নিজস্ব প্রতিবেদক : একদিকে বিএনপির সরকার পতনের ‘এক দফা’ আন্দোলনে পদযাত্রা। অন্যদিকে ‘শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রা’ নিয়ে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি। এতে গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক, মিরপুরে শুরু হয় তীব্র যানজট। রাজধানীর পল্টন, প্রেসক্লাব, শাহবাগ ও ধানমন্ডি এলাকায় যানজট শুরু হয় দুপুরে। বিকেল সোয়া ৪টায় বিএনপির পদযাত্রা পৌঁছায় দলের পল্টন কার্যালয়ে। বিএনপির পদযাত্রা চলে গাবতলী, টেকনিক্যাল মোড়, মিরপুর-১ ও ১০ হয়ে কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া দিয়ে আগারগাঁও, বিজয় সরণি, কারওয়ান বাজার, এফডিসি, মগবাজার, কাকরাইল হয়ে নয়াপল্টন। এরপর ফকিরাপুল, মতিঝিল, ইত্তেফাক মোড় এবং দয়াগঞ্জ হয়ে রায়সাহেব বাজার মোড়।
বিএনপির পদযাত্রা যে পথ দিয়ে এগিয়েছে, সেখান দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর প্রভাব পড়ে আশপাশের সড়কগুলোতে। এতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে গাড়ির মধ্যে বসে থাকতে হয়। দুপুরে মিরপুর ডিওএইচএস থেকে কারওয়ানবাজারে আসা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী কামরুল ইসলাম জানান, ক্যান্টনমেন্টের ভেতর দিয়ে বাসে জাহাঙ্গীর গেট পর্যন্ত অন্যান্য দিনের মতোই এসেছেন। কিন্তু জাহাঙ্গীর গেট থেকে বিজয় সরণি পার হতে তার লেগেছে প্রায় এক ঘণ্টা, যেখানে অন্যান্য দিন ১০ মিনিটের মতো সময় লাগে।
দুপুরে জুরাইন থেকে কারওয়ানবাজারে এসেছেন মো. সোলাইমান নামের এক ব্যক্তি। তিনি জানান, বেলা ৩টার দিকে গুলিস্তান থেকে শাহবাগমুখী সড়কে যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। তখন তিনি রিকশা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে কাঁটাবন ঘুরে কারওয়ানবাজার এলাকায় এসেছেন। বিকেল সোয়া চারটার দিকে এক দফা আন্দোলনের পদযাত্রা পল্টনে পৌঁছায়। এ সময় কাকরাইল থেকে পল্টনে যাওয়ার এক পাশের পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। বিপরীত দিকের সড়কের যানবাহনের ছিল ধীরগতি। এদিকে বেলা তিনটায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে হয় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সমাবেশ। এখান থেকে শোভাযাত্রা করে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু ভবন পর্যন্ত যাচ্ছে তারা । এ সময় সার্ক ফোয়ারা থেকে পান্থপথ হয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর পর্যন্ত কিছুটা যানজট দেখা যায়। তবে তা তীব্র আকার ধারণ করেনি। বিকেল চারটায় রাজধানীর রমনা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার জয়নুল আবেদিন জানান, ‘যানবাহনের ধীরগতি আছে, কিন্তু থেমে নেই। ফলে সড়কে সিগন্যাল আছে কিন্তু তীব্র যানজট বলা যাবে না।’
এর আগে দুপুরেও রাজধানীর রমনা, কাকরাইল, পল্টন এলাকায় যানবাহনের ধীরগতি ছিল। এর প্রভাব পড়ে রাজধানীর পুরান ঢাকার বিভিন্ন সড়কে। দুপুরে প্রেসক্লাবের সামনের সড়ক বন্ধ করে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা আন্দোলন করেছেন। ফলে অন্য রাস্তা ব্যবহার করায় অতিরিক্ত গাড়ির চাপে প্রেসক্লাব-পল্টন এলাকায় যানবাহন চলেছে ধীরগতিতে। এ সময় কিছুক্ষণের জন্য দুই পাশেই আটকে যায় গাড়ি চলাচল। তুলনামূলকভাবে সকালে গুলশান, পল্টন এলাকায় যানজট ছিল না বলে জানালেন মৎস্য ভবনের সামনে সিগন্যালে অপেক্ষারত সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক শুক্কুর আলী। তিনি বেলা ১১টায় গুলশান থেকে পল্টনের সুরমা টাওয়ারে নিয়ে যাত্রী নামিয়েছেন। বেলা দুইটায় মৎস্য ভবনের সামনে ছিল যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির শোভাযাত্রা। এখানে দায়িত্বরত কনস্টেবল মো. মতিয়ার জানান, দুপুর পর্যন্ত স্বাভাবিক সময়ের মতো সিগন্যাল ছিল। তবে একটু একটু করে চাপ বাড়তে থাকে।
এর আগে সকালে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের গাবতলী থেকে সালেহপুর ব্রিজ এলাকা পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পদযাত্রা শুরু করে বিএনপি। যানজটে আটকে থাকা কয়েকজন ভুক্তভোগী বলেন, গাবতলী থেকে বিএনপির পদযাত্রার কারণে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ঢাকাগামী লেনে যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে যানজটে আটকে পড়েন তাঁরা। এ ছাড়া আরিচাগামী লেনটিতে পরিবহনগুলো চলেছে ধীরগতিতে। যানজটে আটকা পড়ে অনেকেই বাস থেকে নেমে হেঁটে রওনা দেন গন্তব্যের উদ্দেশে। সবমিলে মঙ্গলবার দিনভর রাজধানীতে জনদুর্ভোগ ছিল অসহনীয়।
পদযাত্রা-শোভাযাত্রায় স্থবির ঢাকা
ট্যাগস :
পদযাত্রা-শোভাযাত্রায় স্থবির ঢাকা
জনপ্রিয় সংবাদ