নিজস্ব প্রতিবেদক : তামাক শুধু মানুষের শরীরেরই ক্ষতি করে না, তামাক চাষ পরিবেশের জন্যও মারাত্মক ক্ষতিকর। এজন্য তামাক নিয়ন্ত্রণে আইন সংস্কারের দাবি জানিয়েছে মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা (মানস)।
গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস-২০২২ উপলক্ষে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) মানস আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। ‘তামাকমুক্ত পরিবেশ সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশ’ এই প্রতিপাদ্যে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ. কে. আজাদ খান বলেন, তামাক যেমন মানুষের শরীরের ক্ষতি করে ঠিক তেমনই তামাক চাষ সম্পূর্ণরূপে পরিবেশেরও ক্ষতি করে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাংলাদেশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। এদিকে বিশ্বের শীর্ষ ১০টির মধ্যে ১টি অধিক তামাক ব্যবহারকারী জনগণের দেশও ‘বাংলাদেশ’। সুতরাং জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশগত ঝুঁকি মোকাবিলায় কার্যকর তামাক নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই। তামাক কোম্পানিগুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনার সময় এসেছে।
তামাকের বিভিন্ন ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে সবাইকে ধূমপান ত্যাগ ও তামাকজাতীয় দ্রব্য বর্জনের আহবান জানান তিনি। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষে কাজ করছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মানসের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক অরুপ রতন চৌধুরী। তিনি বলেন, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ সুরক্ষা এবং সার্বিক উন্নয়নে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো ‘তামাক’। এ কথা সর্ব মহলে স্বীকৃত। তামাক চাষাবাদ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সেবনসহ প্রতিটি ধাপেই পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
গ্লোবাল এডাল্ট টোবাকো সার্ভে ২০১৭ তে দেখা যায়, বাংলাদেশে ১৫ বছরের অধিক বয়সীদের মধ্যে ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ ৩ কোটি ৭৮ লাখ মানুষ তামাকজাত দ্রব্য সেবন করেন। ২০০৯ সালে তামাকসেবী ছিল ৪৩ দশমিক ৩ শতাংশ। সুতরাং তামাক সেবনের শতকরা হার নি¤œগামী হয়েছে, যা আশার কথা। পক্ষান্তরে, এমন কিছু অসামঞ্জস্যতা ও প্রতিবন্ধকতা রয়েছে যা তামাক নিয়ন্ত্রণে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে বিঘœতা সৃষ্টি করছে। তামাক চাষের ফলে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে জানিয়ে অরুপ রতন চৌধুরী বলেন, তামাক গাছ থেকে প্রচুর পরিমানে বিষাক্ত পদার্থ বের হয়। যা পরিবেশেরও মারাত্মক ক্ষতি করে। এছাড়া তামাক চাষে প্রচুর সার ও কীটনাশক ব্যবহৃত হয়, যা মাটি ও পানি দূষণ করে এবং মাছসহ জলাশয়ের উদ্ভিদচক্রের মারাত্মক ক্ষতি করে। উদাহরণ হিসেবে দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র হালদা নদীর কথা উল্লেখ করে অরুপ চৌধুরী বলেন, পাহাড়ের ধারে দীর্ঘদিন ধরে তামাক চাষের কারণে তামাকের নির্বাস ও চাষে ব্যবহৃত সার এবং রাসায়নিক মিশ্রিত পানি সরাসরি গিয়ে পড়ছে নদীতে। এতে হালদার পানি মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। তাছাড়া দেশে ৩১ শতাংশ বন নিধনের ক্ষেত্রে তামাক চাষ দায়ী। সুতরাং, তামাক চাষ ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনা এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তামাক চাষ সম্পূর্ণ বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি। অরুপ রতন চৌধুরী বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, ১৯৭০ সাল থেকে তামাকের কারণে বিশ্বব্যাপী (গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে) প্রায় দেড় বিলিয়ন হেক্টর বন বিলুপ্ত হয়ে গেছে, যা ২০ শতাংশ বার্ষিক মিনহাউস গ্যাস বৃদ্ধির কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বিশ্বে বছরে ৩৫ লাখ হেক্টর জমি তামাক চাষে ধ্বংস হয়, যা বৈশ্বিক পাঁচ শতাংশ বনাঞ্চল ধ্বংসের জন্য দায়ী। প্রায় ৯০ শতাংশ তামাক উৎপাদন হয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে।
সংবাদ সম্মেলনে তামাক নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
সুপারিশগুলো হলো : ১) কৃষি জমি ও পরিবেশ সুরক্ষায় দ্রুত ‘তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতি’ পাস করা। ২) কৃষকদের তামাকের বিকল্প ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ করতে সরকারি উদ্যোগ নিতে হবে। ৩) তামাক পাতা রপ্তানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক পূণরায় আরোপ করতে হবে। ৪) প্রধানমন্ত্রীর বৃক্ষরোপণে জাতীয় পদকের জন্য তামাক কোম্পানিকে অযোগ্য ঘোষণা করা। ৫) তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের মাধ্যমে তামাক কোম্পানির ‘সিএসআর’ কর্মসূচি নিষিদ্ধ করা। ৬) ‘জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি প্রণয়ন করা। ৭) বিএটিবি থেকে সরকারের ৯.৪৯% শেয়ার এবং কর্মকর্তা প্রত্যাহার করা। ৮) জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন আইন, নীতিতে তামাক কোম্পানির প্রভাব বন্ধে এফসিটিসি’র অনুচ্ছেদ ৫.৩ অনুসারে ‘গাইডলাইন’ প্রণয়ন করা। ৯) প্রধানমন্ত্রী’র তামাকমুক্ত বাংলাদেশ বাস্তবায়নে ‘রোডম্যাপ’ চূড়ান্ত করা। তামাক কোম্পানিগুলোর পরিবেশ সুরক্ষার দোহাই দিয়ে প্রবাহ, সামাজিক বনায়নের নামে ‘লোক দেখানো নাটক’ বন্ধ করা। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান তালুকদারসহ মানসের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পরিবেশের জন্যও মারাত্মক ক্ষতিকর তামাক
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ