ঢাকা ০৮:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫

পদ্মা ব্যাংক সঙ্কটের সমাধান কোন পথে?

  • আপডেট সময় : ১২:১৪:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • ৮৩ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : নানাবিধ কারণে আলোচিত পদ্মা ব্যাংক টাকার অভাবে পড়ে সরকারি কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার যে প্রস্তাব সরকারকে দিয়েছে, তা মন্ত্রণালয়ের হাত ঘুরে পৌঁছেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম সম্প্রতি বলেন, “পদ্মা ব্যাংককে সরকারি ব্যাংকের সাথে মার্জার বা অ্যাকুইজেশনের একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে এসেছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনও নেয়নি।” এদিকে বিদেশী বিনিয়োগের জন্যও খ্যাতনামা আর্ন্তজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক ডেল মর্গানের সঙ্গে সম্প্রতি চুক্তি সই করেছে পদ্মা ব্যাংক। ব্যাংকের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, এ বিনিয়োগের পরিমাণ ৭০ কোটি ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকা হতে পারে। বিপুল এ বিনিয়োগ আনতে মধ্যস্থতা করবে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক খ্যাতনামা বিনিয়োগ ব্যাংক ডেলমর্গান অ্যান্ড কোম্পানি। এ লক্ষ্যে সম্প্রতি প্রতিষ্ঠান দুটির মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে। পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এহসান খসরু বলেন, আগামী ৪ থেকে ৬ মাসের মধ্যেই এ বিনিয়োগ আসবে। বিনিয়োগের মধ্যে ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা আসবে ইক্যুইটি বিনিয়োগ হিসেবে। এ ছাড়া বাকি টাকা আসবে ঋণ হিসেবে। ২ সেপ্টেম্বর পদ্মা ব্যাংক যুক্তরাষ্ট্রের ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক ডেলমর্গান অ্যান্ড কোম্পানির সঙ্গে একটি এমওইউ স্বাক্ষর করে। সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত এবং ডেলমর্গানের চেয়্যারম্যান রব ডেলগাডো উপস্থিত ছিলেন। পদ্মা ব্যাংকের পক্ষে এমডি ও সিইও এহসান খসরু এবং ডেলমর্গানের পক্ষে প্রেসিডেন্ট ও সিইও নিল মরগানবেসার এমওইউতে সই করেন। পদ্মা ব্যাংকের চেয়্যারম্যান এমওইউ স্বাক্ষরকে বাংলাদেশের আর্থিক খাতের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, পদ্মা ব্যাংক ‘এম অ্যান্ড এ’ (মার্জার অ্যান্ড অ্যাকুইজেশন) লেনদেনের আওতায় আন্তর্জাতিক আর্থিক ক্ষেত্রে প্রবেশের সুযোগ তৈরি করেছে। ডেলমর্গান অ্যান্ড কোম্পানির চেয়্যারম্যান রব ডেলগাডো বলেন, আমরা পদ্মা ব্যাংকের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত। এ ব্যাংক বিদেশি বিনিয়োগের যে সুযোগ সৃষ্টি করেছে, আমরা সেটি এগিয়ে নিতে পারব বলে আশা করছি। ডেলমর্গানের প্রেসিডেন্ট ও সিইও নিল মরগানবেসার বলেন, আমরা পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা টিমের মান এবং ভিশন দেখে মুগ্ধ হয়েছি। আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের কাছে পদ্মা ব্যাংককে তুলে ধরার ক্ষেত্রে আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা এবং বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ কাজে লাগানোর বিষয়ে অত্যন্ত উৎসাহী। প্রসঙ্গত, ডেলমর্গান অ্যান্ড কোম্পানি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক এবং আর্থিক খাতের পরামর্শদাতা কোম্পানি, যার সদরদপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত।
ফারমার্স ব্যাংক যখন পদ্মা ব্যাংক
যাত্রা শুরুর মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে ফারমার্স ব্যাংক দেউলিয়া হতে বসেছিল ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে। গ্রাহকদের আমানতের অর্থ ফেরত দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে এ ব্যাংকের ঋণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে ব্যাংকের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনা হয়, পুনর্গঠন করা হয় পরিচালনা পর্ষদ। ব্যাংকের নাম বদলে হয় পদ্মা ব্যাংক। সরকারের উদ্যোগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী এবং ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) মিলে পদ্মা ব্যাংকের মালিকানার বেশিরভাগ অংশ কিনে নেয়। সেজন্য ৭১৫ কোটি টাকার মূলধন যোগাতে হয়। কিন্তু তাতেও পদ্মা ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. এহসান খসরু গত ৮ জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে যে আবেদন করেন, সেখানে বলা হয়েছে, সরকারি ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া ৭১৫ কোটি টাকার মুলধন দিয়ে পদ্মা ব্যাংক ‘ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা’ করছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে ব্যাংক খাত ‘মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায়’ তারা মূলধন সঙ্কটে পড়েছে। পদ্মা ব্যাংক বর্তমানে যে আয় করছে, তার চেয়ে ব্যয় বেশি হচ্ছে। ২০২০ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের হিসাব তুলে ধরে প্রদত্ত চিঠিতে বলা হয়, ৫ হাজার ৬২২ কোটি টাকার সম্পদের বিপরীতে পদ্মা ব্যাংককে সুদ দিতে হচ্ছে। আর তাদের আয় হচ্ছে ১ হাজার ৪৯০ কোটি টাকার সম্পদ থেকে। ফলে ২০২০ সালে ব্যাংকের ১৬০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। ২০২১ সালে জুন পর্যন্ত সময়ে পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার চিত্র দেওয়া হয়েছে চিঠিতে। ২০২১ সালের প্রথম ছয় মাসে ১২০ কোটি টাকা পরিচালন লোকসান হয়েছে পদ্মা ব্যাংকের। যার মধ্যে ৭১ কোটি টাকা নিট সুদের মার্জিন। আর এভাবে লোকসান করতে থাকায় ব্যাংকের মূলধন কমে যাচ্ছে। চিঠিতে জানানো হয়েছে ২০১৯ সালে পদ্মা ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারস ইকুইটি ছিল ৪৮৭ কোটি টাকা। ২০২০ সালে সেটা কমে হয়েছে ৩৩২ কোটি টাকা। আর ২০২১ সালের প্রথম ৬ মাসে তা আরও কমে ২২১ কোটি টাকা হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে ২০২১ সালের শেষে শেয়ারহোল্ডারস ইকুইটি ১০০ কোটি টাকার নিচে চলে আসবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। শেয়ারহোল্ডারস ইকুইটি হচ্ছে সমস্ত দায় পরিশোধ করার পর মালিকরা যে টাকা পায়। চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের জুন মাসে এসে পদ্মা ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২১০০ কোটি টাকা। এ অবস্থায় ব্যাংক টিকিয়ে রাখতে দুই ধরনের প্রস্তাব দিয়েছেন পদ্মা ব্যাংকের এমডি। প্রথম প্রস্তাব হল, পদ্মা ব্যাংকে বিভিন্ন সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানের যে আমানত আছে, তার একটি অংশকে ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে’ শেয়ারে রূপান্তর করা। ন্যূনতম মূলধন পর্যাপ্ততা রক্ষার জন্য পদ্মা ব্যাংকের দরকার ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এর মধ্যেঅগ্রাধিকার শেয়ার ইস্যু করে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা এবং অতিরিক্ত সাবঅর্ডিনেটেড বন্ড ইস্যু করে বাকি ৬০০ কোটি টাকার যোগান পাওয়ার পথ বাৎলেছেন তিনি। চিঠিতে পদ্মা ব্যাংকের এমডি এহসান খসরু বলেন, পদ্মা ব্যাংককে দ্রুত সময়ে সোনালী, জনতা, অগ্রণী বা রূপালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা যেতে পারে। এর বাইরে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের (বিডিবিএল) সঙ্গেও একীভূত হওয়ার প্রস্তাব দেন তিনি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

পদ্মা ব্যাংক সঙ্কটের সমাধান কোন পথে?

আপডেট সময় : ১২:১৪:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : নানাবিধ কারণে আলোচিত পদ্মা ব্যাংক টাকার অভাবে পড়ে সরকারি কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার যে প্রস্তাব সরকারকে দিয়েছে, তা মন্ত্রণালয়ের হাত ঘুরে পৌঁছেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম সম্প্রতি বলেন, “পদ্মা ব্যাংককে সরকারি ব্যাংকের সাথে মার্জার বা অ্যাকুইজেশনের একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে এসেছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনও নেয়নি।” এদিকে বিদেশী বিনিয়োগের জন্যও খ্যাতনামা আর্ন্তজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক ডেল মর্গানের সঙ্গে সম্প্রতি চুক্তি সই করেছে পদ্মা ব্যাংক। ব্যাংকের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, এ বিনিয়োগের পরিমাণ ৭০ কোটি ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকা হতে পারে। বিপুল এ বিনিয়োগ আনতে মধ্যস্থতা করবে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক খ্যাতনামা বিনিয়োগ ব্যাংক ডেলমর্গান অ্যান্ড কোম্পানি। এ লক্ষ্যে সম্প্রতি প্রতিষ্ঠান দুটির মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে। পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এহসান খসরু বলেন, আগামী ৪ থেকে ৬ মাসের মধ্যেই এ বিনিয়োগ আসবে। বিনিয়োগের মধ্যে ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা আসবে ইক্যুইটি বিনিয়োগ হিসেবে। এ ছাড়া বাকি টাকা আসবে ঋণ হিসেবে। ২ সেপ্টেম্বর পদ্মা ব্যাংক যুক্তরাষ্ট্রের ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক ডেলমর্গান অ্যান্ড কোম্পানির সঙ্গে একটি এমওইউ স্বাক্ষর করে। সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত এবং ডেলমর্গানের চেয়্যারম্যান রব ডেলগাডো উপস্থিত ছিলেন। পদ্মা ব্যাংকের পক্ষে এমডি ও সিইও এহসান খসরু এবং ডেলমর্গানের পক্ষে প্রেসিডেন্ট ও সিইও নিল মরগানবেসার এমওইউতে সই করেন। পদ্মা ব্যাংকের চেয়্যারম্যান এমওইউ স্বাক্ষরকে বাংলাদেশের আর্থিক খাতের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, পদ্মা ব্যাংক ‘এম অ্যান্ড এ’ (মার্জার অ্যান্ড অ্যাকুইজেশন) লেনদেনের আওতায় আন্তর্জাতিক আর্থিক ক্ষেত্রে প্রবেশের সুযোগ তৈরি করেছে। ডেলমর্গান অ্যান্ড কোম্পানির চেয়্যারম্যান রব ডেলগাডো বলেন, আমরা পদ্মা ব্যাংকের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত। এ ব্যাংক বিদেশি বিনিয়োগের যে সুযোগ সৃষ্টি করেছে, আমরা সেটি এগিয়ে নিতে পারব বলে আশা করছি। ডেলমর্গানের প্রেসিডেন্ট ও সিইও নিল মরগানবেসার বলেন, আমরা পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা টিমের মান এবং ভিশন দেখে মুগ্ধ হয়েছি। আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের কাছে পদ্মা ব্যাংককে তুলে ধরার ক্ষেত্রে আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা এবং বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ কাজে লাগানোর বিষয়ে অত্যন্ত উৎসাহী। প্রসঙ্গত, ডেলমর্গান অ্যান্ড কোম্পানি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক এবং আর্থিক খাতের পরামর্শদাতা কোম্পানি, যার সদরদপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত।
ফারমার্স ব্যাংক যখন পদ্মা ব্যাংক
যাত্রা শুরুর মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে ফারমার্স ব্যাংক দেউলিয়া হতে বসেছিল ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে। গ্রাহকদের আমানতের অর্থ ফেরত দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে এ ব্যাংকের ঋণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে ব্যাংকের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনা হয়, পুনর্গঠন করা হয় পরিচালনা পর্ষদ। ব্যাংকের নাম বদলে হয় পদ্মা ব্যাংক। সরকারের উদ্যোগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী এবং ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) মিলে পদ্মা ব্যাংকের মালিকানার বেশিরভাগ অংশ কিনে নেয়। সেজন্য ৭১৫ কোটি টাকার মূলধন যোগাতে হয়। কিন্তু তাতেও পদ্মা ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. এহসান খসরু গত ৮ জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে যে আবেদন করেন, সেখানে বলা হয়েছে, সরকারি ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া ৭১৫ কোটি টাকার মুলধন দিয়ে পদ্মা ব্যাংক ‘ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা’ করছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে ব্যাংক খাত ‘মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায়’ তারা মূলধন সঙ্কটে পড়েছে। পদ্মা ব্যাংক বর্তমানে যে আয় করছে, তার চেয়ে ব্যয় বেশি হচ্ছে। ২০২০ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের হিসাব তুলে ধরে প্রদত্ত চিঠিতে বলা হয়, ৫ হাজার ৬২২ কোটি টাকার সম্পদের বিপরীতে পদ্মা ব্যাংককে সুদ দিতে হচ্ছে। আর তাদের আয় হচ্ছে ১ হাজার ৪৯০ কোটি টাকার সম্পদ থেকে। ফলে ২০২০ সালে ব্যাংকের ১৬০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। ২০২১ সালে জুন পর্যন্ত সময়ে পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার চিত্র দেওয়া হয়েছে চিঠিতে। ২০২১ সালের প্রথম ছয় মাসে ১২০ কোটি টাকা পরিচালন লোকসান হয়েছে পদ্মা ব্যাংকের। যার মধ্যে ৭১ কোটি টাকা নিট সুদের মার্জিন। আর এভাবে লোকসান করতে থাকায় ব্যাংকের মূলধন কমে যাচ্ছে। চিঠিতে জানানো হয়েছে ২০১৯ সালে পদ্মা ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারস ইকুইটি ছিল ৪৮৭ কোটি টাকা। ২০২০ সালে সেটা কমে হয়েছে ৩৩২ কোটি টাকা। আর ২০২১ সালের প্রথম ৬ মাসে তা আরও কমে ২২১ কোটি টাকা হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে ২০২১ সালের শেষে শেয়ারহোল্ডারস ইকুইটি ১০০ কোটি টাকার নিচে চলে আসবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। শেয়ারহোল্ডারস ইকুইটি হচ্ছে সমস্ত দায় পরিশোধ করার পর মালিকরা যে টাকা পায়। চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের জুন মাসে এসে পদ্মা ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২১০০ কোটি টাকা। এ অবস্থায় ব্যাংক টিকিয়ে রাখতে দুই ধরনের প্রস্তাব দিয়েছেন পদ্মা ব্যাংকের এমডি। প্রথম প্রস্তাব হল, পদ্মা ব্যাংকে বিভিন্ন সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানের যে আমানত আছে, তার একটি অংশকে ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে’ শেয়ারে রূপান্তর করা। ন্যূনতম মূলধন পর্যাপ্ততা রক্ষার জন্য পদ্মা ব্যাংকের দরকার ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এর মধ্যেঅগ্রাধিকার শেয়ার ইস্যু করে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা এবং অতিরিক্ত সাবঅর্ডিনেটেড বন্ড ইস্যু করে বাকি ৬০০ কোটি টাকার যোগান পাওয়ার পথ বাৎলেছেন তিনি। চিঠিতে পদ্মা ব্যাংকের এমডি এহসান খসরু বলেন, পদ্মা ব্যাংককে দ্রুত সময়ে সোনালী, জনতা, অগ্রণী বা রূপালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা যেতে পারে। এর বাইরে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের (বিডিবিএল) সঙ্গেও একীভূত হওয়ার প্রস্তাব দেন তিনি।