প্রত্যাশা ডেস্ক: পবিত্র হজ পালনের লক্ষ্যে সৌদি আরবের পবিত্র মক্কায় ১৩ লাখের বেশি হজযাত্রী জমায়েত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৫ জুন) চলতি বছরের হজ শুরু হবে। হজের আগেই সৌদি আরবে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে। অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে নিরাপদে হজ পালনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা জোরদার করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ।
সৌদি আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, চলতি সপ্তাহে মক্কা ও আশপাশের অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যেতে পারে। এ পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় জনসমাগম ঘিরে নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
হজ ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের একটি। শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম প্রত্যেক মুসলিমের জীবনে অন্তত একবার হজ পালন করা ফরজ। সৌদি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত শুক্রবার পর্যন্ত ১৩ লাখের বেশি হজযাত্রী সৌদি আরবে পৌঁছেছেন। এবারের হজ ব্যবস্থাপনায় ৪০টির বেশি সরকারি সংস্থা এবং আড়াই লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী মোতায়েন করা হয়েছে।
২০২৪ সালের ভয়াবহ গরমে কয়েক শ হজযাত্রীর মৃত্যু হয়েছিল। তাই এবারের প্রস্তুতিতে তাপজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় জোর দেওয়া হয়েছে।
সৌদি হজমন্ত্রী তৌফিক আল-রাবিয়াহ জানিয়েছেন, এবার মক্কায় ছায়াযুক্ত এলাকার পরিমাণ বাড়িয়ে ৫০ হাজার বর্গমিটার (১২ একর) করা হয়েছে। মোতায়েন করা হচ্ছে অতিরিক্ত কয়েক হাজার চিকিৎসক। চার শতাধিক শীতলীকরণ ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে।
নজরদারিতে যুক্ত হচ্ছে সর্বাধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি। হজ পালনকারী লাখো মানুষের জনস্রোত নিয়ন্ত্রণে ড্রোন থেকে প্রাপ্ত ভিডিও ও তথ্য বিশ্লেষণ করে সহায়তা নেওয়া হবে।
‘আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়ামত’: মসজিদ আল-হারামের পাশে দাঁড়িয়ে ফিলিপাইনের আইনজীবী ও শরিয়াহ্ পরামর্শক আবদুল মাজিদ আতাই বলেন, ‘এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে একটা বড় নিয়ামত। এখানে এসে আমরা খুব শান্তি ও নিরাপত্তা অনুভব করছি।’
নাইজেরিয়ার ২৭ বছর বয়সী আবদুলহামিদ টানা দ্বিতীয়বার হজ পালন করতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি খুব খুশি। কিন্তু এই গরমে আমি রোদচশমা ছাড়া বের হচ্ছি না। মক্কার আবহাওয়া প্রচণ্ড গরম।’
হজের বেশির ভাগ আনুষ্ঠানিকতা জুন মাসের প্রচণ্ড দাবদাহে সম্পন্ন করতে হবে। গত বছর হজের সময় তাপমাত্রা বেড়ে ৫১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দাঁড়িয়েছিল। তখন ১ হাজার ৩০১ জন হজযাত্রী প্রাণ হারিয়েছিলেন, যাঁদের অধিকাংশই ছিলেন অননুমোদিত। বিশ্লেষকদের ধারণা, এসব হজযাত্রীর সঙ্গে বৈধ কাগজপত্র না থাকায় তাঁরা তাপনিয়ন্ত্রিত তাঁবু বা বাসের সুবিধা নিতে পারেননি।
তবে জার্মানভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ক্লাইমেট অ্যানালিটিকসের ফাহাদ সাঈদ বলেন, ‘তাপমাত্রার তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে তাদের [সৌদির] অভিযোজন ব্যবস্থাগুলো ব্যর্থ হয়েছিল।’
অননুমোদিত হজযাত্রায় কড়াকড়ি: চলতি বছর হজ শুরুর আগে সৌদি কর্তৃপক্ষ অননুমোদিত হজযাত্রীদের বিরুদ্ধে কড়াকড়ি অভিযান শুরু করেছে। হজের সময় অনুমতি ছাড়া মক্কায় প্রবেশ না করতে ড্রোন নজরদারি এবং তল্লাশি বাড়ানো হয়েছে। তা ছাড়া মোবাইলে সতর্কবার্তা পাঠিয়েও এমনটি না করতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।
হজের অনুমতিপত্র (পারমিট) দেশভিত্তিক কোটাপদ্ধতিতে বরাদ্দ দেওয়া হয়। ব্যক্তিরা তা লটারির মাধ্যমে পেয়ে থাকেন। উচ্চ খরচের কারণে অনেকেই অনুমতি ছাড়াই হজ পালনের চেষ্টা করেন। তবে ধরা পড়লে তাঁদের মোটা অঙ্কের জরিমানা গুনতে হয়। গ্রেফতার ও বহিষ্কার করা হয় এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০ বছরের জন্য সৌদি আরবে প্রবেশে নিষিদ্ধ করা হয়।
২০১৫ সালে মিনায় ‘শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ’ করার সময় ভয়াবহ পদদলনের ঘটনা ঘটে। এতে প্রায় ২ হাজার ৩০০ জন প্রাণ হারান। হজ ইতিহাসের সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।
হজ ও ওমরাহ থেকে প্রতিবছর সৌদি সরকার বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। হজ বছরের নির্দিষ্ট সময়ে অনুষ্ঠিত হলেও ওমরাহ সারা বছর করা যায়।
হজ সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত: আরব নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত রোববার জেদ্দায় ৪৯তম গ্র্যান্ড হজ সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত হয়েছে। সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়, সিনিয়র স্কলার্স কাউন্সিল এবং কিং আবদুল আজিজ ফাউন্ডেশন ফর রিসার্চ অ্যান্ড আর্কাইভস (দারাহ) যৌথভাবে এই সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে বিশ্বের ৫৭টি দেশ থেকে ৫০০ জনেরও বেশি ধর্মীয় নেতা, পণ্ডিত ও গবেষক অংশ নেন।
এ বছরের সিম্পোজিয়ামের থিম ছিল-‘হজে সক্ষমতা ও আধুনিক উন্নয়ন’। আলোচনায় হজের ইসলামি বিধান ও আধুনিক বাস্তবতার মধ্যে সমন্বয়, প্রযুক্তি ও স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন এবং লজিস্টিক্যাল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।