নিজস্ব প্রতিবেদক :পদ্মা সেতুতে চুমু খেলেন শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য ইকবাল হোসেন অপু। চুম্বনের ছবি সোমবার রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ছবিতে ইকবাল হোসেন অপুর সঙ্গে সড়কে চুম্বন খান তার কর্মী আওয়ামী লীগের উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক মুজাফফর জমাদ্দার ও আরেকজন। এসময় পেছনে কয়েকজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
গতকাল মঙ্গলবার একটি ভিডিও বার্তায় ক্ষমতাসীন দলের এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘আমার গাড়িটি যথন পদ্মা সেতুর ওপরে যায়, তখন আমি গাড়িটি থামিয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে যাই। আমি তখন আমার মাথা অবনত করে আমাদের মহান রাব্বুল আলামিন সৃষ্টিকর্তার কাছে মোনাজাত করেছি। মোনাজাতে আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করেছি আমাদের প্রধানমন্ত্রী যেন হাজার বছর বেঁচে থাকেন। এই বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশে রূপান্তরিত করতে পারেন এবং জাতির পিতার সুযোগ্য উত্তরসুরী, রক্তের উত্তরসুরী, আদর্শের উত্তরসুরী জননেত্রী শেখ হাসিনা এই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে পারেন আল্লাহর কাছে এই প্রার্থনাই করেছি।’
দ্বিতীয় দিন টোল আদায় প্রায় ২ কোটি টাকা : পদ্মা সেতু খোলার পর দ্বিতীয় দিনে প্রায় দুই কোটি টাকার টোল আদায় হয়েছে। এ সময় সেতুতে মোটরসাইকেল ওঠা বন্ধ হওয়ায় যানবাহনের সংখ্যা কমে গেছে এক-চতুর্থাংশ। টোলের পরিমাণ কমে এসেছে পৌনে এক কোটি টাকা।
গত শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের দিন যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। পরদিন রোববার সকাল ছয়টা থেকে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। রোববার প্রথম ২৪ ঘণ্টায় ৬১ হাজার ৮৫৬টি যান চলে। গাড়ি পার হয়ে মোট টোল আদায় হয়েছিল ২ কোটি ৭৫ লাখ ১৩ হাজার ৬০০ টাকা।
প্রথম দিনে মোটরসাইকেলে সেতুতে ওঠায় মানা ছিল না। প্রতিটি মোটরসাইকেল ১০০ টাকা টোল দিয়ে চলাচল করছিল। তবে কিছু ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা ও একটি দুর্ঘটনায় দুজনের মৃত্যুর পর গতকাল সোমবার সকাল ৬টা থেকে মোটরসাইকেলের সেতুতে ওঠা নিষিদ্ধ করা হয়। সেতু কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ১৫ হাজার ২৭৪টি যানবাহন পার হয়েছে। এখান থেকে টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৯৭ লাখ ৫৬ হাজার ৬০০ টাকা। এ সময়ে মাওয়া প্রান্ত দিয়ে সেতুতে উঠেছে ৭ হাজার ৫৮৬টি যানবাহন। টোল আদায় হয়েছে ৯৮ লাখ ১৮ হাজার ৫০ টাকা। আর জাজিরা প্রান্ত থেকে যানবাহন উঠেছে ৭ হাজার ৬৮৮টি। টোল আদায় হয়েছে ৯৯ লাখ ৩৮ হাজার ৫৫০ টাকা। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তোফাজ্জল হোসেন গতকাল মঙ্গলবার সকালে বলেন, সকাল থেকে খুব স্বাভাবিকভাবে যানবাহন চলাচল করছে। সেতুর মাওয়া প্রান্তে কোনো চাপ নেই। মোটরসাইকেল পারাপার বন্ধ রয়েছে।
‘পণ্য’ হিসেবে পার হচ্ছে মোটরসাইকেল : পদ্মা সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল পারাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পিকআপ ভ্যানে মোটরসাইকেল নিয়ে সেতু পার হওয়াতেও বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন মোটরসাইকেলচালকরা। তবে শর্তসাপেক্ষে মোটরসাইকেল পিকআপে তুলে ঢেকে পণ্যের গাড়ি বলে সেতু পার করা হচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দেখা গেছে, মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মাওয়া প্রান্তের টোল প্লাজায় মোটরসাইকেলবোঝাই পিকআপগুলো থেকে টোল আদায় করা হচ্ছে। একেকটি পিকঅ্যাপে ১০-১২টি মোটরসাইকেল নিয়ে সেতু দিয়ে পার হতে দেখা যায়। মোটরসাইকেলচালক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা থেকে ফরিদপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছি। পদ্মা সেতুর টোল প্লাজায় এসে দেখি, মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ। এরপর আমি শিমুলিয়া ফেরিঘাটে যাই। সেখানে দেখি, তেমন যানবাহন নেই। অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর নিরূপায় হয়ে টোল প্লাজায় ফিরে আসি। পরে আমরা কয়েকজন মিলে একটি পিকআপ ভ্যান ভাড়া করি। মোটরসাইকেল পিকআপে তুলে দিয়েছে। এখন আমরা বাসে সেতুর পার হবো।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কাছ থেকে প্রতিটি মোটরসাইকেলের জন্য ভাড়া নেওয়া হয়েছে ৪৫০ টাকা। স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হলো ঠিকই, কিন্তু আমাদের ভোগান্তি আরও বেড়ে গেল। আমরা এর থেকে পরিত্রাণ চাই।’ পিকআপচালক আমির হেসেন বলেন, ‘পদ্মা সেতুতে শুধু মোটরসাইকেল যাওয়া নিষেধ। তাই আমরা প্রতিটি পিকআপে ১০-১২ টি মোটরসাইকেল রশি দিয়ে বেঁধে সেতুর এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে দিয়ে আসছি।’ মাওয়া টোল প্লাজায় কর্মরত বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তোফাজ্জল হোসেন জানান, পিকআপ ভ্যানে মোটরসাইকেল কাপড় বা কোনও কিছু দিয়ে ঢেকে পার করা হলে, সেটা পণ্যবাহী গাড়ি হিসেবে ধরা হয়। সেক্ষেত্রে টোল পরিশোধ করে সেতু পার হওয়া যাবে। তিনি আরও জানান, সেতুতে মোটরসাইকেলের জন্য বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছিল। তাই সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করে কর্তৃপক্ষ। তবে পণ্য হিসেবে পিকাপে মোটরসাইকেল পার হতেই পারে। মোটরসাইকেল গেলেও কোনও চালক এভাবে যেতে পারবেন না। সকাল থেকে সুশৃঙ্খলভাবে যানবাহন চলাচল করছে। সেতুর দুই প্রান্তে সেনাবাহিনী ও পুলিশ টহলে রয়েছে। এছাড়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত রয়েছেন।
পদ্মা সেতুতে বাইক নিয়ে সিদ্ধান্ত স্পিড গান-সিসি ক্যামেরা বসানোর পর: প্রতিমন্ত্রী : পদ্মা সেতুতে মোটর সাইকেল আবার চলবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত রাডার স্পিড গান ও সিসি ক্যামেরা বসানোর পর নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। পদ্মা সেতু চালুর একদিন পরই মোটর বাইক ওঠা বন্ধ করে দেওয়ার পর বাইকারদের দুর্ভোগের প্রেক্ষাপটে গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে একথা জানান তিনি। গত শনিবার উদ্বোধনের পর রোববার সকাল ৬টায় খুলে দেওয়া হয় বহু প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু। ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুতে উঠতে ভোরেই শুরু হয় লাইন। সেতুতে ওঠার এই মিছিলে সংখ্যায় সব চেয়ে বেশি ছিল মোটর সাইকেল। ১০০ টাকা টোল দিয়ে সেতুতে উঠে বাইকারদের অনেকেই নিয়ম না মেনে হুল্লোড়ে মাতেন। সন্ধ্যায় সেতুতে মোটর সাইকেলে চড়ে মোবাইলে ভিডিও করার সময় দুর্ঘটনায় পড়ে প্রাণ যায় দুই তরুণের। তারপর সেতুতে মোটরসাইকেল ওঠা নিষিদ্ধের ঘোষণা দেয় সেতু বিভাগ। সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন বলেছিলেন, পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এ নিষেধাজ্ঞা তোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। প্রতিমন্ত্রী খালিদ বলেন, “এটা যে অনির্দিষ্টকালীন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, ব্যাপারটা তা নয়। এটা এখন বন্ধ আছে, এটা একটা নিশ্চয়ই….মোটরবাইকের সম্পর্কে যেটা বলা হয়েছে সেখানে এখন স্পিড গান, সিসি টিভি বসানো হবে। সেগুলো স্থাপনের পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত।” সিসি ক্যামেরায় নির্দিষ্ট স্থানের ভিডিও যেমন ধারণ করা যায়, তেমনি রাডার স্পিড গান যন্ত্রের মাধ্যমে চলন্ত গাড়ির গতি পরিমাপ করা যায়, যা বিভিন্ন দেশে সড়কে শৃঙ্খলা বজায়ে ব্যবহার হয়ে থাকে।
পদ্মা সেতুতে চুমু খেলেন সংসদ সদস্য ইকবাল
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ