বিনোদন ডেস্ক: মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলা বাতিল চেয়ে চিত্রনায়িকা পরীমনির করা আবেদন পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে দিয়েছে হাই কোর্ট। এর ফলে পরীমনির বিরুদ্ধে এ মামলার কার্যক্রম চলবে বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন। বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের বেঞ্চে বৃহস্পতিবার এই রায় দেয়। পরীমনির পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. শাহনেওয়াজ। আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক পরে বলেন, হাই কোর্টের এ রায়ের পর পরীমনির বিরুদ্ধে নতুন করে অভিযোগ গঠন করতে হবে। বিচারে মাদকের কিছু অংশ বাদ যাবে। “জব্দ করা মদে অ্যালকোহলের পরিমাণ খুব কম ছিল- ৬ বা ৭ পার্সেন্ট। তাই অভিযোগ থেকে মদের অংশ বাদ দেওয়া হবে। আইস ও এলএসডির অংশ থাকবে। এলএসডি ও আইস কোন দেশে তৈরি তারও কোনো উল্লেখ নেই জব্দ তালিকায়।” ২০২১ সালের ৪ অগাস্ট রাতে বনানীতে পরীমনির বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরদিন তার বিরুদ্ধে বনানী থানায় মাদক আইনে এ মামলা দায়ের করা হয়।
র্যাবের মুখপাত্র সে সময় বলেছিলেন, পরীমনির ফ্ল্যাটে ‘মিনি বার’ ছিল। তিনি নিয়মিত মদ পান করতেন এবং ‘ঘরোয়া পার্টি’ আয়োজন করতেন। তার কাছে মদ ব্যবহারের একটি লাইসেন্স পাওয়া গেলেও তার মেয়াদ শেষ হয়েছে ‘অনেক আগে’। র্যাবের জব্দ তালিকায় পরীমনির বাসা থেকে ‘মদ এবং আইস ও এলএসডির মত মাদকদ্রব্য’ উদ্ধারের কথা বলা হয়। এই অভিনেত্রীকে গ্রেপ্তারের পর তিন দফা রিমান্ডে নেওয়া নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যে হাই কোর্টও বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলে। পরে গতবছরের ৩১ অগাস্ট বিচারিক আদালত তার জামিনের আদেশ দেন। পরদিন তিনি গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে ছাড়া পান। তদন্ত শেষে ২০২১ সালের ৪ অক্টোবর পরীমনিসহ তিনজনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি। পরে ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি পরীমনিসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার ১০ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক নজরুল ইসলাম। মামলার অপর দুই আসামি হলেন, পরীমনির ম্যানেজার আশরাফুল ইসলাম দিপু এবং পরীমনির খালু কবীর হোসেন হাওলাদার। তারা সবাই জামিনে আছেন।
অভিযোগ গঠনের পর মামলা বাতিল চেয়ে পরীমনি হাই কোর্টে আবেদন করেন। ২০২২ সালের ১ মার্চ হাই কোর্ট রুল দিয়ে মামলার কার্যক্রম তিন মাসের জন্য স্থগিত করে। রুলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলার কার্যক্রম কেন বাতিল হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। এরপর হাই কোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে। শুনানি নিয়ে ২০২২ সালের ৮ মার্চ চেম্বার আদালত হাই কোর্টের আদেশ স্থগিত করে। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল করতে বলা হয়। রাষ্ট্রপক্ষ নিয়মিত লিভ টু আপিল করে। ওই আপিলের শুনানি নিয়ে গত বছরের ৯ জানুয়ারি আপিল বিভাগ আদেশ দেয়। আদেশে মামলা বাতিলের প্রশ্নে রুল ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলা হয়। এ সময় মামলার কার্যক্রম পরিচালনা না করতে বিচারিক আদালতকে নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময়ে রুল নিষ্পত্তি না হলে বিচারিক আদালতে মামলাটির কার্যক্রম চলবে বলে সিদ্ধান্ত দেয় আপিল বিভাগ। ওই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে মামলা বাতিলের প্রশ্নে হাই কোর্টে রুলের ওপর শুনানি হয়। শুনানি নিয়ে গত বছরের ২৪ অগাস্ট হাই কোর্ট একই বছরের ১৯ অক্টোবর রায়ের জন্য দিন রাখে। তবে বেঞ্চ পুনর্গঠিত হওয়ায় ধার্য তারিখে রায় হয়নি। এর ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা করল হাই কোর্ট।