বিনোদন ডেস্ক : চিত্রনায়িকা পরীমনি মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কাশিমপুর কারাগারে বন্দি। তার ন্যায়বিচার এবং মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন সাংস্কৃতিক অঙ্গনসহ সুশীল সমাজের অনেকে। এবার চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাবেক সভাপতি, শীর্ষ চিত্রনায়ক শাকিব খান এই ঘটনায় সমিতির বর্তমান অবস্থানের সমালোচনা করেছেন এবং কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবর পরীমনির মুক্তির দাবি জানালেন।
পরীমনির পাশে না দাঁড়ানোয় শিল্পী সমিতির সমালোচনায় শাকিব খান : মাদকের মামলায় গ্রেপ্তার চিত্রনায়িকা পরীমনির সদস্যপদ স্থগিতসহ তাকে নিয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ভূমিকার সমালোচনা করলেন সমিতির সাবেক সভাপতি, শীর্ষ চিত্রনায়ক শাকিব খান। ঢাকার বনানীর বাসায় র্যাব অভিযান চালিয়ে ৪ আগস্ট পরীমনিকে গ্রেপ্তারের পর ৭ আগস্ট বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে (বিএফডিসি) সংবাদ সম্মেলন করে তার সদস্যপদ স্থগিতের ঘোষণা দেন সংগঠনের সভাপতি মিশা সওদাগর।
চলচ্চিত্র শিল্পীদের স্বার্থ সংরক্ষণে গঠিত শিল্পী সমিতির এই ভূমিকাকে ‘বিতর্কিত’ আখ্যায়িত করে গতকাল শনিবার সোশাল মিডিয়ায় লিখেছেন সাবেক সভাপতি শাকিব খান।
এক ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, “ৃশুধুমাত্র অভিযোগের ভিত্তিতে পরীমনি গ্রেপ্তারের পর তার প্রতি কোনো ধরনের সহযোগিতার হাত না বাড়িয়ে, দুঃসময়ে শিল্পীর পাশে না থেকে উল্টো তড়িঘড়ি করে সংবাদ সম্মেলন করেছে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। মুহূর্তে পরীমনির সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে! এ যেন কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা!
‘সমিতির এই আচরণ সত্যিই খুব রহস্যজনক। বিষয়টি নিয়ে বিবেকবান অনেক সিনিয়র-জুনিয়র শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীদের আক্ষেপ রয়েছে। শিল্পীর সাথে সংগঠনের এটি একটি অমানবিক আচরণ। প্রশ্ন থেকে যায়, এখনকার চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি তাহলে কাদের স্বার্থে?’
শাকিব খান বলেন, ‘বিগত দিনেও একাধিক সিনিয়র শিল্পী এর চেয়েও ভয়ঙ্কর অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। কিন্তু তখনকার শিল্পী সমিতি অভিযুক্ত সদস্যের সদস্যপদ স্থগিত করেনি। বরং পাশে ছিল, রাস্তায় নেমেছিল। কিন্তু এখনকার শিল্পী সমিতির এসব আচরণ বিতর্কিত। আবারও বোঝা গেল, এই শিল্পী সমিতি সবাইকে এক করতে পারেনি, বরং বিচ্ছিন্ন করেছে। বিভেদ তৈরি করে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের পরিবেশ নষ্ট করেছে। হয়ত এজন্য চলচ্চিত্রের আজ এই দুর্দশা।’
‘এমনিতেই নানা কারণে সিনেমা আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। তার মধ্যে এমন পরিস্থিতি তৈরী হলে সামনে আরও ঘোর বিপদ।’ পরীমনিকে গ্রেপ্তারের পর দুই দফা রিমান্ড শেষে গত শুক্রবার কাশিমপুর কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে আদালত।
শাকিব খান বলেন, ‘পরীমনির মামলা এখন বিচারাধীন। ওই বিষয়ে কিছু বলছি না। সে যে মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে, তার কী অপরাধ সেটা বিশ্লেষণে যাচ্ছি না। দেশের প্রচলিত আইন আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা রয়েছে। নিশ্চয়ই নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে সঠিক বিচার হবে। কিন্তু তার আগে পরীমনির জীবন ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে যেভাবে তাকে কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে, এটা সত্যি দুঃখজনক।’
সেই সঙ্গে পরীমনিকে যারা ‘বিপথে নিয়ে গেছেন’ তাদেরও খুঁজে বের করা উচিত বলে মনে করেন এ চিত্রনায়ক। ‘সহশিল্পী হিসেবে আশা রাখি, পরীমনির ক্ষেত্রে আইন তার স্বকীয়তা বজায় রাখবে। পরীমনি যখন ফিরবে তার ভুল থেকে শিক্ষাও নেবে। যে শিক্ষা তার আগামী জীবনে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে।’
পরীমনি অভিভাবকহীনতার শিকার লক্ষ্যহীন নৌকা: আসিফ : জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী আসিফ পরীমনির মুক্তি চেয়ে গতকাল শনিবার সকালে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। স্ট্যাটাসে পরীমনিকে ‘শোবিজে একজন প্রভাবশালী নারী’ উল্লেখ করে লিখেছেন: ‘ তার ছিল সর্বোচ্চ কোটি ফলোয়ার। এই নিয়ে মিডিয়াসহ দেশের মানুষের গর্বের শেষ ছিল না। মা আগুনে পুড়ে মরেছেন দু’মাস কষ্ট পেয়ে। ব্যবসায়িক কারণে মেয়েটার বাবাও খুন হয়েছেন। সাপলুডুর সাপগুলো পুষে মইগুলো বেয়ে বেয়ে মেয়েটা হয়তো একটা জায়গায় পৌঁছেছে। মফস্বলের একটা মেয়ে এত উঁচুতে পৌঁছানোর পেছনে অবশ্যই যোগ্যতা ছিল, রহস্যের তো শেষ নেই।’
আসিফ শোবিজ অঙ্গনের কথা টেনে লিখেন: ‘রঙ্গীন দুনিয়ায় সব মেয়েরা খারাপ, আর পুরুষরা মহান। তারকাদের প্রতি সাধারণ মানুষের দেয়া সম্মানকে ব্যাকফুটে নিয়ে যাওয়ার জন্য ঘোর একটা গায়েবী অভিশাপ। মেয়েটা দেশের সবচেয়ে বড় আলোচিত ক্রিমিন্যাল হয়ে গেলো হঠাৎ করেই??? সারা দেশের গলিতে গলিতে এরকম মজায় মত্ত থাকি আমরা ভোগী পুরুষরা। দোষ হয় শুধু মেয়েদের, সমস্ত অপরাধের কেন্দ্রবিন্দু তারাই। এই মেয়েটা এতোটা পথ কাদের শেল্টারে এসেছে এই রহস্য উন্মোচিত হবে না কখনো। মেয়েটা অবশ্যই ভালো অভিনেত্রী, মেয়েটা দেশকে আরো সার্ভিস দিতে পারতো। দেশ নেয়নি, হয়তো সে মুক্তি পেয়ে আন্তর্জাতিক তারকা হয়ে যাবে। নাচতে নেমে ঘোমটা দেয়ার পুরনো কথাটা মনে পড়ে গেল। আবার লোকাল ভাষায়- ঘোমটার নীচে পোংটা নাচে, এই বাক্যটাও সামনে চলে এলো।’
‘বেশি লেখার সাহস আমার নাই। আমি নিজেও প্রতিদিন যে কোনো সরকারি বাহিনীর রেইডের অপেক্ষায় থাকি। আকাশের যত তারা, … ততো ধারা ফর্মুলাটা খুব মানি। সাত সাগর তেরো নদী পার হয়ে এতো মদ আর মাদক দেশে আসে কিভাবে? এর কোনো যুক্তিযুক্ত উত্তর কি রাষ্ট্রের কাছে পাবো?’ প্রশ্ন রেখে আসিফ ফেসবুক স্ট্যাটাসে আরো লিখেছেন: ‘হরহামেশাই মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়ার ট্রায়ালের শিকার হতে হয় শো’বিজের মানুষদের। একটা রমরমা রসাত্মক গল্প কয়দিন চলে। দেশে আসলে এসব ছাড়াও কোটি সমস্যা আছে। চারঘণ্টা রুদ্ধশ্বাস অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া মেয়েটার কপাল ভালো হাতকড়া পরতে হয়নি, আমি এই দেশে জাতীয় পুরস্কারের সাথে হাতকড়াও উপহার পেয়েছি।’
‘আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই দাবি জানাই পরীমনির মুক্তি চাই। প্রয়োজনে তাকে রিহ্যাব করানো হোক। সে ভয়ঙ্কর অপরাধী নয়, অভিভাবকহীনতার শিকার একটা লক্ষ্যহীন নৌকা মাত্র।’
পরীমনির পক্ষে সাকিব খান ও আসিফের প্রতিবাদী পোস্ট
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ