ফরিদপুর সংবাদদাতা : ফরিদপুর সদর উপজেলার পদ্মাপাড়ের তিন শতাধিক ঘরবাড়ি এরই মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। শুধু ডিক্রিচর ইউনিয়নের ইউসুফ মাতুব্বরের ডাঙ্গীর ৫৫-৬০টি বাড়ি পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। ফলে মানবেতর জীবনযাপন করছে দেড় শতাধিক পরিবার। ভাঙনের মুখে বেশ কয়েকটি গ্রামের কাঁচা-পাকা সড়ক। হুমকির মুখে স্কুল, মসজিদ, ক্লিনিক ও ব্রিজ-কালভার্ট। ইউসুফ মাতুব্বরের ডাঙ্গী এলাকায় ভাঙনে সব হারিয়েছেন দুলাল শেখ, সোহরাব হোসেন, সিদ্দীকুর রহমান, ফরহাদ হোসেন। তাদের কণ্ঠে আক্ষেপের সুর। চোখে-মুখে রাজ্যের হতাশা। ভাঙনকবলিতরা অসহায় কণ্ঠে জানান, এবারই প্রথম ঘর হারাননি তারা। আগেও তিন দফা নদীভাঙনে সব হারিয়েছেন। তাদের এ দুঃখ-কষ্ট কারও কাছে বলার মতো না। আর বলেও লাভ হয় না। দুলাল শেখ জানালেন দুদিনের ব্যবধানে ইউসুফ মাতুব্বরের ডাঙ্গীর একমাত্র সড়কের প্রায় ৭৫০ গজ ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আরও ভাঙার শঙ্কা রয়েছে। হঠাৎ পদ্মার পানি কমে যাওয়ায় ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে বলে মনে করেন তিনি। জানা গেছে, গত তিনমাস ধরে সদর উপজেলার নর্থচ্যানেল ইউনিয়নে নদী ভাঙন চলছেই। এতে উস্তাডাঙ্গী, মৃধাডাঙ্গী ও গোলডাঙ্গীর তিন গ্রামের প্রায় আড়াইশো ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন অন্তত এক হাজার পরিবার। এরই মধ্যে পদ্মার বুকে হারিয়ে গেছে চরটেপুরাকান্দি মসজিদ ও উস্তাডাঙ্গী স্কুল। ভাঙনে নদীর বুকে চলে গেছে এক কিলোমিটার সরকারি পাকা সড়ক। এক হাজার বিঘা ফসলি জমি ও অগণিত গাছপালা। প্রবল হুমকির মুখে চার গ্রামের প্রায় এক হাজার ২০০ বাড়ি-ঘর, সরকারি রাস্তা, স্কুল, মসজিদ, হাসপাতাল। চরটেপুরাকান্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ছোট ছোট বেশ কিছু কালভার্ট ও ব্রিজ ভাঙনের মুখে। যেকোনো সময় পদ্মায় বিলীয় হওয়ার শঙ্কায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত গোলডাঙ্গী ব্রিজ। নর্থচ্যানেল ইউনিয়ন (ইউপি) পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোস্তাকুজ্জামান বলেন, নদীভাঙন এ এলাকার মানুষের আতঙ্কের নাম। নদীর কাছে আমরা অসহায়। ভাঙনকবলিতদের রক্ষা করা আমাদের পক্ষ কঠিনকাজ। নদীভাঙনে মানুষের দুঃখ-দুর্দশার বিষয় বিভিন্ন সময়ে কর্তৃপক্ষের নজরে এনেছি। কিন্তু ভাঙন ঠেকানোর মতো ক্ষমতা আমাদের নেই।
ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিটন ঢালী বলেন, ভাঙনকবলিতদের মাঝে শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। প্রায় ৭০০ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে এ ত্রাণ দেওয়া হয়। নতুন করে যারা নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তাদেরও পর্যায়ক্রমে তালিকা করে ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হবে। ফরিদপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতীম সাহা বলেন, এলাকাগুলো চরবেষ্টিত। দুর্গম এলাকা হওয়ায় ভাঙন ঠেকাতে ওখানে কাজ করার মতো বরাদ্দ আপাতত নেই। নতুন করে বরাদ্দ পাওয়া গেলে ভাঙনকবলিতদের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে।
পদ্মার ভাঙনে নিঃস্ব দেড়শ পরিবার
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

























