ঢাকা ০২:০৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫
দুদক চেয়ারম্যান বললেন

পদ্মা সেতু দুর্নীতির মামলা থেকে গায়ের জোরে দায়মুক্তি দেওয়া হয়

  • আপডেট সময় : ০৮:৫১:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫
  • ১ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পে অনিয়মের যথেষ্ট উপাদান ও প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও গায়ের জোরে অভিযুক্তদের মামলা থেকে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন।

মঙ্গলবার (১ জুলাই) বিকেলে সেগুনবাগিচায় সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়ে যে বিভ্রান্তি ছিল সেটা নিয়ে মামলা হয়। মামলার উপাদানগুলো সঠিক থাকা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত আদালতে এফআরটি (ফাইনাল রিপোর্ট ট্রু) বা নিষ্পত্তি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। গত ডিসেম্বরে দায়িত্ব নেওয়ার পর মামলাটি আবার চালু করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর আমরা এটি পুনরায় বিবেচনা করি এবং আমাদের মনে হয় যে, অনেকটা গায়ের জোরে অভিযুক্তদের মামলা থেকে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এই মামলাটিকে পুনরুজ্জীবিত করা প্রয়োজন। এজন্য আমরা নতুন করে তদন্ত শুরু করি।
২০১২ সালে বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির আশঙ্কায় অর্থায়ন স্থগিত করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক মহলের চাপের মুখে এসে একই বছরের ১৭ ডিসেম্বর বনানী থানায় মামলা দায়ের করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তৎকালীন উপপরিচালক আবদুল্লাহ আল জাহিদ। মামলায় মোট সাতজনকে আসামি করা হয়।
মামলায় আসামিরা ছিলেন- সেতু বিভাগের তৎকালীন সচিব মোশাররফ হোসেইন ভুঁইয়া, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাজী মো. ফেরদৌস, সাবেক সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রিয়াজ আহমেদ জাবের, ইপিসির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মোস্তফা, কানাডীয় প্রকৌশলী প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট কেভিন ওয়ালেস, আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগের সাবেক ভাইস-প্রেসিডেন্ট রমেশ শাহ ও সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ ইসমাইল।
মামলার প্রধান আসামি ছিলেন তৎকালীন সেতু বিভাগের সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া। তাকে গ্রেফতার করে সাময়িকভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়, তবে পরে তিনি জামিনে মুক্তি পেয়ে পুনরায় চাকরিতে ফিরে আসেন।
পদ্মা সেতুর অনিয়ম প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, সরকারি বিধি-বিধান মেনে পি পিএ- পি পি আর পুরোপুরি অনুসরণ করেই কাজ করতে হয়। পিপিএ পিপিআর অনুসরণ করে যে কাজ করার কথা তাতে আমরা যে মূল্যায়ন কমিটি গঠন করি, সেই কমিটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে একাধিকবার পরিবর্তন করা হয়েছে। অসৎ উদ্দেশ্য কিংবা অপরাধ প্রবণতার কারণে এটি করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বড় প্রকল্প করতে গেলে একই জিনিস অনেকবার ব্যবহার করার সুযোগ থাকে সেক্ষেত্রে যে জিনিস একবার ক্রয় করলে বারবার ব্যবহার করতে পারি সেটা একাধিকবার ক্রয় দেখানো সমীচীন না। এরকম কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। আমরা যখন যৌথ মূল্যায়ন করি কনসাল্টেন্টের তাদের যেসব সিভি মূল্যায়ন করা কথা ছিল, সেগুলো সেভাবে করিনি। এখানে অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়েছে।
অভিযোগ করে দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন বলেন, মূল্যায়ন কার্যক্রম চলাকালে মূল্যায়ন কমিটির সদস্যদের যে ম্যান্ডেটরি কিছু সাক্ষাৎ ও অন্যান্য তথ্য গ্রহণ করে পুরোপুরিভাবে বিষয়টি উদঘাটন করা দরকার ছিল সেটা সেভাবে হয়নি। ফলশ্রুতিতে আমরা মনে করি আগের যে প্রতিবেদন বাধ্য হয়ে হোক আর যেভাবেই হোক যে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে সেটি ত্রুটি ও অসম্পূর্ণ। আমার তদন্তকারী কর্মকর্তা একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিবেদন দাখিল করবেন এবং মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হবে ওই সময় যারা প্রতিবেদন দিয়েছিলেন তাদের আবার ডাকা হবে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমবার যাদের আসামি করা হয়েছিল তাদের মধ্যে সাবেক সচিব মোশারফ হোসেন ভুঁইয়া,তত্ত্বাবধয়ক প্রকৌশলী কাজী মোহাম্মদ ফেরদৌস, নির্বাহী প্রকৌশলী রিয়াজ আহমেদ জাবের, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহম্মদ মোস্তফা, সাবেক পরিচালক মোহমদ ইসমাইল, এসএনসি লাভালিনের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এখন তদন্ত করতে গিয়ে আরো নাম এলে তাদের অন্তর্ভুক্ত করবো।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, কমিশন এক ধরনের স্বাধীনতা ভোগ করে। আমরা আমরা চেষ্টা করবো যদি কমিশন কমিশনের হাতে কোনো ভ্রান্তি ত্রুটি ব্যত্যয় ঘটে থাকে সেটা শনাক্ত করবো। প্রাথমিক অনুসন্ধানে আমরা মনে করছি যে এফআরটি হওয়াটা ঠিক হয়নি। অথবা আমরা ঠিকভাবে উপস্থাপিত করতে পারিনি। আমরা এখন তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর অপেক্ষা করবো।
গত ১০ বছর আগে নিষ্পত্তি হওয়া আলোচিত পদ্মা সেতু দুর্নীতি মামলা পুনরায় তদন্তের জন্য গত ৩১ ডিসেম্বর সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে গণমাধ্যমকে বলেন, ঘুষ লেনদেনের ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্মাণকাজে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নির্মাণ তদারকি পরামর্শক নিয়োগ সংক্রান্ত দরপত্রের অন্যতম দরদাতা ‘ঝঘঈ-খধাধষরহ ওহঃবৎহধঃড়হধষ ওহপ’ কে কার্যাদেশ পাইয়ে দেওয়ার অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র করায় বনানী থানার মামলা রুজু করা হয়। পরবর্তীতে তদন্তশেষে ২০১৪ সালে আদালতে এফআরটি দাখিল করা হয়। ওই মামলা পুনঃপর্যালোচনা করে কমিশন মামলাটি অধিকতর তদন্তের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানী থানায় (মামলা নং ১৯) মোট সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক। দীর্ঘ দেড় বছরের অধিক সময় তদন্ত শেষে কমিশন ২০১৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মামলাটি থেকে আসামিদের অব্যাহতি দেয় দুদক। যা ওই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর আদালত গ্রহণ করে। দুদকের তৎকালীন উপ-পরিচালক মীর্জা জাহিদুল আলমের নেতৃত্বাধীন একটি টিম এ মামলাটি তদন্ত করে।
পদ্মা সেতু দুর্নীতির ষড়যন্ত্র মামলার এজাহারে সন্দেহভাজনের তালিকায় ছিলেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও প্রাক্তন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী। মামলাটির এফআরটির মাধ্যমে তারাও এ অভিযোগ থেকে রেহাই পায়। ওই মামলার এফআরটির বিষয়ে তৎকালীন দুদক চেয়ারম্যান বদিউজ্জামান জানিয়েছিলেন, ওই মামলাটি ছিল দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের মামলা। তদন্তে আরো তথ্য পাওয়ার আশায় আমরা মামলা দায়ের করি। তদন্তকালে দেশে এবং কানাডায় গিয়ে দুদকের তদন্ত দল অভিযান চালায়। দুদক টিম কানাডা গিয়ে কিছু কাগজপত্র সংগ্রহ করে। বিশ্বব্যাংকের আশ্বাসের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করা হলেও মামলা প্রমাণের জন্য দাতা সংস্থা ও কানাডা থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ফলে শেষ পর্যান্ত মামলা থেকে সব আসামিদের অব্যাহতির (এফআরটি) সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

এই রক্তস্রোত যেন বৃথা না যায়, ঐক্য বজায় রাখতে হবে: খালেদা জিয়া

দুদক চেয়ারম্যান বললেন

পদ্মা সেতু দুর্নীতির মামলা থেকে গায়ের জোরে দায়মুক্তি দেওয়া হয়

আপডেট সময় : ০৮:৫১:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পে অনিয়মের যথেষ্ট উপাদান ও প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও গায়ের জোরে অভিযুক্তদের মামলা থেকে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন।

মঙ্গলবার (১ জুলাই) বিকেলে সেগুনবাগিচায় সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়ে যে বিভ্রান্তি ছিল সেটা নিয়ে মামলা হয়। মামলার উপাদানগুলো সঠিক থাকা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত আদালতে এফআরটি (ফাইনাল রিপোর্ট ট্রু) বা নিষ্পত্তি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। গত ডিসেম্বরে দায়িত্ব নেওয়ার পর মামলাটি আবার চালু করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর আমরা এটি পুনরায় বিবেচনা করি এবং আমাদের মনে হয় যে, অনেকটা গায়ের জোরে অভিযুক্তদের মামলা থেকে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এই মামলাটিকে পুনরুজ্জীবিত করা প্রয়োজন। এজন্য আমরা নতুন করে তদন্ত শুরু করি।
২০১২ সালে বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির আশঙ্কায় অর্থায়ন স্থগিত করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক মহলের চাপের মুখে এসে একই বছরের ১৭ ডিসেম্বর বনানী থানায় মামলা দায়ের করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তৎকালীন উপপরিচালক আবদুল্লাহ আল জাহিদ। মামলায় মোট সাতজনকে আসামি করা হয়।
মামলায় আসামিরা ছিলেন- সেতু বিভাগের তৎকালীন সচিব মোশাররফ হোসেইন ভুঁইয়া, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাজী মো. ফেরদৌস, সাবেক সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রিয়াজ আহমেদ জাবের, ইপিসির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মোস্তফা, কানাডীয় প্রকৌশলী প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট কেভিন ওয়ালেস, আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগের সাবেক ভাইস-প্রেসিডেন্ট রমেশ শাহ ও সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ ইসমাইল।
মামলার প্রধান আসামি ছিলেন তৎকালীন সেতু বিভাগের সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া। তাকে গ্রেফতার করে সাময়িকভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়, তবে পরে তিনি জামিনে মুক্তি পেয়ে পুনরায় চাকরিতে ফিরে আসেন।
পদ্মা সেতুর অনিয়ম প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, সরকারি বিধি-বিধান মেনে পি পিএ- পি পি আর পুরোপুরি অনুসরণ করেই কাজ করতে হয়। পিপিএ পিপিআর অনুসরণ করে যে কাজ করার কথা তাতে আমরা যে মূল্যায়ন কমিটি গঠন করি, সেই কমিটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে একাধিকবার পরিবর্তন করা হয়েছে। অসৎ উদ্দেশ্য কিংবা অপরাধ প্রবণতার কারণে এটি করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বড় প্রকল্প করতে গেলে একই জিনিস অনেকবার ব্যবহার করার সুযোগ থাকে সেক্ষেত্রে যে জিনিস একবার ক্রয় করলে বারবার ব্যবহার করতে পারি সেটা একাধিকবার ক্রয় দেখানো সমীচীন না। এরকম কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। আমরা যখন যৌথ মূল্যায়ন করি কনসাল্টেন্টের তাদের যেসব সিভি মূল্যায়ন করা কথা ছিল, সেগুলো সেভাবে করিনি। এখানে অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়েছে।
অভিযোগ করে দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন বলেন, মূল্যায়ন কার্যক্রম চলাকালে মূল্যায়ন কমিটির সদস্যদের যে ম্যান্ডেটরি কিছু সাক্ষাৎ ও অন্যান্য তথ্য গ্রহণ করে পুরোপুরিভাবে বিষয়টি উদঘাটন করা দরকার ছিল সেটা সেভাবে হয়নি। ফলশ্রুতিতে আমরা মনে করি আগের যে প্রতিবেদন বাধ্য হয়ে হোক আর যেভাবেই হোক যে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে সেটি ত্রুটি ও অসম্পূর্ণ। আমার তদন্তকারী কর্মকর্তা একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিবেদন দাখিল করবেন এবং মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হবে ওই সময় যারা প্রতিবেদন দিয়েছিলেন তাদের আবার ডাকা হবে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমবার যাদের আসামি করা হয়েছিল তাদের মধ্যে সাবেক সচিব মোশারফ হোসেন ভুঁইয়া,তত্ত্বাবধয়ক প্রকৌশলী কাজী মোহাম্মদ ফেরদৌস, নির্বাহী প্রকৌশলী রিয়াজ আহমেদ জাবের, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহম্মদ মোস্তফা, সাবেক পরিচালক মোহমদ ইসমাইল, এসএনসি লাভালিনের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এখন তদন্ত করতে গিয়ে আরো নাম এলে তাদের অন্তর্ভুক্ত করবো।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, কমিশন এক ধরনের স্বাধীনতা ভোগ করে। আমরা আমরা চেষ্টা করবো যদি কমিশন কমিশনের হাতে কোনো ভ্রান্তি ত্রুটি ব্যত্যয় ঘটে থাকে সেটা শনাক্ত করবো। প্রাথমিক অনুসন্ধানে আমরা মনে করছি যে এফআরটি হওয়াটা ঠিক হয়নি। অথবা আমরা ঠিকভাবে উপস্থাপিত করতে পারিনি। আমরা এখন তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর অপেক্ষা করবো।
গত ১০ বছর আগে নিষ্পত্তি হওয়া আলোচিত পদ্মা সেতু দুর্নীতি মামলা পুনরায় তদন্তের জন্য গত ৩১ ডিসেম্বর সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে গণমাধ্যমকে বলেন, ঘুষ লেনদেনের ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্মাণকাজে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নির্মাণ তদারকি পরামর্শক নিয়োগ সংক্রান্ত দরপত্রের অন্যতম দরদাতা ‘ঝঘঈ-খধাধষরহ ওহঃবৎহধঃড়হধষ ওহপ’ কে কার্যাদেশ পাইয়ে দেওয়ার অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র করায় বনানী থানার মামলা রুজু করা হয়। পরবর্তীতে তদন্তশেষে ২০১৪ সালে আদালতে এফআরটি দাখিল করা হয়। ওই মামলা পুনঃপর্যালোচনা করে কমিশন মামলাটি অধিকতর তদন্তের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানী থানায় (মামলা নং ১৯) মোট সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক। দীর্ঘ দেড় বছরের অধিক সময় তদন্ত শেষে কমিশন ২০১৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মামলাটি থেকে আসামিদের অব্যাহতি দেয় দুদক। যা ওই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর আদালত গ্রহণ করে। দুদকের তৎকালীন উপ-পরিচালক মীর্জা জাহিদুল আলমের নেতৃত্বাধীন একটি টিম এ মামলাটি তদন্ত করে।
পদ্মা সেতু দুর্নীতির ষড়যন্ত্র মামলার এজাহারে সন্দেহভাজনের তালিকায় ছিলেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও প্রাক্তন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী। মামলাটির এফআরটির মাধ্যমে তারাও এ অভিযোগ থেকে রেহাই পায়। ওই মামলার এফআরটির বিষয়ে তৎকালীন দুদক চেয়ারম্যান বদিউজ্জামান জানিয়েছিলেন, ওই মামলাটি ছিল দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের মামলা। তদন্তে আরো তথ্য পাওয়ার আশায় আমরা মামলা দায়ের করি। তদন্তকালে দেশে এবং কানাডায় গিয়ে দুদকের তদন্ত দল অভিযান চালায়। দুদক টিম কানাডা গিয়ে কিছু কাগজপত্র সংগ্রহ করে। বিশ্বব্যাংকের আশ্বাসের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করা হলেও মামলা প্রমাণের জন্য দাতা সংস্থা ও কানাডা থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ফলে শেষ পর্যান্ত মামলা থেকে সব আসামিদের অব্যাহতির (এফআরটি) সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।