ঢাকা ০৩:২৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৭ অগাস্ট ২০২৫

পর্যটকদের গন্তব্য হয়ে ওঠার অপেক্ষায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

  • আপডেট সময় : ১০:৩৫:৪৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২১
  • ১১৮ বার পড়া হয়েছে

ক্যাম্পাস ক্যারিয়ার ডেস্ক : কোথাও উঁচু টিলা, কোথাও সমতল। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ ঘেঁষেই দাঁড়িয়ে আছে ইট-কংক্রিটের একেকটি ভবন। শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের পদচারণে মুখর, ছবির মতো সাজানো পরিপাটি প্রাঙ্গণ। ক্যাম্পাসের চারপাশ ঘিরে পর্যটন এলাকা। তাই শুধু শিক্ষার্থীরা নন, দর্শনার্থীরাও এখানে ভিড় করেন। লালমাই পাহাড়ের কোলে, প্রকৃতির মায়ায় ঘেরা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস।
কুমিল্লা শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে সালমানপুর গ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান। ৫০ একর আয়তনের এ ক্যাম্পাসের বেশির ভাগজুড়েই টিলা। মূল ক্যাম্পাসের অদূরে নতুন করে একই মৌজায় আরও ২০০ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। সেখানেও সবুজে ঘেরা উঁচু উঁচু টিলা। আগামী পাঁচ বছরে এসব জায়গায় নানা ধরনের স্থাপনা গড়ার পরিকল্পনা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ জন্য সরকার ১ হাজার ৬৫৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদনও দিয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড এই কাজ করবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চোখজুড়ানো এক জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র হবে এই ক্যাম্পাস। তখন নিশ্চয়ই পর্যটকদের ভিড় বাড়বে আরও।
শিক্ষা ও সহশিক্ষা ঃ ২০০৭ সালের ২৮ মে প্রথম ব্যাচের ৭ বিভাগে মোট ৩০০ শিক্ষার্থী ও ১৫ শিক্ষক নিয়ে যাত্রা শুরু করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। এখন এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৬টি অনুষদের ১৯টি বিভাগে আছেন ৫ হাজার ৯৬৫ শিক্ষার্থী ও ২৬৪ শিক্ষক। এ ছাড়া অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস, ব্যবস্থাপনা, মার্কেটিং, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং, কম্পিউটারবিজ্ঞান ও কৌশল (সিএসই) ও ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) প্রোগ্রাম চালু আছে।
ক্যাম্পাসে মিলনায়তন নেই। ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র নেই। ভালো মানের কোনো মাঠও তৈরি হয়নি। এত সব সীমাবদ্ধতা ছাপিয়ে শিক্ষার্থীরা কোলাহলে মাতিয়ে রাখেন পুরো প্রাঙ্গণ। মুক্তমঞ্চ, কাঁঠালতলা ঘিরে সৃজনশীল নানা কাজে অংশ নেন সংস্কৃতিপ্রেমী শিক্ষার্থীরা। প্রকৃতি থেকেই প্রেরণা নিয়ে কবিতার ছন্দ, গানের সুর আর আড্ডায় মশগুল থাকেন তাঁরা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর এখানে গড়ে ওঠে নাট্য সংগঠন থিয়েটার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিবর্তন, আবৃত্তি সংগঠন অনুপ্রাস কণ্ঠচর্চা কেন্দ্র, ব্যান্ড প্ল্যাটফর্ম, কুমিল্লা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি, সায়েন্স ক্লাব, প্রকৃতিবিষয়ক সংগঠন অভয়ারণ্য, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ফটোগ্রাফি সোসাইটি, স্বেচ্ছাসেবী রক্তদাতা সংগঠন বন্ধু, উদীচী, প্রথম আলো বন্ধুসভা ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছায়া জাতি সংস্থা। এর বাইরে একেকটি বিভাগ নিয়মিত সংস্কৃতিচর্চার পাশাপাশি ঋতুভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে। বিতর্কে ও রোবট তৈরিতেও এখানকার শিক্ষার্থীদের সুনাম আছে।
ক্যাম্পাসে এক দুপুর ঃ এক ভরদুপুরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ ঘুরে প্রায় ৩০ শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হলো। প্রাপ্তির সঙ্গে অপ্রাপ্তিগুলোর কথাও বললেন তাঁরা। শিক্ষকদের কারও কারও অভিমত—কখনো কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন, নীতিমালা ও বিধিবিধান না মেনে চাপে পড়ে কাজ করা হচ্ছে। অনৈতিক সুবিধা দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চর্চাও ক্রমাগত বাড়ছে। এসব ক্ষেত্রে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নিলে দেড় দশকে এই ক্যাম্পাস আরও এগিয়ে যেত। শিক্ষকদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নাসির হুসেইন বলেন, পছন্দের লোক দিয়ে এ ক্যাম্পাসে বেছে বেছে কাজ হচ্ছে। দক্ষ লোকদের দিয়ে কাজ হচ্ছে না। এতে করে উন্নয়নে পিছিয়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয়।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্ররাজনীতি ও ধূমপানমুক্ত ক্যাম্পাস হিসেবে পরিচিত। প্রতিবছর ভর্তি হওয়ার সময় শিক্ষার্থীরা এগুলো করবে না জানিয়ে অঙ্গীকারনামায় সই করেন। কিন্তু বাস্তবে সেটি নেই। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি দুলাল চন্দ্র নন্দী অবশ্য আশার কথাই বললেন। তাঁর বক্তব্য, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় দেড় দশকে অনেক এগিয়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে, হচ্ছে। এখানকার শিক্ষার্থীরা পাস করার পর সরকারি, বেসরকারি ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানে ভালো করছেন। করোনার কারণে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম কিছুটা স্থবির ছিল। এখন ধীরে ধীরে বাড়বে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

পর্যটকদের গন্তব্য হয়ে ওঠার অপেক্ষায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

আপডেট সময় : ১০:৩৫:৪৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২১

ক্যাম্পাস ক্যারিয়ার ডেস্ক : কোথাও উঁচু টিলা, কোথাও সমতল। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ ঘেঁষেই দাঁড়িয়ে আছে ইট-কংক্রিটের একেকটি ভবন। শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের পদচারণে মুখর, ছবির মতো সাজানো পরিপাটি প্রাঙ্গণ। ক্যাম্পাসের চারপাশ ঘিরে পর্যটন এলাকা। তাই শুধু শিক্ষার্থীরা নন, দর্শনার্থীরাও এখানে ভিড় করেন। লালমাই পাহাড়ের কোলে, প্রকৃতির মায়ায় ঘেরা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস।
কুমিল্লা শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে সালমানপুর গ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান। ৫০ একর আয়তনের এ ক্যাম্পাসের বেশির ভাগজুড়েই টিলা। মূল ক্যাম্পাসের অদূরে নতুন করে একই মৌজায় আরও ২০০ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। সেখানেও সবুজে ঘেরা উঁচু উঁচু টিলা। আগামী পাঁচ বছরে এসব জায়গায় নানা ধরনের স্থাপনা গড়ার পরিকল্পনা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ জন্য সরকার ১ হাজার ৬৫৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদনও দিয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড এই কাজ করবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চোখজুড়ানো এক জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র হবে এই ক্যাম্পাস। তখন নিশ্চয়ই পর্যটকদের ভিড় বাড়বে আরও।
শিক্ষা ও সহশিক্ষা ঃ ২০০৭ সালের ২৮ মে প্রথম ব্যাচের ৭ বিভাগে মোট ৩০০ শিক্ষার্থী ও ১৫ শিক্ষক নিয়ে যাত্রা শুরু করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। এখন এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৬টি অনুষদের ১৯টি বিভাগে আছেন ৫ হাজার ৯৬৫ শিক্ষার্থী ও ২৬৪ শিক্ষক। এ ছাড়া অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস, ব্যবস্থাপনা, মার্কেটিং, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং, কম্পিউটারবিজ্ঞান ও কৌশল (সিএসই) ও ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) প্রোগ্রাম চালু আছে।
ক্যাম্পাসে মিলনায়তন নেই। ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র নেই। ভালো মানের কোনো মাঠও তৈরি হয়নি। এত সব সীমাবদ্ধতা ছাপিয়ে শিক্ষার্থীরা কোলাহলে মাতিয়ে রাখেন পুরো প্রাঙ্গণ। মুক্তমঞ্চ, কাঁঠালতলা ঘিরে সৃজনশীল নানা কাজে অংশ নেন সংস্কৃতিপ্রেমী শিক্ষার্থীরা। প্রকৃতি থেকেই প্রেরণা নিয়ে কবিতার ছন্দ, গানের সুর আর আড্ডায় মশগুল থাকেন তাঁরা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর এখানে গড়ে ওঠে নাট্য সংগঠন থিয়েটার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিবর্তন, আবৃত্তি সংগঠন অনুপ্রাস কণ্ঠচর্চা কেন্দ্র, ব্যান্ড প্ল্যাটফর্ম, কুমিল্লা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি, সায়েন্স ক্লাব, প্রকৃতিবিষয়ক সংগঠন অভয়ারণ্য, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ফটোগ্রাফি সোসাইটি, স্বেচ্ছাসেবী রক্তদাতা সংগঠন বন্ধু, উদীচী, প্রথম আলো বন্ধুসভা ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছায়া জাতি সংস্থা। এর বাইরে একেকটি বিভাগ নিয়মিত সংস্কৃতিচর্চার পাশাপাশি ঋতুভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে। বিতর্কে ও রোবট তৈরিতেও এখানকার শিক্ষার্থীদের সুনাম আছে।
ক্যাম্পাসে এক দুপুর ঃ এক ভরদুপুরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ ঘুরে প্রায় ৩০ শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হলো। প্রাপ্তির সঙ্গে অপ্রাপ্তিগুলোর কথাও বললেন তাঁরা। শিক্ষকদের কারও কারও অভিমত—কখনো কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন, নীতিমালা ও বিধিবিধান না মেনে চাপে পড়ে কাজ করা হচ্ছে। অনৈতিক সুবিধা দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চর্চাও ক্রমাগত বাড়ছে। এসব ক্ষেত্রে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নিলে দেড় দশকে এই ক্যাম্পাস আরও এগিয়ে যেত। শিক্ষকদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নাসির হুসেইন বলেন, পছন্দের লোক দিয়ে এ ক্যাম্পাসে বেছে বেছে কাজ হচ্ছে। দক্ষ লোকদের দিয়ে কাজ হচ্ছে না। এতে করে উন্নয়নে পিছিয়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয়।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্ররাজনীতি ও ধূমপানমুক্ত ক্যাম্পাস হিসেবে পরিচিত। প্রতিবছর ভর্তি হওয়ার সময় শিক্ষার্থীরা এগুলো করবে না জানিয়ে অঙ্গীকারনামায় সই করেন। কিন্তু বাস্তবে সেটি নেই। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি দুলাল চন্দ্র নন্দী অবশ্য আশার কথাই বললেন। তাঁর বক্তব্য, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় দেড় দশকে অনেক এগিয়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে, হচ্ছে। এখানকার শিক্ষার্থীরা পাস করার পর সরকারি, বেসরকারি ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানে ভালো করছেন। করোনার কারণে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম কিছুটা স্থবির ছিল। এখন ধীরে ধীরে বাড়বে।