুন এয়ারলাইন্স বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনা করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে। বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর সাথে দেশীয় এয়ারলাইন্সকে টিকিয়ে রাখার জন্য জেট ফুয়েল, অ্যারোনোটিক্যাল ও নন-অ্যারোনোটিক্যাল চার্জ, এয়ারলাইন্সের বিভিন্ন যন্ত্রাংশের আমদানি শুল্কসহ নানাবিধ চার্জগুলোর ক্ষেত্রে যৌক্তিক হারে সুবিধা প্রদান করা যেতে পারে।

অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে দেশীয় এয়ারলাইন্স তথা দেশের নাগরিকদের কথা বিবেচনা করে যৌক্তিকহারে বিভিন্ন চার্জ নির্ধারণ করলে আকাশপথে ভ্রমণ অনেক বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। যা দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রাখবে, যা বাস্তবতার নিরিখে বলা যায়।

এভিয়েশন মার্কেটের অগ্রযাত্রার সাথে সাথে গড়ে উঠেছে হাজার হাজার ট্রাভেল এজেন্সি। আজ যদি বাংলাদেশের এভিয়েশন মার্কেট ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাথে সাথেই ট্রাভেল এজেন্সিগুলো পর্যুদস্ত হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এভিয়েশন ও পর্যটন মার্কেটের ব্যাপ্তি বাড়ার সাথে সাথেই বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন পাঁচ তারকসহ অনেক নামীদামি হোটেল।

দেশের এভিয়েশন কেন্দ্র করে সারাদেশে গড়ে উঠেছে অনেক পর্যটনকেন্দ্র। দেশীয় পর্যটকদের পর্যটনকেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখার প্রবণতা দিনদিন বাড়তে শুরু করেছে। পর্যটনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে অনেক অনেক ট্যুর অপারেটর- যারা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যটন নিয়ে কাজ করে পর্যটকদের আগ্রহ তৈরিতে সহায়তা করে। সবকিছুর মূলেই আছে এভিয়েশন। একটি দেশের এভিয়েশন যতবেশি শক্তিশালী অবকাঠামোতে গড়ে উঠবে সেই দেশের পর্যটন ততবেশি শক্তিশালী হবে।

দুঃখজনক হলেও সত্যি, দুই যুগে প্রায় ৮ থেকে ৯টি বেসরকারি এয়ারলাইন্স বন্ধ হয়ে গেছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য জিএমজি এয়ারলাইন্স, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, বেস্ট এয়ার, রিজেন্ট এয়ারওয়েজ। বর্তমানে বেসরকারিভাবে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স, এয়ার অ্যাস্ট্রা ও নভোএয়ার এবং সরকারিভাবে বাংলাদেশ বিমান ব্যবসা পরিচালনায় টিকে আছে। অনেকেই এভিয়েশন ব্যবসায় বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করার পরও পূর্ববর্তী কোম্পানিগুলোর অবস্থান বিবেচনায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।

অনেক স্বপ্নের ফসল হতে যাচ্ছে আধুনিকায়নের অন্যতম টার্মিনাল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের থার্ড টার্মিনাল। এর থেকে পরিপূর্ণ সুবিধা পেতে দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলোর পূর্ণ প্রতিযোগিতায় আনতে সার্বিক সহায়তা প্রদান করা খুবই জরুরি। নতুবা বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মার্কেটকে নিজেদের দখলে নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করবে। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে আপনার আমার সোনার বাংলাদেশ।

করোনাকালীন বিশ্বময় দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এভিয়েশন খাত। সেই সাথে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিশ্বের হোটেল ইন্ডাস্ট্রি, ট্যুরিজম ইন্ডাস্ট্রির সাথে সংশ্লিষ্ট লাখ লাখ ট্রাভেল এজেন্সি ও ট্যুর অপারেটর। এভিয়েশন এবং পর্যটন শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে এর সাথে সংশ্লিষ্ট নীতি নির্ধারকরা যেন সুবিবেচনা প্রসূত সিদ্ধান্ত নেন এই প্রত্যাশা করে এই শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাই। না হয় চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ এভিয়েশন এবং পর্যটন শিল্প।

যে কোনো পরিবহনের চেয়ে অনেক বেশি স্বাস্থ্য সতর্কতা মেনে যাত্রী পরিবহন করে থাকে এয়ারলাইন্সগুলো। সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে এভিয়েশন এবং পর্যটন শিল্পের লাখ লাখ কর্মী আর হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের কথা ভেবে, সাথে বিশ্বের কাছে দেশের যোগাযোগের কথা বিবেচনায় রেখে এই ইন্ডাস্ট্রিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার কাছে সুবিবেচনার প্রত্যাশা রাখছে কর্মীরা।

স্বাধীন দেশে যে কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল, এর মধ্যে এভিয়েশন ও পর্যটন ছিল অন্যতম। একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশে স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতেই আমাদের সবার প্রাণান্ত প্রচেষ্টা। এভিয়েশন খাতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে এভিয়েশন ও পর্যটন শিল্পকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সম্মিলিতভাবে কাজ করার বিকল্প নেই।

লেখক: সিনিয়র রিপোর্টার
(মতামত লেখকের সম্পূর্ণ নিজস্ব)

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

প্রতিষ্ঠানের স্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে রাখার আহ্বান ফায়ার সার্ভিস ডিজির

পর্যটনকে এগিয়ে নিতে এভিয়েশনের ভূমিকা কি অনস্বীকার্য?

আপডেট সময় : ০৫:৫৫:০১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫

শরীফা বুলবুল

বিশ্বের অনেক দেশ আছে যাদের জিডিপির মূল আয়ের খাতই হচ্ছে পর্যটন। আবার অনেক দেশ আছে আয়ের অন্যতম খাত পর্যটন। আর পর্যটন প্রায় শতভাগ নির্ভর করে এভিয়েশন খাতের ওপর। এভিয়েশন এবং পর্যটনের ওপর নির্ভর করে হাজার হাজার ট্রাভেল এজেন্সি আর ট্যুর অপারেটর। পর্যটনের সাথে সম্পৃক্ত হাজার হাজার আবাসিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট এবং রেস্টুরেন্ট। সবকিছু মিলিয়ে এই শিল্পের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে কয়েক লাখ কর্মী। যাদের শুধু মাসিক আয়ের ওপর নির্ভর করতে হয়।

ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ থাকলেই তাদের কাজের নিশ্চয়তা থাকে। আয়ের নিশ্চয়তা থাকে। ব্যবসা বন্ধ তো আয়ের পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। তাদের প্রতি মুহূর্তে সামাজিকভাবে নিগৃহীত হতে হয়। আয়ের পথ বন্ধ হলেও বেঁচে থাকার জন্য প্রতিটি খরচ বহমান থাকে। শুধু হতাশায় নিমজ্জিত থেকে কীভাবে একজন কর্মী তার আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাবে?

শুধু কর্মীর কথা উল্লেখ করলে যথার্থতা পাবে না। এভিয়েশন এবং পর্যটন শিল্প যদি স্তব্ধ হয়ে যায়, এর সাথে সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীরা নানাভাবে বিপর্যস্ত হতে থাকে। ব্যবসার ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ পরিশোধের দায়, কর্মীদের জীবন-জীবিকা নিয়ে ভাবনা ইত্যাদি বিষয়গুলো সামনে উঠে আসে। ভবিষ্যতে এই খাতে বিনিয়োগ করা থেকে বিরত থাকতে পারেন অনেক বিনিয়োগকারী। কিংবা বর্তমান ব্যবসায় থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিতে পারেন অনেকেই।

উপরের কথাগুলো উল্লেখ করা হয়েছে বিগত দুই যুগ ধরে এগিয়ে চলা এভিয়েশন এবং পর্যটন শিল্পের হালচাল দেখেই। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেই এগিয়ে চলা বাংলাদেশ এভিয়েশন শিল্প। অনেক পরিকল্পনা নিয়ে শুরু করা একটি এয়ারলাইন্স কোম্পানি শতকোটি টাকা বিনিয়োগের কিছুদিনের মধ্যেই ব্যবসা গুটিয়ে চলে যেতে হয়েছে। শুরু আর শেষের মধ্যে অনেক না পাওয়ার কাব্যকথা লুকিয়ে থাকে।

ব্যবসা শুরু হয় শূন্য থেকে। কিন্তু শেষের গল্প থাকে অনেক করুণা আর বঞ্চনার মিশ্রণে ভরপুর। বিনিয়োগকৃত অর্থ যেমন শূন্যেরও নিচে চলে যায়, এর সাথে জড়িত অনেক কর্মীর জীবন কাহিনি হয়ে ওঠে কর্মহীনতার গল্প নিয়ে। এভাবেই এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ এভিয়েশন শিল্প। একটি এয়ারলাইন্স কোম্পানি ১৪ বছর কিংবা ১০ বছর পরিচালনার পর বন্ধ হয়ে যাওয়া কিংবা শুরুর আগেই শেষ হয়ে যাওয়া। যা একটি শিল্পের জন্য কোনোভাবেই ভালো লক্ষণ নয়।

বাংলাদেশ এভিয়েশনের রেগুলেটরি অথরিটি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এভিয়েশন ব্যবসায় সম্পৃক্ত প্রতিটি এয়ারলাইন্স কোম্পানি। অনেক পাওয়ার সাথে অনেক না পাওয়ার গল্পও আছে এভিয়েশন ব্যবসায়। প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসা মানেই এভিয়েশন ব্যবসা। উন্মুক্ত আকাশের মতোই উন্মুক্ত ব্যবসা। কিন্তু বহির্বিশ্বের প্রতিষ্ঠিত এয়ারলাইন্সগুলোর সঙ্গে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হলে নিজ দেশের এয়ারলাইন্সদের কিছুটা ভর্তুকি দেওয়া যেতে পারে। প্রায় ১৮ কোটি জনসংখ্যার দেশের প্রায় এক কোটির বেশি মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শ্রম দিয়ে যাচ্ছে। আর এই বিশাল মার্কেটের বৃহদাংশই চলে যাচ্ছে বিদেশি এয়ারলাইন্সের কাছে।

বাংলাদেশ এভিয়েশন মার্কেট সব দেশের এয়ারলাইন্সের কাছে একটি লোভনীয় মার্কেট। অনেক বিদেশি নতুন নতুন এয়ারলাইন্স বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনা করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে। বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর সাথে দেশীয় এয়ারলাইন্সকে টিকিয়ে রাখার জন্য জেট ফুয়েল, অ্যারোনোটিক্যাল ও নন-অ্যারোনোটিক্যাল চার্জ, এয়ারলাইন্সের বিভিন্ন যন্ত্রাংশের আমদানি শুল্কসহ নানাবিধ চার্জগুলোর ক্ষেত্রে যৌক্তিক হারে সুবিধা প্রদান করা যেতে পারে।

অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে দেশীয় এয়ারলাইন্স তথা দেশের নাগরিকদের কথা বিবেচনা করে যৌক্তিকহারে বিভিন্ন চার্জ নির্ধারণ করলে আকাশপথে ভ্রমণ অনেক বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। যা দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রাখবে, যা বাস্তবতার নিরিখে বলা যায়।

এভিয়েশন মার্কেটের অগ্রযাত্রার সাথে সাথে গড়ে উঠেছে হাজার হাজার ট্রাভেল এজেন্সি। আজ যদি বাংলাদেশের এভিয়েশন মার্কেট ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাথে সাথেই ট্রাভেল এজেন্সিগুলো পর্যুদস্ত হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এভিয়েশন ও পর্যটন মার্কেটের ব্যাপ্তি বাড়ার সাথে সাথেই বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন পাঁচ তারকসহ অনেক নামীদামি হোটেল।

দেশের এভিয়েশন কেন্দ্র করে সারাদেশে গড়ে উঠেছে অনেক পর্যটনকেন্দ্র। দেশীয় পর্যটকদের পর্যটনকেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখার প্রবণতা দিনদিন বাড়তে শুরু করেছে। পর্যটনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে অনেক অনেক ট্যুর অপারেটর- যারা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যটন নিয়ে কাজ করে পর্যটকদের আগ্রহ তৈরিতে সহায়তা করে। সবকিছুর মূলেই আছে এভিয়েশন। একটি দেশের এভিয়েশন যতবেশি শক্তিশালী অবকাঠামোতে গড়ে উঠবে সেই দেশের পর্যটন ততবেশি শক্তিশালী হবে।

দুঃখজনক হলেও সত্যি, দুই যুগে প্রায় ৮ থেকে ৯টি বেসরকারি এয়ারলাইন্স বন্ধ হয়ে গেছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য জিএমজি এয়ারলাইন্স, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, বেস্ট এয়ার, রিজেন্ট এয়ারওয়েজ। বর্তমানে বেসরকারিভাবে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স, এয়ার অ্যাস্ট্রা ও নভোএয়ার এবং সরকারিভাবে বাংলাদেশ বিমান ব্যবসা পরিচালনায় টিকে আছে। অনেকেই এভিয়েশন ব্যবসায় বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করার পরও পূর্ববর্তী কোম্পানিগুলোর অবস্থান বিবেচনায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।

অনেক স্বপ্নের ফসল হতে যাচ্ছে আধুনিকায়নের অন্যতম টার্মিনাল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের থার্ড টার্মিনাল। এর থেকে পরিপূর্ণ সুবিধা পেতে দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলোর পূর্ণ প্রতিযোগিতায় আনতে সার্বিক সহায়তা প্রদান করা খুবই জরুরি। নতুবা বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মার্কেটকে নিজেদের দখলে নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করবে। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে আপনার আমার সোনার বাংলাদেশ।

করোনাকালীন বিশ্বময় দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এভিয়েশন খাত। সেই সাথে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিশ্বের হোটেল ইন্ডাস্ট্রি, ট্যুরিজম ইন্ডাস্ট্রির সাথে সংশ্লিষ্ট লাখ লাখ ট্রাভেল এজেন্সি ও ট্যুর অপারেটর। এভিয়েশন এবং পর্যটন শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে এর সাথে সংশ্লিষ্ট নীতি নির্ধারকরা যেন সুবিবেচনা প্রসূত সিদ্ধান্ত নেন এই প্রত্যাশা করে এই শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাই। না হয় চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ এভিয়েশন এবং পর্যটন শিল্প।

যে কোনো পরিবহনের চেয়ে অনেক বেশি স্বাস্থ্য সতর্কতা মেনে যাত্রী পরিবহন করে থাকে এয়ারলাইন্সগুলো। সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে এভিয়েশন এবং পর্যটন শিল্পের লাখ লাখ কর্মী আর হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের কথা ভেবে, সাথে বিশ্বের কাছে দেশের যোগাযোগের কথা বিবেচনায় রেখে এই ইন্ডাস্ট্রিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার কাছে সুবিবেচনার প্রত্যাশা রাখছে কর্মীরা।

স্বাধীন দেশে যে কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল, এর মধ্যে এভিয়েশন ও পর্যটন ছিল অন্যতম। একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশে স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতেই আমাদের সবার প্রাণান্ত প্রচেষ্টা। এভিয়েশন খাতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে এভিয়েশন ও পর্যটন শিল্পকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সম্মিলিতভাবে কাজ করার বিকল্প নেই।

লেখক: সিনিয়র রিপোর্টার
(মতামত লেখকের সম্পূর্ণ নিজস্ব)

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ