ঢাকা ১১:০৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ০২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

পরিবেশে অ্যান্টিবায়োটিক অবশিষ্টাংশ ও জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি

  • আপডেট সময় : ০৫:৪৩:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ৩ বার পড়া হয়েছে

ড. শফি মুহাম্মদ তারেক : পরিবেশে অ্যান্টিবায়োটিকের অবশিষ্টাংশ একটি গুরুতর বৈশ্বিক উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলোয়, যেখানে নিয়ন্ত্রণহীন অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার, দ্রুত শিল্পায়ন ও অপর্যাপ্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিস্থিতিকে আরো সংকটময় করে তুলছে।
পরিবেশে অ্যান্টিবায়োটিকের অবশিষ্টাংশ একটি গুরুতর বৈশ্বিক উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলোয়, যেখানে নিয়ন্ত্রণহীন অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার, দ্রুত শিল্পায়ন ও অপর্যাপ্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিস্থিতিকে আরো সংকটময় করে তুলছে।

একসময় জীবন রক্ষাকারী ‘মিরাকল ড্রাগ’ হিসেবে পরিচিত অ্যান্টিবায়োটিক এখন ব্যাপকভাবে মাটি, ভূ-উপরিস্থিত ও ভূগর্ভস্থ পানিতে, এমনকি খাদ্য ব্যবস্থায়ও উপস্থিত, যা জনস্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। এসব অ্যান্টিবায়োটিকের অবশেষ মূলত মানব ও পশুচিকিৎসা, কৃষি, জলজ চাষ এবং ওষুধ শিল্পের অতিরিক্ত এবং অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশে প্রবেশ করে।
অ্যান্টিবায়োটিক তিন ভাগে বিভক্ত- প্রাকৃতিক, আধা-সিন্থেটিক ও সিন্থেটিক। উদাহরণস্বরূপ, পেনিসিলিন একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক, পেনিসিলিন-জি থেকে উৎপন্ন বিটা-ল্যাকটামিক অ্যাসিড একটি আধা-সিন্থেটিক এবং সালফোনামাইড একটি সিন্থেটিক অ্যান্টিবায়োটিক। বৈশ্বিকভাবে বিক্রীত অ্যান্টিবায়োটিকের মধ্যে সাধারণভাবে ৭৩ শতাংশ কৃষি খাতে এবং ২৭ শতাংশ মানবস্বাস্থ্য খাতে ব্যবহৃত হয়। বিক্রীত অ্যান্টিবায়োটিকের মধ্যে ৬৭ শতাংশ টেট্রাসাইক্লিন, ১২ শতাংশ পেনিসিলিন এবং ৮ শতাংশ ম্যাক্রোলাইডস। ২০১৯ সালে টেট্রাসাইক্লিন ও ম্যাক্রোলাইডসের বিক্রি বেড়েছে, কিন্তু পেনিসিলিনের বিক্রি কমেছে।

এ পর্যন্ত বিভিন্ন গবেষণায় মাটি ও পলি মাটিতে অ্যান্টিবায়োটিক অবশেষের উপস্থিতি নিশ্চিত হয়েছে। এ অবশেষ বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে পরিবেশে প্রবেশ করে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সার হিসেবে প্রাণীর মলমূত্র ব্যবহার, চারণভূমির প্রাণীদের মল নির্গমন এবং অপরিশোধিত বর্জ্য পানির নিষ্কাশন।
মাটিতে প্রবেশের পর অ্যান্টিবায়োটিক অবশেষ সোর্পশন-ডিসোর্পশন এবং সিকোয়েস্ট্রেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মাটির সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করে। মাটির অম্লতা, ও ক্ষারত্ব (পিএইচ), রাসায়নিক বিশ্লেষণ, সার প্রয়োগ এবং চার্জের প্রভাব সোর্পশন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে।

সোর্পশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে অ্যান্টিবায়োটিক অবশেষ হাইড্রোলাইসিস, ফটোডিগ্রেডেশন এবং অক্সিডেটিভ ট্রান্সফরমেশনের মাধ্যমে মাটিতে তার চূড়ান্ত অবস্থান নির্ধারণ করে। অ্যান্টিবায়োটিকের অবক্ষয় প্রক্রিয়া ভিন্ন হতে পারে। বিটা-ল্যাকটাম জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিকগুলো সহজে হাইড্রোলাইসিসের মাধ্যমে ভেঙে যায়, কিন্তু ম্যাক্রোলাইড ও সালফোনামাইড দীর্ঘস্থায়ী থাকে। অ্যান্টিবায়োটিক অবশেষের জীব-উপলভ্যতা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমে যায়। সিকোয়েস্ট্রেশন ও সোর্পশন প্রক্রিয়া অবশেষগুলোকে মাটিতে স্থির করে রাখতে পারে।
মাটি থেকে পরিবাহিত হওয়ার পর অ্যান্টিবায়োটিক অবশেষের চূড়ান্ত গন্তব্য হতে পারে বায়ুমণ্ডল, জলাশয় এবং জীবজগৎ। তবে সাধারণত ভোলাটিলাইজেশন ঘটে না। পলিমাটি কৃষি ও জলজ চাষের কারণে অ্যান্টিবায়োটিক অবশেষের প্রধান উৎস, কারণ এটি পুষ্টি, জৈব পদার্থ এবং দূষকের ভাণ্ডার হিসেবে কাজ করে। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সমুদ্রের পলি মাটিতে ফ্লোরোকুইনোলোনের গড় ঘনত্ব ছিল ৪৩১ দশমিক শূন্য ৬ ন্যানোগ্রাম/গ্রাম, নদীতে ১ হাজার ২০ দশমিক ৫৮ ন্যানোগ্রাম/গ্রাম এবং হ্রদে ১৬৭ দশমিক ৭৪ ন্যানোগ্রাম/গ্রাম। এটি প্রমাণ করে যে অ্যান্টিবায়োটিক অবশেষের মাত্রা ক্রমেই বেড়েছে; যা ভবিষ্যতে মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

পৃষ্ঠ ও ভূগর্ভস্থ পানিতে অ্যান্টিবায়োটিক অবশেষের দূষণ একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা হয়ে উঠেছে। তবে এর প্রকৃতি ও ভাগ্য সম্পর্কে যথাযথ তথ্যের অভাব রয়েছে। অপর্যাপ্ত বর্জ্য শোধনাগার, নিম্নমানের স্যানিটেশন ব্যবস্থা ও কৃষিতে অ্যান্টিবায়োটিকের ভুল ব্যবহার এ সমস্যার মূল কারণ। সাম্প্রতিক গবেষণায় কুইনোলোনস, ক্লোরামফেনিকল, সালফোনামাইডস ও ম্যাক্রোলাইডস জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক অবশেষ পৃষ্ঠের পানিতে ৬৭৯ দশমিক ৭ ন্যানোগ্রাম/লিটার পর্যন্ত ঘনত্বে শনাক্ত হয়েছে; যা কয়েক মাস পর্যন্ত সক্রিয় থাকতে পারে এবং প্রচলিত পদ্ধতিতে সহজে নির্মূল হয় না।

হাসপাতাল, ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি, বর্জ্য শোধনাগার, জলজ চাষ এবং গবাদিপশুর খামার থেকে অ্যান্টিবায়োটিক রাসায়নিক উপাদান বা এর মেটাবোলাইট পরিবেশে প্রবাহিত হয় এবং পৃষ্ঠ ও ভূগর্ভস্থ পানিতে মিশে যায়। অ্যান্টিবায়োটিক জলজ জীবের মধ্যে বায়োঅ্যাকিউমুলেশন ঘটাতে পারে এবং মাইক্রোজীবী জৈবিকভাবে ভেঙে ফেলতে সক্ষম। সূর্যালোক পানিতে অ্যান্টিবায়োটিক ভেঙে ফেলার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে এবং পলি মাটি অ্যান্টিবায়োটিক আবদ্ধ করতে সাহায্য করে। গবেষণায় নদী ও ভূগর্ভস্থ পানিতে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিকের অবশেষ শনাক্ত হয়েছে; যা মানবস্বাস্থ্য এবং জলজ বাস্তুতন্ত্রের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। এ কারণে পৃষ্ঠ পানিতে অ্যান্টিবায়োটিকের অবশেষ দূষণ একটি জরুরি সমস্যা হিসেবে মোকাবেলা করতে হবে।

ডক্সিসাইক্লিন, ফ্লোরোকুইনোলোন, পেনিসিলিন, লিঙ্কোমাইসিন, ট্রাইমেথোপ্রিম, ব্যাসিট্রাসিন, কোলিস্টিন, ক্লোরামফেনিকল, ইরিথ্রোমাইসিন ও সেফালোস্পোরিনসহ অ্যান্টিবায়োটিকগুলো মানব ও পশুচিকিৎসায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়; যা ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ নিরাময় এবং মৃত্যুর হার কমাতে সহায়ক। এছাড়া মাছের চাষে ইরিথ্রোমাইসিন, সারাফ্লোক্সাসিন, অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ও থায়ামেথোপ্রিম ব্যবহৃত হয়। এ অ্যান্টিবায়োটিকগুলো জলাশয়ভিত্তিক ব্যবস্থায় ব্যবহারের ফলে জলজ বাস্তুতন্ত্র ভেতরে প্রবাহিত হতে পারে।

মানুষের বা প্রাণীর শরীরে অ্যান্টিবায়োটিকের কিছু অংশ হজম হলেও বেশির ভাগ (৭০-৯০ শতাংশ) অপরিবর্তিত অবস্থায় মল ও মূত্রের মাধ্যমে নির্গত হয়। অ্যান্টিবায়োটিক অবশেষ সাধারণত সঠিকভাবে নিষ্পত্তি হয় না এবং বর্জ্য শোধনাগার এ অবশেষের একটি প্রধান উৎস হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্টে হরমোন এবং অ্যান্টিবায়োটিকের মেটাবোলাইট যেমন ইরিথ্রোমাইসিন ও রোক্সিথ্রোমাইসিন উপস্থিত থাকে। স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্টে অ্যাডসোর্পশন ও বায়োডিগ্রেডেশন অ্যান্টিবায়োটিক অবশেষের অবস্থা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া মাছ (চিংড়ির) নমুনায় বিপুল পরিমাণ কুইনোলোন এবং সালফোনামাইড জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক অবশেষ পাওয়া গেছে।

মানব, পশুচিকিৎসা ও মাছের চাষ খাত থেকে নির্গত বর্জ্য পরিবেশে অ্যান্টিবায়োটিক দূষণের অন্যতম প্রধান উৎস। কারণ এ বর্জ্যে মাল্টি-রেজিস্ট্যান্ট জিন থাকে, যা মানুষের মধ্যে সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে। তাই এ বর্জ্য সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা অত্যন্ত জরুরি।

অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স একটি বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সংকট, যা বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে। অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের বৃদ্ধির কারণগুলো স্পষ্ট নয়, তবে পরিবেশে অ্যান্টিবায়োটিক অবশেষের নিঃসরণ একে ত্বরান্বিত করছে। এসব অবশেষ সম্পূর্ণভাবে ভেঙে না গিয়ে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি এবং প্রতিরোধক্ষমতা বাড়িয়ে পরিবেশের জন্য হুমকি সৃষ্টি করে। এ নিম্নমাত্রার সংস্পর্শে মিউটাজেনেসিস ঘটতে পারে; যা পরিবেশকে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া ও মাইক্রোবের একটি ভাণ্ডার হিসেবে তৈরি করে।
অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের জিন ব্যাকটেরিয়া একে অন্যের মধ্যে ও প্রজাতির মধ্যে ভাগাভাগি করতে পারে; যা এটির বিস্তার বাড়ায়। বর্জ্য শোধনাগার, গবাদিপশুর খামার এবং হাসপাতাল থেকে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি বেড়ে গেছে।

চীনের খামার থেকে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট জিনের উচ্চ মাত্রা পাওয়া গেছে। মাংস, ডিম, দুধ ও বার্গারের নমুনায় সেলমুনেলা এবং ই. কোলি-এর মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের হার ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং ১৪ দশমিক ৭০ শতাংশ। ফার্মাসিউটিক্যালস, বিষাক্ত ধাতু ও ন্যানোপার্টিকেলগুলো কো-সিলেকশন প্রক্রিয়ায় অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট জিন তৈরি করতে সহায়ক, যা পরিবেশে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের বিস্তার বাড়ায়।

অপরিশোধিত মানব ও প্রাণিজ বর্জ্য অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ; যা জলজ ও স্থলজ বাস্তুতন্ত্রের স্থিতিশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এটি স্পষ্ট যে মানবসৃষ্ট ও পরিবেশগত কার্যকলাপ অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।
অ্যান্টিবায়োটিক মানব ও পশুচিকিৎসায় বিপ্লব ঘটিয়েছে, তবে এর ব্যাপক ব্যবহার ও পরিবেশে স্থায়িত্বের কারণে এটি পরিবেশ দূষকরূপে আবির্ভূত হয়েছে। অ্যান্টিবায়োটিকের প্রধান উপাদান বা মেটাবোলাইটগুলো জলজ পরিবেশে নিঃসৃত হয়ে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশগত দূষণ সৃষ্টি করে।

অ্যান্টিবায়োটিক অবশেষ জীবন্ত সিস্টেমের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করে, কম ঘনত্বে ওষুধজনিত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে; যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। ধীরে ধীরে অবক্ষয়িত হয়ে বা পরিবেশে আরো নিঃসৃত হয়ে অবশেষ বৃদ্ধি পেতে পারে। উচ্চ শোষণ ক্ষমতাসম্পন্ন অ্যান্টিবায়োটিক অবশেষ মাটিতে জমা হয় এবং দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকে, অন্যদিকে কম শোষণ ক্ষমতাসম্পন্ন অ্যান্টিবায়োটিকগুলো জলজ পরিবেশে পৌঁছে যায়। অবক্ষয়ের ফলে নতুন ও বিপজ্জনক উপজাত তৈরি হতে পারে, যা জীববিজ্ঞানের দিক থেকে সক্রিয় ও আরো ক্ষতিকর হতে পারে। অ্যান্টিবায়োটিক অণু ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে এলে মিউটেশন ঘটাতে পারে; যা প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি করতে সহায়ক।

সালফোনামাইড ও ফ্লোরোকুইনোলোন জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিকগুলো রাসায়নিকভাবে স্থিতিশীল এবং পরিবেশে দীর্ঘস্থায়ী, তাই এসব অবশেষ পৃথিবীর সর্বত্র পাওয়া যায়। তেমনি জেন্টামাইসিন, সালফাডিমিডিন ও সিপ্রোফ্লক্সাসিন তাপ-স্থিতিশীল এবং আমক্সিসিলিন, অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ও সেফট্রিয়াক্সোন তাপ-অস্থির। এসব বৈশিষ্ট্য অ্যান্টিবায়োটিকগুলোর পরিবেশে মুক্তির পর আচরণকে প্রভাবিত করে। কম শোষণ ক্ষমতাসম্পন্ন অ্যান্টিবায়োটিক যেমন টেট্রাসাইক্লিন দীর্ঘ সময় ধরে অন্ত্রে অবস্থান করে এবং উপকারী ব্যাকটেরিয়ার ওপর প্রভাব ফেলে।

অ্যান্টিবায়োটিক অবশেষ সহজেই পরিবেশে প্রবেশ করে এবং জলজ ও প্রাণী বাস্তুতন্ত্রে জমা হতে পারে; যা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করে। অ্যান্টিবায়োটিক এবং এর অবশেষ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, যেমন রক্ত, স্নায়ুতন্ত্র, ফুসফুস, হৃৎপিণ্ড, পরিপাকতন্ত্র, যকৃৎ ও অন্যান্য শারীরবৃত্তীয় সিস্টেম। অ্যান্টিবায়োটিক অবশেষযুক্ত দুধের উপস্থিতি বৈশ্বিক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। কারণ ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যে অ্যালার্জেন বা হ্যাপটেন থাকতে পারে; যা পেশাগত অ্যালার্জির কারণ হতে পারে।

নাইট্রোফিউরান উচ্চমাত্রায় কার্সিনোজেনিক এবং মিউটাজেনিক প্রভাব ফেলে এবং দীর্ঘ সময় ফ্লোরোকুইনোলোনের সংস্পর্শ রেটিনাল ডিটাচমেন্ট ঘটাতে পারে। ক্লোরামফেনিকল দৃষ্টিশক্তি সম্পর্কিত নিউরোপ্যাথি, মস্তিষ্কে ফোড়া এবং অন্যান্য উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে। খাদ্যের মাধ্যমে অ্যান্টিবায়োটিক অবশেষ গ্রহণ মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, এমনকি তাপ প্রক্রিয়ায় অ্যান্টিবায়োটিক মেটাবোলাইটে ভেঙে গেলেও। টেট্রাসাইক্লিন পরিপাকতন্ত্রে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং প্রো-ইনফ্লামেটরি, সাইটোটক্সিক, ইমিউন-প্যাথলজিকাল এবং ভ্রূণের বিকাশের সমস্যা তৈরি করতে পারে। সালফামেথাজিন, অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ও ফিউরাজোলিডোন অবশেষ ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়, অন্যদিকে জেন্টামাইসিন ও ক্লোরামফেনিকল অস্থিমজ্জা ও প্রজননক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
অ্যা

ন্টিবায়োটিক অবশেষ মানুষের মাইক্রোবায়োমে পরিবর্তন ঘটাতে পারে, যা হজমজনিত সমস্যা, অ্যালার্জি ও দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ এবং অতিসংবেদনশীলতার ঝুঁকি বাড়তে পারে। কারণ বেশির ভাগ ওষুধ মূত্র এবং মলের মাধ্যমে মূল বা সক্রিয় মেটাবোলাইট আকারে নির্গত হয়। উদাহরণস্বরূপ, ইবুপ্রোফেনের ১৫ শতাংশ এবং অ্যামক্সিসিলিনের ৮০-৯০ শতাংশ সক্রিয় মেটাবোলাইট আকারে নির্গত হয়। পৃষ্ঠের পানিতে থাকা অ্যান্টিবায়োটিক অবশেষ অন্ত্রের জীবাণুর সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করে অ্যালার্জি বা হজমজনিত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। কুইনোলোন ও টেট্রাসাইক্লিনের উপস্থিতি শিশুদের দাঁতের ক্ষতি করতে পারে এবং টিলমাইকোসিন গরু, ভেড়া ও শূকরের নিউমোনিয়া প্রতিরোধে ব্যবহৃত হলেও মানুষের রক্ত ও জৈব রাসায়নিক চিহ্নকে প্রভাবিত করতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রিপোর্ট অনুযায়ী কৃষিতে পেনিসিলিন ও টেট্রাসাইক্লিনের ব্যবহার মাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধের জন্য দায়ী। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল অবশেষযুক্ত প্রাণিজ খাদ্য গ্রহণের ফলে অতিসংবেদনশীলতা, যকৃতের ক্ষতি, দাঁতের রঙ পরিবর্তন ও পরিপাকতন্ত্রের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। কম মাত্রার অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল মাইক্রোবায়োটাকে প্রভাবিত করে এবং খাদ্যবাহিত অসুখ প্রতিরোধী হয়ে উঠতে পারে।

পেনিসিলিন অ্যানাফাইলেক্সিস, সিরাম সিকনেস ও র‌্যাশ সৃষ্টি করতে পারে। দুধে উপস্থিত পেনিসিলিন সংবেদনশীল ব্যক্তিদের জন্য বিপজ্জনক। ক্লোরামফেনিকল বিরল রক্তের ব্যাধি সৃষ্টি করতে পারে এবং ফিউরাজোলিডোন, সালফামেথাজিন, অক্সিটেট্রাসাইক্লিনের অবশেষ ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। কিছু অ্যান্টিবায়োটিক অবশেষ অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে। যেমন- পেনিসিলিন ও সেফালোস্পোরিনের বিটা-ল্যাকটাম অবশেষ যা র‌্যাশ, স্টিভেনস-জনসন সিনড্রোম এবং অন্যান্য উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে। অ্যান্টিবায়োটিক অবশেষ এবং খাদ্যচক্রে এর উপস্থিতি অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ, অ্যালার্জি, ক্যান্সার ও জেনেটিক মিউটেশনের মতো গুরুতর ঝুঁকি সৃষ্টি করে; যা জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় হুমকি।
অ্যান্টিবায়োটিক এবং এর অবশেষ পরিবেশে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অবক্ষয়িত হতে পারে; যা তাপমাত্রা, আলো ও পরিবেশগত পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে।

মাইক্রোবিয়াল ডিগ্রেডেশন, হাইড্রোলাইসিস, ফটোলাইসিস, অক্সিডেশন ও রিডাকশনসহ অ-জৈবিক প্রক্রিয়াগুলোর মাধ্যমে অ্যান্টিবায়োটিকের অবক্ষয় ঘটে। যদিও ফটোলাইসিস, হাইড্রোলাইসিস এবং জৈব অবক্ষয়ের মাধ্যমে অ্যান্টিবায়োটিক প্রাকৃতিকভাবে ভেঙে যায়, তবে এ প্রক্রিয়াগুলো সাধারণত ধীরগতির হয়।

বর্তমানে অ্যান্টিবায়োটিক অবশেষ অপসারণের জন্য বিভিন্ন জৈবিক, রাসায়নিক ও ভৌত রাসায়নিক পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে অ্যাডসোর্পশন, ঝিল্লি পরিস্রাবণ, উন্নত অক্সিডেশন প্রক্রিয়া এবং মাইক্রোবিয়াল ফুয়েল সেল অন্তর্ভুক্ত। অ্যাডসোর্পশন ও ফিল্ট্রেশন পদ্ধতি পানি এবং বর্জ্য পানি থেকে অ্যান্টিবায়োটিক অবশেষ অপসারণে কার্যকর। উদাহরণস্বরূপ কাইটোসান কম্পোজিট অ্যাডসোর্পশন পদ্ধতি বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিকের অপসারণে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়া উন্নত অক্সিডেশন প্রক্রিয়া, পানি ও বর্জ্য পানিতে অ্যান্টিবায়োটিক অপসারণে সফল হয়েছে।

জৈবিক নির্মূল পদ্ধতিতে ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গি অ্যান্টিবায়োটিক অবশেষ ভাঙতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বায়োরেমিডিয়েশন ও ফাইটোরেমিডিয়েশন পদ্ধতিগুলোও অ্যান্টিবায়োটিক অপসারণে ব্যবহৃত হয়। অ্যারবিক পদ্ধতি সালফামেথক্সাজোল, ট্রাইমেথোপ্রিম ও অক্সিটেট্রাসাইক্লিনের মতো অ্যান্টিবায়োটিকের জন্য ৮৯-৯১ শতাংশ অপসারণ হারের সাক্ষ্য দিয়েছে। তবে অ্যান্টিবায়োটিক অবশেষ এবং এর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্যকর আইন ও নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন।

বর্তমান সময়ে এ বিষয়ে যথাযথ নিয়ন্ত্রক কাঠামো প্রতিষ্ঠিত হয়নি এবং গবেষণার অভাব রয়েছে। ভবিষ্যতে অ্যান্টিবায়োটিকের সঠিক ও সীমিত ব্যবহার নিশ্চিত করার পাশাপাশি পরিবেশ থেকে অবশেষ অপসারণের জন্য একটি কার্যকর নিয়ন্ত্রক কাঠামো তৈরি করা অপরিহার্য।লেখক: অধ্যাপক, পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; ফেলো, রয়্যাল কেমিক্যাল সোসাইটি এবং চার্টার্ড পরিবেশবিদ, যুক্তরাজ্য

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

পরিবেশে অ্যান্টিবায়োটিক অবশিষ্টাংশ ও জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি

আপডেট সময় : ০৫:৪৩:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

ড. শফি মুহাম্মদ তারেক : পরিবেশে অ্যান্টিবায়োটিকের অবশিষ্টাংশ একটি গুরুতর বৈশ্বিক উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলোয়, যেখানে নিয়ন্ত্রণহীন অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার, দ্রুত শিল্পায়ন ও অপর্যাপ্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিস্থিতিকে আরো সংকটময় করে তুলছে।
পরিবেশে অ্যান্টিবায়োটিকের অবশিষ্টাংশ একটি গুরুতর বৈশ্বিক উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলোয়, যেখানে নিয়ন্ত্রণহীন অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার, দ্রুত শিল্পায়ন ও অপর্যাপ্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিস্থিতিকে আরো সংকটময় করে তুলছে।

একসময় জীবন রক্ষাকারী ‘মিরাকল ড্রাগ’ হিসেবে পরিচিত অ্যান্টিবায়োটিক এখন ব্যাপকভাবে মাটি, ভূ-উপরিস্থিত ও ভূগর্ভস্থ পানিতে, এমনকি খাদ্য ব্যবস্থায়ও উপস্থিত, যা জনস্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। এসব অ্যান্টিবায়োটিকের অবশেষ মূলত মানব ও পশুচিকিৎসা, কৃষি, জলজ চাষ এবং ওষুধ শিল্পের অতিরিক্ত এবং অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশে প্রবেশ করে।
অ্যান্টিবায়োটিক তিন ভাগে বিভক্ত- প্রাকৃতিক, আধা-সিন্থেটিক ও সিন্থেটিক। উদাহরণস্বরূপ, পেনিসিলিন একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক, পেনিসিলিন-জি থেকে উৎপন্ন বিটা-ল্যাকটামিক অ্যাসিড একটি আধা-সিন্থেটিক এবং সালফোনামাইড একটি সিন্থেটিক অ্যান্টিবায়োটিক। বৈশ্বিকভাবে বিক্রীত অ্যান্টিবায়োটিকের মধ্যে সাধারণভাবে ৭৩ শতাংশ কৃষি খাতে এবং ২৭ শতাংশ মানবস্বাস্থ্য খাতে ব্যবহৃত হয়। বিক্রীত অ্যান্টিবায়োটিকের মধ্যে ৬৭ শতাংশ টেট্রাসাইক্লিন, ১২ শতাংশ পেনিসিলিন এবং ৮ শতাংশ ম্যাক্রোলাইডস। ২০১৯ সালে টেট্রাসাইক্লিন ও ম্যাক্রোলাইডসের বিক্রি বেড়েছে, কিন্তু পেনিসিলিনের বিক্রি কমেছে।

এ পর্যন্ত বিভিন্ন গবেষণায় মাটি ও পলি মাটিতে অ্যান্টিবায়োটিক অবশেষের উপস্থিতি নিশ্চিত হয়েছে। এ অবশেষ বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে পরিবেশে প্রবেশ করে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সার হিসেবে প্রাণীর মলমূত্র ব্যবহার, চারণভূমির প্রাণীদের মল নির্গমন এবং অপরিশোধিত বর্জ্য পানির নিষ্কাশন।
মাটিতে প্রবেশের পর অ্যান্টিবায়োটিক অবশেষ সোর্পশন-ডিসোর্পশন এবং সিকোয়েস্ট্রেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মাটির সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করে। মাটির অম্লতা, ও ক্ষারত্ব (পিএইচ), রাসায়নিক বিশ্লেষণ, সার প্রয়োগ এবং চার্জের প্রভাব সোর্পশন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে।

সোর্পশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে অ্যান্টিবায়োটিক অবশেষ হাইড্রোলাইসিস, ফটোডিগ্রেডেশন এবং অক্সিডেটিভ ট্রান্সফরমেশনের মাধ্যমে মাটিতে তার চূড়ান্ত অবস্থান নির্ধারণ করে। অ্যান্টিবায়োটিকের অবক্ষয় প্রক্রিয়া ভিন্ন হতে পারে। বিটা-ল্যাকটাম জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিকগুলো সহজে হাইড্রোলাইসিসের মাধ্যমে ভেঙে যায়, কিন্তু ম্যাক্রোলাইড ও সালফোনামাইড দীর্ঘস্থায়ী থাকে। অ্যান্টিবায়োটিক অবশেষের জীব-উপলভ্যতা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমে যায়। সিকোয়েস্ট্রেশন ও সোর্পশন প্রক্রিয়া অবশেষগুলোকে মাটিতে স্থির করে রাখতে পারে।
মাটি থেকে পরিবাহিত হওয়ার পর অ্যান্টিবায়োটিক অবশেষের চূড়ান্ত গন্তব্য হতে পারে বায়ুমণ্ডল, জলাশয় এবং জীবজগৎ। তবে সাধারণত ভোলাটিলাইজেশন ঘটে না। পলিমাটি কৃষি ও জলজ চাষের কারণে অ্যান্টিবায়োটিক অবশেষের প্রধান উৎস, কারণ এটি পুষ্টি, জৈব পদার্থ এবং দূষকের ভাণ্ডার হিসেবে কাজ করে। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সমুদ্রের পলি মাটিতে ফ্লোরোকুইনোলোনের গড় ঘনত্ব ছিল ৪৩১ দশমিক শূন্য ৬ ন্যানোগ্রাম/গ্রাম, নদীতে ১ হাজার ২০ দশমিক ৫৮ ন্যানোগ্রাম/গ্রাম এবং হ্রদে ১৬৭ দশমিক ৭৪ ন্যানোগ্রাম/গ্রাম। এটি প্রমাণ করে যে অ্যান্টিবায়োটিক অবশেষের মাত্রা ক্রমেই বেড়েছে; যা ভবিষ্যতে মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

পৃষ্ঠ ও ভূগর্ভস্থ পানিতে অ্যান্টিবায়োটিক অবশেষের দূষণ একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা হয়ে উঠেছে। তবে এর প্রকৃতি ও ভাগ্য সম্পর্কে যথাযথ তথ্যের অভাব রয়েছে। অপর্যাপ্ত বর্জ্য শোধনাগার, নিম্নমানের স্যানিটেশন ব্যবস্থা ও কৃষিতে অ্যান্টিবায়োটিকের ভুল ব্যবহার এ সমস্যার মূল কারণ। সাম্প্রতিক গবেষণায় কুইনোলোনস, ক্লোরামফেনিকল, সালফোনামাইডস ও ম্যাক্রোলাইডস জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক অবশেষ পৃষ্ঠের পানিতে ৬৭৯ দশমিক ৭ ন্যানোগ্রাম/লিটার পর্যন্ত ঘনত্বে শনাক্ত হয়েছে; যা কয়েক মাস পর্যন্ত সক্রিয় থাকতে পারে এবং প্রচলিত পদ্ধতিতে সহজে নির্মূল হয় না।

হাসপাতাল, ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি, বর্জ্য শোধনাগার, জলজ চাষ এবং গবাদিপশুর খামার থেকে অ্যান্টিবায়োটিক রাসায়নিক উপাদান বা এর মেটাবোলাইট পরিবেশে প্রবাহিত হয় এবং পৃষ্ঠ ও ভূগর্ভস্থ পানিতে মিশে যায়। অ্যান্টিবায়োটিক জলজ জীবের মধ্যে বায়োঅ্যাকিউমুলেশন ঘটাতে পারে এবং মাইক্রোজীবী জৈবিকভাবে ভেঙে ফেলতে সক্ষম। সূর্যালোক পানিতে অ্যান্টিবায়োটিক ভেঙে ফেলার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে এবং পলি মাটি অ্যান্টিবায়োটিক আবদ্ধ করতে সাহায্য করে। গবেষণায় নদী ও ভূগর্ভস্থ পানিতে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিকের অবশেষ শনাক্ত হয়েছে; যা মানবস্বাস্থ্য এবং জলজ বাস্তুতন্ত্রের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। এ কারণে পৃষ্ঠ পানিতে অ্যান্টিবায়োটিকের অবশেষ দূষণ একটি জরুরি সমস্যা হিসেবে মোকাবেলা করতে হবে।

ডক্সিসাইক্লিন, ফ্লোরোকুইনোলোন, পেনিসিলিন, লিঙ্কোমাইসিন, ট্রাইমেথোপ্রিম, ব্যাসিট্রাসিন, কোলিস্টিন, ক্লোরামফেনিকল, ইরিথ্রোমাইসিন ও সেফালোস্পোরিনসহ অ্যান্টিবায়োটিকগুলো মানব ও পশুচিকিৎসায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়; যা ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ নিরাময় এবং মৃত্যুর হার কমাতে সহায়ক। এছাড়া মাছের চাষে ইরিথ্রোমাইসিন, সারাফ্লোক্সাসিন, অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ও থায়ামেথোপ্রিম ব্যবহৃত হয়। এ অ্যান্টিবায়োটিকগুলো জলাশয়ভিত্তিক ব্যবস্থায় ব্যবহারের ফলে জলজ বাস্তুতন্ত্র ভেতরে প্রবাহিত হতে পারে।

মানুষের বা প্রাণীর শরীরে অ্যান্টিবায়োটিকের কিছু অংশ হজম হলেও বেশির ভাগ (৭০-৯০ শতাংশ) অপরিবর্তিত অবস্থায় মল ও মূত্রের মাধ্যমে নির্গত হয়। অ্যান্টিবায়োটিক অবশেষ সাধারণত সঠিকভাবে নিষ্পত্তি হয় না এবং বর্জ্য শোধনাগার এ অবশেষের একটি প্রধান উৎস হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্টে হরমোন এবং অ্যান্টিবায়োটিকের মেটাবোলাইট যেমন ইরিথ্রোমাইসিন ও রোক্সিথ্রোমাইসিন উপস্থিত থাকে। স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্টে অ্যাডসোর্পশন ও বায়োডিগ্রেডেশন অ্যান্টিবায়োটিক অবশেষের অবস্থা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া মাছ (চিংড়ির) নমুনায় বিপুল পরিমাণ কুইনোলোন এবং সালফোনামাইড জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক অবশেষ পাওয়া গেছে।

মানব, পশুচিকিৎসা ও মাছের চাষ খাত থেকে নির্গত বর্জ্য পরিবেশে অ্যান্টিবায়োটিক দূষণের অন্যতম প্রধান উৎস। কারণ এ বর্জ্যে মাল্টি-রেজিস্ট্যান্ট জিন থাকে, যা মানুষের মধ্যে সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে। তাই এ বর্জ্য সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা অত্যন্ত জরুরি।

অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স একটি বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সংকট, যা বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে। অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের বৃদ্ধির কারণগুলো স্পষ্ট নয়, তবে পরিবেশে অ্যান্টিবায়োটিক অবশেষের নিঃসরণ একে ত্বরান্বিত করছে। এসব অবশেষ সম্পূর্ণভাবে ভেঙে না গিয়ে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি এবং প্রতিরোধক্ষমতা বাড়িয়ে পরিবেশের জন্য হুমকি সৃষ্টি করে। এ নিম্নমাত্রার সংস্পর্শে মিউটাজেনেসিস ঘটতে পারে; যা পরিবেশকে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া ও মাইক্রোবের একটি ভাণ্ডার হিসেবে তৈরি করে।
অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের জিন ব্যাকটেরিয়া একে অন্যের মধ্যে ও প্রজাতির মধ্যে ভাগাভাগি করতে পারে; যা এটির বিস্তার বাড়ায়। বর্জ্য শোধনাগার, গবাদিপশুর খামার এবং হাসপাতাল থেকে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি বেড়ে গেছে।

চীনের খামার থেকে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট জিনের উচ্চ মাত্রা পাওয়া গেছে। মাংস, ডিম, দুধ ও বার্গারের নমুনায় সেলমুনেলা এবং ই. কোলি-এর মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের হার ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং ১৪ দশমিক ৭০ শতাংশ। ফার্মাসিউটিক্যালস, বিষাক্ত ধাতু ও ন্যানোপার্টিকেলগুলো কো-সিলেকশন প্রক্রিয়ায় অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট জিন তৈরি করতে সহায়ক, যা পরিবেশে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের বিস্তার বাড়ায়।

অপরিশোধিত মানব ও প্রাণিজ বর্জ্য অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ; যা জলজ ও স্থলজ বাস্তুতন্ত্রের স্থিতিশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এটি স্পষ্ট যে মানবসৃষ্ট ও পরিবেশগত কার্যকলাপ অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।
অ্যান্টিবায়োটিক মানব ও পশুচিকিৎসায় বিপ্লব ঘটিয়েছে, তবে এর ব্যাপক ব্যবহার ও পরিবেশে স্থায়িত্বের কারণে এটি পরিবেশ দূষকরূপে আবির্ভূত হয়েছে। অ্যান্টিবায়োটিকের প্রধান উপাদান বা মেটাবোলাইটগুলো জলজ পরিবেশে নিঃসৃত হয়ে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশগত দূষণ সৃষ্টি করে।

অ্যান্টিবায়োটিক অবশেষ জীবন্ত সিস্টেমের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করে, কম ঘনত্বে ওষুধজনিত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে; যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। ধীরে ধীরে অবক্ষয়িত হয়ে বা পরিবেশে আরো নিঃসৃত হয়ে অবশেষ বৃদ্ধি পেতে পারে। উচ্চ শোষণ ক্ষমতাসম্পন্ন অ্যান্টিবায়োটিক অবশেষ মাটিতে জমা হয় এবং দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকে, অন্যদিকে কম শোষণ ক্ষমতাসম্পন্ন অ্যান্টিবায়োটিকগুলো জলজ পরিবেশে পৌঁছে যায়। অবক্ষয়ের ফলে নতুন ও বিপজ্জনক উপজাত তৈরি হতে পারে, যা জীববিজ্ঞানের দিক থেকে সক্রিয় ও আরো ক্ষতিকর হতে পারে। অ্যান্টিবায়োটিক অণু ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে এলে মিউটেশন ঘটাতে পারে; যা প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি করতে সহায়ক।

সালফোনামাইড ও ফ্লোরোকুইনোলোন জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিকগুলো রাসায়নিকভাবে স্থিতিশীল এবং পরিবেশে দীর্ঘস্থায়ী, তাই এসব অবশেষ পৃথিবীর সর্বত্র পাওয়া যায়। তেমনি জেন্টামাইসিন, সালফাডিমিডিন ও সিপ্রোফ্লক্সাসিন তাপ-স্থিতিশীল এবং আমক্সিসিলিন, অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ও সেফট্রিয়াক্সোন তাপ-অস্থির। এসব বৈশিষ্ট্য অ্যান্টিবায়োটিকগুলোর পরিবেশে মুক্তির পর আচরণকে প্রভাবিত করে। কম শোষণ ক্ষমতাসম্পন্ন অ্যান্টিবায়োটিক যেমন টেট্রাসাইক্লিন দীর্ঘ সময় ধরে অন্ত্রে অবস্থান করে এবং উপকারী ব্যাকটেরিয়ার ওপর প্রভাব ফেলে।

অ্যান্টিবায়োটিক অবশেষ সহজেই পরিবেশে প্রবেশ করে এবং জলজ ও প্রাণী বাস্তুতন্ত্রে জমা হতে পারে; যা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করে। অ্যান্টিবায়োটিক এবং এর অবশেষ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, যেমন রক্ত, স্নায়ুতন্ত্র, ফুসফুস, হৃৎপিণ্ড, পরিপাকতন্ত্র, যকৃৎ ও অন্যান্য শারীরবৃত্তীয় সিস্টেম। অ্যান্টিবায়োটিক অবশেষযুক্ত দুধের উপস্থিতি বৈশ্বিক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। কারণ ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যে অ্যালার্জেন বা হ্যাপটেন থাকতে পারে; যা পেশাগত অ্যালার্জির কারণ হতে পারে।

নাইট্রোফিউরান উচ্চমাত্রায় কার্সিনোজেনিক এবং মিউটাজেনিক প্রভাব ফেলে এবং দীর্ঘ সময় ফ্লোরোকুইনোলোনের সংস্পর্শ রেটিনাল ডিটাচমেন্ট ঘটাতে পারে। ক্লোরামফেনিকল দৃষ্টিশক্তি সম্পর্কিত নিউরোপ্যাথি, মস্তিষ্কে ফোড়া এবং অন্যান্য উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে। খাদ্যের মাধ্যমে অ্যান্টিবায়োটিক অবশেষ গ্রহণ মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, এমনকি তাপ প্রক্রিয়ায় অ্যান্টিবায়োটিক মেটাবোলাইটে ভেঙে গেলেও। টেট্রাসাইক্লিন পরিপাকতন্ত্রে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং প্রো-ইনফ্লামেটরি, সাইটোটক্সিক, ইমিউন-প্যাথলজিকাল এবং ভ্রূণের বিকাশের সমস্যা তৈরি করতে পারে। সালফামেথাজিন, অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ও ফিউরাজোলিডোন অবশেষ ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়, অন্যদিকে জেন্টামাইসিন ও ক্লোরামফেনিকল অস্থিমজ্জা ও প্রজননক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
অ্যা

ন্টিবায়োটিক অবশেষ মানুষের মাইক্রোবায়োমে পরিবর্তন ঘটাতে পারে, যা হজমজনিত সমস্যা, অ্যালার্জি ও দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ এবং অতিসংবেদনশীলতার ঝুঁকি বাড়তে পারে। কারণ বেশির ভাগ ওষুধ মূত্র এবং মলের মাধ্যমে মূল বা সক্রিয় মেটাবোলাইট আকারে নির্গত হয়। উদাহরণস্বরূপ, ইবুপ্রোফেনের ১৫ শতাংশ এবং অ্যামক্সিসিলিনের ৮০-৯০ শতাংশ সক্রিয় মেটাবোলাইট আকারে নির্গত হয়। পৃষ্ঠের পানিতে থাকা অ্যান্টিবায়োটিক অবশেষ অন্ত্রের জীবাণুর সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করে অ্যালার্জি বা হজমজনিত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। কুইনোলোন ও টেট্রাসাইক্লিনের উপস্থিতি শিশুদের দাঁতের ক্ষতি করতে পারে এবং টিলমাইকোসিন গরু, ভেড়া ও শূকরের নিউমোনিয়া প্রতিরোধে ব্যবহৃত হলেও মানুষের রক্ত ও জৈব রাসায়নিক চিহ্নকে প্রভাবিত করতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রিপোর্ট অনুযায়ী কৃষিতে পেনিসিলিন ও টেট্রাসাইক্লিনের ব্যবহার মাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধের জন্য দায়ী। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল অবশেষযুক্ত প্রাণিজ খাদ্য গ্রহণের ফলে অতিসংবেদনশীলতা, যকৃতের ক্ষতি, দাঁতের রঙ পরিবর্তন ও পরিপাকতন্ত্রের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। কম মাত্রার অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল মাইক্রোবায়োটাকে প্রভাবিত করে এবং খাদ্যবাহিত অসুখ প্রতিরোধী হয়ে উঠতে পারে।

পেনিসিলিন অ্যানাফাইলেক্সিস, সিরাম সিকনেস ও র‌্যাশ সৃষ্টি করতে পারে। দুধে উপস্থিত পেনিসিলিন সংবেদনশীল ব্যক্তিদের জন্য বিপজ্জনক। ক্লোরামফেনিকল বিরল রক্তের ব্যাধি সৃষ্টি করতে পারে এবং ফিউরাজোলিডোন, সালফামেথাজিন, অক্সিটেট্রাসাইক্লিনের অবশেষ ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। কিছু অ্যান্টিবায়োটিক অবশেষ অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে। যেমন- পেনিসিলিন ও সেফালোস্পোরিনের বিটা-ল্যাকটাম অবশেষ যা র‌্যাশ, স্টিভেনস-জনসন সিনড্রোম এবং অন্যান্য উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে। অ্যান্টিবায়োটিক অবশেষ এবং খাদ্যচক্রে এর উপস্থিতি অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ, অ্যালার্জি, ক্যান্সার ও জেনেটিক মিউটেশনের মতো গুরুতর ঝুঁকি সৃষ্টি করে; যা জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় হুমকি।
অ্যান্টিবায়োটিক এবং এর অবশেষ পরিবেশে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অবক্ষয়িত হতে পারে; যা তাপমাত্রা, আলো ও পরিবেশগত পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে।

মাইক্রোবিয়াল ডিগ্রেডেশন, হাইড্রোলাইসিস, ফটোলাইসিস, অক্সিডেশন ও রিডাকশনসহ অ-জৈবিক প্রক্রিয়াগুলোর মাধ্যমে অ্যান্টিবায়োটিকের অবক্ষয় ঘটে। যদিও ফটোলাইসিস, হাইড্রোলাইসিস এবং জৈব অবক্ষয়ের মাধ্যমে অ্যান্টিবায়োটিক প্রাকৃতিকভাবে ভেঙে যায়, তবে এ প্রক্রিয়াগুলো সাধারণত ধীরগতির হয়।

বর্তমানে অ্যান্টিবায়োটিক অবশেষ অপসারণের জন্য বিভিন্ন জৈবিক, রাসায়নিক ও ভৌত রাসায়নিক পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে অ্যাডসোর্পশন, ঝিল্লি পরিস্রাবণ, উন্নত অক্সিডেশন প্রক্রিয়া এবং মাইক্রোবিয়াল ফুয়েল সেল অন্তর্ভুক্ত। অ্যাডসোর্পশন ও ফিল্ট্রেশন পদ্ধতি পানি এবং বর্জ্য পানি থেকে অ্যান্টিবায়োটিক অবশেষ অপসারণে কার্যকর। উদাহরণস্বরূপ কাইটোসান কম্পোজিট অ্যাডসোর্পশন পদ্ধতি বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিকের অপসারণে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়া উন্নত অক্সিডেশন প্রক্রিয়া, পানি ও বর্জ্য পানিতে অ্যান্টিবায়োটিক অপসারণে সফল হয়েছে।

জৈবিক নির্মূল পদ্ধতিতে ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গি অ্যান্টিবায়োটিক অবশেষ ভাঙতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বায়োরেমিডিয়েশন ও ফাইটোরেমিডিয়েশন পদ্ধতিগুলোও অ্যান্টিবায়োটিক অপসারণে ব্যবহৃত হয়। অ্যারবিক পদ্ধতি সালফামেথক্সাজোল, ট্রাইমেথোপ্রিম ও অক্সিটেট্রাসাইক্লিনের মতো অ্যান্টিবায়োটিকের জন্য ৮৯-৯১ শতাংশ অপসারণ হারের সাক্ষ্য দিয়েছে। তবে অ্যান্টিবায়োটিক অবশেষ এবং এর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্যকর আইন ও নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন।

বর্তমান সময়ে এ বিষয়ে যথাযথ নিয়ন্ত্রক কাঠামো প্রতিষ্ঠিত হয়নি এবং গবেষণার অভাব রয়েছে। ভবিষ্যতে অ্যান্টিবায়োটিকের সঠিক ও সীমিত ব্যবহার নিশ্চিত করার পাশাপাশি পরিবেশ থেকে অবশেষ অপসারণের জন্য একটি কার্যকর নিয়ন্ত্রক কাঠামো তৈরি করা অপরিহার্য।লেখক: অধ্যাপক, পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; ফেলো, রয়্যাল কেমিক্যাল সোসাইটি এবং চার্টার্ড পরিবেশবিদ, যুক্তরাজ্য