ঢাকা ০৫:১৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫

পরজীবী শহরের গল্প

  • আপডেট সময় : ১০:৪৩:২২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ জানুয়ারী ২০২২
  • ১০৬ বার পড়া হয়েছে

ফারজানা কাশেমী : ছোট বোন নাতাশা উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য জার্মানীতে বসবাসরত। নাতাশা কিছুটা স্বস্তিতে লিখে ফেলে-একটা বাসে আমি আর উৎরাবৎ একা, কিন্তু ভয় পাচ্ছি না, বাংলাদেশ হলে ভয় পেতাম।
দুঃখজনক হলেও সত্য-আমরা যারা বাংলাদেশে বসবাসরত তারা প্রতিনিয়ত কিছুটা অস্বস্তি, উৎকণ্ঠা, ভয়ে দিনাতিপাত করি। একটা মেয়ে ভিন দেশে যতটা স্বস্তি নিয়ে কাজে যায়, ঘোরাফেরা করে তার বিন্দুমাত্র স্বস্তি নিয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা চলাফেরা, কাজকর্ম করতে পারে না।
বাংলাদেশে একটা মেয়ে দিনের বেলায় সিএনজিচালিত অটোরিকশায় উঠলে পরিচিত কেউ সতর্কতাস্বরূপ গাড়ির নাম্বারের ছবি তুলে রাখেন। আমাদের চলাচলে কতটা অসহায়ত্ব! চলাফেরা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে আমাদের দেশের মেয়েরা সর্বদা এক অজানা উৎকণ্ঠায় থাকে। দিনের আলোতেও আমাদের দেশে পাবলিক পরিবহনে মেয়েরা বিভিন্ন সময়ে ভিন্নভাবে শারীরিক-মানসিক নির্যাতন, নিগ্রহের শিকার হচ্ছেন। চলন্ত বাসে আমাদের দেশের অনেক নারী ধর্ষণের মতো পাশবিকতার শিকার হচ্ছেন। এদেশের মেয়েরা চলাফেরার পথে এতটাই তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন যে, কখনো কারো অযাচিত ভালো ব্যবহারেও সন্দেহ পোষণ না করে পারেন না। আবার অকারণে কারো অনাহুত আচরণ প্রদর্শনেও এদেশের মেয়েরা আতঙ্কিত। সন্ধ্যার পরে বাড়ি ফেরার পথ অথবা একটু রাত হলে মেয়েদের নিরাপদে বাড়ি ফেরা এক দুর্ভাবনার বিষয়। মেয়েদের বিপরীত লিঙ্গের কেউ সাহায্যে এগিয়ে আসলে, তারা আতঙ্কিত হন। চারপাশের দেয়ালে এতো নোংরা-তাই ভয় পান, ভীত হন। দিনের আলো প্রকাশ্য দিবালোকেও এখানে মেয়েদের চলার পথ অনিরাপদ। এখানে রাস্তার ভিক্ষুক নারীকেও যৌন হয়রানি করা হয়। ইভটিজিং এদেশের চলার পথে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। বাধা দেওয়ার বা এগিয়ে আসার জন্য জনমানবশূন্যতাই দেখা যায়। ইভটিজাররা এতটাই প্রবল যে, তাদের বাধা দেওয়ার শক্তি-সামর্থ্য এই সমাজের কারো যেনো নেই।
সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, নারী নির্যাতনে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। কর্মক্ষেত্রেও নারী হয়রানির শিকার এবং অভিযোগ চেনা চিত্র। শিক্ষাঙ্গনে অপদস্ত-শ্লীলতাহানির ঘটনা মোটেই বিরল নয়। পথেঘাটে, অলিতে গলিতে এমনকি অনেকক্ষেত্রে নিজ ঘরেও যেনো নারীর বিচরণ রীতিমতো অস্বস্তির। স্পষ্টতই, নির্বিঘেœ চলাফেরার পথ এদেশের মেয়েদের জন্য অনেকটাই রুদ্ধ। তাই ভালো-মন্দ যেকোন পথে বিচ্ছিন্ন পরিক্রমার সঞ্চারণে এদেশের নারীরা সংকীর্ণ সীমাবদ্ধতায় বসবাস করেন। শৈশব, কৈশোর, যৌবন আর বার্ধক্য কোনো বাঁকেই তাদের নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করা যায়নি। নারী তার সম্ভ্রম রক্ষার্থে মনে মনে মসজিদ, মন্দির আর গীর্জার শরণাপন্ন হন। সমাজ ও রাষ্ট্র নারীর যথাযথ অধিকার নিশ্চিত করতে পারছে কিনা, বাস্তবতার প্রেক্ষিতে এই প্রশ্ন অবান্তর। কিন্তু কোনো সভ্য সমাজ ও রাষ্ট্র এই দায় কী এড়াতে পারে?
গীতিকবির ভাষায় বলতে হয়-‘আমি গাই পরজীবী শহরের গান, আমি বাই উজান ¯্রােতের সাম্পান, আমি যা দেখি তুমি তা দেখো কি, আমি যা ভাবি তুমি তা ভাবো কি? আমি যা শুনি তুমি তা শোনো কি?
লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশ

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

যে ভাইকে জেল থেকে বের করেছি, সেই আমার স্ত্রী-সন্তানদের হত্যা করল…

পরজীবী শহরের গল্প

আপডেট সময় : ১০:৪৩:২২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ জানুয়ারী ২০২২

ফারজানা কাশেমী : ছোট বোন নাতাশা উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য জার্মানীতে বসবাসরত। নাতাশা কিছুটা স্বস্তিতে লিখে ফেলে-একটা বাসে আমি আর উৎরাবৎ একা, কিন্তু ভয় পাচ্ছি না, বাংলাদেশ হলে ভয় পেতাম।
দুঃখজনক হলেও সত্য-আমরা যারা বাংলাদেশে বসবাসরত তারা প্রতিনিয়ত কিছুটা অস্বস্তি, উৎকণ্ঠা, ভয়ে দিনাতিপাত করি। একটা মেয়ে ভিন দেশে যতটা স্বস্তি নিয়ে কাজে যায়, ঘোরাফেরা করে তার বিন্দুমাত্র স্বস্তি নিয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা চলাফেরা, কাজকর্ম করতে পারে না।
বাংলাদেশে একটা মেয়ে দিনের বেলায় সিএনজিচালিত অটোরিকশায় উঠলে পরিচিত কেউ সতর্কতাস্বরূপ গাড়ির নাম্বারের ছবি তুলে রাখেন। আমাদের চলাচলে কতটা অসহায়ত্ব! চলাফেরা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে আমাদের দেশের মেয়েরা সর্বদা এক অজানা উৎকণ্ঠায় থাকে। দিনের আলোতেও আমাদের দেশে পাবলিক পরিবহনে মেয়েরা বিভিন্ন সময়ে ভিন্নভাবে শারীরিক-মানসিক নির্যাতন, নিগ্রহের শিকার হচ্ছেন। চলন্ত বাসে আমাদের দেশের অনেক নারী ধর্ষণের মতো পাশবিকতার শিকার হচ্ছেন। এদেশের মেয়েরা চলাফেরার পথে এতটাই তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন যে, কখনো কারো অযাচিত ভালো ব্যবহারেও সন্দেহ পোষণ না করে পারেন না। আবার অকারণে কারো অনাহুত আচরণ প্রদর্শনেও এদেশের মেয়েরা আতঙ্কিত। সন্ধ্যার পরে বাড়ি ফেরার পথ অথবা একটু রাত হলে মেয়েদের নিরাপদে বাড়ি ফেরা এক দুর্ভাবনার বিষয়। মেয়েদের বিপরীত লিঙ্গের কেউ সাহায্যে এগিয়ে আসলে, তারা আতঙ্কিত হন। চারপাশের দেয়ালে এতো নোংরা-তাই ভয় পান, ভীত হন। দিনের আলো প্রকাশ্য দিবালোকেও এখানে মেয়েদের চলার পথ অনিরাপদ। এখানে রাস্তার ভিক্ষুক নারীকেও যৌন হয়রানি করা হয়। ইভটিজিং এদেশের চলার পথে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। বাধা দেওয়ার বা এগিয়ে আসার জন্য জনমানবশূন্যতাই দেখা যায়। ইভটিজাররা এতটাই প্রবল যে, তাদের বাধা দেওয়ার শক্তি-সামর্থ্য এই সমাজের কারো যেনো নেই।
সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, নারী নির্যাতনে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। কর্মক্ষেত্রেও নারী হয়রানির শিকার এবং অভিযোগ চেনা চিত্র। শিক্ষাঙ্গনে অপদস্ত-শ্লীলতাহানির ঘটনা মোটেই বিরল নয়। পথেঘাটে, অলিতে গলিতে এমনকি অনেকক্ষেত্রে নিজ ঘরেও যেনো নারীর বিচরণ রীতিমতো অস্বস্তির। স্পষ্টতই, নির্বিঘেœ চলাফেরার পথ এদেশের মেয়েদের জন্য অনেকটাই রুদ্ধ। তাই ভালো-মন্দ যেকোন পথে বিচ্ছিন্ন পরিক্রমার সঞ্চারণে এদেশের নারীরা সংকীর্ণ সীমাবদ্ধতায় বসবাস করেন। শৈশব, কৈশোর, যৌবন আর বার্ধক্য কোনো বাঁকেই তাদের নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করা যায়নি। নারী তার সম্ভ্রম রক্ষার্থে মনে মনে মসজিদ, মন্দির আর গীর্জার শরণাপন্ন হন। সমাজ ও রাষ্ট্র নারীর যথাযথ অধিকার নিশ্চিত করতে পারছে কিনা, বাস্তবতার প্রেক্ষিতে এই প্রশ্ন অবান্তর। কিন্তু কোনো সভ্য সমাজ ও রাষ্ট্র এই দায় কী এড়াতে পারে?
গীতিকবির ভাষায় বলতে হয়-‘আমি গাই পরজীবী শহরের গান, আমি বাই উজান ¯্রােতের সাম্পান, আমি যা দেখি তুমি তা দেখো কি, আমি যা ভাবি তুমি তা ভাবো কি? আমি যা শুনি তুমি তা শোনো কি?
লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশ