নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রাক-নির্বাচনী পরিস্থিতি মূল্যায়নের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল সিদ্ধান্ত নেবে যে, তারা বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবেন কি না।
গতকাল মঙ্গলবার (১১ জুলাই) নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকের পর ঢাকা সফররত ইইউ প্রতিনিধিদলের প্রধান চেলেরি রিকার্ডো সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছেন। বৈঠকে ইইউ’র প্রতিনিধিদলের পাঁচ সদস্য, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনারগণ এবং ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। চেলেরি রিকার্ডো বলেছেন, আমরা বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে দুই সপ্তাহের সফরে এসেছি। আমরা প্রাক-নির্বাচনী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠাব। তার ভিত্তিতে আগামী নির্বাচনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্যবেক্ষক পাঠাবে কি না, সে সিদ্ধান্ত হবে। ইইউ’র প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের এই সফর গণমাধ্যমে গুরুত্ব পাওয়ার মতো না হলেও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান চেলেরি রিকার্ডো। তিনি বাংলাদেশ সরকারকেও ধন্যবাদ জানান। এ সফরে বাংলাদেশ সরকার তাদের আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেছে বলেও জানান চেলেরি রিকার্ডো। চেলেরি রিকার্ডো এ সময় সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্ন না নেওয়ার কথা বলেন। বৈঠকের বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, মিস্টার রিকার্ডো যেটা বলেছেন, ওটাই আমার বক্তব্য। বৈঠকের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন পরিচালনার সক্ষমতা আছে কি না, সেটা তারা জানতে চেয়েছেন। ভোটার সংখ্যা, ভোটার তথ্য, আইনগত বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। সেই সাথে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারব কি না, সে বিষয়ে কথা হয়েছে। এসব বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদল সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষক নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কোনো আপত্তি নেই বলে জানানো হয়েছে। বৈঠকে প্রতিনিধিদল সন্তোষ প্রকাশ করেছে।
যতসংখ্যক ‘নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক’ পাঠাক, আপত্তি নেই: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) যতসংখ্যক ইচ্ছে নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক পাঠাতে পারবে। এতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কোনো আপত্তি নেই। সফররত ইইউর প্রাক্-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলকে এসব কথা জানিয়েছে ইসি। আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইসির সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক করে ইইউর প্রতিনিধিদল। বৈঠক শেষে ইসি সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, বৈঠকে ইইউর প্রতিনিধিদলটি আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে ইসির কাছে জানতে চেয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে কমিশনার রাশেদা সুলতানা ও আনিছুর রহমান এবং ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে রিকার্ডো শেলেরির নেতৃত্বে ইইউ প্রতিনিধিদলে ছিলেন পাঁচজন।
বৈঠকের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ইইউর প্রতিনিধিদল প্রধানত নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পর্কে ইসির কাছে জানতে চেয়েছে। বিশেষ করে ভোটার, ভোটকেন্দ্র, পর্যবেক্ষক, সিসি ক্যামেরা নিয়ে তারা জানতে চেয়েছে। নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সক্ষম কি না, সে বিষয়ে জানতে চেয়েছে। ইসি বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করেছে। ইইউর প্রতিনিধিদল সন্তুষ্ট। অতিরিক্ত সচিব বলেন, পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়ে কী কী প্রস্তুতি নিতে হয়, ইসি কী করবে, তা জানতে চেয়েছে ইইউর প্রতিনিধিদল। কমিশন বলেছে, তারা যতসংখ্যক ইচ্ছে পর্যবেক্ষক পাঠাতে পারে, এর কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। আবেদনের জন্য সময়সীমা আছে কি না, তা জানতে চেয়েছে তারা। ইসি বলেছে, সেপ্টেম্বরের মধ্যে আবেদন এলে সুবিধা হয়। কারণ, আরও কিছু আনুষ্ঠানিকতা আছে। স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্রের বিষয়ও রয়েছে। তারা (ইইউ) যদি নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক পাঠায়, যতসংখ্যক চায় পাঠাক, কোনো আপত্তি নেই নির্বাচন কমিশনের।
ইইউর প্রতিনিধিদলের কারিগরি সদস্যরা ইসির আইনি বিষয়গুলো নিয়ে কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আবার বৈঠক করবেন বলে জানান অশোক কুমার দেবনাথ। এক প্রশ্নের জবাবে ইসির অতিরিক্ত সচিব বলেন, বর্তমান কমিশনের অধীন এখন পর্যন্ত ৯১১টি নির্বাচন হয়েছে। এতে সন্তোষ রয়েছে ইইউর প্রতিনিধিদলের। পরিবেশ নিয়ে এখন পর্যন্ত ইইউর প্রতিনিধিদল সন্তুষ্ট। তবে তারা আরও আলোচনা করবে। ১৮ থেকে ২২ জুলাইয়ের মধ্যে তারা আবার ইসির কারিগরি দলের সঙ্গে বসবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার ইসির বিষয় নয়। এ নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলোকে ভোটে আনার বিষয়ে ইইউর প্রতিনিধিদল কিছু জানতে চায়নি। নির্বাচনকালীন সরকার ও কোনো দলকে ভোটে আনার বিষয় বৈঠকের আলোচনায় আসেনি। ইসির অতিরিক্ত সচিব জানান, ইসির সক্ষমতা নিয়ে ইইউর প্রতিনিধিদল সন্তুষ্টি বা অসন্তুষ্টি কিছুই প্রকাশ করেনি। নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করবে কি না, তা নিয়েও তারা জানতে চায়নি। বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ ও নির্বাচনপূর্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনায় ইইউর নির্বাচনসংক্রান্ত তথ্যানুসন্ধানী দলটি গত শনিবার ১৬ দিনের সফরে ঢাকায় আসে।
অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে ইইউ প্রতিনিধি দলের বৈঠক: বাংলাদেশে প্রাক নির্বাচনী অনুসন্ধানে আসা ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল বৈঠক করেছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এ এম আমিন উদ্দিনের সঙ্গে। মঙ্গলবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্টে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন সফরকারী প্রতিনিধি দলের চার সদস্য। এই বৈঠক চলার সময় ওই কার্যালয়ের বাইরে বিক্ষোভ করছিলেন বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা। তারা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে স্লোগান দেন। বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের আগে দুই প্রধান রাজনৈতিক শিবিরে মতপার্থক্যের মধ্যে প্রাক নির্বাচনী অনুসন্ধানে এসেছে ইইউ প্রতিনিধি দল। মানবধিকার কমিশন, নির্বাচন কমিশন, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকের পর মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে যায় তারা। বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে- জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন বলেন, “দেশের বিভিন্ন আইন নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে।” বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের বিক্ষোভ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমি তো ভেতরে ছিলাম; এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। আপনারা তো দেখেছেন।”
বৈঠক শুরু হওয়ার পরপরই অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের সামনে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। ইইউ প্রতিনিধি দল বের হওয়ার সময়ও তাদের বিক্ষোভ চলছিল। বিক্ষোভকারীরা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবির পাশাপাশি সরকারবিরোধী স্লোগানও দেন। বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের নেতা এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, কায়সার কামাল, রুহুল কুদ্দুস কাজল, কামরুল ইসলাম সজল বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন।