ঢাকা ১২:৫৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫

পরিস্থিতি বদলালেও মানুষ কেন নিজের লক্ষ্যতেই আঁকড়ে থাকে

  • আপডেট সময় : ০৮:২০:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫
  • ১১ বার পড়া হয়েছে

প্রযুক্তি ডেস্ক: আপনি কি এমন কোনো লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন, যেখানে অন্যকিছু বেছে নেওয়া হয়ত আরো সহজ বা বুদ্ধিমানের কাজ হত? এমনটি হলে আপনি একা নন, অনেকেরই এমন মনোভাব রয়েছে।

বিজ্ঞানীরা বোঝার চেষ্টা করেছেন কেন মানুষরা এমন আচরণ করেন। গবেষকরা খতিয়ে দেখেছেন, কোন টার্গেট বা লক্ষ্য ধরে রাখতে হবে আর কোনটি ছেড়ে দিতে হবে সে বিষয়ে মানুষ কীভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, বিশেষ করে মানুষের আশপাশের পরিবেশ বারবার বদলে যাওয়ার বেলায়ও।

ক্যালটেকের অধ্যাপক জন ও’ডোহার্টির ও স্নাতক শিক্ষার্থী স্নেহা আয়নুগুনের নেতৃত্বে পরিচালিত এ গবেষণায় সৃজনশীল প্রকৃতির এক অনলাইন গেইমের মাধ্যমে এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন গবেষকরা।

গেইমটিতে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের গবেষকরা বলেছিলেন, তাদের পছন্দ মতো নির্দিষ্ট সেট পূর্ণ করতে বিড়াল, টুপি ও গাড়ির মতো বিভিন্ন কার্ড যেন তারা সংগ্রহ করেন। গেইমটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছিল যাতে প্রতিটি রাউন্ডে বা ‘ব্লকে’ অংশগ্রহণকারীদের খেলার পরিবেশ বা শর্ত বারবার বদলাতে থাকে, যেমন– কোন কার্ড বেশি পাওয়া যাচ্ছে তা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যেত।

তবে এসব পরিবর্তন অংশগ্রহণকারীদের স্পষ্টভাবে জানাননি গবেষকরা। এতে করে অংশগ্রহণকারীরা বুঝতে পারতেন না কখন কোন কার্ডের পেছনে দৌড়ানো বেশি লাভজনক হবে। ফলে অনেক অংশগ্রহণকারী আগের পছন্দের দিকেই লেগে থাকতেন, এমনকি তা ভালো বা লাভজনক না হলেও।

গবেষণায় উঠে এসেছে, বেশিরভাগ মানুষ যে কার্ড সেটটি একবার শুরু করেছিলেন তা শেষ করার চেষ্টা করে গিয়েছেন তারা, এমনকি অন্য আরেকটা সেট সংগ্রহ তাদের জন্য বেশি লাভজনক বা যুক্তিসঙ্গত হওয়ার পরও। এ ধরনের প্রবণতা ‘ওভার-পারসিস্টেন্স’ বা অতিরিক্ত একাগ্রতা নামে পরিচিত। যার মানে হচ্ছে, মানুষ বেশিরভাগ সময় নতুন কৌশল নেওয়ার বদলে তাদের শুরু করা কাজটিই শেষ করতে বেশি মনোযোগী হয়ে ওঠেন। এক্ষেত্রে নতুন কৌশল নিলে বেশি পয়েন্ট পাওয়া গেলেও তাদের আচরণে বদল ঘটে না।

কেন মানুষ এমন করেন? আয়নুগু এবং ও’ডোহার্টি বলছেন, বিষয়টি কিছুটা ‘মোমেন্টাম’-এর মতো। পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় মোমেন্টাম হচ্ছে, কোনো বস্তু কতটা ভারী ও কত দ্রুত চলছে তার গুণফল। অন্যদিকে, লক্ষ্য সাধনের ক্ষেত্রে এর মানে হচ্ছে কেউ যখন কোনো লক্ষ্য নিয়ে অনেক সময় ও শক্তি ব্যয় করে দ্রুত এগোতে থাকে তখন সে আর সেই লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হতে চান না, ঠিক যেমন বস্তু তার গতিকে ধরে রাখে বিষয়টি তেমনই।

কেউ যদি মনে করেন যে, তিনি কোনো কাজ বা লক্ষ্য শেষ করার অনেক কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছেন তবে সাধারণত কাজটি শেষ করতে চান ওই ব্যক্তি, এমনকি পরিবেশ বদলে গেলেও শেষ দিকে এসে মানুষ সহজে থামতে চান না বলে উল্লেখ করেছেন গবেষকরা।

মানুষের একাগ্রতা তাদের সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সঙ্গে কতটা মিলছে তা পরীক্ষা করতে এমন কম্পিউটার অ্যালগরিদমও তৈরি করেছেন গবেষকরা, যা মানুষের মতো খেলাটি খেলেছে। এ কম্পিউটার খেলোয়াড়দের আবেগ বা কাজ শেষ করার জন্য আবেগগত টান ছিল না। ফলে তারা সহজেই পরিস্থিতি বদলের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের কৌশল বদলেছে।

গবেষকরা বলছেন, এসব কম্পিউটার অ্যালগরিদম মানুষদের চেয়ে ভালো খেলেছে। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে মোমেন্টামের ওপর ভিত্তি করে একটি মডেল তৈরি করেছিলেন তারা, যেটি লক্ষ্য পূরণের ক্ষেত্রে অগ্রগতির গতি ও দূরত্ব বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ভালো ফল পেয়েছে। এতে মস্তিষ্কেও চাপ কম পড়েছে।

আয়নুগু বলেছেন, কোনো লক্ষ্য আঁকড়ে থাকা অনেক সময় বিপদ ডেকে আনতে পারে। তবে বিষয়টি সবসময় খারাপ নাও হতে পারে। বাস্তব জীবনে আমাদের কাছে সবসময় সঠিক তথ্য থাকে না। ফলে মাঝেমধ্যে ‘মোমেন্টাম’ বা সহজ নিয়মের ওপর ভরসা করাটাই যুক্তিসঙ্গত হয়। তিনি আরো বলেছেন, মানুষের আচরণ বদলানো সম্ভব, বিশেষ করে যদি তারা বুঝতে পারেন যে, পরিস্থিতি বদলাচ্ছে।

যেমন– যেসব অংশগ্রহণকারীকে জানানো হয়েছিল, কার্ড পাওয়ার সম্ভাবনা বদলে যাচ্ছে তারা নিজেদের কৌশল বদলেছিলেন। গবেষকরা বলছেন, ধৈর্য ধরে লেগে থাকাটা শক্তিশালী একটি গুণ। তবে কখন দিক পরিবর্তন করতে হবে তা জানাটাও ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। ক্যালটেকের গবেষকদের করা নতুন এ গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘প্লস কম্পিউটেশনাল বায়োলজি’তে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বার্ন ইউনিটে ৩৩ জন ভর্তি, ৩ জনের অবস্থা সংকটাপন্ন

পরিস্থিতি বদলালেও মানুষ কেন নিজের লক্ষ্যতেই আঁকড়ে থাকে

আপডেট সময় : ০৮:২০:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫

প্রযুক্তি ডেস্ক: আপনি কি এমন কোনো লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন, যেখানে অন্যকিছু বেছে নেওয়া হয়ত আরো সহজ বা বুদ্ধিমানের কাজ হত? এমনটি হলে আপনি একা নন, অনেকেরই এমন মনোভাব রয়েছে।

বিজ্ঞানীরা বোঝার চেষ্টা করেছেন কেন মানুষরা এমন আচরণ করেন। গবেষকরা খতিয়ে দেখেছেন, কোন টার্গেট বা লক্ষ্য ধরে রাখতে হবে আর কোনটি ছেড়ে দিতে হবে সে বিষয়ে মানুষ কীভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, বিশেষ করে মানুষের আশপাশের পরিবেশ বারবার বদলে যাওয়ার বেলায়ও।

ক্যালটেকের অধ্যাপক জন ও’ডোহার্টির ও স্নাতক শিক্ষার্থী স্নেহা আয়নুগুনের নেতৃত্বে পরিচালিত এ গবেষণায় সৃজনশীল প্রকৃতির এক অনলাইন গেইমের মাধ্যমে এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন গবেষকরা।

গেইমটিতে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের গবেষকরা বলেছিলেন, তাদের পছন্দ মতো নির্দিষ্ট সেট পূর্ণ করতে বিড়াল, টুপি ও গাড়ির মতো বিভিন্ন কার্ড যেন তারা সংগ্রহ করেন। গেইমটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছিল যাতে প্রতিটি রাউন্ডে বা ‘ব্লকে’ অংশগ্রহণকারীদের খেলার পরিবেশ বা শর্ত বারবার বদলাতে থাকে, যেমন– কোন কার্ড বেশি পাওয়া যাচ্ছে তা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যেত।

তবে এসব পরিবর্তন অংশগ্রহণকারীদের স্পষ্টভাবে জানাননি গবেষকরা। এতে করে অংশগ্রহণকারীরা বুঝতে পারতেন না কখন কোন কার্ডের পেছনে দৌড়ানো বেশি লাভজনক হবে। ফলে অনেক অংশগ্রহণকারী আগের পছন্দের দিকেই লেগে থাকতেন, এমনকি তা ভালো বা লাভজনক না হলেও।

গবেষণায় উঠে এসেছে, বেশিরভাগ মানুষ যে কার্ড সেটটি একবার শুরু করেছিলেন তা শেষ করার চেষ্টা করে গিয়েছেন তারা, এমনকি অন্য আরেকটা সেট সংগ্রহ তাদের জন্য বেশি লাভজনক বা যুক্তিসঙ্গত হওয়ার পরও। এ ধরনের প্রবণতা ‘ওভার-পারসিস্টেন্স’ বা অতিরিক্ত একাগ্রতা নামে পরিচিত। যার মানে হচ্ছে, মানুষ বেশিরভাগ সময় নতুন কৌশল নেওয়ার বদলে তাদের শুরু করা কাজটিই শেষ করতে বেশি মনোযোগী হয়ে ওঠেন। এক্ষেত্রে নতুন কৌশল নিলে বেশি পয়েন্ট পাওয়া গেলেও তাদের আচরণে বদল ঘটে না।

কেন মানুষ এমন করেন? আয়নুগু এবং ও’ডোহার্টি বলছেন, বিষয়টি কিছুটা ‘মোমেন্টাম’-এর মতো। পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় মোমেন্টাম হচ্ছে, কোনো বস্তু কতটা ভারী ও কত দ্রুত চলছে তার গুণফল। অন্যদিকে, লক্ষ্য সাধনের ক্ষেত্রে এর মানে হচ্ছে কেউ যখন কোনো লক্ষ্য নিয়ে অনেক সময় ও শক্তি ব্যয় করে দ্রুত এগোতে থাকে তখন সে আর সেই লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হতে চান না, ঠিক যেমন বস্তু তার গতিকে ধরে রাখে বিষয়টি তেমনই।

কেউ যদি মনে করেন যে, তিনি কোনো কাজ বা লক্ষ্য শেষ করার অনেক কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছেন তবে সাধারণত কাজটি শেষ করতে চান ওই ব্যক্তি, এমনকি পরিবেশ বদলে গেলেও শেষ দিকে এসে মানুষ সহজে থামতে চান না বলে উল্লেখ করেছেন গবেষকরা।

মানুষের একাগ্রতা তাদের সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সঙ্গে কতটা মিলছে তা পরীক্ষা করতে এমন কম্পিউটার অ্যালগরিদমও তৈরি করেছেন গবেষকরা, যা মানুষের মতো খেলাটি খেলেছে। এ কম্পিউটার খেলোয়াড়দের আবেগ বা কাজ শেষ করার জন্য আবেগগত টান ছিল না। ফলে তারা সহজেই পরিস্থিতি বদলের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের কৌশল বদলেছে।

গবেষকরা বলছেন, এসব কম্পিউটার অ্যালগরিদম মানুষদের চেয়ে ভালো খেলেছে। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে মোমেন্টামের ওপর ভিত্তি করে একটি মডেল তৈরি করেছিলেন তারা, যেটি লক্ষ্য পূরণের ক্ষেত্রে অগ্রগতির গতি ও দূরত্ব বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ভালো ফল পেয়েছে। এতে মস্তিষ্কেও চাপ কম পড়েছে।

আয়নুগু বলেছেন, কোনো লক্ষ্য আঁকড়ে থাকা অনেক সময় বিপদ ডেকে আনতে পারে। তবে বিষয়টি সবসময় খারাপ নাও হতে পারে। বাস্তব জীবনে আমাদের কাছে সবসময় সঠিক তথ্য থাকে না। ফলে মাঝেমধ্যে ‘মোমেন্টাম’ বা সহজ নিয়মের ওপর ভরসা করাটাই যুক্তিসঙ্গত হয়। তিনি আরো বলেছেন, মানুষের আচরণ বদলানো সম্ভব, বিশেষ করে যদি তারা বুঝতে পারেন যে, পরিস্থিতি বদলাচ্ছে।

যেমন– যেসব অংশগ্রহণকারীকে জানানো হয়েছিল, কার্ড পাওয়ার সম্ভাবনা বদলে যাচ্ছে তারা নিজেদের কৌশল বদলেছিলেন। গবেষকরা বলছেন, ধৈর্য ধরে লেগে থাকাটা শক্তিশালী একটি গুণ। তবে কখন দিক পরিবর্তন করতে হবে তা জানাটাও ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। ক্যালটেকের গবেষকদের করা নতুন এ গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘প্লস কম্পিউটেশনাল বায়োলজি’তে।