প্রত্যাশা ডেস্ক: ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে গত বুধবার (২৩ এপ্রিল) সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় কাশ্মীরের শুধু একজন নিহত হয়েছিলেন। তাঁর নাম সৈয়দ আদিল হুসেন শাহ। ভয়াবহ ওই হামলার সময় এক বন্দুকধারীর কাছ থেকে রাইফেল কেড়ে নিতে গিয়ে নিহত হয়েছিলেন আদিল। ৩০ বছর বয়সী এই তরুণ এক ‘পনিওয়ালা’ বা ঘোড়াচালক।
আদিলের বাবা হায়দার শাহ বলেছেন, তাঁর ছেলে পর্যটকদের প্রাণ বাঁচাতে নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। ছেলেকে নিয়ে তিনি গর্বিত।
আদিল হুসেন পেশায় ঘোড়াচালক। হামলার দিন তিনি যেসব পর্যটককে ঘোড়ায় বৈসারানের তৃণভূমিতে নিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁদের বাঁচাতে গিয়ে তিনি নিহত হন। জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ গত বুধবার তাঁর জানাজায় অংশ নেন এবং শত শত শোকাহত মানুষের সঙ্গে প্রার্থনায় যোগ দেন।
এরপরই নিহত আদিল হুসেনের বীরত্বপূর্ণ কাজটি জাতীয় মনোযোগ আকর্ষণ করে। তাঁকে পেহেলগামের হাপাতনার্ড গ্রামে পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করা হয়েছে।
জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী নিহত আদিল হুসেনের বাবা হায়দার শাহকে জড়িয়ে ধরে সমবেদনা জানান। এ সময় তিনি শোকাহত ও নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
গত বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআইকে হায়দার শাহ বলেন, ‘আমি তাঁর জন্য ও তাঁর আত্মত্যাগের জন্য অত্যন্ত গর্বিত। আমি এখনো বেঁচে আছি, কারণ, আমি গর্ববোধ করছি। তা না হলে, ওর মরদেহ দেখার সঙ্গে সঙ্গে আমি মরে যেতাম। ওর সাহসিকতার জন্য আমি খুশি। কিছু মানুষ ওর জন্য বেঁচে গেছে, এটা ভেবে আমি গর্বিত।’
নিহত আদিলের ভাই সৈয়দ নওশাদ বলেন, ‘আদিল হুসেন কাজ করতে পেহেলগামে গিয়েছিলেন। সেখানে এক বন্দুকধারী তাঁর বুকে তিনবার গুলি করে। তিনি পর্যটকদের ঘোড়ায় চড়িয়ে বৈসারানে নিয়ে যেতেন। মঙ্গলবার বন্দুকধারীরা যখন পর্যটকদের ওপর হামলা চালায়, তখন আমার ভাই ওদের থামানোর চেষ্টা করে। এক পর্যটক, যাঁর বাবা ওই হামলায় নিহত হন, তিনি এসএমএইচএস হাসপাতালে আমাকে আদিলের বীরত্বের কথা জানান।’
মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ আদিলের সাহসিকতার প্রশংসা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘তিনি যে পর্যটকদের ঘোড়ায় করে পার্কিং এলাকা থেকে বৈসারান ময়দানে নিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁদের রক্ষা করতে তিনি নিজের প্রাণ দিয়েছেন। তাঁর শোকাহত পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছি এবং তাঁদের পূর্ণ সহায়তার আশ্বাস দিয়েছি।’
ওমর আবদুল্লাহ আরো লিখেছেন, ‘আদিল ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। তাঁর অসাধারণ সাহসিকতা ও আত্মত্যাগ চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমরা তাঁদের পাশে আছি এবং যতটা সম্ভব সহায়তা করব।’