নিজস্ব প্রতিবেদক : আঁচড়ানোর পর ওঠা চুল কিংবা সেলুনের চুলও এখন ফেলনা নয়। একশ্রেণির ফেরিওয়ালা বাড়ি বাড়ি ঘুরে এসব চুল সংগ্রহ করেন। ফেলনা এই চুলের দামও একেবারে কম নয়। কয়েক হাত বদল করে সেই চুল যায় কারখানায়। তৈরি হয় পরচুলা। যার গন্তব্য দেশের সীমানা পেরিয়ে ইউরোপ-আমেরিকা। খুব বেশি না হলেও প্রতিবছর বৈদেশিক মুদ্রা আনছে এই ফেলনা চুল। বাড়ছে কর্মসংস্থান। গ্রামীণ নারীদের বড় একটি অংশ যুক্ত এ কাজে। মাসে ৮ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করছেন তারা। বাংলাদেশে আসছে কোটি কোটি ডলার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাধীনতাযুদ্ধের পর কয়েকজন উদ্যোক্তা এই ব্যবসা শুরু করেন। তবে দুই দশকে তা সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। সম্ভাবনা দেখে এ খাতে আসে বিদেশি উদ্যোগ। লক্ষাধিক মানুষ এই শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। আট বছর আগেও উইগ বা পরচুলা রপ্তানি করে কোটি ডলার অর্জন ছিল স্বপ্নের মতো। তবে এই চিত্র বদলেছে। সামনে দেখা দিচ্ছে আরও সম্ভাবনা।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, অপ্রচলিত এই পণ্যটি রপ্তানি করে প্রথমবার উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আসে ২০১৫ -১৬ অর্থবছরে। ওই সময় পরচুলা রপ্তানি করে ১ কোটি ১৪ লাখ মার্কিন ডলার আয় করেন উদ্যোক্তারা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পরচুলা রপ্তানি করে আয় হয় ১ কোটি ৯৫ লাখ ৫৮ হাজার ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২ কোটি ৩০ লাখ ডলার, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তা বেড়ে ৩ কোটি ২৫ লাখ ডলার হয়। করোনার মধ্যেও ২০২০-২১ অর্থবছরে পরচুলা রপ্তানি এক লাফে বেড়ে ৫ কোটি ৭১ লাখ ডলার হয়, ২০২১-২২ অর্থবছরে তা পৌঁছায় ১০ কোটি ৫৮ লাখ ডলারে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ছিল প্রায় সাড়ে ৬৫ শতাংশ বেশি। ১০ বছরে রপ্তানি বেড়েছে ১০ গুণেরও বেশি।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন- চীন, কোরিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা ও ইউরোপের দেশগুলোতে উইগ বা পরচুলার প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বিভিন্ন অসুস্থাজনিত কারণে যাদের মাথার চুল পড়ে যায় তারাসহ ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিজ উইগের বড় ক্রেতা। হ্যালোইন, ক্লাউন, ক্যারিবিয়ান প্যারেড, সাম্বা ড্যান্সসহ বিভিন্ন উৎসবে যায় বাংলাদেশের পরচুলা।
সাভারের আরিফ মাহমুদ নামে এক উদ্যোক্তা জাগো নিউজকে বলেন, কারখানাগুলোতে পরচুলাসহ নানান পণ্য উৎপাদন করা হয়। একটি ছোট পরচুলা তৈরি করতে সময় লাগে দুই থেকে চারদিন। মানুষের চুল সংগ্রহ করে চীন, কোরিয়া সিনথেটিক ফাইবার এনে পরচুলার ক্যাপ তৈরি করা হয়। এসব ক্যাপ রপ্তানি করা হয় বিশ্বের ৩০টির বেশি দেশে।